গাজীপুর থেকে ফিরে
অফিসের একটা প্রজেক্টের কাজে এপ্রিলের শুরু থেকে সিলেটে ছিলাম।প্রথম মাসখানেক যাতায়াতের মধ্যে থাকলেও সিলেট সিটি নির্বাচন পরবর্তী তিনদিন পর্যন্ত প্রায় স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলাম।তাই জনগণের নিরব বিপ্লব কাকে বলে সিলেটে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে।সিলেটবাসীর আঞ্চলিক কথা বুঝি না।কিন্তু প্রজেক্টের লোকজন স্থানীয় হওয়ায় বুঝতে সুবিধা হ’ত।তবে বাহির থেকে যারা গিয়ে সিলেটে বসতি গড়েছে তাদের কথায় কোন যের যবর পেশ নেই।ওদের কথা শতটাই বুঝতাম।হেফাজতে ইসলামের৬ই এপ্রিলের পর সিটি কর্পোরেশনের একটা গুরুত্বপূণ কাগজের জন্য মেয়র কামরানের অফিসে যাই।দেখলাম আরও কয়েকজন এসেছে যার যার দরকারী কাজে।কিন্তু তাদের মধ্যে একজন বন্ধু গোছের লোক থাকায় রাজনীতির আলোচনা উঠে এসেছে।সহকারী এসে হাতের কাগজটি নিয়ে গেলেন যেটায় মেয়রের একটা মাত্র স্বাক্ষর দরকার।মেয়র ইশারায় বসতে বললেন।বুঝলাম সবাই এই ইশারার ফাঁদে পড়েছেন।কয়েক মিনিট চলল আলোচনা।আলোচনার ফাঁকেই দ্বিধাহীনভাবে ময়লাধূলা মাখা পোষাক পরিহিত মধ্যবয়সী এক দাঁড়িওয়ালা লোক ঢুকলেন।সহকারী এসে লোকটির কাগজে একটা সিল মারলেন।কথার ফাঁকেই মেয়র সিলের উপর বরাবর স্বাক্ষর করে দিলেন।এই হ’ল মেয়র কামরান।প্যান্ট শার্ট ওয়ালাদের চেয়ে রিক্সাওয়ালাদের জন্য মেয়রের কলম আগে চলে।কথাটি গল্পের মত শুনেছিলাম।বাস্তবে প্রমাণ পেলাম।লোকটির হন্হন্ করে যেমনি এসেছিলেন তেমনি বেরিয়ে গেলেন।আমরাও এমনই একটা সিল ও স্বাক্ষরের আশায় এসে মেয়রের রাজনীতি গিলছি।কিন্তু লোকটি বেরিয়ে যাবার পরেরই মেয়র একটা কথা বলে ফেললেন- “গত নির্বাচনে এই লোকদের কাছে ভোট চাওয়ার সুযোগ পাইনি, ওরাই উপযাচক হয়ে আমার জন্য ভোট চেয়েছে।এ নির্বাচনে আমার সাধ্য নেই ওদের কাছে যাবার।কারণ সরকার আমার হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে।” লোকটা দাঁড়িওয়ালা পাঞ্জাবী পরিহিত এই জন্য বললেন কিনা জানিনা।তবে হকার্সদের কাছে দেবতুল্য সেই কামরানই যখন হকার্স অধ্যুষিত বন্দর বাজার জামে মসজিদে অপমাণিত হলেন তখন মেয়রের
কথার সত্যতা পেলাম।ভোটের রেজাল্টে এ সত্যতা দেশ পেরিয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে।কেবল মেয়র নয় কাউন্সিলর পদেও সরকার সমর্থক কাউন্সিলদের ভরাডুবি।
আজ সকাল থেকেই গাজীপুর ছিলাম।বাইকে চড়ে রেইনকোট পড়ে আত্বীয়ের সাথে টোটো করে ঘুরলাম।সর্বত্রই সেই সিলেটের আবহ।শ্রমিক অধ্যুষিত গাজীপুরে সকাল বেলায়ই চাউর হয়ে গেছে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করেছে মার্কিন সরকার।ওবামা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) প্রভাবিত করতে পারে।গণমাধ্যমের কল্যাণে আলোচনাটি সন্তান পেরিয়ে মুরব্বিদের টেবিলেও আলোচিত হচ্ছে।
সরকার ক্ষমতায় আসীন হবার পর ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচন হয়।সেখানে দেখেছি বিরোধীরা সমান তালে জিতেছে।চট্রগ্রাম,কুমিল্লায় হার।নারায়নগঞ্জ জেতার স্মৃতিও সুখকর নয়।ঢাকা সিটিতে হেরে যাবে বুঝতে পেরে সরকার এখানে নির্বাচন দিচ্ছে।কথাটি আড্ডাস্থলে প্রায়ই শুনি।রাজনীতির বাইরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী আইনজীবীদের জোট সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নজিরবিহীন পরাজয় দেখেছি।সেখানে ১৪টি আসনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য
প্যানেল ১৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।এর পর আসল সিলেট,খুলনা,রাজশাহী,বরিশালের সিটি নির্বাচন।সবগুলোতেই সরকার সমথকেরা গোহারা হেরেছে।
মেয়র কামরান দাঁড়িওয়ালাকে দিয়ে যদি হেফাজতকে বুঝিয়ে থাকেন তবে বলব সিলেটের হেফাজতের চেয়ে গাজীপুরের হেফাজত আরও শক্তিশালী।এ কথা যে কারও মানতেই হবে।আর এখানকার হেফাজতিরা কোমড় বেঁধে নেমেছেন মান্নানের পক্ষে।
জাহাঙ্গীর নাটকের ক্ষত মাঠ থেকে শুকায়নি।এত কিছুর মাঝেও জাতীয়পার্টির দূরত্ব সরকারী দল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।স্থানীয় নেতারা চক্ষুলজ্জা দূরে ফেলে হেফাজতিদের সাথে পাল্লা দিয়ে মান্নানের হয়ে কাজ করছে।আশা ছিল এরশাদ অন্তত সমর্থন দিবেন।কিন্তু শেষ মর্হুতের রাজনীতি বোধহয় এরশাদ ভালোই চালাচ্ছেন।কথাবার্তায় অন্তত তাই বোঝা যায়।
বলছিলাম জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা।সিলেট সিটিতে দেখেছি জনমনে সরকারের বিরোধীতা।হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন,প্রার্থী কামরান ও আরিফ।আর রিক্স,গাড়ী,হোটেল,আড্ডায় আলোচনায় উঠে আসত সরকারের ব্যর্থতা।আগেই বলেছি গাজীপুর শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা।সরকারের অন্য সব ব্যর্থতা ছাপিয়ে সকাল থেকে শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা বা জিএসপি প্রত্যাহারের কথা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



