সাগর সাইক্লোন যে ভেজা ক' দিন দিয়ে গেলো- বর্ষা বিলাসে মত্ত হওয়া গেলো তাতে অল্পই, শ্রাবণের অঝোর ধারায় যে ঘোর, বাদল দিনের মাদল বাঁশির যে সুর, সে আর হেমন্তে কই বল ! পাওয়া হল শুধু অগ্রিম হিমহিম। বেশ অল্প হাওয়ায় উড়তে থাকা শুকনো পাতার জীবনের চিকন রেখায় ভালোবাসা রাখা আছে আমার, ঝরা পাতাদের দলে আমি ও চাই নাম লেখাতে। পরিযায়ী পাখি হয়ে যদি পৌষালী প্রহরে দেখা দাও, সেটুকুই জনমজনম লবঙ্গ এলাচ করে রেখে দেবো শক্ত করে আটকে রাখা কৌটায়।
পৌষ পূর্ণিমা যদি কেটে যায় হেলাফেলাতেই-
মাঘী পূর্ণিম স্নানে ঘিয়ের প্রদীপের পোড়া সুতালির বিশুদ্ধ ছাইটুকু আল্পনা রঙে জমা করবো। যেখানে অপেক্ষায় অপেক্ষায় ফুরায় চোখের শুকতারা আলো, সেখানে কোথায় পাবে তুমি পুঁইগোটা রাঙা অধর ? এমন বৈরাগ্য বিরহে লবঙ্গ ঝাঁজ হয়ে ছুঁয়ে যেয়ো। বর্ষা বিকেলে অবিরাম ঝরা বাদলের সন্ধ্যায় অবাধ্য লুটোপুটি বাতাসে যখন দেশি গোলাপ ঘ্রাণ ছড়াবে, লেবুপাতা দেবে সিক্ততা, দোলন চাঁপায় আর কদমে মাখামাখি বন্ধুতা রেখে আমি সেই এলাচ সুবাসে মগ্ন হব। উড়ি উড়ি মনটা পার্বণের ঘ্রাণে ছুটে যাচ্ছে ছুটিতে-
যেখানে সবুজে সবুজে হাতছানি দেয় গিড়িমাটি' র রাঙা ধুলো; শহুরে গ্লানি আর ক্লান্তি কে একলা ফেলে দুম করে মন চলে গেলো হিমকুঁড়ি' তে। ভোররাতে তার বনবাংলোর কাঠের জানালায়, শীত সুবাস এর ঠকঠক । হুট করে সন্ধ্যা নেমে আসা বন পাহাড়ে, রুক্ষ শীতের শুষ্ক পাতা হয়ে ভেসে বেড়াই আমি।
বর্ষায় ভেবেছিলাম পানসী যাবো অথবা নক্ষত্র, নাজিমগঢ়-
নীলগিরি নীলাচলে মেঘের আঁচলে খুঁজবো জলের দাগ জলোচ্ছ্বাস। বসন্ত বৃশ্চিক যদি পেয়ে যাই - খুব ঘুরবো মফস্বলের স্টেশনে স্টেশনে, উপচে উঠা চায়ের গ্লাস আর তেলেভাজার সখ্যতা দেখবো। ট্রেনের বাঁশি আর প্লেনের উড়ে যাওয়া চঞ্চল মন নিয়ে পঞ্চগড়ের টিলায় অথবা সিলেটের ছরায় ছায়া কল্প বুনে আসবো নকশিকাঁথা ফোঁড়ে। পৌষালী বতরে রাতাজাগা সেদ্ধধানের মিঠেল ধোঁয়া হব - না চাইলেও মগজের কোনে জমে যাব চুপচাপ। আসছে শীতে হলদে খামে, লেখার ভাঁজের দোলন চাঁপা হব আমি;
তুমি বুলবুল নাইটিঙ্গেল হয়ে পরিযায়ী হবার আগেই।
সর্বসত্ত্বঃ মনিরা সুলতানা
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬