somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তনুদেরকে আগে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিপীকা পাডুকান ো টাইমস অভ ইন্ডিয়ানের বিতর্কের কথা নিশ্চয়ই আমাদের সবার মনে আছে।যেখানে দিপিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা টাইমস অভ ইন্ডিয়া সহ পুরো সমাজকে উদ্দেশ্য করেই তার টুইট বার্তায় বলেছিলেন। বার্তাটি ছিলো, YES!I am a Woman.I have breasts AND a cleavage! You got a problem!!??''
গত কয়েকদিনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে মানুষের প্রতিক্রিয়ায় দিপীকার কথাগুলো নতুন করে মনে করে গেল।দিপীকার কথা অনুসারে আমরা কি , আমাদের সমাজ কি,কখনো মেয়েদের একজন মানুষ হিসেবে দেখেছে ? একজন মানুষের যে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকা দরকার সেটাই যে তার আছে, সেটা কি ভেবেছি? না ভাবিনি আমরা মেয়েদেরকে সবসময় শরীরবৃত্তীয় সীমাবদ্ধতার মাঝে দেখতে অভ্যস্ত। যার ফল হচ্ছে , মেয়েদেরকে সেই অর্থে আমরা কখনোই মানুষ হিসেবে দেখি না। তাদেরকে আমাদের পছন্দমত চোখে দেখতে চাই। যার ফল হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ , আমাদের ঘরে বাইরে কর্মস্থলে সবজায়গায় মেয়েদের কম্প্রোমাইজ করে চলতে হচ্ছে । এবং তাও আমাদের পছন্দ মত। আর যখনই সে কম্প্রোমাইজ করতে পারছে না, তখনই তনুর মত লাশ হয়ে নর্দমায় পড়ে থাকতে হচ্ছে।
আমি তনু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে আয়নার সামনে তুলে ধরতে চাই এবং দেখতে চাই এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জন্যে আমার নিজের কি কোনোই দায় নেই।প্রথমেই আসি আমরা কি সত্যিই মেয়েদের মানুষ হিসেবে দেখি , শুধুই মেয়ে হিসেবে দেখি। আমি যদি তাদেরকে মানুষ হিসেবে দেখি তবে কেন বিভিন্ন সময় একজন মেয়ের পোশাক , চলাফেরা , ভাললাগা , মন্দলাগা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের মত চাপিয়ে দিতে চাই।অনেকেই হয়ত বিরক্ত হচ্ছেন কেন আমি এইসময় এসব আবান্তর বিষয়ের অবতারণা করলাম। বিষয়টি এইজন্যে অবতারণা করলাম , একটি সমাজের অবক্ষয় হঠাৎ করে ঘটে না বা এটা গুটিকতক অপরাধীর কারণেও ঘটে না। সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যখন নৈতিক বিষয়গুলোতে নিজের অবস্থান পরিস্কার না করে , তখন এক অর্থে তা অপরাধকে সমর্থন করার সামিল বলে পরিগ্ণিত হয়।একসময় তা সীমার বাইরে চলে জয়ায়। যা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিভিন্ন সময় এর আগে ১লা বৈশাখ , থার্টি ফার্ষ্ট নাইট যখন মেয়েরা নিগৃহীত হয়েছে তখন আমাদের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ একটি অংশ সেইসব মেয়েদের পোশাক -পরিচ্ছদ, চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তাদেরকে চরিত্রহীন উপাধিতে ভূষিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি।অথবা তাদেরকে বাম ঘরানার রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অন্য গ্রহের বাসিন্দা ভেবেছি।আমরা যখনই কারো সাথে যুক্তি, বুদ্ধি, প্রজ্ঞায় নিজেকে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছি আর সে যদি একটি মেয়ে হয় তবে তাকে চরিত্রহীন হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছি। আর সমাজের বৃহত্তর অংশ নীরব থেকেছে কেউ কেউ সেটাকে সমর্থন করেছে । এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্র পর্যন্ত চুপ থেকেছে।একবারের জন্যে ভাবি যেকোনো মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। সে যদি ধর্ম ভীরু হয় তারও যেমনি রাষ্ট্রের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে , তেমনি যদি কেউ সমাজের চোখে নিকৃষ্ট পেশা হিসেবে বিবেচিত অর্থ্যাৎ সেক্স ওয়ার্কার হিসেবে জীবনযাপন করছে তারও সাধারণ ভাবে বেঁচে থাকার সমান অধিকার বিদ্যমান।অথচ আমরা কি দেখি গত ৪০ বছর ধরে পার্বত্য এলাকার জনগোষ্ঠীর উপরে বিশেষকরে নারীদের প্রতি যে পরিমান শারীরিক , মানসিক যে নির্যাতন করা হয়েছে তার কোনো প্রতিবাদ বা বিচার বৃহত্তর অর্থে আমরা করেছি? করি নাই, কারণ তাদের আমরা সেই অর্থে মানুষ হিসেবে গণ্য করি না।এটাকে আমরা অধিকার হিসেবে মনে করি। যেমনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ো এদেশীয় দোসররা গণিমাতের মাল হিসেবে মনে করত। বাস্তবিক অর্থে সমাজের শক্তিসালী গোষ্ঠী দুর্বলদের সবসময় তাদের অধীনস্থ করে রাখতে চায়। সেই একই মানষিকতা থেকেই আমরা নারীদের মানুষ হিসেবে মনি করি না। আর যেহেতু মানুষ হিসেবে মনে করি না , তাদের সাথে যেকোনো অযাচিত করাই জয়ায়।
অতএব আমাদেরকে আগে তনুদেরকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে।আর শুধু তনুদেরকেই নয় কল্পনা চাকমা, দিপালী, শিলা এমনকি সোজাকথায় একজন যৌনকর্মীকেও মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে তখনই কেবল সমাজ থেকে এধরনের নির্যাতন, হত্যা, নিপীড়ণ দূর হবে। আর এর শুরু কিন্তু করতে হবে আমাকে দিয়েই। আমার ভাবনার পরিবর্তন দিয়েই। কারণ আমিতো সমাজেরি অংশ।
পূণশ্চঃ
এক, গত কয়েক বছর আগে বুয়েটের শিক্ষক , শিক্ষার্থীরা ভিসি'র পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন করছিল। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রতীকী অর্থে সিরিঞ্জ দিয়ে শরীরের রক্ত বের করেছিল ।সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রীদের নিয়ে নিম্নরুচিকর বক্তব্যে দিয়েছিলেন।এর মাধ্যমে প্রমান হয় , আমাদের রাষ্টব্যবস্থাপনাই গড়ে উঠেছে নারীদেরকে মানুষ হিসেবে নয় , আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে দেখার প্রবণতায়।
দুই, বাংলাদেশের সর্বসাধারণের বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে প্রতিযোগিতামূলক বিদেশী দলের সাথে খেলাগুলো। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের মত নিম্ন আয়ের দেশের জাতীয়ভাবে উৎসবের উপলক্ষতো নেই বললেই চলে। যাও বাঙালি সংস্কৃতির দুই একটি আছে তাও আবার ধর্মীয় বেড়াজালে অনেকটাই বন্দী। তাই ক্রিকেট এই মুহুর্তে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের আনন্দের প্রকাশ ভংগিতে । যেমন , আমরা ভারত, পাকিস্তান , অস্ট্রেলিয়া বড় যে দলের সাথেই খেলা হোক না কেন , বলব, আজ ভারতকে বাঁশ দেবো, কাল পাকিস্তানকে বাঁশ দেবো, পড়শু অস্ট্রেলিয়াকে বাঁশ দেবো।অথচ আমরা মনের অজান্তেই যে একধরনের ধর্ষন মানসিকতা পোষন করছি, সেটা জানিই না।
তাই , আমাদের জাতি হিসেবে কাউকে বাঁশ দেয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×