ছোট্ট এক জীবনের প্রতি পরতে পরতে মিশে থাকা আনন্দের মাঝে ঈদ আনন্দ সব চাইতে বর্ণীল। স্মৃতিতে থাকা শৈশব থেকে শুরু করে আজকের করোনা কাল। কতরূপে নানাঢঙে রঙধনু হয়ে ছুঁয়ে গেছে যে ঈদ! সব উচ্ছ্বাস মিলেমিশে ঐকতান। তবে সব স্মৃতির মাঝে আইসিং অন দ্যা কেক হয়ে আছে শৈশবদের ঈদ।
আমার মনে থাকা শৈশব আমি কাটিয়েছি পুরানো ঢাকায়। চাঁন রাত হচ্ছে সারাজীবন ই ঈদের শুরুর আরেক ঈদ! তারাবী নামাজের পর শুরু হত তারাবাতি, মেহেদী আর পটকার ফুলঝুরি। পুরানো ঢাকায় রোজার আমেজ শুরু হত শবে বরাত এর এক সপ্তাহ আগে থেকে, ঝিল্লী শুকায়ে মরিচা বাতি বানিয়ে প্রতিদিন রোদে শুকানো, তারাবাতির কালেকশন। আর শবেবরাতের রাতে পাতার বাটিতে তেহারি। এমন বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে রোজায় দিন শেষে সবচাইতে আনন্দ জমা ছিল গামলা ভর্তি বাঙ্গি লেবু’ র শরবতে। বোম্বাই জিলাপির টুইটুম্বুর রসে। দুই টাকার বরফ কিনে আনা যেন এক একদিনের সাফল্যের মানদণ্ড ছিল বন্ধু বান্ধবদের কাছে।
ধুপখোলা মাঠে রোজার ঈদে সাত দিন আর কোরবানির ঈদে তিন দিনের মেলা বসত। আমার শৈশবের ঈদ আনন্দ সেই মেলার লাল নীল কাঁচের চুড়ি, মাটির হাড়ি বাসন। নাগর দোলায় এখনও স্মৃতি’র দোলনায় ঝুম ঝুম আনন্দ। নতুন জামা জুতা নিয়ে ঘুমের স্মৃতি অনেকেরই। কত কষ্টে নতুন জামার নকশা আর রঙ কে লুকাতে হত। ছেলেরা যেমন মরিচা বাতির জন্য মশলা সংগ্রহ করত, তেমনি বড় আপুদের দেখতাম কমলার খোসা রোদে শুকিয়ে রাখত। চাঁন রাতের দিন দুধের সর কাচাঁ হলুদ আর কমলার খোসা বেটে রাখত, সকালে গোসল করার জন্য। ভোর রাতে উঠে গোসল সেরে নতুন জামা জুতায় সাজতাম। মায়ের রান্না ঘরে ততক্ষনে মৌমৌ সুবাস! প্রিয় বন্ধুদের সাথে এরপর দে ছুট। ঈদের দিন মসজিদের সামনের রাস্তা সহ আশের পাশের সমস্তটা জুড়ে ঈদের জামাত হত, আমি ছাদে না হয় বাসার পাশের বারান্দায় অপেক্ষা করতাম নামাজ শেষ হবার। সবাই মিলে একসাথে সেজদা দেয়ার দৃশ্য ছিল অপার্থিব অনুভূতি।
এখনকার এই ভার্চুয়াল ঈদ নিয়ে কি ই বা বলার আছে? রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ সব ঈদ ই এখন কোভিড ঈদ ! আমাদের জীবন সময় আনন্দ সবকিছুই কেমন এক ফ্রেমে আটকে আছে। দিন শেষে এটুকু ভাবতে ভালোলাগে পরের বছর নিশ্চয়ই আমরা একটা স্বাভাবিক সময়ে ফিরে যাবো। হ্যাঁ নিশ্চয়ই ফিরবো।
ঈদ মোবারাক সবাই কে !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৫৫