আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধ না করে বরং তাদের বিচার নিশ্চিত করতে পারলে সেটা তাদের জন্য বেশি দুর্ভাগ্যজনক হবে। আওয়ামিলীগকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে মর্মে যে দুয়েকটা কথা ভাসছে তা মূলত ব্লাফ। আওয়মিলীগ বড় দল, তাকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব না। আওয়ামি নেতাদের যারা বিভিন্ন অন্যায়, দুর্নীতি ও খুনের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিচার করতে হবে- এটাই মূল কথা হওয়া উচিত।
আওয়ামি দলকে পুরো ঝুঁকিতে ফেললে বা শেষ করে দিতে চাইলে তা আওয়ামিলীগকে আবার পুনর্বাসনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। আওয়ামিলীগকে একবারে শেষ না করে দিয়ে পঙ্গু করে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
যে দাবিগুলো হওয়া উচিত:
১. আওয়ামিলীগের চিহ্নিত নেতাদের নামে সলিড মামলা সাজিয়ে আইন অনুযায়ী তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে। ভুয়া বা বায়বীয় মামলা দিলে হবে না।
২. আওয়ামিলীগ ও এর সব অঙ্গ সংগঠনের কমিটির সব সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে হবে। এদের ৯৫% ই কোন না কোন অন্যায়ের সাথে জড়িত। কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর কমিটি, জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটিতে যারা ছিল তাদের ডাটাবেজ করা কঠিন কোন কাজ না। স্থানীয় প্রশাসন কে সক্রিয় করে আওয়ামি লীগের প্রতিটা টায়ারের কমিটি মেম্বরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৩. অপরাধীদের ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে দিতে হবে। ইনকাম ট্যাক্সের অফিসাররা প্রত্যেকটা এলাকায় এদের খোঁজ খবর নিলেই তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তাদের আয়বহির্ভূত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে খেলা শুরু করতে হবে।
৪. চিহ্নিত আওয়ামি ব্যবসায়ী ও আওয়ামিলীগকে সার্ভ করা ব্যবসায়ীদের আয়ের খতিয়ান ও তাদের অন্যায় সুবিধা নেওয়ার হিস্ট্রি বের করে তাদের বিরুদ্ধে সলিড মামলা সাজিয়ে তাদেরকে আটকাতে হবে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে তাদের মূল ব্যবসায়ের ক্ষতি না করে তাদেরকে ব্যবসায় থেকে আলাদা করে ফেলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৫. প্রতিটা জেলায় সরকারি সহায়তায় বিশেষজ্ঞ আইনজীবি পুল তৈরী করতে হবে। প্রত্যেকটা জেলায় প্রশাসন, পুলিশ, এনবিআর ও আইনজীবী সমন্বিত একটা টিম করতে হবে যারা ডাটাবেজ তৈরিসহ সলিড মামলা সাজাতে কাজ করবে।
৬. আওয়ামিলীগ কর্তৃক সংগঠিত বিগত তিনটা নির্বাচনই বাতিল করতে হবে। এই তিন নির্বাচন বাতিল করার মত কারণ বের করা কঠিন হবে না। ভোট যে অবৈধ হয়েছে সেটা সব ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি এবং সারাদেশের প্রিজাইডিং অফিসাররা জানে। দরকার শুধু লিগ্যাল ডকুমেন্টস হিসেবে টিকবে এমন ডকুমেন্টস তৈরি করা।
৭. আওয়ামি সরকারকে সার্ভ করা বিশেষত প্রশাসন ক্যাডার ও পুলিশ ক্যাডারে থাকা অফিসারদের সম্পত্তির খোঁজ খবর নিতে হবে। তাদের ইনকাম ট্যাক্স ফাইল রিভিউ করতে হবে। অন্যান্য ক্যাডারের অফিসাররাও কিছু কিছু জড়িত আছে। এই কাজ করা খানিকটা চ্যালেঞ্জিং এই কাজটাতো প্রশাসনকেই করতে হবে। প্রশাসনের লোকজন নিজেদের লোকের ব্যাপারে এই কাজ করতে উৎসাহী নাও হতে পারে। এটা বাস্তবায়ন করার সহজ পদ্ধতি হল- ২০১৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যারা ডিসি, এসপি, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি হিসেবে পদায়িত হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন গুলিতে উপরোক্ত সমান গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে এডমিন ও পুলিশে যারা পদায়িত হয়েছে এসব কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা একেবারেই সহজ। এদেরকে চিহ্নিত করে তাদের ইনকাম ট্যাক্সের ফাইল ধরে টান দিলেই আওয়ামি দোসর আমলা শ্রেণী সব এক জালে আটকা পড়বে।
.
এই মূল ফরমেট ঠিক রেখে দেশব্যাপী যদি আওয়ামি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করা যায় ও তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় তাহলে অনেকেই আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধ করে যা অর্জন করতে চাচ্ছে তা লীগকে নিষিদ্ধ না করেই অর্জন করা যাবে।
অন্যায় করে নাই কিন্তু আওয়ামিলীগ করে বা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাথে বা তার ফ্যাসিজমের সাথে একমত না এমন আওয়ামিলীগার ও আছে। তারা যদি আওয়ামিলীগ করতে চায় তবে দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের সে অধিকার আছে। এমন নিরীহ লীগারও সারাদেশে কম নয়। লীগ নিষিদ্ধ করে তাদের অন্য দলে মার্জ করা কঠিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক কাজ আছে। মানুষেরও এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা আছে। আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধের ধোয়া তুলে ও কেওস তৈরি করে সব কাজ ও প্রত্যাশাকে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখা হয়েছে। এবং এই কাজ করছে লীগ নিয়ন্ত্রিত অনলাইন চ্যালা চামুন্ডারা।
আওয়ামিলীগ সম্পর্কিত অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ তাদের নিষিদ্ধ করা নয়, বরং টপ টু বটম সব লীগারদের বিচার নিশ্চিত করা। এটা নিশ্চিত করলে সরকারের বাকি কাজ সহজ হয়ে যাবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ ও চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাবে। যে আওয়ামিলীগ টিকে থাকবে গণতন্ত্রের খাতিরে তাদের টিকিয়ে রাখতে কোন সমস্যা দেখি না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১৬