একজন সংবেদনশীল, নিজেকে নিয়ে ভাবা, নিজের সক্ষমতা দুর্বলতার পরিমাপ করে নিজস্ততায়, নির্দ্বিধায় স্পর্ধায় ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠা নারী সমাজের সম্পদ। অঢেল আবেগ, মায়া মমতার পাশাপাশি প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস টুকু ও আপন সত্ত্বায় মিশালে নারীশ্রেষ্ঠা। এমন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব সব সময় ই আমার শ্রদ্ধার আসনে।
ব্লগার নীল আকাশ এবং আমি পাশাপাশি অনেকদিন থেকেই ব্লগে, আমার সীমাবদ্ধতায় হয়ত - তেমন ভাবে তার লেখায় নিয়মিত ছিলাম না। যতদিন না উনি শবনম এর মত একটা চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। সেই শুরু, এরপর পাশাপাশি নাবিলা, শুভ ' র মত সমাজে দৃষ্টান্ত উপস্থাপনকারী কিছু চরিত্র ও নিয়ে এলেন। আমার আজকের লেখা এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত মহিউদ্দিন মোহাম্মদ যুনাইদ ( ব্লগার নীল আকাশ) এর উপন্যাস নমানুষ নিয়ে।
শুরুতেই দর্শন ধারী হিসেবে ও উপন্যাসের আমেজ কে দারুণ ভাবে উপস্থাপন করা একটা প্রচ্ছদ এসেছে, প্রচ্ছদে যে নারী অবয়ব আঁকা হয়েছে, কী ভীষণ মায়া বেদনা অথচ নির্লিপ্ততা ! আমি তো এ চোখের মায়ায় পরে গেলাম।প্রচ্ছদ টি এঁকেছেন আমাদের অতিপ্রিয় " মোজাদ্দেদ আল ফাসানী জাদিদ ! চমৎকার কাজ জাদিদ, অভিনন্দন এবং শুভ কামনা।
শব্দশিল্প প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত ১৭৫ পৃষ্ঠার উপন্যাস, হাতে নিলে বেশ বই বই ভাবের ওজনদার এই বই এর দাম রাখা হয়েছে ২৫০। (পাঠ প্রতিক্রিয়ায় এসব তথ্য সংযুক্তি ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে ক্লান্ত করে, বই এর বিষয় নিয়ে আলোচনা মনোযোগ কম পায়) প্রতিষ্ঠিত তারকা লেখকদের বই এর মত অলংকরণ সমৃদ্ধ না হলে ও বেশ ঝরঝরে ছাপা, পাঠে বিরক্তি আসে না। উৎসর্গে নাম এসেছে লেখকের সহধর্মিণীর এবং অকপটে স্বীকার করেছেন লেখক শারমিন বেগম দিনার অবদান। সত্যিকার অর্থে এটুকু না বললে ও সত্যিকার অর্থে প্রতিটি উৎসর্গের প্রথম নাম লেখকের সহধর্মী বা সহধর্মিণী ই থাকেন, অনুপ্রেরণা উৎসাহ অন্য সবার সাথে অপ্রকাশিত ভাবেই জীবন সঙ্গী থাকেন। বানান ভুল আমি সাধারণত ধরতে পারি না, কিছু শব্দ মনে হয়েছে লেখকের বানান ই এসেছে।
যুনায়েদের লেখায় সম-সাময়িক সমাজের যে অসংগতি অবক্ষয় উঠে আসে এ উপন্যাস ও সেসব নিদারুণ বাস্তবতা নিয়ে ই এগিয়েছে। একজন সোমা থেকে সিমি হয়ে উঠা, ফাহরিনের মা থেকে র্যাম্পের উদীয়মান তারকা হতে চাওয়ার মূল্য পরিশোধ- গার্মেন্টস কর্মীদের জীবন সংগ্রাম এমন কয়েক জুটির সমান্তরালে চলা জীবনের ছবি আঁকা আছে উপন্যাসে, উঠে এসছে সমাজের উচু তলার বাসিন্দাদের ততোধিক নিচু মন। সাথে সিগনেচার ক্যারেক্টার হিসেবে এসেছে শুভ, শবনম, নাবিলা। ভাষা বর্ননা সাবলীল, উপন্যাসের চরিত্র অনুযায়ী পাশাপাশি চলা কয়েক জীবনের গল্পকে, শুরুতে একটু জট পাকানো মনে হলেও লেখা যত এগিয়েছে, সমান্তরালে সেসব জট ও খুলে যায়। লেখক প্রায় প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে কিছু জীবন ঘনিস্ট অনুভব বিভিন্ন চরিত্রের বয়ানে, গল্পকে খোলাসা করেছেন। এ ধরনের লেখা আমাদের পারিপার্শ্বিক সমাজে কি ঘটছে সে সচেতনতা বাড়ায়। সংলাপে যে খুঁটিনাটি বর্ণনা তা অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সংযমী আলাপ আমার ভালো লেগেছে। উপন্যাসে লেখক লেখার শেষ পর্যন্ত আগ্রহ ধরে রেখেছেন, প্রথম কয়েক প্যারায় অনুমিত নয় অবশ্যই। চরিত্র চিত্রণের যে দৃঢ়তা এনেছেন শুরুতেই বলেছি সেকথা, আমার অন্যতম ভালোলাগার দিক এটা। এবং এ জন্যেই হয়ত আমার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল।
লেখক একজন পেশাগত লেখক নন, তবে বেশ এগুচ্ছেন প্রফেশনালিজমের দিকে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বেশি চরিত্র চলে এসেছে যা কিছু টা জটিল মনে হয়েছে, আরও একটু বড় করা যেত, মানে লেখা চট জলদী শেষ না করলেও চলত। তবে এ সময়ের পাঠকদের পাঠ অভ্যাস ও মনে হয় লেখকের বিবেচনায় ছিল, যারা দীর্ঘ লেখা কে ভয় পান। সব মিলয়ে বেশ উপভোগ্য উপন্যাস। খুব আপনার মূল্যবান সময় ও দাবী করছে না আবার আপনার চারপাশে মুখোশের আড়ালে কত কি ঘটছে সে ব্যাপারগুলো নিয়ে আপনাকে সচেতন করছে, এরপর কী ঘটল ? তারপর তারপর থ্রিলিং আনন্দ রয়েছে।
অভিনন্দন নীল আকাশ [/sb]দ্বিতীয় প্রকাশিত উপন্যাসের জন্যে, আশা করছি পাঠক প্রিয়তা পাবে নমানুষ!
আর হ্যাপি রিডিং পাঠক সমাজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:৪৬