প্রমত্ত পদ্মা' র কুলে বসে ভরা বর্ষার উন্মত্ত রূপ দেখতে মন চায় ভারী। ইচ্ছে করে না পাওয়ার আক্রোশ বুকে নিয়ে প্রতি ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেতর থেকে ভাঙা পাড়ের চূড়ায় বসে তার উন্মত্ততা দেখি। মেঘের গর্জন, মাটি ভাঙার আর্তনাদ আর ঢেউয়ের ক্রোধ - মিলেমিশে ঐক্যতান ! হৃদয় ভাঙার আওয়াজ কী এর চাইতে তীব্র ?
নিজস্ব একটা পাহাড় তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না, তাই এ সময়গুলোতে বৈষ্ণব কবিদের কবিতার মত ঘর সংসার সমাজ বিশ্ব সকল কিছুকে মিথ্যে বলে ঘোষণা দিতে ইচ্ছে করে। একমাত্র সত্য হৃদয়! যেথায় কেবল ই মনের রাজত্ব ! কেবল ই মন আর আকুলতা ছাড়া বিশ্বের সব কিছু মিথ্যে! সর্বৈব মিথ্যা।
মহুয়া অশোকে, তমাল শিরিষে নুয়ে থাকা পাহাড়িয়া জংগলে কুর্চি জারুলে ছাওয়া পথে নেমে। ডিবডিব পায়ে কেতকী নাগেশ্বরের পাতায় ভর করে ভেসে বেড়াবো শুধু। এক পা ফেলতেই বন পাহাড়ের সমস্ত বৃক্ষে চাঞ্চল্য, দু পায়ে কাড়াকাড়ি। পদ্ম পায়ের স্পর্শের আশায় ভেজা পাতা বর্ষাবে তুমুল। সাম্পান পা সে মুহূর্তে উড়িউড়ি চঞ্চল ফড়িঙ ডানা। সান্ধ্য ভাষায় ফিসফিস করে কথা বলবো কেবল, যে বাক্যের পরতেপরতে সাজানো থাকবে সন্ধ্যার কুহেলিকা আর মায়া। মাঝ অরণ্যে বাংলোর জানালার শার্শিতে জলের দাগে আঁকিবুঁকি করে কাটাবো প্রহর, আমাদের সমস্তটা জুড়ে নেবো অরণ্যের আঘ্রাণ। কুন্দ কেতকী আর চন্দন !!
আমাদের পৃথিবী ভালো নেই, আমাদের আশপাশ জর্জরিত আঘাতে অনাঘাতে। তবুও দিনশেষে আমরা সৃষ্টিকর্তার আশ্রয়ে, নিজেদের ভালোলাগাটুকু নিয়ে সুখ খুঁজি। সব অসুন্দর ঝঞ্ঝা ঝড় সামলে খুঁটে খুঁটে জীবন কে সাঁজাই বজ্রবুলি ভাষায়। যে ভাষায় কোন অমধুর শব্দ নেই, কঠিন শব্দ থাকতে নেই। যে শব্দ উচ্চারণে অসুন্দর অনুরণিত তাদের বদলে সুন্দর করা হয়। আমরা সব সময় চাই খুব মিঠেল সুরময় গীতিময় হোক জীবন, বজ্রবুলি' র মতন।যেথায় বিদ্যুৎ বিজুরি, রেখা হয়ে যায় রেহা শুধু মাধুর্য বিলায় বলে।।
সন্ধ্যার মেঘমালার শুভেচ্ছা সবাই কে, শুভ সন্ধ্যা !
বজ্রবুলি তে রবীন্দ্র সংগীত
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:২১