সে যাক দেশে থিতু হবার পর থেকে বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে আমাকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ট্রাভেল করতে হয়। সামু' র মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার সুবাদে আমি আজ লিখতে বসে এই সবকিছুতে পজিটিভ বা হ্যাঁ বাচক, ধনাত্মক, ইতিবাচক, আশাব্যঞ্জক, খুঁজে নেয়ার মাঝে পজিটিভ দিকই খুঁজে পেলাম। এবং ফলাফল আজকের এই পাঠ প্রতিক্রিয়া!!!
ব্লগে লগইন করতে পারলে তো বেশিরভাগ সময় ব্লগিং করেই সময় কেটে যায়। এই ব্লগ বিছিন্ন অবসরটুকু নিয়ে নিয়েছে বই। বেশ একটা অন্য রকম আবেশ আছে ছাপার অক্ষরের, সেটুকু আমাদের বই পড়া জেনারশনের কাছে ভীষণ উপভোগ্য।
আজকে আমার পড়া যে বই নিয়ে লিখতে বসেছি - আমাদের ব্লগের একজন পরিচিত অনেকের প্রিয়মুখ, নিজের পেশাগত জীবন ও আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্র দারুনভাবে সফল। নিঃসন্দেহে একজন দেশীয় আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। ব্লগার মলাসিলমুইনা' র ২০০২ এর বই মেলায় প্রকাশিত বই অস্টধা নিয়ে।
বই : অষ্টধা
প্রকাশক - জাগৃতি প্রকাশনী,
প্রথম প্রকাশ- অমর একুশে বইমেলা ২০২২
পৃষ্ঠা -১৪৮,
মূল্য : ৪০০ টাকা
প্রাপ্তিস্থানঃ অমর একুশে বইমেলা
অনলাইন পরিবেশক -রকমারি
অস্টধা একটি সিরিয়াস বই আমাদের চলমান সমাজের অসংগতি সমাজের অনিয়ম যা বর্তমানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। সেসব নিয়মের বাইরের কিছু গল্প আর গল্পগুলো লেখা হয়েছে চলমান যেসকল ঘটনাবলি নিয়ে প্রবন্ধ লেখা হয়েছে সেই প্রবন্ধের আঙ্গিকে। সে জন্যে লেখক গল্প গুলোকে গল্প না বলে বলেছেন প্রগল্প ( প্রবন্ধ থেকে গল্প )। বই খানির প্রবন্ধ এবং প্রগল্পের বিষয়গুলো ভাবগম্ভির হলে ও লেখক চমৎকার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন লেখায় স্টাইলে, প্রগল্প গুলোতে এসেছে পাঁচমিশালি গল্পের ফ্লেভার।
২৭সে ফেব্রুয়ারি দৈনিক "কালের কণ্ঠে" মোহাম্মদ আসাদের "বেড়েছে সিরিয়াস বইয়ের পাঠক " শিরোনামে লেখায় যেভাবে তুলে এনেছেন মোহাম্মদ আসাদ সেটুকু নিঃসন্দেহে আমার এই পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখনীর চাইতে অনেক ফোকাসড। অস্টধা বই নিয়ে মোহাম্মদ আসাদ লিখেছেনঃ
"অষ্টধা: খন্দকার নাইমুল ইসলামের গ্রন্থ ‘অষ্টধা’ মেলায় এনেছে জাগৃতি প্রকাশনী। অভিনব এই গ্রন্থটিতে লেখক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে শুরুতে আটটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ওই প্রবন্ধগুলোর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে পরে লিখেছেন আটটি গল্প, যাকে লেখক বলছেন প্রগল্প। সূচিবিন্যাসে প্রতিটি প্রবন্ধের পর স্থান পেয়েছে পৃথক গল্প।"
বই আলোচনায় নিজের বই নিয়ে পোষ্টে লেখক বলেছেন-
নিজের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্যই এখন দেশের অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের ইস্যু-গুলো নিয়ে অনেক ভাবনাই মাথায় থাকে।একটু যে লেখাজোখা করি তাতে না চাইলেও তার ছোয়া লেগেই যায়।এই বইয়ের প্রবন্ধ আর গল্পও অনেকটা সে রকম।
প্রবন্ধ এবং প্রগল্পের আলোচনায় যাবার আগে একটা প্রচলিত গল্প দিয়ে শুরু করি। জানি না আদৌও বই আলোচনা শুরু করবো ? নাকি উনপঞ্চাশ বাই এর চক্করে থাকবঃ
এক মা তার সন্তান কে ঔষধ খাওয়াতে হিমশিম অবস্থা। কিছুতেই বাচ্চা ঔষধ খাবে না, এদিকে সেই বাচ্চার আবার মিষ্টি খুব পছন্দের। বিশেষ করে রসগোল্লা! তো মা শিশুটিকে চমৎকার একটা সাদা গোল রসে টুইটুম্ববুর রসগোল্লার মাঝে ট্যাবলেট রেখে সেটা শিশুকে খেতে দিলেন। ভাবলেন মিষ্টির সাথে না বুঝে শিশু খেয়ে নেবে। তো খাওয়া শেষ হবার পর, মা জিজ্ঞেস করলেন।
- বাবু রসগোল্লা খেয়েছ ? কেমন ছিল মজার ? শিশুটি উত্তর করলো।
- হ্যাঁ অনেক মজার ছিল খেয়েছি,কিন্তু খাবার সময় রসগোল্লার আঁটি টা ফেলে দিছি।
জি হ্যাঁ আমার মত স্মার্ট শিশুরা সিরিয়াস প্রবন্ধের আঁটি ফেলে রসে ডোবানো রসগোল্লাই খাবে সবাই জানেন! আমি ও ঠিক সেটাই করেছি। যেহেতু প্রবন্ধ গুলো আগেই সামু ব্লগে লিখিত এবং প্রকাশিত, আর আটটা প্রগল্পের দুটো: 'ড্রইংরুম' আর 'বিশেষ অতিথি' ব্লগে লেখা। এবং প্রগল্পের একটা ‘আকাশ গঙ্গার তারা’র গল্প( গত বছরের প্রকাশিত বই )। সুতরাং আশা করছি ব্লগার রা অনেকেই প্রবন্ধ ও প্রগল্প সম্পর্কে ধারনা রাখেন। বাকি পাঁচটা প্রগল্প নিয়ে ই কিছু ধারনা দেবার চেষ্টা করছি।
প্রেতাত্মাঃ
এই গল্পটির কাহিনী এগিয়েছে একজন মফস্বলের কলেজ শিক্ষকের একটু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হবার পরের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে। চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা সহ উঠে এসছে বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতির কালো ছায়া।
ঈস্বরের খোঁজেঃ
নিত্যকার জীবনে আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা থাকে নিজেকে শুদ্ধ করার। ভুল ক্রুটি নিয়ে জন্মানো মানুষ আমরা আমাদের পারফেকশন এর প্রশংসা শুনতে সবাই ভালোবাসি। নিজেদের চারপাশে কেউকেউ কাল্পনিক বলয়ে চাটার দলের চামচামি আর প্রশংসা শুনে নিজেকে কেউ গড়ি ফেরাউন কেউ বা সাদ্দাদ। বিজ্ঞান কল্প গাঁথায় একজন নোয়া নিজেকে ভুল ত্রুটি র ঊর্ধ্বে উঠা একজন হতে পারার সুযোগ পেয়ে ও কেবল মানুষ হতে চেয়েছেন। যারা সায়েন্সফিকশন পছন্দ করেন তাদের জন্যে তো বটেই, গল্প শুনতে চাওয়া আমাদের ও গল্পের নোয়া নিয়ে যাবে আশ্চর্য একজন মানবিক মানুষের হাসি কান্নার পৃথিবীতে।
প্রমিত দূরত্বে একজন নিঃসঙ্গ মৃত্যুর গল্পঃ
করোনা কালীন পরিচিত সময়ের উপর লেখা। এত গল্প নয় ভীষণ চেনা সংবাদ পত্রের শিরোনাম হয়ে উঠা খবর। লাশের বাণিজ্য লাশের রাজনৈতিক ফায়দা লুটার ছক।
শোকবার্তাঃ
বর্তমান বাংলাদেশের সার্বিক নির্বাচন এই প্রগল্পের বিষয় বস্তু। রাতের নির্বাচন, ভোট সকালে শুরু হবার আগেই শেষ হবার নির্বাচন। মৃত আত্মীয় স্বজন পরিজনের ভোট দেবার নির্বাচন ! ১০০% ভোটারের মাঝে ১০৫% ভোট পেয়ে জেতার নির্বাচন ! খুব চেনাশোনা কাহিনী কিন্তু লেখকের লেখার ক্যানভাসে আসবার পর উপস্থাপন গল্পের গাঁথুনির গুনে তা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
প্রগল্পের এই ধারনাটুকু একেবারেই নতুন বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। এই বৈশ্বিক হাতের মুঠোয় তথ্য প্রবাহের যুগে, সাহিত্যের যে কোন ধারার পাঠক পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য। নতুন একটি ধারা যদি পাঠকে কাছে টানে, পাঠে আগ্রহ বাড়ায় সেতো আনন্দের। আর এই সিরিয়াস সমাজ পরিবর্তনের চিন্তাটুকু নবীন পাঠকদের মাঝে চিন্তার খোরাক হয় তাহলেই না লেখালিখির সার্থকতা !!!
সাহিত্যকে জীবনের নতুন দিক দর্শন ধরে নিয়ে অষ্টধা নিয়ে লেখকের বাংলা সাহিত্যের প্রগল্প লেখার নতুন দিক দর্শনের সূচনা করতে চাওয়ার যে আন্তরিক চেষ্টা টুকু সেটুকু দারুণ ভাবে সফল হোক।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার মলাসইলমুইনা
অস্টধা বই নিয়ে লেখকের লেখার লিঙ্কঃ
আটটি প্রবন্ধ,আটটি প্রগল্প নিয়ে ২০২২ একুশে বইমেলায় আমার 'নতুন কিছু করো' প্রচেষ্টার বই ‘অষ্টধা’র গল্প
অমর একুশে বইমেলায় আমার 'সিরিয়াস' বই ‘অষ্টধা’ আর ‘তাই দিয়ে --- রচি মম ফাল্গুনী’ ফটো ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৩৯