somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুম

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখটা বন্ধ করুন। খুলবেন না প্লিজ। জাস্ট মিনিট পাঁচেক । এইবার ভাবুন। ভেবে নিন কালকের সকালটা আপনি আর দেখছেন না। সকাল আটটা পেরিয়ে নয়টা, নয়টা পেরিয়ে দশটা হবে। এগারোটাও পার হয়ে যাবে। জানালার পাশে যে কাকের কাকা শব্দে আপনার ঘুম ভাঙ্গতো, সেই শব্দ আর কানের কাছে ঘেষবে না। মা বাবা ভাই বোন পাড়াপড়শি সবাই কাঁদবে। কিন্তু আপনি শুনবেন না। চোখ খুলবেন না প্লিজ। ভাবতে থাকুন।

মায়ের কথা মনে পড়ছে? সাত বছর বয়সে একবার ভুল করে ছোট পুঁটিমাছ গিলে ফেলেছিলেন। বাড়িতে আপনার মা আর দাদী ছাড়া কেউ ছিলো না। বাবা জরুরী কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। দাদী থেকেও নেই। তিনি অসুস্থ হয়ে বিছনায় । খুব অসুবিধায় পড়ে গেলেন মা। ছুটতে শুরু করলেন গ্রামের হস্পিটালের দিকে। পরনে একটা পুরানো সুতির কাপড় জরানো ছিলো। কাপড়টা পালটে ভালো একটা কাপড় পরতে পারতেন। কিন্তু ততক্ষনে সত্যিই খুব দেরি হয়ে যেতো। সাজগোজ করে নতুন কাপড় গায়ে দিয়ে বের হতে হতে হয়তো আপনার আয়ু সেই সাত বছরেই থেকে যেতো।

এইবার নিশ্চয় বাবার কথা ভাবছেন? যার আংগুল ধরে প্রথম হাটতে শিখেছিলেন। পড়ে গিয়ে হাটুতে ব্যথা পেলে যার বুকে আপনাকে টেনে তোলা হতো। চকলেট দিবে বলে সান্তনা দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করতো। সেই বাবার কথাই মনে পড়ছে তো?

আচ্ছা বোনটার কথা মনে পড়ছে না? আপনি বাসায় ঢুকতেই যে জরিয়ে ধরে নানানপ্রকার আব্দার করতো! আপনার কাছ থেকে একটা ক্যাটভেরি চকলেট আদায় না করে যে একটা রাত্রিও ঘুমায় না। কি ভাবছেন? যে মেয়েটা একটা চকলেট না পেলে ঘুমানোর কথা ভাবেই না তাকে চকলেট না দিয়ে কি করে হারাবেন তাই ভাবছেন তো?

এইবার আমি সিউর যে আপনি কিছুই ভাবতে চান নি। তবুও আপনি ভেবেছেন।আসলে আপনাকে ভাবানো হয়েছে। কে ভাবিয়েছে জানেন? ভালোবাসা, মায়া-মমতা। এইসবই আপনাকে ভাবতে বাধ্য করেছে।

আচ্ছা ছাড়ুন। এবার আগে আসুন। মাথায় অগ্রিম সময়ের ভাবনার প্রবেশ করান। ভাবুন মৃত্যুর পরের সময়ের কথা। প্রতিটা সকাল,প্রতিটা বিকেল,প্রতিটা রাতের কথা। ওসব আপন গতিতেই পালটাতে থাকবে। সেই সকাল,বিকেল,রাতের সাথে সবাই থাকবে। আপনার বাবা,মা বোন সবাই। শুধু আপনিই থাকবেন না। আপনার মা কখনো আপনার নাম ধরে ডেকে বলবে না, " খোকা খেয়ে যা। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।"
বাবা কখনো বলবে না, " খোকা শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তারের কাছে যাবি চল।"
বোনের মুখ দিয়ে একটিবারের জন্যও বের হবে না, "ভাইয়া চকলেট দাও।"
কেমন লাগছে? কারেন্টের শক খেয়েছেন মতো শরীর কাঁপছে? চোখ খুলবেন না। আপনার মনে এই মুহূর্তে কি চলছে আমি জানি। বলবো? আচ্ছা বলেই ফেলি,আপনি চোখটা খুলে ফেলার প্ল্যান করছেন। আর এর মধ্যে অসংখ্যবার বলেও ফেলেছেন, " আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচতে চাই।"

এতক্ষন অনেক কথা হয়েছে। অনেক বকবক করেছি। এবার আপনাকে একটা শেষ প্রশ্ন করতে চাই। করবো? হুম? করি? আচ্ছা করছি, আচ্ছা এতক্ষন আপনি আমার কথায় চোখ বন্ধ করলেন, মৃত্যু, পরিবার এসব নিয়ে ভাবলেন। জানতে ইচ্ছে করছে না আমি কে? যে আপনাকে এতকিছু জিজ্ঞেস করছে তার পরিচয় জানার কোনো আগ্রহ-ই নেই.........? আচ্ছা আপনি তো মুসলমান! আজরাইলের কথা শুনেছেন কখনো? নিশ্চয় শুনেছেন। তার কাজ রূহ কবজ করা তাই তো? আচ্ছা বাদ দেন। এসব না বলি।

কি এইবার তো বুঝতে পারছেন আমি কে? এই না না প্লিজ চোখ খুলবেন না। অতোটুকুতেই ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আপনার বালিশ ভিজে টইটম্বুর হয়ে এলো। বালিশটা পাল্টে পাশের বালিশটা টেনে নিন। তবে সাবধান,চোখ খোলা যাবে না। ঠিকাছে এইবার ঘুমিয়ে পড়ুন। প্রশান্তির ঘুম। এমন এক ঘুম দিন যে ঘুম ভাঙ্গানোর ক্ষমতা ইহজগতের কারো নেই.........

__________
১৭/১১/১৫
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×