ছবিটি গরিবের।
গরিবের কথাটি বলেছি যথার্থ অর্থেই। কারণ, এমন ছবিতে কনের গলায় জড়িয়ে থাকার কথা ছিল বিভিন্ন আকারের ঝলমলে সোনার হার। অথচ, স্বর্ণ বলে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না মেয়েটির গলায়।
আমাদের বিয়েতে স্বর্ণ ধরা হয়েছিল পাঁচ ভরি। কিন্তু, আমার যে আর্থিক অবস্থা, পাঁচ ভরি সোনার টাকা কোথায় পাবো? স্বর্ণ তো আর গাছে ধরে না! তাছাড়া, চাকুরীতে এধার-ওধার করে কনের গলায় কাড়িকাড়ি স্বর্ণ জড়িয়ে এমন একটি সোনার টুকরো মেয়েকে কলংকিত করতেও মন চাইছিলো না।
যাক, স্বজনদের সহযোগিতায় সাড়ে চার ভরি পর্যন্ত জোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল। তবে, আমাদের এক সুহৃদ তখন প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিছু ভেজাল ঢুকিয়ে দিয়ে পাঁচ ভরি বানিয়ে দিতে। তা আমি করিনি। আল্লাহর রহমতে আমার সে সুহৃদ এখন ঢাকা শহরে ষোলো তলা ভবনের মালিক।
আমার শ্রদ্ধেয় দুলাভাই, প্রফেসর পাটোয়ারী, স্বর্ণ নিয়ে গিয়েছিলেন কনের বাসায়। কিন্তু, ওজনে খানিক কম জেনে তিনি আমার শ্বশুরপক্ষের কারো হাতে স্বর্ণ হস্তান্তর করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছিলেন না; মানে, নিজের কাছেই রাখছিলেন। বিষয়টা নজরে পড়েছিল মামার (কনের মামা)।
মামা ক্লিয়ারিং-ফরওয়ার্ডিং-শিপিং ইত্যাদি কাস্টমস সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত পোড়খাওয়া মানুষ। কার মনে কি খেলে তিনি চেহারা দেখেই বলে দিতে পারেন। এমন মানুষের চোখ এড়ানো কি অতো সহজ? তিনি স্বর্ণ ওজন করে দেখার জোর আগ্রহ প্রকাশ করলে দুলাভাই তাঁর কানে কানে কিছু একটা বললেন। তারপর ওই স্বর্ণ আর ওজন করে দেখা হয়নি। মামারা কিন্তু চকরিয়ার সবচেয়ে বড়ো জমিদার পরিবারের আওলাদ! দুধেভাতে মানুষ; তাই, গরিবের অবস্থা খুব সহজে না বুঝারই কথা।
আমার সহধর্মিনীর বড়ো ভাই বা বাবা ছিলেন না। তাই, মামা-চাচাদেরই বিয়েশাদির আয়োজন সামলাতে হয়েছে। (বিয়ের আগে) মামাকে পাঠানো হলো আমাদের গ্রামের বাড়ি দেখে আসতে। তিনি বাড়ি ঘুরে আসার পর তাঁর বোন, মানে, আমার শাশুড়ি মা জানতে চাইলেন বাড়িঘর দেখতে কেমন? ফ্যাকাশে মুখে মামা তখন বলেছিলেন, 'কই, বাড়িঘর বলে তো তেমন কিছু দেখলাম না!'
তিনি কিন্তু এতটুকু ভুল বলেননি। আসলে বিয়েশাদি আল্লাহর হুকুম বা ভাগ্যের ব্যাপার। অনেকে গাড়িবাড়ি থেকেও ঠিক সময়ে বিয়ে করতে পারেন না, আবার আমার মতো অনেকে নিঃস্ব হয়েও কোন ঝুট ঝামেলা ছাড়াই সময়মতো বিয়ে করে হেসেখেলে যুগ যুগ কাটিয়ে দেয়।
এম এল গনি/ কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:০৩