somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সফলতার সুখ অস্থায়ী কেন হয়; সুখ স্থায়ী করার কৌশল

৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
যা আপনি অর্জন করার জন্য বা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন তা পাওয়ার পর আপনার বিরাট সুখানুভূতি হয়। এ সুখানুভূতি আস্তে আস্তে ম্লান হতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে অর্জন করার সময়ের সেই তীব্র সুখানুভূতি হারিয়ে যায় এবং আপনি আপনার সুখের স্বাভাবিক মাত্রায় অবস্থান করেন।

এই স্বাভাবিক অবস্থা সেই মানসিক অবস্থার সমান যখন আপনি আপনার কাংক্ষিত বস্তু বা প্রাপ্তি অর্জন করেন নি।

যে লটারি জেতে আর যে জেতে না তাদের সুখানুভূতি আঠারো মাস পরে একইরকম হয়ে যায়।

এমন হওয়ার কারন কী? এই ঘটনাকে বলে হেডোনিক ট্রেডমিল

মানুষের সুখানুভূতির মাত্রা (লেভেল অফ হ্যাপিনেস) সর্বদা কনস্ট্যান্ট থাকতে চাওয়ার প্রবণতাই হেডোনিক ট্রেডমিল।

মানুষের জীবনে যখন ভালো কিছু ঘটে বা সে কোন কিছু অর্জন করে তখন তার সুখের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছুদিন পর এই মাত্রা তার সাবেক অবস্থায় ফিরে আসে।

একইভাবে মানুষের জীবনে খারাপ কিছু ঘটলে বা কিছু বা কাউকে হারালে তার সুখের মাত্রা নিচের দিকে চলে আসে। কিছুদিন পর আবার সেটা সাবেক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে।

২.
স্থায়ীভাবে সুখের অনুভূতি ধরে রাখার উপায় কী?

স্থায়ীভাবে সুখের অনুভূতি ধরে রাখার উপায় হলো যা অর্জিত হয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হতে শেখা এবং সর্বদা কৃতজ্ঞতার চর্চা করা।

যে অর্জন অনেক কষ্ট আর সাধনার ফসল তা প্রাপ্তির পর আপনি যে পরমানন্দ পান সেটা আপনার দেহ মনে ছড়িয়ে থাকবে বারংবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে।

আমাদের জীবনের অর্জনগুলো এবং আমাদের জাতীয় জীবনের সামগ্রিক প্রাপ্তিগুলো আমরা একটা পর্যায়ে স্বাভাবিক (টেক ফর গ্রান্টেড) ধরে নিই। কিন্তু আমাদের অর্জন বা প্রাপ্তি কোন স্বভাবিক ঘটনা না। প্রত্যেকটা অর্জন এবং প্রাপ্তিই স্রষ্টার বিশেষ নেয়ামতের অংশ।

কোন কিছু অর্জনের পর স্রষ্টার প্রতি আপনার মন আর্দ্র হওয়ার যে অনুভূতি তা পরবর্তীতে আপনি তুচ্ছ করে যদি দেখেন বা সে অনুভূতির মূল্যায়ন না করেন তাহলে আপনার এই সুখ শেষ হয়ে যাবে।

কৃতজ্ঞ থাকার মাধ্যমে আপনি মানসিকভাবে শান্তিতে থাকেন। কৃতজ্ঞতার অনুভূতি লালন করলে জৈবিকভাবে আপনার দেহ মন প্রশান্ত থাকে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে কৃতজ্ঞ থাকলে আপনার জীবনে কৃতজ্ঞ হওয়ার মত ঘটনাগুলোই বার বার ঘটতে থাকে।

এখানে কোরানের একটি আয়াত স্মরণযোগ্য-
‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’
(সুরা ইবরাহিম : আয়াত ০৭)

৩.
আপনার আশেপাশে এমন অনেককেই দেখবেন যাদের জীবনে বিভিন্ন বড় বড় প্রাপ্তি আছে কিন্তু তারা সুখী না। তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে বলে তারা ভালো নেই। অথচ হয়ত তারা ভালো চাকরি করে বা যথেষ্ট আয় উৎপাদনকারী ব্যবসা আছে। বাড়ি গাড়ি করেছে। বাচ্চারা ভালো স্কুলে পড়ে। তারপরও তারা ভালো নেই। তাদের এই অর্জনগুলোকে তারা টেক পর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছে।

এমন না যে তারা এসব অর্জন প্রাপ্তির সময় খুশী হয়নি। যখন সে তার কাংক্ষিত চাকরীটা পেয়েছে হয়ত তখন সে আনন্দের কান্নায় বুক ভাসিয়েছে। তখনকার সেই সুখানুভূতি ও সেই মুহূর্তের কৃতজ্ঞতাবোধ সে আর পরবর্তীতে লালন করেনি। ফলে এই কাংক্ষিত চাকরিটাই একসময় তার কাছে বিরক্তিকর হয়ে দাড়িয়েছে। তাকে পেয়ে বসেছে “ভালো লাগে না” রোগে।

আবার এমন অনেককেই আপনার আশেপাশে দেখবেন যাদের জীবনে খুব বড় কোন প্রাপ্তি নেই কিন্তু তারা মানসিকভাবে প্রচন্ড সুখী। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে হাসিতে মুখ ভরে যায়। এমন ব্যক্তিগুলোর সাথে আড্ডা দিতে মনে চায়। তাদের সান্নিধ্য মনকে প্রফুল্ল করে।

এই ব্যক্তিগুলো তাদের ছোট প্রাপ্তি নিয়েই অনেক খুশি ও কৃতজ্ঞ। তাদের যতটুকু প্রাপ্তি সেটাকে তারা উপভোগ করে। প্রাপ্তিটা স্বীকার করে, মনে রাখে ও কৃতজ্ঞতাবোধ লালন করে।

৪.
“কনফারমেশান বায়াস” সম্পর্কে হয়ত জেনে থাকবেন।

মানুষের মধ্যে এগজিস্টিং যে বিশ্বাস আছে, যে মত সে ধারণ করে জীবন চলার পথে সেই বিশ্বাস বা মত সমর্থিত হয় এমন ঘটনাগুলোই তার দৃষ্টিগোচর হওয়ার যে প্রবণতা তাই হলো কনফারমেশান বায়াস। বায়াসনেস আমাদের সহজাত। এগুলো সবার মধ্যে থাকে। বায়সনেস সম্পর্কে জানলে তা থেকে বাঁচার সুযোগ তৈরী হয়।

তবে বায়সনেসগুলো আমাদের মধ্যে এত গভীরভাবে প্রোথিত থাকে যে তা আমাদের অবচেতনে গ্রাস করে। বায়াসনেস থেকে বাঁচতে হলে সর্বদা সতর্কতার সাথে ফাইট দিতে হয়।

এই বায়াসনেসকে কৃতজ্ঞ থাকার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়।

আপনি যদি মনে করেন আপনার জীবনটা অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর এবং প্রতিক্ষণে আপনার জীবনে প্রচুর ইতিবাচক ব্যাপার ঘটছে; এই বিশ্বাসটা যদি আপনি ধারণ করেন তাহলে জীবন চলার পথে প্রচুর নেয়ামত আপনার চোখে পড়বে। দিনে দিনে এই বিশ্বাসটা পোক্ত হবে এবং আপনার আরো বেশি নেয়ামত দৃষ্টিগোচর হবে; তদুপরি এগুলো উপভোগের স্বাদ ও বাড়তে থাকবে।

এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই “গ্রাটিচিউড জার্নাল” লিখতে বলা হয়।

গ্রাটিচিউড জার্নাল হচ্ছে দিন শেষে আপনার সাথে সারাদিন ভালো যা কিছু ঘটেছে সেগুলো লিখে রাখা।
যেমন ধরেন-
* আপনি আজ সকালে সুস্থভাবে ঘুম থেকে উঠতে পেরেছেন।
* সকালে নাস্তা করার সুযোগ পেয়েছেন।
* জীবিকার জন্য বাসা থেকে বেরোতে পেরেছেন।
* একটা মোবাইল ফোন এফোর্ড করতে পারছেন।

সাদাচোখে মনে হচ্ছে এগুলো খুব ছোট নেয়ামত। এগুলোকে আপনি টেক ফর গ্রান্টেড বা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছেন। কিন্তু এগুলো যে প্রত্যেকটা অমূল্য নেয়ামত তা আমাদের বোধগম্য তখন হয় যখন এ নেয়ামতগুলো আমাদের থাকে না।

গ্রাটিচিউড জার্নাল রাখলে নেয়ামতগুলো চোখে পড়ার অভ্যস্ততা আসে। ফলে কৃতজ্ঞ হওয়া সহজ হয়। অবশ্য অনেকেই জার্নাল না রেখেও কৃতজ্ঞতাবোধ সর্বদা নিজের ভিতরে ধারণ করতে পারেন।

এটা মনে রাখতে পারেন; যে জীবন আপনি যাপন করছেন বা যে জীবন যাপনে আপনি অসন্তুষ্ট, বিরক্ত, হতাশ সেই জীবনটাই আরেকজনের স্বপ্নের জীবন।

আরো সুখ আরো সফলতা চাইলে যতটুকু সুখ ও যতটুকু সফলতা এখন আছে সেটা স্বীকার করেন, স্মরণ করেন, কৃতজ্ঞ হন। এই অনুশীলনকারীরা সুখ উপভোগ করতে পারে। সফলতাকে টেক ফর গ্রান্টেড ধরে নিলে আরো সফলতা হয়ত পাবেন কিন্তু সফলতার সুখ উপভোগের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:৫৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×