পূর্ব প্রকাশিতের পর-
পটাশ সাহেব যে নতুন সুপ্রিম কোর্টে আসছে তা নয় গত ছয়মাস ধরেই সে নিয়মিত কোর্টে আসছে। আন্তর্জাতিক আদালতের স্পেশাল পারমিশান সে হাতে নিয়েই এসেছে তার রিসার্স পেপারের জন্য। আজ তার গাড়ী ইস্কাটন মোড়েই থামিয়ে দিল পুলিশ। বলল- রাস্তা বন্ধ ওদিকে যাওয়া যাবে না - হাইকোর্ট এলাকায় গন্ডগোল হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশের এই একটা জিনিস ওকে খুব মুগ্ধ করে - চোখ কান খোলা রাখে- না চাইতে অনেক ইনফরমেশান পাওয়া যায় যা ওর দেশের পুলিশ দেয় না। সাথে বসে এক এক কাপ চা খাওয়ার সুযোগ থাকলে ফ্রীল্যান্স সাংবাদিতাও করে নেয়া যায়। ভেবেছিল অফিসার টাইপের কাউকে একটু জিজ্ঞাসা করবে কিন্তু ট্রাফিকের সেকেন্ড ধমকে তা আর সাহস পেল না। মনে করল ড্রাইভার আবুল মিয়া ওকে একদিন বলেছিল স্যার যে রাস্তায় ট্রাক চলে না সেখানে ট্রাফিকের মন ভাল থাকে না। কথা কইছেন তো কেস ফাইল আইন অমান্য ট্রাফিকের সাথে অসহযোগিতা কেস। বারগেইনে গেছেন তো ডাবল কেস বাম্পার কেস। আবুল মিয়া ওকে হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছিল বাম্পার কেস কি - গাড়ীর পিছনে যে ডান্ডা লাগানো আছে সেই কেস গাড়ীর কোম্পানীর কাছ থাকে বাম্পার লাগানোর পারমিশান আছে কি না। ও দেখল সত্যিতো ওর দেশের গাড়ীর পিছনে তো ডান্ডা নেই। পুলিশ তো ঠিকই করছে , ব্রাভো বাংলাদেশের পুলিশ। পটাশ সাহেব পিছনে তাকিয়ে দেখলেন সত্যিতো কোন ট্রাক নেই তাই আবুল মিয়াকে বললেন- গাড়ী পাশে থামাও । আমি নেমে হেটে যাচ্ছি তুমি বাসায় ফিরে যাও। ও আগেও দেখেছে ঢাকার এই একটা জায়গায় হাটার মজা আছে , গুলশানের রাস্তার মতো উল্টোপথে গার্মেন্টস কর্মীরা হাটে না। শেরাটন না পেরিয়ে ও বাম দিক দিয়ে কিছুটা হেটে রমনার ভিতরে ঢুকে গেল। গেটের সামনে দাড়িয়েও ছিল কিছুক্ষণ কিন্তু সোজা পথে না ঢুকে কাঁটাতারের ভাংগা বেড়া দিয়ে ঢুকল অনেকটা নেড়ী কুত্তা ঢোকে যেভাবে ঠিক সেভাবে। কাটাঁতারের খোঁচা যে একটু খায়নি তা নয় তবে হাসল মিটি মিটি করে এজন্য যে জাপানি কুত্তা খোচাঁ খেলেও কাজ না সেরে ও ফিরবে না। হকারের কাছ থেকে সবগুলো বাংলা দৈনিক কিনে নিয়ে বলল - তোমার নাম কি মিয়া ?
পন্চাশোর্ধ হকারটি বলল - সুরত মিয়া স্যার।
পটাশ সাহেব কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে সুরত মিয়া বললেন - আপনি কোন দেশী সাব ? ভালাই তো বাংলা বলেন। পটাশ সাহেব সুরতমিয়ার কাধে হাত রেখে বললেন- সকালে খেয়েছেন চাচা ? আপনার ছেলের অসুখ সেরেছে ? ও এখন কেমন আছে ?
মুহুর্তেই সুরত মিয়ার হাত থেকে অন্য পত্রিকাগুলো পড়ে গেল। ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল - সত্যি আপনি কেডা কন দ্যাহি ? ফটাশ সাহেব না তো !
পটাশ সাহেব নিজে পত্রিকাগুলো গুছিয়ে সুরত মিয়ার হাতে দিয়ে বলল- শিরাবকে বলবেন, হ্যাঁ পটাশ সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল। আর কয়েকটাদিন কষ্ট কর বাবা , সাহেব তোমাকে জাপানে নিয়ে যাবে। ওখানে তোমার চিকিৎসা হবে।
পটাশ সাহেব জানে আজকের হাইকোর্ট এলাকার গন্ডগোলের কারন। সে আই এর সিক্রেট এজেন্সী এক সপ্তাহ আগে ওকে জানিয়ে দিয়েছে গন্ডগোলের কথা। তারিখ সময় কতটুকু ইনজুরি সবকিছু। আমেরিকান বলয়ে তাৎক্ষনিক যে কিছু হয় না এ সত্যটা বাঙালী উনচল্লিশ বছরেও বুঝল না - এ হতাশাটাই ওকে রিসার্সের প্রতি অনুৎসাহী করেছে। পটাশ সাহেব সুরত চাচাকে সাথে নিয়ে পার্কের এক কোনার বেন্চিতে বসল। হাতের ব্যাগ খুলে দুটো ওয়ান টাইম গ্লাসে পার্কের কেনা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল- চাচা আপনি কি জানেন আসলে কি নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে। সুরত চাচা মাথা নিচু করে চা খেয়ে চলেছে। পটাশ সাহেব আবারো জিজ্ঞাসা করলেন - কিছু কি জানেন চাচা ?
গামছার কোনায় চোখের জল মুছে সুরত চাচা বললেন- এ ইতিহাস বড় করুন সাব। আপনি সইতে পারবেন না। নিজের হাতে আমার মায়েরে কবর দিয়েছি কেমনে কমু স্যার।
পটাশ সাহেব অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন ভাবলেন কি বলছে এ বুড়ো। হাই কোর্টের ঘটনার সাথে তার কথার সম্পর্ক কি । স্ট্রেন্জ!! তবুও চাচাকে সহজ করার জন্য বললেন- আমি কিছু কিছু জানি চাচা। যে কেসটা নিয়ে আজ গন্ডগোল সেটা তো চৌদ্দ বছর ধরে কোর্টে চলেছে তাই তো। আমি যদি মিথ্যে না বলি তাহলে আজকে বিচারপতির রায় দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু হবে না চাচা , রায় বেরোতে আরো দেরী হবে। গতকাল আওয়ামী লীগ কমান্ড কাউন্সীলের সিক্রেট মিটিং হয়েছে। সংবিধান চেন্জ হবে। রাজাকারের সন্তানের সাথে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের বিয়ে হবে এ বিল পাশ হচ্ছে শীঘ্রই। চৌদ্দ বছর আগের ঐ বিয়োগদান্তক ঘটানার সমাপ্তি হবে।
পটাশ সাহেব আরো চেষ্টা করেছিল চাচাকে সহজ করে আরো কিছু তথ্য নেয়ার কিন্তু সুরত চাচা বারে বারেই চোখ মুছছিল আর বলছিল- কি হবে সে সব শুনে সাব যে গেছে সে তো আর আসবে না। নেতা আমাদের সংবিধান দিয়েছে সাব ভালবাসা দেয়নি। মানচিত্র পেয়েছি সা'ব মুক্তি আসেনি। তারানা বিবি কে খুজেন সব পাইবেন। তার শরীরে দুটো মানচিত্র পাইবেন - মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত দলিল উনচল্লিশ বছর সে বয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার অলি গলি রাস্তায়। আমি তারে শেষ দেখেছি হাইকোর্টের গেটে। খোজ নিতে এসেছিল চৌদ্দ বছর আগের ঐ কেসের।
পটাশ সাহেব আজ আর কথা বাড়ালেন না সুরত মিয়ার সাথে। বললেন- চাচা অনেক বেলা হোল আজ তবে আসি। মনে মনে বলল - যে ক্লু তুমি দিলে হকার চাচা, নয় শত বছর তোমার পায়ে পড়ে থাকলেও এ ঋন শোধ হবে না।
----চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




