somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলীগ করার জন্য কি আলেম হওয়া শর্ত??

১২ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন:
অনেকেই বলে থাকেন যে, তাবলীগ করার জন্য আলেম হওয়ার শর্ত। তাই বর্তমান প্রচলিত তাবলীগ জামাতে সাধারণ মুসলমানগণ যে, তাবলীগ করছেন, তা ঠিক নয়। তাদের জন্য এ কাজ করা জায়েজ নয়। বরং তাবলীগ করার জন্য আলেম হওয়া শর্ত। তাই আমার প্রশ্ন হল-তাবলীগ করার জন্য কি আলেম হওয়া শর্ত?
জনৈক ব্যক্তি
ঢাকা, বাংলাদেশ

উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
না, তাবলীগ করার জন্য আলেম হওয়া জরুরী নয়। তবে আলেম হলে উত্তম। এক হল হিফাযতে দ্বীন তথা দ্বীনের মৌলিকত্ব রক্ষা করা। আরেক হল ইশাআতে দ্বীন তথা দ্বীন প্রচার করা।
হিফাযতে দ্বীন তথা দ্বীনের মৌলিকত্ব রক্ষার জন্য আলেম হওয়া জরুরী। কেননা, কোন কাজ বেদআত, কোন কাজ শিরকী? কোন কাজ কুফরী? কোন কাজ হারাম? এসকল বিষয় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয় সমাজে প্রবিষ্ট করলে তা প্রতিরোধ করার জন্য কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞ উলামা প্রয়োজন। উলামা ছাড়া এসব প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
পক্ষান্তরে দ্বীন প্রচার সাধারণ মুসলমান দিয়েও হতে পারে। এ কারণেই রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৫৪২}
এখানে আলেম, গায়রে আলেম কাউকেই সুনির্দিষ্ট করেননি। বরং সকল মুসলমানদের উপর দায়িত্ব হল, যিনি দ্বীনের যে বিষয় জেনেছেন তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া। এর নামইতো তাবলীগ।
আর দ্বীনের জটিল বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ ও গায়রে আলেমদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তারা আলেম ও ফক্বীহ মুজতাহিদদের অনুসরণ করে চলতে। নিজে নিজে মনগড়া মত প্রকাশ না করতে। ইরশাদ হচ্ছে-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [١٦:٤٣]
আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; {সুরা নাহল-৪৩}
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا [٤:٨٣]তাদের কাছে যখন কোন সংবাদ আসে, তা শান্তির হোক বা ভীতির, তারা তা [যাচাই বাছাই না করেই] প্রচার শুরু করে দেয়। তারা যদি তা রাসূল বা যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের কাছে নিয়ে যেত, তবে তাদের মাঝে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার বাস্তবতা জেনে নিত। {সূরা নিসা-৮৩}
কিন্তু দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে এরকম কোন বাধ্যবধকতা নেই। বরং মুর্খরাও দ্বীন প্রচার করতে পারে। যেমনটি রাসূল সাঃ এর আরো হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয়।
যেমন রাসূল সাঃ বিদায় হজ্বের সময় উপস্থিত লাখো সাহাবাগণকে সম্বোধন করে বলেছেন- فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ তথা উপস্থিত ব্যক্তিরা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দাও। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৪৬, ১৩৫৪}
সুনিশ্চিতভাবে বিদায় হজ্বের ঐ ভাষণের সময় উপস্থিত সকল সাহাবাগণ আলেম ছিলেন না। কারণ সেখানে এমন ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন, যাদের অনেকেই তখন নতুন মুসলমান হয়েছেন। অনেকে রাসূল সাঃ কে সর্বপ্রথম দেখেছেন। সুতরাং তাদের আলেম হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। অথচ রাসূল সাঃ সবাইকেই দায়িত্ব দিয়েছেন, যেন তারা দ্বীনের এ দাওয়াতকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেন।
সুতরাং এর দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান যে, দ্বীন প্রচারের জন্য আলেম হওয়ার দাবিটি বোকামী সূলভ দাবি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×