somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাল্যস্মৃতি, সাইদী সাহেব ও অন্যান্য

১৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটকালে দেখেছি গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে আইসক্রিম বিক্রেতাওয়ালারা যখন যেত তখন সাইদী সাহেবের ওয়াজ বাজতো মাইকে।

ওয়াজ বাজতো ক্যাসেটে। ভ্যানের সামনে মাইক সেট করা থাকতো।

মাঝে মাঝে ওয়াজ থামায়ে বিক্রেতা আইসক্রিম কেনার জন্য মাইকে ডাকতো। আট আনায় লাল আইসক্রিম আর এক টাকায় দুধ মালাই।

যখনকার কথা বলছি তখন মোবাইলই বাংলাদেশে আসে নাই। ইন্টারনেট, এন্ড্রয়েড, ইউটিউব, ফেসবুক, আওয়ামী ধর্ম পালন করা বুদ্ধিজীবীদের দৌরাত্ম তখন ছিলো না।

এখন তো ঘরে ঘরে ইনফ্লুয়েন্সার, সেলিব্রেটি, শায়খ, চেতনাধারী।

তখন একমাত্র ভাইরাল ব্যাক্তি ছিলো সাইদী সাহেব। আর যেসব বক্তা ছিলো তারা ছিলো স্থানীয় মসজিদের ইমাম টাইপ। সাইদী সাহেবকে নিয়ে এখনও যে উম্মাদনা দেখা যায় তা সেই ৯০ দশক থেকে শুরু হয়েছে।

আর একজন সেলিব্রিটি অবশ্য ছিলো। সে ধর্মীয় লাইনের না। তার নাম সালমান শাহ। তার আলোচনা অন্যদিন হবে।

সাইদী সাহেবের ওয়াজ আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্যাসেটেও শুনতাম। শুধু ওয়াজ শুনতাম তা না। ফজার কৌতুক, বিভিন্ন জারীগানের ক্যাসেট ও পাওয়া যেত সেগুলো শুনতাম।

সাইদী সাহেব যে কোন অপরাধে অপরাধী হইতে পারে যেসব অপরাধের কথা আওয়ামীলীগাররা তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তা তখন স্বপ্নেও কল্পনা করি নাই।

ছোটকালে ভুদাই ছিলাম। রাজনীতি সচেতন ছিলাম না। গ্রামে পত্র পত্রিকা পড়ার সুযোগ ছিলো না। পুরা গ্রামে টেলিভিশন ছিলো তিনটা। যা ব্যাটারীর সাহায্যে শুক্রবার বাদ জুম্মা উঠানে সেট করে এন্টিনা বারংবার ঘোরানো সহযোগে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য ব্যবহৃত হতো।

সুতরাং স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, একাত্তরের চেতনা এসব শব্দবন্ধ বাল্যকালে খুব বেশি শুনি নাই। ছোটকালে বইতে কতটুকু ছিলো আজ তা আর মনে নেই।

শুধু শুনতাম মুরুব্বিরা বলতো ৭১ সালে গন্ডগোল হইছিলো।

আরেকটা স্মৃতি মনে পড়ে। ছোটকালে বাসে করে শহরে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে যেসব বাজার ক্রস করতাম এমন একটা বাজারের একটা বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে শেখ মুজিবের ছবি আঁকা দেখেছি। ছবির নিচে তার হত্যার বদলা নেওয়া হবে এমন একটা কথা লেখা ছিলো। বাসের মধ্য থেকে দেয়ালের এই লেখাটার কথা আমার মনে আছে। এটার সময়কাল ৯৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে।

পরবর্তীতে আমি আরো অশিক্ষিত হলাম। বিএনপি ক্ষমতায় আসলো ২০০১ সালে। তখন গ্রাম্য ওয়াজ শুনে বেড়াইছি।

মানুষের মাসুদ রানা দিয়ে বই পড়া শুরু হয়। আমার শুরু হইছিলো সাইমুম সিরিজ দিয়ে। ২০০২ সালে। পাগলের মত পড়তাম। এরপর পড়েছিলাম নসীম হিজাজীর বই, এনায়েতুল্লাহ আলতামাশের বই। এগুলোই এভেইলেবল ছিলো আমার জন্য।

২০০৩ এ প্রথম পড়লাম শ্রাবণ মেঘের দিন। তারপর হিমু, শুভ্র। ততদিনে বই বাজার থেকে কিনে পড়া শিখে গেছি।

যে বয়সে আমি আহমদ মুসা আর হিমু কে পড়েছি ঐ বয়সটার কারনে আমি এই দুই চরিত্র দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। এইটা আমি এখন সচেতনভাবে বুঝি।

যাইহোক ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করি। ২০০৮ সালে সম্ভবত প্রথম এন্ড্রয়েড লঞ্চ করে। বাংলাদেশে আরো পরে আসে। আমার এই জিনিস কেনার সামর্থ্য হয় ২০১৪ সালে। অনার্স পাস করার ও পরে। এর আগে নকিয়ার যেসব ফিচার ফোনে ফেসবুক চালানো যেত সেগুলো ব্যবহার করেছি।

প্রথম যে এন্ড্রয়েড কিনছিলাম তাতে ইউটিউব দেখা যেত না। ল্যাপটপ অবশ্য ২০১২ সাল থেকে ছিলো কিন্তু নেটের দাম ছিলো অনেক। সিটিসেলের মডেমে ১ জিবি কিনতাম ৩০০ টাকা দিয়ে। বছরে দুয়েকবার কেনার সামর্থ্য হতো।

১৪ সালের শেষের দিকে যখন ব্রডব্যান্ড নিতে পারলাম তখনই মূলত ইউটিউব চিনলাম ও তার বদৌলতে নাটক সিনেমার পাশাপাশি হুজুরদের ওয়াজও দুয়েকটা ইউটিউবের ফীডে আসতো।

তারপরের কাহিনী তো সবার জানা। হুজুররা যে যেমনভাবে পারে ইউটিউব দখলে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেলো। অনেক নতুন হুজুর গজালো।

একটু সুর, এক চিমটি গল্প, দুয়েকটা ইংরেজী বলা, গানের সুরে গজল গাওয়া, বানায় বানায় সত্যি কথা বলা, হাদীস কোরানের ভাষ্য নিজের মত করে টেনে লম্বা করা, স্টেজে ভাড়ামি করা, এক বক্তা অন্য বক্তাকে বিচিং করা, স্টেজে উঠে গাঁজাখুরি গল্প বলা- এক কথায় স্টেজের উপর ল্যাংটা হয়ে নাচা বাদে সবই হুজুররা করা শুরু করলো।

অশিক্ষিত, অল্পজানা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এইসব বক্তার একনিষ্ঠ শ্রোতা হওয়া শুরু করলো। এইসব শ্রোতার মধ্যে আবার যারা ফেসবুক ব্যবহারকারী অশিক্ষিত ভুদাই তারা বুঝে না বুঝে যে বক্তার চেহারা ভালো বা ভালো ইংরেজি পারে এমন বক্তাদের ওয়াজ শেয়ার দিয়ে বিরাট নেকি হাসিল করতে লাগলো। যদিও এসব কোন কাজে লাগার মত ওয়াজ না, তাই এইগুলো তাদের জীবনে কোন কাজেও লাগলো না, বরং তারা ফেসবুকের বাইরে যেমন লুইচ্চা আর অসভ্য ছিলো তেমনই থেকে গেলো।

যে প্রজন্মের কথা বলছি, ওয়াজ শেয়ার করা প্রজন্ম এরা বই পড়া কী জিনিস বোঝে না, তবে এরা জ্ঞানী! তাদের জ্ঞানাহরণের একমাত্র উৎস ফেসবুক।

এই ইউটিউব আসার পর নাবালেগ ও জনপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে মত্ত ডিক সাকিং বক্তাদের চাপের প্রাক্কালে সাইদী সাহেব ছিলেন না। তিনি তখন ইতিহাসের খাতায় চলে গেছেন।

সাইদী সাহেব যুদ্ধাপরাধী কিনা জানি না। আওয়ামীলীগ প্রভাবিত বিচার বিভাগের কথা বিশ্বাস করি না।

তিনি আসলে অপরাধী হয়ে থাকলে দুনিয়ার বিচার তিনি পেয়েছেন। আখিরাতে আল্লাহ তাকে মাফ করুক।

আর আওয়ামীলীগের তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি মিথ্যা হয় সেটার বিচার ও আল্লাহ করবে।

সাইদী সাহেব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তিনি আমাদের বাল্য স্মৃতির এক বড় অংশ জুড়ে আছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪৭
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×