somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

= বিখ্যাত মানুষেরা কি সদাসর্বদাই ধোয়া তুলসী পাতা হন? =

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিখ্যাত মানুষের আত্মজীবনী পড়তে গেলে শুরুতেই দেখা যায় তাঁরা কোন এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম বা হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

- আসলে কি তাই? বিখ্যাত মানুষেরা আমার আপনার মতো সাধারণ কোন পরিবারে জন্ম নিতে পারেন না?

এছাড়া তাঁদের জীবনী এমনভাবে লেখা হয় যা পড়লে মনে হতে পারে ডে ওয়ান,অর্থাৎ, জীবনের শুরু হতেই তাঁরা রীতিমতো ফেরেশতার মতো মানুষ ছিলেন।

- তা কি বাস্তবে সম্ভব? দোষে-গুনেই না মানুষ?

আসল কথা হলো, আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই কোন বিখ্যাত মানুষের জীবন কাহিনী জানতে চান তাহলে কেবল বইপুস্তকের উপর নির্ভর করলে চলবে না, আপনাকে তাঁর জীবনের একেবারে গোড়ায় যেতে হবে। অন্য ভাষায় বলা চলে, তাঁকে যারা বাস্তবে দেখেছেন, তাঁর সাথে মেলামেশা করেছেন, তেমন ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকেই শুনতে হবে তাঁদের জীবনকাহিনী, বা আদতেই কেমন মানুষ ছিলেন বর্তমান সময়ের বিখ্যাত সেই মানুষগুলো।

নামোল্লেখ না করে আমি এমন এক বিখ্যাত মানুষের কাহিনী খুব সংক্ষেপে শোনাবো আজ। আমার প্রয়াত পিতা সেই বিখ্যাত মানুষটির পরিবারের সদস্যের মতোই ঘনিষ্ঠ ছিলেন একদা। কারণ, তাঁর বড়োভাই ছিলেন আমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাবা বলেছেন, তিনি সৎ ভাই হলেও সহোদরের মতোই স্নেহ করতেন মেধাবী ছোটভাইটিকে। এভাবেই আমার বাবা সেই বিখ্যাত মানুষটিসহ ওই পরিবারের খুঁটিনাটি অনেককিছুই জানতেন, যার কিছুটা তাঁর মুখে আমি নিজেও শুনেছি। শুনুন এবার সে কাহিনী।

কয়েক দশক আগের কথা। শিক্ষাবোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করা এক ছাত্র উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরপর মানসিক ভারসাম্য হারানোর মুখোমুখি হলেন। তিনি সেই বিখ্যাত মানুষটির একমাত্র ছেলে। ফলে, এ ঘটনা পত্রপত্রিকায় এলো। আমার বাবাও বিষয়টি জানলেন। সেদিনই বাবা আমাদের উদ্দেশ্য করে সেই বিখ্যাত মানুষটির কিছু ঘটনা বললেন যা রীতিমতো অকল্পনীয়। অন্ততঃ একজন স্বনামধন্য মানুষের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ঘটনা ভাবতেও রুচিতে বাধে।

চট্টগ্রাম কলেজের রসায়নের অধ্যাপক খায়ের সাহেব আমার বাবার বন্ধুস্থানীয়। তাঁর কন্যার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল বিখ্যাত মানুষটির। অধ্যাপক সাহেব তা নিয়ে বেশ গর্ব করতেন। তাঁর আশা ছিল এ সম্পর্ক একদিন বৈবাহিক সম্পর্কে গড়াবে। একসময় সেই বিখ্যাত মানুষটি চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। সেই আমলে পূর্ব পাকিস্তানে এমবিবিএস ডাক্তার ছিল হাতেগোনা। স্বভাবতঃই তাঁর দাম আকাশচুম্বী। ওদিকে, তৎকালীন পারিবারিক রক্ষনশীলতার কারণে অধ্যাপক কন্যার পড়াশোনা খুব বেশি আগায়নি। তিনি সম্ভবত এন্ট্রান্স পরীক্ষায়ও অবতীর্ন হননি।

এরই মাঝে অন্য এক ভদ্রমহিলার সাথে বিখ্যাত মানুষটির পরিচয় হলো। যতটা শুনেছি তিনি ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। ক্রমেই বিখ্যাত মানুষটি ওই মহিলার দিকে ঝুঁকলেন। একই সাথে, যোগাযোগ কমতে কমতে একপ্রকার যোগাযোগ বন্ধই করে দিলেন অধ্যাপক কন্যা ও তাঁর পরিবারের সাথে।

অবশেষে অধ্যাপক সাহেবের অনুরোধে আমার বাবাসহ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিটি ও তাঁর বড়োভাই (বাবার বন্ধু) এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসলেন। সে আলোচনায় বিখ্যাত ব্যক্তি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তিনি জীবনে অনেক বড়ো হবেন, সে অবস্থায় তাঁর জীবনসাথী হিসেবে একজন উচ্চশিক্ষিত নারীই দরকার। তাই, তাঁর পক্ষে অধ্যাপক কন্যার বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ নেই। এভাবেই, সোশ্যাল স্ট্যাটাসের কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়েছিল দীর্ঘদিনের যোগাযোগ, ভালোবাসা।

চরম অপমান ও ক্ষোভে অধ্যাপক মহোদয় কেঁদে কেঁদে সভাস্থল ত্যাগ করেছিলেন সেদিন। বন্ধুবান্ধবের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এর কয়েকমাসের মাথায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন।

কাহিনীটি বলে বাবা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন এ ঘটনা হতে শিক্ষা নেবার। সে শিক্ষা আমরা নিয়েছিও। বাবা বলেছিলেন, তুমি যদি কারও সাথে অন্যায় আচরণ করো, তবে তা বহুগুনে বেড়ে উঠে একসময় তোমাকে ভোগাবেই। প্রকৃতির বিচার এতটাই নিরপেক্ষ। - -

সেই বিখ্যাত মানুষটির সংক্ষিপ্ত জীবনী আমার চোখে পড়েছে সম্প্রতি; তা মনোযোগ দিয়ে পড়েছিও। সেখানে তাঁর স্ত্রীকে বিদুষী তারকা নারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বিখ্যাত সে মানুষটির বিবাহপূর্ব সম্পর্কের ছিটেফোঁটাও লেখা হয়নি কোথাও। আর, তা হবেই বা কেন? সাধারণের চোখে বিখ্যাত মানুষ মানেই তো ধোয়া তুলসী পাতা যিনি সদাসর্বদা কোন না কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেন।

বিশেষ অনুরোধ: কমেন্ট করুন, সমস্যা নেই। তবে, তিনি কে তা অনুমান করে কারও নাম কমেন্টে যেন লেখা না হয়; প্লীজ।

FaceBook: ML Gani
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লোকেরা কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত আছে; সন্দেহজনক

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:৩৩



শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ২ মাস চলে গেছে; অন্তর্বতীকালীন সরকারের লোকেরা কিন্তু সরকারকে পুরোদমে চালু করার জন্য খুব একটা চেষ্টা করছে না, এদেরকে এই ব্যাপারে তেমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কন্যা ভাই পেল, এখন থেকে প্রতিদিন একটি করে গল্প সিরিজে নতুন গল্প যোগ হবে।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১০



ব্লগের সবাইকে একটি সু-খবর শেয়ার করার জন্য আজকের পোস্ট। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় ব্লগে ক’দিন আসতে পারছিলামনা। ০২/১০/২৪ খ্রিঃ দুপুর ২।০০ ঘটিকায় ২য় সন্তানের বাবা হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। বাবুর জন্য সবাই দোয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

দূর্গাপূজা ও সম্প্রীতি

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৬



একবার ভাবুন তো যে লোকটি বা লোকগুলো আজন্ম আপনার সংগে থেকেছে, একসংগে বেড়ে ওঠেছে, খেলাধুলা, লেখাপড়া, গল্পগুজব, ব্যবসা বাণিজ্য সবই একসংগে করেছে হঠাৎ কী এমন হলো যে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছোট গল্পঃ নিমন্ত্রণ

লিখেছেন সামিয়া, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪

ছবিঃগুগল


সোলায়মান আলী একটা বিয়ের দাওয়াত নিয়ে দোটানায় ছিলেন অনেক দিন ধরে মনে মনে; একদিকে বিয়ের দাওয়াত এড়িয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তার মাঝে; অন্যদিকে জোরাজুরি করা তার একমাত্র ঘনিষ্ঠ জ্বীন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের ভয়ে অনেকে ব্লগ ছাড়ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৪



হাসান কালবৈশাখী ও কলাবাগান-১ নেই; মোহাম্মদ গোফরান ও রাজিব নুরের দুরে থাকার দরকার আছে। এখন দেখছি, কোমলতিদের ভাই-বেরাদররাও গা তোলা দিচ্ছেন! বাংলাদেশ অবশ্য কঠিন যায়গা, ভাই-বেরাদর, শিক্ষক, সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×