somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিন দিন আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ হিসাবে আমাদের অনুভূতি যত খানি সূক্ষ্ম থাকা উচিৎ তা না থেকে দিন দিন আরও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে মৃত্যু দেখে দেখে আমাদের আর মৃত্যুর জন্য দুঃখ বোধ সৃষ্টি হয় না। চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখলে আমাদের আর খারাপ লাগে না। পত্রিকায় অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনার নিউজ পড়লে আমাদের মন আর আলোড়িত হয় না। কোন কিছুতেই আর কোন কিছু হয় না। কোন ঘটনায় আর আমাদের মনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনা এবং স্বাভাবিক কাজ কর্মের কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা দিন দিন কতটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি তা আমরা নিজেরাই জানি না। আমরা জানি শুধু এটায় আজ সে মরছে ছুরিকাঘাতে বা পিস্তলের গুলিতে বা কোন দুর্ঘটনায়। কাল এমনি ভাবে মরবে আর একজন বা আমি। মরা’য় ধর্ম মরা’য় উৎসব মরা’য় প্রথা। কে ভাবে কার কথা! জানি শুধু এটায়, আজ অন্যায় হচ্ছে তার সাথে। কাল হবে আর একজনের সাথে বা আমার সাথে। অন্যায় হওয়ায় ধর্ম, অন্যায় হওয়ায় উৎসব, অন্যায় হওয়ায় প্রথা। কে শোনে কার কথা!

বাংলাদেশের প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান উৎসব, দুটি ঈদ। সেই ঈদকে কেন্দ্র করে কর্মজীবী মানুষরা দীর্ঘ একটা ছুটি পায়। সেই ছুটিতে, নাড়ীর টানে আত্মার টানে তারা তাদের প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যায়, উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত, উশৃঙ্খল যাত্রা পথের জন্য তাদের কারও কারও আনন্দ পর্ব হয়ে যায় শোক পর্ব। এবার ঈদুল আযহার ঈদের গত কয়েক দিনে মরল ২৬৫ জন বা এর থেকে বেশি। শুধু মাত্র ত্রুটিপূর্ণ ও উশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই সকল অপমৃত্যুর জন্য দায়ী। শুধু উৎসবে কেন, বছরের প্রায় সব সময়ই এই সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বড় মহামারী বাংলাদেশের জন্য। এই মহামারী প্রকৃতির দান নয়। এটা মানব সৃষ্ট। কতকগুলি অদক্ষ, উশৃঙ্খল চালক এর জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী। আমরা ইচ্ছা করলে এই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। শুধু সড়ক পথে কেন, নৌপথেও একই অবস্থা।

কে বহন করবে এই সকল অপমৃত্যুর দায় ভার? শুধু দশ বা বিশ হাজার বা এক লক্ষ টাকা দিলেই কি চুকে যায় সমস্ত দায় ভার? তাও কি ঠিক মত পায়!

এই সকল অপমৃত্যুর দায়, এই সকল অপমৃত্যুর শোক- এমন এক ধরনের দায়, এমন এক ধরনের শোক যা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় একটি পরিবারকে। ধ্বংস হয়ে যায় একটা পরিবার, যদি মৃত ব্যক্তিটি উপার্জনক্ষম হয়। রসাতলে চলে যায় একটা পরিবার, যদি ঐ মৃত ব্যক্তিটি একমাত্র উপার্জনক্ষম হয়। যা কোন ভাবেই আর শোধ হয় না সেই অপূরণীয় বেদনার। সাড়া জীবনেও শোধ হয় না সেই অপূরণীয় ক্ষতির। অথচ এটা আমাদের কাছে কোন ব্যাপারই না!

কোন হিসাবে আমরা নিজেদের সভ্য বলি? আমাদের আচরণ, আমাদের কার্যকলাপ কি তাই বলে? যদি বলে, তাহলে কেন আমরা এই সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলির সঠিক প্রতিকার পাই না। কেন আমরা এই সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলির সঠিক প্রতিকার দিতে পারি না। কোথায় সেই সীমাবদ্ধতা? কোথায় সেই অনিয়ম? খুঁজে বের করতে হরে। শুধু চোখ কান বুজে বসে থাকলে চলবে না। মনে রাখুন আজ যার সাথে হল, তার সাথে তো হলোই। কিন্তু আগামি কাল ওঁতপেতে বসে আছে আপনার জন্য বা আমার জন্য! তাই চোখ কান বুজে বসে থেকে লাভ নাই।

আসুন, কিছু করতে পারি আর না পারি- পথে নামতে তো পারি, পথে নেমে প্রতিবাদ করতে তো পারি- সূমহ অপরাধগুলির। আজও কেন তনু’রা তাদের ধর্ষনের বিচার পায় না। কোথায় সেই কুচক্রীর চক্র? সেই কুচক্রীর চক্র আমরা থেমে দিতে চাই। যাতে নতুন করে কোন কুচক্রীর হাতে ঐসকল নিরহী মানুষগুলির মত খুন হতে না হয় । আফসানা’র মত রিশা’র মত খুন হতে না হয়। আর কোন শ্রমিককে আগুনে পুড়ে মরতে না হয়। আর কোন শ্রমিককে দালান চাপায় পড়ে মরতে না হয়।

এই সকল যদি আমরা করতে না পারি, তাহলে কিসের জন্য আমাদের এই সমাজব্যবস্থা, কিসের জন্য আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থা? যদি আমাদের সঠিক স্বাভাবিক জীবন ধারনের ব্যাবস্থা আমরা করতে না পারি তাহলে, কার সার্থে বা কাদের সার্থে এই জড়সড় সমাজ ব্যবস্থা, কার সার্থে বা কাদের সার্থে এই পৌঢ় রাষ্ট্র ব্যবস্থা! আমরা চাইনা এই বন্ধ্যা, জড়সড় মার্কা অনীয়মের ভাগাড়তুল্য এই সমাজ ব্যবস্থা, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আমরা ভেঙ্গে ফেলব, সঠিক সমাধান না পেলে। আমরা উল্টে দিব এই বন্ধ্যা হয়ে যাওয়া, এই পৌঢ়া হয়ে যাওয়া সমাজ ব্যবস্থা। পুড়ে ছারখার করে দিবো কুচক্রীদের আস্তানা।

অবাক লাগে, হাত-পা উত্তেজনায় কাঁপে যখন ভাবি- কোন উদ্দেশ্যে আমাদের পূর্ববর্তীরা মুক্তি সংগ্রাম করেছেন, আর আমরা কোন ফল পাচ্ছি। সেই মুক্তি সংগ্রামের ফল- স্বাধীনতা কার জন্য, কাদের জন্য? গুটি কতক শাসক শ্রেণীর ইচ্ছামত শাসন করার জন্য? না আপামর জনসাধারণের মুক্তির জন্য? কোথায় আমরা মুক্তি পেলাম? স্বাধিনতার প্রায় অর্ধ শতক হতে চালল, ক্ষমতায় একদল যায় আর একদল আসে। এই গুটি কতক তাদের নিজেদের স্বার্থে স্বাধিনতার টুটি চেপে ধরে আছে। তাদের কেউ কেউ জনগণের টাকা মেরে সুইচ ব্যাংকে জমায়।

আমরা কি আজও ফারাও সাম্রাজ্যে বসবাস করছি, সেই ক্রীতদাস বনী-ইসরাইলদের মত? আমাদের জানের, আমাদের মালের কোন নিরাপত্তা নাই। ইজ্জতের মূল্য নাই। বাড়িতে, পথে, ঘাটে খুন হচ্ছে বিচার নাই ; ধর্ষণ হচ্ছে বিচার নাই। সরকারী অফিসে গেলে উপরি দিতে হয়, না দিলে কাজ হয়না! হাসপাতালে গেলে ডাক্তার পাওয়া যায় না! ইস্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পাওয়া যায় না। আদালতে গেলে পাঁচ-সাত জোড়া জুতা ক্ষয়ে গেলেও বিচার পাওয়া যায় না। আইন শৃঙাখলা রক্ষাকারী বাহিনী উল্টা সন্ত্রাস করে। আজ সব কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক! আজ সব কিছু ভোগ্য পণ্য। হাত বাড়াও টাকা দাও তারপরে নাও। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ গোটা জাতিকে আজ জিম্মি করে রেখেছে। তারা পরগাছার মত, অক্টোপাসের মত গোটা জাতির ভাগ্য গিলে খাচ্ছে।

পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তন কেউ এমনি এমনি করে দিবে না। এর জন্য নির্যাতিতদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। মরা অনুভতিগুলিকে জাগ্রত করতে হবে। মনে সাহস সঞ্চয় করতে হবে। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত হানতে হবে। পথে ঘাটে অফিস আদালতে যেখানেই অনিয়ম সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে।
আমাদের নতুন করে শপথ করার সময় এসে গেছে। ঘ্যাঁচর ঘ্যাঁচর করা পুরাতন দিনের অনীয়মের দাসত্ব করতে চাইনা। প্রয়োজনে কিছু করবনা তাও ভালো তবুও অনীয়মের কাছে মাথা নত করব না। আমরা নতুন দিনের গান শুনতে চাই। নতুন দিনের নতুন গান শুনতে শুনতে নতুন আলো ফোটাতে চাই।
—- ( জয় বাংলা)

–মশিউর রহমান
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×