বলা হয়ে থাকে, একটি ঘটনা হলো ছক্কা গুটির মত, যার ছয়টি পাশ থাকে। তার একপাশ আমরা দেখি। বাকি পাঁচ পাশ দেখি না।
কোন ঘটনা যখন আমরা পড়ি বা শুনি, সেটার একপাশ আমরা জানতে পারি। ঐ একই ঘটনার আরো যে একাধিক পাশ আছে সেটা আমরা দেখতে পাই না।
ঘটনার যে পাশটা আমরা দেখছি সেটা যেমন সত্য, যে পাশগুলো আমরা দেখছি না সেগুলোও সত্য।
ঘটনার যে পাশটা দেখছি সেটাকেই একমাত্র সত্যি বলে গো ধরে বসে থাকা অন্যায়। বুঝতে হবে ঘটনার অন্য আরো অনেক দিক আছে সেগুলো আমরা জানি না।
ভালো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য না দেখতে পারা পাশগুলো জানতে হবে। ঘটনাকে ৩৬০ ডিগ্রিতে দেখার ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দেন নাই। সব দিক আমরা জানতে পারবো না। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে অন্য দিকগুলো জানার। একটা ঘটনাকে যত বেশি সবদিক দিয়ে জানা যাবে, তত ভালো উপসংহার বা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।
.
ঘটনার বিভিন্ন পাশ আছে অর্থাৎ আমি যেটা জানি সেটাই যে একমাত্র সঠিক না- এই বোধটা থাকা জরুরি। এটা অনেক দর্শনের মূল কথা। এবং আমাদের যেসব কগনিটিভ বায়াস আছে তার মধ্যে অনেকগুলো এই বোধ না থাকার কারণে ঘটে।
.
আমরা যেকোনো ঘটনাকে লিনিয়ারলি দেখি বা বলি। একটা ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে প্যারালালি অনেকদিক একই সাথে আগায়। আমরা সেটা বলার সময় একটি বা দুইটি দিক বলি। অনেকদিক বাদ বা অনুল্লিখিত থাকে।
এখন, ঘটনার কোন দিক আমরা উল্লেখ করি আর কোন দিক করিনা?
ঘটনার যে দিকটি আমাদের পছন্দ সেদিকটি আমরা উল্লেখ করি। সেদিকটা আমরা মনে রাখি।
ঘটনার নির্দিষ্ট দিক পছন্দ করার কারণ হলো, আমাদের ভিতর আগে থেকে যে এগজিসটিং বিশ্বাস থাকে সেটার সাথে ঘটনার যে অংশটুকু বা ঘটনার যে দিকটা এলাইন করে ঘটনার সেই দিকটা আমরা পছন্দ করি। ঘটনাটাকে আগে থেকে আমাদের ভিতরে থাকা বিশ্বাসের সাথে মিলিয়ে মনে রাখি।
ঘটনার যে অংশটুকু আমাদের বিশ্বাসের সাথে যায় না, ঘটনার সে দিকটা আমাদের চোখের সামনে থাকলেও আমরা সেটা খেয়াল করি না।
কোন ঘটনাকে এভাবে ফিল্টারিং করে আমাদের এগজিসটিং বিশ্বাসের সাথে মিলিয়ে দেখাটাই হলো Confirmation Bias. এটাকে বলা হয় মাদার অফ অল কগনিটিভ বায়াসেস।
.
Max Frisch নামে একজন সুইস ঔপন্যাসিক আছেন। তার মতে, আমরা কাপড় কিনতে গিয়ে যেভাবে কাপড় পছন্দ করি, কোন ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের পছন্দের দিকটা বেছে নিয়ে উপস্থাপন করি।
ঘটনার কোন দিক বলা হবে আর কোন দিক স্কিপ করা হবে এটার পিছনে লুকিয়ে থাকে বক্তার উদ্দেশ্য। এটা কনসাসলি বা সাবকনসাসলি হতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে এটা সাবকনসাসলিই হয়। বক্তা নিজেকে ভালো বা নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য। এটা ইনসটিংকট।
সচেতনভাবে ও পরিকল্পিতভাবে ঘটনার নির্দিষ্ট দিক বেছে নেয়া হয় সাধারণত কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ এটা করে।
যেমন কিছু পত্রিকা দেখবেন এমনভাবে গল্প বলে যাতে নির্দিষ্ট কোনো দেশকে ভালো অন্য দেশকে খারাপ দেখানো যায়। আবার অন্য পত্রিকা তার উল্টো করে।
মূল ঘটনাকে ঠিক রেখে গল্পের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করার মাধ্যমে মানুষের পারসেপশান পাল্টে দেয়া যায়। বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা তৈরি করা যায়।
ঘটনার এরকম পছন্দসই ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনাকে বলে Story Bias.
.
করণীয় কী?
১. আমি যেটাকে সত্যি ভাবছি তার বাইরেও সত্য আছে এই বোধ থাকা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় সেগুলো জানার চেষ্টা করা।
২. সবসময় ঘটনার মূল খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।
৩. পত্রিকায় যা পড়ছেন বা আপনাকে যা বলা হচ্ছে তা প্রশ্নাতীতভাবে মেনে না নিয়ে সেগুলোর সত্যতা ও পিছনের ঘটনা জানতে প্রশ্ন জারি রাখা।
৪. কোন বিষয়ে ডগমাটিক মনোভাব ত্যাগ করা।
৫. এবসোল্যুট ট্রুথ (ফ্যাক্ট) ও রিলেটিভ ট্রুথ (পারসেপশান) সম্পর্কে জানা ও বোঝা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪