somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গান্ধী আশ্রম : গান্ধীবাদের খোঁজে

১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুরে এলাম ‘’গান্ধী আশ্রম’’। ভাবছেন ভারত থেকে ঢু মেরে এলাম ! ঠিক তা নয়। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা জয়াগ গ্রামেই বাংলাদেশের একমাত্র গান্ধী আশ্রমের অবস্থান।

গান্ধী আশ্রমের কথায় আসার আগে কিছু পুর্বকথায় না গেলেই নয়।


সময়টা ১০ অক্টোবর ১৯৪৬। লক্ষী পুজার ঝলমলে সে রাতে নোয়াখালীতে শুরু হয় ভয়ঙ্কর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। অনেকে এটিকে গেট কোলকাতা কিলিং দাঙ্গার রেশ বলে মনে করেন। এটি প্রায় তিন সপ্তাহ স্থায়ী ছিল।


দাঙ্গার খবরটি মহাত্মা গান্ধীর কানে পৌছালে দাঙ্গা নিরসনে তিনি তৎক্ষনাত নোয়াখালী আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং ৭ই নভেম্বর, ১৯৪৬ এ গান্ধী নোয়াখালীর চৌমুহনী রেল ষ্টেশনে এসে পৌছে সেখানেই প্রথম জনসভা করেন।


এরপর দত্তপাড়া এলাকায় সভার মধ্য দিয়ে শুরু হয় গান্ধীর গ্রাম পরিক্রমা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারী তিনি জয়াগ গ্রামে পদার্পন করেন এবং ৩০ জানুয়ারী সেখানে উদ্ধোধন করেন একটি বুনিয়াদী বিদ্যালয় যা বর্তমানে ‘’গান্ধী মেমোরিয়াল টেকনিক্যাল ইনিষ্টিটিউট’’ নামে পরিচিত।


তত্কালীন জমিদার নোয়াখালীর প্রথম ব্যারিষ্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ জয়াগে গান্ধীজির আগমন এবং তার বাড়ীতে অবস্থানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মহাত্মাকে দান করেন এবং তার পিতামাতার নামানুসারে ‘’অম্বিকা কালীগঙ্গা চেরিটেবল ট্রাষ্ট’’ গঠন করেন।

চারু চৌধুরী ছিলেন এই ট্রাষ্টের প্রতিষ্টাতা সেক্রেটারী। ২রা মার্চ আরেকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবর পাওয়ায় গান্ধীজি বিহার ফিরে যাওয়ার প্রাককালে চারু চৌধুরীকে নোয়াখালীতে শান্তি মিশন ও ট্রাষ্টের কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং আবার নোয়াখালী আসার প্রতিশ্রুতি দেন।


তবে তার পরের বছরই গান্ধীজি খুন হন। গান্ধীজি আর কখনো নোয়াখালী না ফিরলেও হাজার বাধা অতিক্রম করে চারু চৌধুরী গান্ধীজিকে দেয়া কথামত ঠিকই সেই ট্রাষ্ট আর শান্তি মিশনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান।



স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে ‘’অম্বিকা কালীগঙ্গা চেরিটেবল ট্রাষ্ট’’ ভেঙ্গে ‘’গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট’’ সৃষ্টি করে।

উক্ত ট্রাষ্টটি বর্তমানে নোয়াখালী, লক্ষীপুর এবং ফেনী জেলার প্রায় ৩৩২ টি গ্রামে কৃষি, মৎস, শিক্ষা, মানবিক উন্নয়ন, হস্ত ও কুটির শিল্পসহ আরো নানান কর্মসুচী নিয়ে চলছে।


তবে ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে অকর্ষনীয় বস্তু হচ্ছে এখানকার ‘’গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর’’, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন আলোকচিত্রে গান্ধীর কর্মময় জীবন, নোয়াখালীতে গান্ধী এবং ভারত সরকার থেকে দেয়া গান্ধীর একটি আকর্ষনীয় ব্রোঞ্জের মূর্তি। আর আশ্রম একালার গান্ধীর বানীসম্বলিত কিছু সাইনবোর্ডও আপনার নজর কাড়বে।



ঢাকা থেকে গান্ধী আশ্রম যাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সায়েদাবাদ থেকে ঢাকা-রামগঞ্জ (ভায়া লাক্সাম) এ যেসব বাসগুলো যায় তাতে উঠে সবাসরি জয়াগ বাজার নামা। জয়াগ বাজারের পাশেই গান্ধী আশ্রমের অবস্থান। ভাড়া নেবে ২৮০-৩০০ টাকা।


এছাড়া ঢাকা-নোয়াখালী বাসে উঠলে আপনাকে নামতে হবে সোনাইমুড়িতে। সেখান থেকে সিএনজি অথবা লোকাল বাসে প্রায় ১০কিলোমিটার পেরোলেই আপনি পৌছে যাবেন জয়াগ বাজার।
নোয়াখালী সদর(মাইজদি) থেকে গান্ধী আশ্রমের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।


গান্ধী স্মৃতি জাদুঘরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাদুঘরের ভিতরের কোন ছবি তোলা যায়নি। তবে আলোকচিত্রে এক নজরে গান্ধী আশ্রমটি দেখে নিন :



গান্ধী আশ্রমের মু্ল গেইট


গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট অফিস ভবন


গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর


গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর


মহত্মা গান্ধী রিসোর্স এন্ড ইনফরমেশন সেন্টার


গান্ধীর বাণী সম্বলিত সাইনবোর্ড


তাত ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষন কেন্ত্র


গান্ধী আশ্রমে গিয়ে গান্ধীবাদ এবং গান্ধীবাদী মানুষের দেখা পেয়েছিলাম কিনা সে বিতর্কে যাবনা। সেটা বিচারের ভার আপনারাই নিন। একবার গিয়ে ঘুরেই আসুন গান্ধী আশ্রম।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:২০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×