প্রথম পর্ব এর পর ৷
☞
এটাকে পিঁয়াজু কেন বলে ? এটাতে তো সব ডাল ৷
আচ্ছা মুনতাসীর,মানুষের নাম কেন দিতে হয়?নাম ছাড়া কি মানুষ নাই ?
তুই ছেলে আর আমি মেয়ে কেন ?
তোকে ঐ মেয়েটা একবার গালি দেয় আবার জানু ডাকে কেন ?
তোর আম্মু তোকে গাধা,গরু ডাকে কেন ?
তোর গায়ের রং কাল কেন ?
আমাকে তুই সুন্দরী ডাকিস কেন ?
মানুষ মরলে কবর দেয় কেন ?
এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন করে মুনতাসীরের মাথা খারাপ করে রেখেছে তানজিন ৷ সেদিনের রাতের পর আজ প্রায় ১২ দিন হয়ে গেছে ৷ আজ ১৫তম তারাবীহ অর্ধেক পড়ে আবার ঘুরতে বেরিয়ে গেছে মুনতাসীর ৷
সেদিনের রাতের পর থেকে ১২ টি দিন ছিল অনেক রোমাঞ্চকর ৷ মুনতাসীর তার ভাবনার বাইরে অনেক কিছু দেখেছে ৷ অনেক কিছু শিখেছে ৷ অনেক কিছু জেনেছে ৷ মাত্র ঘুরা শেষ করে তানজিনদের বাসার সামনে এসে বসল ৷ তানজিন আগেই বারান্দায় ছিল ৷ মুনতাসীরকে দুর থেকে দেখেই বাসার পাশের ঐ ছোট্ট কয়েকটা সিড়ির উপর বসল ৷ সব এখন স্বাভাবিক ৷ ঐ রাতের অন্ধকার ঘুটঘুটে জায়গাটা আর নেই ৷ নেই তার কোন কিছুই যা সেদিনের রাতে ছিল ৷ আর এই নেই কে নেই করার মধ্যে দিয়ে তানজিন আর মুনতাসীর অনেক ভাল বন্ধু এখন ৷
এসেই তানজিন মুনতাসীরের চুল গুলো এলোমেলো করে দিল ৷ কিরে মুনতা কি খবর তোর ?
মুনতাসীর মনে মনে খুশি হলেও মুখে বিরক্ত প্রকাশ করে বলে " ধুর ভাই তোকে বলেছি না চুল ধরবি না " ?
তানজিন ও মন খারাপ করার অভিনয় করে ৷
তখন মুনতাসীর নানান অঙ্গভঙ্গি করে তার মন ভাল করতে চেষ্টা করে ৷
কৌতুক বলে ৷ অনেক পরিচিত একটা কৌতুক যেটা শুনে তানজিন প্রতিবারই হাসে ৷ না সেই কৃত্রিম হাসিটা না যেটা ১২ দিন আগে ছিল ৷
মুনতাসীর বলে ৷
তানজিন অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে ৷
জানস একদিন স্বাধিন ওদের বাসার দরজা নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ৷ এমন সময় তাকে দেখে প্রশ্ন করলাম দরজা নিয়ে কই যাচ্ছে ? ও বলল দরজার চাবি হারাই গেছে তাই তালা ভাঙ্গতে যাচ্ছে ৷ আমি বললাম চাবি হারাইছে তো চাবি খোঁজ ৷ তালা কেন ভাঙ্গবি ? ও বলল তালা ভাঙ্গি বাসায় যাবে ৷ আমি বললাম দরজা যে নিয়ে আসলি বাসায় তো চোর ঢুকে যাবে ৷ ও বলল দরজাতো আমার কাছে চোর কেমনে ঢুকবে ?
বরাবরের মত তানজিন শুনে মুনতাসীরের পিঠে জোরে জোরে থাপ্পড় মারতে থাকে ৷ বেচারা পিঠটা ধরে কোন মতে সহ্য করে ৷ ও বলে "ঐ বারবার একি কৌতুক বলিস কিন্তু নাম কেন চেঞ্জ করিস "? মুনতাসীর বলে তুই যেন একটু কম থাপ্পড় দেস পিঠে তাই ৷ মেয়েটা পিঠে থাপ্পড় দেওয়ার সাথে নাম পরিবর্তনের সম্পর্ক খুঁজে পাই না ৷
আবার আম্মু ফোন দিচ্ছে ৷ রিসিভ করে বরাবরের মত কিছু বকা ৷ এরপর আবারো বাসায় আসতেছি বলে রেখেদিল মুনতাসীর ৷ তানজিন কে বিদায় বলে চলে যাচ্ছে মুনতাসীর ৷ জানে কয়েকদিন পর সারাজীবনের জন্য বিদায় বলতে হবে ৷ যেটা তানজিনও জানেনা ৷
বাসায় এসে ল্যাপটপটা নিয়ে বসে আবারো মুনতাসীর ৷ খুঁজতে থাকে আসলেই কি এই সমস্যার কোন সমাধান আছে নাকি ? আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকছে দেখে চিন্তার মাঝে বিরতি পড়ল ৷ খেয়ে এসে আবারো চিন্তাই মুনতাসীর ৷ এবার একটু ফেইচবুকে যাওয়া যাক ৷ না এখানে তানজিন নেই ৷ ফোনেও তানজিন নেই ৷ সে শুধু ঐ অন্ধকার থেকে আলো হওয়া এলাকার বাসিন্দা ৷ না ভার্চুয়াল না বাস্তবিক ৷ নিউজফিডে ঘুরতে ঘুরতে একটা পোষ্টে চোখ আটকে যায় ৷ স্কেপ বাংলাদেশের একটা ইভেন্টের পোষ্ট ৷ পোষ্টের একটা লাইন " আপনার ঈদের শপিং এর টাকা থেকে অল্প টাকা পথ শিশুদের জন্য দিয়ে তাদেরও ঈদের আনন্দ লাভের সুযোগ দিন " ৷ কেন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল মুনতাসীর নিউরন জুড়ে ৷ কোলে থাকা ল্যাপটপ কাঁপছে ৷ পেয়ে গেছি ৷ সমাধান পেয়ে গেছি ৷ তানজিন থাকবে ৷ আমার বন্ধুহয়ে থাকবে আরো অনেকদিন থাকবে ৷ ফেসবুক থেকে বের হয়ে সাথে সাথে নকশা ডকুমেন্টটা অন করল ৷ হ্যাঁ এইতো ৷ সম্ভবতো ৷ মুনতাসীর খুশিতে লাফিয়ে ওঠে ৷ জোরে জোরে ইয়েস ইয়েস বলতে থাকে ৷ উপর থাকে আম্মু আর আপুর গলায় বিরক্ত ভরা মুনতাসীর নামটা শুনা যাচ্ছে ৷ কিন্তু এবার তাতেও খুশি সে ৷ না তানজিন তুই থাকবি ৷ আমার সাথে থাকবি ৷ শুধু আঁধারের আলো হয়ে না ৷ আমার ফেইচবুক ফ্রেন্ডলিষ্টে ৷ আমার পাশে ৷ যখন আমরা চা খাব মামার দোকানে কখনো ৷ তুই থাকবি ৷ তোকে থাকতেই হবে ৷ জানে মুনতাসীর আজ ঘুম হবে না ৷ আরে তানজিনের দীর্ঘ ঘুমের প্রস্তুতিটা যে নষ্ট করতে হবে ৷ ঘুমাব কেন ?
( চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৭