চোখটা বন্ধ করুন। খুলবেন না প্লিজ। জাস্ট মিনিট পাঁচেক । এইবার ভাবুন। ভেবে নিন কালকের সকালটা আপনি আর দেখছেন না। সকাল আটটা পেরিয়ে নয়টা, নয়টা পেরিয়ে দশটা হবে। এগারোটাও পার হয়ে যাবে। জানালার পাশে যে কাকের কাকা শব্দে আপনার ঘুম ভাঙ্গতো, সেই শব্দ আর কানের কাছে ঘেষবে না। মা বাবা ভাই বোন পাড়াপড়শি সবাই কাঁদবে। কিন্তু আপনি শুনবেন না। চোখ খুলবেন না প্লিজ। ভাবতে থাকুন।
মায়ের কথা মনে পড়ছে? সাত বছর বয়সে একবার ভুল করে ছোট পুঁটিমাছ গিলে ফেলেছিলেন। বাড়িতে আপনার মা আর দাদী ছাড়া কেউ ছিলো না। বাবা জরুরী কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। দাদী থেকেও নেই। তিনি অসুস্থ হয়ে বিছনায় । খুব অসুবিধায় পড়ে গেলেন মা। ছুটতে শুরু করলেন গ্রামের হস্পিটালের দিকে। পরনে একটা পুরানো সুতির কাপড় জরানো ছিলো। কাপড়টা পালটে ভালো একটা কাপড় পরতে পারতেন। কিন্তু ততক্ষনে সত্যিই খুব দেরি হয়ে যেতো। সাজগোজ করে নতুন কাপড় গায়ে দিয়ে বের হতে হতে হয়তো আপনার আয়ু সেই সাত বছরেই থেকে যেতো।
এইবার নিশ্চয় বাবার কথা ভাবছেন? যার আংগুল ধরে প্রথম হাটতে শিখেছিলেন। পড়ে গিয়ে হাটুতে ব্যথা পেলে যার বুকে আপনাকে টেনে তোলা হতো। চকলেট দিবে বলে সান্তনা দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করতো। সেই বাবার কথাই মনে পড়ছে তো?
আচ্ছা বোনটার কথা মনে পড়ছে না? আপনি বাসায় ঢুকতেই যে জরিয়ে ধরে নানানপ্রকার আব্দার করতো! আপনার কাছ থেকে একটা ক্যাটভেরি চকলেট আদায় না করে যে একটা রাত্রিও ঘুমায় না। কি ভাবছেন? যে মেয়েটা একটা চকলেট না পেলে ঘুমানোর কথা ভাবেই না তাকে চকলেট না দিয়ে কি করে হারাবেন তাই ভাবছেন তো?
এইবার আমি সিউর যে আপনি কিছুই ভাবতে চান নি। তবুও আপনি ভেবেছেন।আসলে আপনাকে ভাবানো হয়েছে। কে ভাবিয়েছে জানেন? ভালোবাসা, মায়া-মমতা। এইসবই আপনাকে ভাবতে বাধ্য করেছে।
আচ্ছা ছাড়ুন। এবার আগে আসুন। মাথায় অগ্রিম সময়ের ভাবনার প্রবেশ করান। ভাবুন মৃত্যুর পরের সময়ের কথা। প্রতিটা সকাল,প্রতিটা বিকেল,প্রতিটা রাতের কথা। ওসব আপন গতিতেই পালটাতে থাকবে। সেই সকাল,বিকেল,রাতের সাথে সবাই থাকবে। আপনার বাবা,মা বোন সবাই। শুধু আপনিই থাকবেন না। আপনার মা কখনো আপনার নাম ধরে ডেকে বলবে না, " খোকা খেয়ে যা। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।"
বাবা কখনো বলবে না, " খোকা শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তারের কাছে যাবি চল।"
বোনের মুখ দিয়ে একটিবারের জন্যও বের হবে না, "ভাইয়া চকলেট দাও।"
কেমন লাগছে? কারেন্টের শক খেয়েছেন মতো শরীর কাঁপছে? চোখ খুলবেন না। আপনার মনে এই মুহূর্তে কি চলছে আমি জানি। বলবো? আচ্ছা বলেই ফেলি,আপনি চোখটা খুলে ফেলার প্ল্যান করছেন। আর এর মধ্যে অসংখ্যবার বলেও ফেলেছেন, " আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচতে চাই।"
এতক্ষন অনেক কথা হয়েছে। অনেক বকবক করেছি। এবার আপনাকে একটা শেষ প্রশ্ন করতে চাই। করবো? হুম? করি? আচ্ছা করছি, আচ্ছা এতক্ষন আপনি আমার কথায় চোখ বন্ধ করলেন, মৃত্যু, পরিবার এসব নিয়ে ভাবলেন। জানতে ইচ্ছে করছে না আমি কে? যে আপনাকে এতকিছু জিজ্ঞেস করছে তার পরিচয় জানার কোনো আগ্রহ-ই নেই.........? আচ্ছা আপনি তো মুসলমান! আজরাইলের কথা শুনেছেন কখনো? নিশ্চয় শুনেছেন। তার কাজ রূহ কবজ করা তাই তো? আচ্ছা বাদ দেন। এসব না বলি।
কি এইবার তো বুঝতে পারছেন আমি কে? এই না না প্লিজ চোখ খুলবেন না। অতোটুকুতেই ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আপনার বালিশ ভিজে টইটম্বুর হয়ে এলো। বালিশটা পাল্টে পাশের বালিশটা টেনে নিন। তবে সাবধান,চোখ খোলা যাবে না। ঠিকাছে এইবার ঘুমিয়ে পড়ুন। প্রশান্তির ঘুম। এমন এক ঘুম দিন যে ঘুম ভাঙ্গানোর ক্ষমতা ইহজগতের কারো নেই.........
__________
১৭/১১/১৫