আজকাল আমার মাধ্যমিক স্কুলে পড়া ব্যাকারন বই এর যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পত্রিকায় প্রকাশযোগ্য পত্র লিখতে ইচ্ছে করে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে ইচ্ছে করছে, আগ্রহ জাগছে হালের জনপ্রিয় "ইত্যাদির " মাধ্যমে সমাধান পেতে। যানজট সমস্যার সমাধান চেয়ে, নির্বাচনে উচ্চস্বরের মাইক নিয়ে, এই বর্ষবরণে আতশবাজি পটকা নিয়ে, বাসার পাশের খালি জমিতে সমস্ত পাড়ার আবর্জনা ফেলা নিয়ে। বিষয়বস্তু এতবেশি যে আমাকে প্রায়শই রাইটার্স ব্লকে চলে যেতে হয়।
নতুন বছরের শুরু, বছরের প্রথম বাসা থেকে বের হবার পরের ঘটনা নিয়ে তাই গা ঝারা দিয়ে লিখতেই শুরু করলাম- ঢাকার ক্রমবর্ধমান বাইকারদের দৌরাত্ম্য নিয়ে। সেদিন ব্লগার আহসান ভাইয়ের লেখায় উনার বাসস্থানের রেলক্রসিং এর সমস্যা উঠে এসেছে, সাথে আমি আমার অভিজ্ঞতাটুকু ও তেমন ই, আসা যাওয়ায় দিনের (যদিও আমি প্রতিদিন বের হই না) ঘণ্টা কয়েক জীবন থেকে বিসর্জন দিতে হয়।
গতকাল আমার একটা বিয়ের দাওয়াত ছিল, ৭.৩০ এর দাওয়াত ৮টায় গেলেই হবে ধরনের মানসিকতা নিয়ে সন্ধ্যে ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। বাসা থেকে তিন মিনিট পর রেলক্রসিং এ অপেক্ষা করছি এবং অপেক্ষায় আছি এরমাঝে ঘড়ি তো অপেক্ষা করবে না ৬.৪০ মিনিটে ও আমি কয়েক ইঞ্চির ভ্রমণ শেষ করেছি। এর মাঝে উল্টো দিক থেকে আসা একজন বাইকার (পোশাকধারী ) আমার ড্রাইভার কে সংকেত দেন গাড়ি পিছনে নেবার, নিঃসন্দেহে আমরা কয়েক ইঞ্চি পিছালে উনি সুড়ুত করে বাইক টান দিয়ে বাসায় গিয়ে বউ এর হাতের ভাপা পিঠে খেতে পারেন গরম গরম। আপনারা যারা ভাবছেন এক সেকেন্ড পিছিয়ে গেলে তো এইঝামেলায় যেতে হত না কিন্তু বাস্তবতা ছিল - উনি রং সাইড থেকে পার হতে চাচ্ছেন, এর আগে আমি নিজে বলে কয়েক জন কে সাইড দিয়েছি, আর আমাদের অপেক্ষার সময় ততক্ষণে ৫৫ মিনিট সর্বোপরি যে মুহূর্তে আমার গাড়ি ব্যাকে যাবে তৎক্ষণাৎ ডান দিকের ট্রাকচালক ভাইবেরাদার আমাদের রাস্তা পরবর্তী ৫০ মিনিটের জন্য সাফাসাফা করে রাখবেন। পরবর্তী ঘটনার দিকে আগানোর আগে কিছু নেট থেকে কিছু তথ্য শেয়ার করি-
ঢাকায় বিআরটিএ জানাচ্ছে নিবন্ধিত বাইকের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০। এর বেশিরভাগই অ্যাপভিত্তিক সেবা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার্ড বাইক। ঢাকায় আরেকটি জনপ্রিয় বাইক রাইডিং পাঠাও’র আছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক রাইডার। এ ছাড়াও রাজধানীতে সহজ ডট কম, স্যাম, ওভাই, ওবোন ইত্যাদির আওতায় আছে আরো প্রায় ৫০ হাজার রেজিস্ট্রার্ড বাইক। এই হিসাবে রাজধানীতে মোট রেজিস্ট্রার্ড বাইকারের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট-এআরআই’র হিসাবে ২০১৭ সালে রাজধানীতে ৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। গত বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) ঢাকায় ৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৭ জনের মৃত্যু এবং ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের চালকের পাশাপাশি যাত্রীও ছিলেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, গত ছয় মাসে দেশে ১ হাজার ৪৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৪৭৮টি। ৬ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০৫ জন। এর মধ্যে ২২৪ জনের হেলমেট ছিল না। ২৩৯ জনের হেলমেট ছিল। আর মোটরসাইকেল ভিকটিমদের বেশিরভাগই তরুণ, যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা পেছনে কতগুলো কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো- অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন করা, ট্রাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলা, হেমলেট ব্যবহার না করা কিংবা নিম্নমানের হেমলেট ব্যবহার করায় সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বাড়ছে।
সবকিছু ছাপিয়ে ও আজকাল ঢাকা শহরের অসহনীয় অবর্ণনীয় ট্রাফিক জ্যামের পরিপেক্ষিতে অনেক গৃহবধূ ও নিত্যকার সহজ যাতায়াতের জন্য স্কুটি তে সুবিধা খুঁজে নিচ্ছেন, আমি নিজেও একটা নিয়ে রেখেছি। এবং যে সমস্ত বাইকার নিয়ম মেনে চলেন তাদের প্রতি আমার অশেষ শ্রদ্ধা। লেখা টা বাকিদের নিয়ে।
উপরের ঘটনার পরবর্তী অংশ -
সবকিছু বিবেচনায় আমি ড্রাইভার কে সিদ্ধান্ত দিলাম গাড়ি না পেছানোর, আইনের মানুষ হয়ে ও যদি আইন না মেনে নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে, তার জন্য আমার হৃদয়ে কোন শ্রদ্ধা আমি লালন করি না। পোশাকধারী বাইকারের ক্রমাগত হুমকিতে আমার ড্রাইভার পিছনের বদলে সামনে যে টুকু ভদ্রতা করে ফাঁকা ছিল সেটুকু ও সামনে নিয়ে আসেন গাড়ি। আরযায় কোথায় (সময় টা ছিল উনাদের শিফটিং ডিউটি শেষের) হা রে রে রে বলে বাইক পার্ক করে ছুটে আসলেন, আমার ড্রাইভার কে নামালেন, ৫/৬ জনের দল কলার ধরে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলেন। আমি সাথে সাথে ই নেমে বারবার উনাদের বলেছি - নির্দেশ দিয়েছি আমি, আমার সাথে কথা বলেন। মোটামুটি জটলার উপরে মহাসমাবেশ তখন, ড্রাইভার কে বললাম গাড়িতে উঠ আমি দেখি। উনারা যেতে ও দিবেন না, সাথে কার কি ক্ষমতা সেসবের বিস্তারিত। আশেপাশের সবাই আমার এলাকাবাসী এক হয়ে যাওয়াতে রক্ষে। এরপর উনারা উনাদের বামে চামে কাটার রাস্তা ছেড়ে ডাইনে মোর নিয়েছেন, আমরাও গন্তব্যের দিকে এগিয়েছি।
মোল্লার দৌড় মসজিদ তাই আমিও এমতাবস্থায় উল্লিখিত সমস্যার সমাধানকল্পে এলাকাবাসী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা টুকু করে গেলাম। আপনার ও দৈনিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রচুর প্রতিবেদন পাবেন, আমি শুধু বিবিসি বাংলার পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি করা, চালকদের অদক্ষতার অভিযোগ ও মানুষের আইন ভাঙার প্রবণতা নিয়ে নাকাল ঢাকার ট্রাফিক সিস্টেম]একটা লিঙ্ক সংযুক্ত করেছি।
সবার জন্য নতুন বছরের শুভেচ্ছা !
ছবি কৃতজ্ঞতা
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩৫