ভালোবাসলে ভালোবাসাই ফিরে আসে ঠিক!
তুমিময় একটা শহর! ক্যাম্পাসের শীত গ্রীষ্ম, নিউ মার্কেটের বই স্টেশনারি, গাউছিয়া চাঁদনি চকের টিপ চুড়ি, ধানমন্ডি ছুঁয়ে সংসদের রাস্তায় তারুণ্যের উত্তালদিন। বয়সের সিড়ি চড়ে বেড়েছে শহরের গন্ডি। ব্যস্ত বিষণ্ণতার শহরে, একটা আকাশ একই চাঁদের আলো, অন্তর্জালে ভেসে উঠা স্মৃতি তবুও ছুঁয়ে দেয়ার ফুসরত থাকে না তোমাকে। ঘুলঘুলি বেয়ে নেমে আসা নরম রোদ থেকে শুরু, একফালি চাদেঁর ছায়া , অথবা নিশ্চুপ হতে চাওয়া প্রহর , আয়েশি বৈরাগ্য! সব আমিতে ই লুকিয়ে থাকে তুমিতুমি নম্রতা, তুমিতুমি নুয়ে আসা প্রেম। এটুকু তো আমাদের যুগল গান, এ গল্পেও তুমি আমি। আজ তোমায় অন্য এক ভালোবাসার গল্প শোনাই, সেই যে- যে ভালোবাসায়, ভালোবাসার সুবাসটুকু ফিরে আসে। অবশ্য ফিরে যদি ঘৃণা, অবহেলা, একাকীত্ব অথবা বিশ্বাস ঘাতকতা ও আসে কোন ক্ষতি নেই। ভালোবাসার বদলে যে এসব ফিরিয়ে দেয় তার জন্য করুণাটুকু বরাদ্দ থাকে, হয়ত সে ও ভালোবাসার প্রতিদানে এসব ই পেয়েছিলো। আমার শুধু বাসতে পারায় আনন্দ। আর প্রকৃতিকে যতটুকু ভালোবাসা যায়, প্রকৃতি তার সমস্ত বুকের নির্যাস সাজিয়ে তা ফিরিয়ে দেয়।
বেশ লম্বা একটা প্রবাস জীবন কাটিয়ে যখন দেশে থিতু হবার আয়োজন করছি, বারো মাসের হাওয়ায় নিজের পরিচিত গন্ধ সরে গেছে কোন চৈতালি হাওয়ায়। আমার বর্ষা স্নানটুকু ও জোছনায় ঠেলে দেয় অকাতরে। আমি এসেছি, আমি গো সেই আমি’ ই তবুও সারা দেয় না ইট কাঠ আর পরিচিত পিচের রাস্তা। শুরু হল ঢাকার আকাশে ঘুড়ি উড়নো, বাতাসে নিজের ঘামের অস্তিত্ব জাহির। খুঁজে খুঁজে আঙিনায় রাখছি ভালোলাগা গুলো। এ শহরে খুপরি জানালায় সবুজের চাষ করি ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বোতলে। বাসার আঙিনার মাটিতে শুরু থেকেই বেড়ে উঠা মাধবী লতা শুধু চোখের আয়নায় স্বপ্ন হয়ে দোলা দেয়। একদিন দুলে উঠা মালতী লতায় ভালোবাসার সুতো জড়ালাম। ঠিক একমাস পর তার উৎসুক দৃষ্টি মেলে উঁকি দিয়েছিলো তৃতীয় তলায় আমার হাতের নাগালে। সে এক আশ্চর্য আনন্দময় অনুভব জানো! এইটুকু ভালোবাসার প্রতিদানে সে যে কী তুমুল সুবাস দিলো সমস্ত বছর। বুঝলাম সন্ধ্যার সুর মাঝে রাতে দৃষ্টির আদ্রতা মেখে ফুলেফুলে ছেয়েছে। সেই আবহমান বলে আসা কথার সত্যতা ধরে রেখেছে, ভালোবাসায়, ভালোবাসা সুবাস হয়েই ফিরে এসছে।
হওয়াই মিঠাই কলরোল ছোঁয়া সে বসন্তে ফুটপাত ধরে নিজিকে চিনিয়ে দেবার সময়টুকু তে। উত্তরার রাজপথের পাশের বিশাল দেয়াল উঁচু বাড়ির রাস্তায়, ছোট্ট একটা অযত্নে বেড়ে উঠা শিউলি চারা পায়ের সাথে উঠে এলো। হয়ত বা মৌসুমে হাওয়ার উড়ালে, বীজ এসে পরেছিল এ মাটিতে সেখানেই নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। পায়ের আদর বুকে তুলে নিলাম, আঙিনার সদরে বুনেছি। যাওয়া আসার রাস্তায় ঠিকঠাক দেখে রাখি, মাঝে মাঝে ছুঁয়ে দেই ভার অমসৃণ পাতা গুলো। ঠিক দু বছরের মাথায় এই শরতে ঋতুপ্রাপ্ত হয়েছে সে। সেই থেকে দুই নয়ত দশ যে কয়টাই হোক শিউলি ঝরাচ্ছে রোজ। রাতে ফোটা আর ভোরের স্নিগ্ধতা ছুঁয়ে ঝরতে পারে বলেই! বোঁটায় রাখা বৈরাগ্যের রঙ গেরুয়া আর শুভ্রতায় মিলেমিশে থাকে। এই দুই সময় ই অপার্থিব আলোর, নিস্তব্ধতার আর উচ্ছ্বসিত সুবাসের সময়। তাই এর অনুভব অতুলনীয়, শব্দেরা যেন বুক ভরে নেয়া, এ নিশ্বাসের উপমা সাজাতে পারে না। এ শুধু একাকী অথবা প্রিয়জনকে নিয়ে বন্ধ চোখে গায়ে মাখতে হয়। ফিরে আসা এ ভালোবাসা টুকু র জন্য অনন্তকাল বেঁচে থাকাতে ইচ্ছে করে।
এ জ্যৈষ্ঠ এখন ও আকণ্ঠ ডুবে আছে বৈশাখে! তার সমস্ত সত্তায় বৈশাখী তান্ডব, ঝড়ো হাওয়ার মাতামতি, মুহূর্তেই খরতাপ। আবার হুট করে দস্যি মেয়ের এলো চুলের নাচন, সাথে মটির গভীর থেকে উঠে আসা তাপ। এই যে বাদলের দিন চলে এলো, এসে গেলো আষাঢ় মাস ,মাঝে একটা জ্যৈষ্ঠের পূর্ণ মাসের এতগুলো দিন চলে গেলো তবুও সে নিজের কাছে ফিরতে পারলো কই। অথচ আজ দিন শুরুর উদাসী বাদল কিন্তু ঠিক ই মনে করিয়ে দিয়েছে আষাঢ়ের আগমনী গান। শুধু শুধু জ্যৈষ্ঠ মাসটাই অপচয় হয়ে গেলো। তেমনি কিছুকিছু আবেগ কেবলই অপচয় হয়। কখনো কখনো তা সিকি জীবন! জমে থাকে, চর পরে, উষ্ণতায় গলে, আবার বরফে জমে! তারপর ও অপচয়, কেবল ই অপচয় হয়ে আসে সেসব সম্পর্ক। কতদিন তোমার নামের এ বর্ষায় ভেজা হয়নি, রোদ্দুর গায়ে মাখি নি। চরিত্র হারিয়ে ফেলা শীতের উত্তাপ ও নেইনি। তবুও কি থেমে আছে বাদল দিনের গান? রোদ্দুরের কঠোরতা? এমন যে আমি ছিলাম ই না এখানে, সেই প্রাণের শহর আমার নামে একটা সকাল ও লিখে দেয়নি। হয়ত যাদুর এ শহরের প্রেমিক/ প্রেমিকার অভাব হয় না। বিষণ্ণ সে শুধু লালন করে তার কৃষ্টি।
বেশ ক বছর আগে কবিতায় লিখেছিলাম “ সাইক্লোন সমুদ্রে ঢেউয়ের সাথে সখ্যতার অন্য নাম প্রেম” সত্যিই তো, কবিতা কে ভালোবেসে কি জীবন সমুদ্রের ঢেউর সাথে সখ্যতা করতে হচ্ছে না? একটা কবিতা লেখার যন্ত্রনা আজকাল গা সওয়া হয়ে গেছে। লিখে ফেললেই অযুত প্রশ্নের ইট পাটকেল! সবজান্তা হাসি আর চোখের ইশারা হুহু জানিজানি কোত্থেকে কবিতা আসে ? আচ্ছা লেখার পিছনের উনাকে কে চিনি ?
বাহ ! ভালোই জীবনে উপভোগ তাহলে কম করেন নাই ? ওরে বাবা সংসার সামলে এত রোমন্টিক ভাবনা এই বয়সেও ???
আর এসব রাঙানো চোখে মুঠোভরা ছাই হয়ে আসে , নিজেকে ভালোবাসতে পারা তৃপ্ত প্রান পাঠকের ভালোবাসা! যারা কেবলই ফুরিয়া যাওয়া আনমনা দিন থেকে দুই একটা বেলিফুল তুলে সাজাতে পারে বিবর্ণ সময় কে রঙধনুর ফুলদানীতে। আর সেই আনন্দটুকুই শেফালী বকুলের ঝরা পাতার সুখ, ঝিনুক সেঁচা মুক্তা খোঁজার মহার্ঘ ক্ষন!
এ বর্ষায় এখন ও কদম কিংবা দোলনচাঁপার দেখা পাইনি! তবুও আমার আঁজলায় পূর্নতা দিয়েছি, শিউলি সুবাস! বৃষ্টিস্নাত শুভ্র একরাশ বেলির ঝুমকা। আর আমার সেই নুয়ে আসা মালতী। আজ সমস্তটা দিন এ ক’লাইন ই ছিল মনে-
যেদিন সন্ধ্যা নামায়
মেঘলা দুপুর সুরমা নিয়ে চোখে
বলো এমন দিনে, উদাস কে না থাকে ?
এলিয়ে খোঁপা কাজল আঁকা পথে
দূর হতে কেউ ডাকছে যেনো তাকে।
ব্লগারদের আষাঢ়ের পয়লা দিনের শুভেচ্ছা!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১৬