somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি কর্মকর্তাদের স্যার না ডাকলেও চলবে—কিন্তু আব্বা না ডাকলে চলবে না!

১০ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সরকারি কর্মকর্তাদের স্যার ডাকা লাগবে না মর্মে নিয়ম করা হচ্ছে।

আবারদুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে জানার জন্য স্যার বাদ দিয়ে কী ডাকা যায়।

বিরাট মুশকিল হয়ে গেলো।

স্যারের বদলে

মামু
ভাই
চাচা
খালু
শালা
চাকর

এই সব ডাকা যায়।

সরকারি অফিসের বাইরে অফিসারদের এই শব্দগুলোতে ডাকার জন্য খুবই উপযুক্ত।

তবে আপনি যেহেতু বিপদে পড়ে সরকারি অফিসে কাজের জন্য যান সেক্ষেত্রে যে অফিসারের কাছে যাবেন তাকে আব্বা ডাকতে হবে। নইলে আপনাকে আইনের মারপ্যাচ দেখায়ে হেনস্তা করতে পারে।

"স্যার" যেহেতু ডাকা যাবে না, সেহেতু আপনি ঝামেলা এড়ানোর জন্য আব্বা ডেকে কাজ হাসিল করবেন। এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

যারা সরকারি অফিসে বিভিন্ন কাজে গিয়েছেন তারা কিছুটা আমার এই বক্তব্যের সত্যতা টের পাবেন।

কয়েকটা উদাহরণ দিই।

.

সবার যাওয়া লাগে এমন কিছু অফিসের উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে।

নির্বাচন অফিসের কথা ধরা যাক। এনআইডি কার্ড বা তার সংশোধনের জন্য আপনাকে এই অফিসে যেতে হবে। সাধারণ মানুষ বোঝে না তারা যে ইস্যু নিয়ে যাচ্ছে তা সলভ হবে কীভাবে। অথচ তার কার্ড দরকার বা সংশোধন দরকার ইমারজেন্সি।

এই চরম অবস্থায় আপনি যেয়ে যদি অফিসারকে অফিসারের অপছন্দের কোন সম্বোধনে ডাকেন আপনার কাজ না হওয়ার চান্স আছে। আপনাকে ভূগোল বুঝায়ে ঝুলায় দিবে।

এ অবস্থায় স্যারের বদলে আব্বা ডাক কাজে লাগবে।

একইভাবে পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, ইউএনও অফিস প্রত্যেক অফিসেই কোন না কোন সময় আপনার যাওয়া লাগবে। এখানে আপনি কোন না কোন ইমারজেন্সি কাজ নিয়ে যাবেন।

যেয়ে দেখবেন সব ক্ষমতার উৎস টেবিলের ঐ পাশে বসে থাকা অফিসার। তখন আপনি তার সাথে উত্তম সম্বোধন ও নরমসুরে বাতচিত না করতে পারলে আপনি ধরা। তখন স্যার না ডাকতে চাইলে আব্বা ডাক যুৎসই হবে।

.

স্যার ডাকতে চাওয়া বা না চাওয়া অথবা ডাকতে বাধ্য করা বা নিয়ম করে এটা বন্ধ করা কোনটাই মূল সমস্যার সমাধান না। মূল সমস্যা থেকে জনগণকে দূরে রাখতেই এসব স্যার ডাকা না ডাকা সিলি পপুলিস্ট ব্যাপার নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে।

মূল সমস্যা কী?

মূল সমস্যা হলো সব কাজ এমনভাবে ডিজাইন করা যে আপনি সরকারি অফিসারের কাছে ধরা খেয়ে আছেন। ক্ষমতা বা সরকারী কাজের এক্সিকিউশন সরকারি অফিসাররা করে। যার হাতে ক্ষমতা থাকবে বা বড় ইমপ্যাক্টফুল কাজের এগজিকিউশনের দায়িত্ব থাকবে তাকে আপনার সম্মান করতেই হবে। কিচ্ছু করার নাই।

বিকল্প হচ্ছে ক্ষমতা অফিসারদের কাছে কেন্দ্রভূত না করা। যে ক্ষমতা দেওয়া আছে তা অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থায় সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা। যাতে যে কেউ যে কোন সরকারি সার্ভিসের আদ্যপান্ত অনলাইনেই জানতে পারে, স্মুথলি অনলাইনে কাজ প্রাপ্তির আবেদন করতে পারে, এবং যে কোন কাজের পুরা প্রসেসটাই যেন অনলাইনে সম্পন্ন করা যায় এ ব্যাবস্থা করা।

যেন কোন কাজের জন্য অফিসারের কাছে যেয়ে ধরনা না দেওয়া লাগে এটা নিশ্চিত করতে পারলে অফিসারকে শালা বলেও সম্বোধন করা যাবে। স্যার তো দূরের কথা।

কিন্তু আপনি কোন কাজই প্রায় পুরোপুরি অনলাইনে করতে পারবেন না।

যেমন ধরেন, আপনি অনলাইনে জমির নামজারির আবেদন করলেন। আবেদন করার পর টাকা জমা দিয়ে আপনার যা যা করার কথা সবকিছু ঠিকমত বাড়ি বসে মোবাইলে বা কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করলেন।

কিন্তু এগুলার কোন দাম নাই। এগুলো করার পর স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আপনাকে যেয়ে স্যার বলে আসতে হবে ও সামান্য কিছু খরচ দিয়ে আসতে হবে। তখন যদি আপনার আচার ব্যবহারে কোন ত্রুটি থাকে সেক্ষেত্রেও অফিসার আপনাকে ঝুলায় দিতে পারে।

আমাদের দেশে কোন কাজই পুরাটা অনলাইনে করা যায় না। অফিসারের কাছে যেয়ে আটকে যায়।

অফিসারের কাছ থেকে কাজ ছাড়ানোর জন্য আপনি অফিসারকে স্যার বলবেন না আব্বা বলবেন সেটা আপনার ও পরিস্থিতির ব্যাপার।

.

ছোট্ট আরেকটা এনালিসিস

আমরা অফিসারকে স্যার বলতে চাই না কেন? বা সরকারি অফিসারদের বিপক্ষে সোস্যাল মিডিয়া এত সরব কেন?

ঘুষ দূর্নীতি একটা কারণ আছে। বা অফিসাররা হেনস্তা করে এমন কিছু।

কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কাউকে তো স্যার বলাতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।

স্যার বলা মানে আমাদের দেশে একজনকে সম্মান দেখানো। আমরা বলতে চাই না কেন? আমরা তাদের সম্মান দিতে চাই না তাই।

সম্মান দিতে চাই না কেন?

প্রথমত কাউকে সম্মান দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টের। কেউ আামাকে সম্মান করে না। বা আমি সম্মান প্রাপ্তির উপযুক্ত হতে পারি নাই, এই রিজেন্টমেন্ট থেকে আরেকজনকে সম্মান দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টের।

দ্বিতীয়ত, অফিসাররা সরকারের টাকা খেয়ে মেরে অনেক জৌলুসে আছে, ভালো আছে; অথচ সরকার তো আমাকে কিছুই দিলো না; অথচ অফিসাররা জনগনের টাকায় চলে; এই কিঞ্চিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে অফিসারদের স্যার বলতে কষ্ট হয়।

অনলাইনের খবর দেখে যতই নাচানাচি করেন মূল সমস্যার সমাধান না হলে অফিসারদের স্যার আব্বা দুইটাই ডাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×