"আমার মায়ের য্যাকন মিত্যু হলো আমার বয়েস ত্যাকন আট-ল' বছর হবে। ভাইটোর বয়েস দেড়-দু বছর। এই দুই ভাই-বুনকে অকূলে ভাসিয়ে মা আমার চোখ বুজল। ত্যাকনকার দিনে কে যি কিসে মরত ধরবার বাগ ছিল না। এত রোগের নামও ত্যাকন জানত না লোকে। ডাক্তার-বদ্যিও ছিল না তেমন। মরবার আগে মুখে যেদি ওষুধ পড়ত, তাই কতো!.."
রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের একমাত্র উপন্যাস "আগুনপাখি"। বিশ শতকের এক সাধারণ, গ্রাম্য, সংসারী নারীর বয়ানে লেখা হয়েছে দুইশত চব্বিশ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ উপন্যাসটি।
'আগুনপাখি' উপন্যাসে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক অতি নিপুণতার সাথে আঞ্চলিক ভাষায় বর্ণনা করেছেন সেই সময়ের জন-জীবনের গল্প। এক রক্ষণশীল, সম্ভ্রান্ত পরিবারের দায়িত্বশীলা বধূর দৃষ্টিতে সেই সময় কেমন ছিল- তার সাথে পাঠক পরিচিত হতে পারেন এই বইটির মাধ্যমে। নিতান্তই ঘরোয়া গল্পের সাথে এখানে পাওয়া যায় বিশ শতকের মহামারিকালিন সময়ের চিত্র; সাধারণ মানুষের জীবনে বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব, গ্রামীণ জীবনে খরা-বন্যার চিরকালের হস্তক্ষেপ, সবশেষে দেশভাগ ও দেশ ভাগের পরবর্তী সময়ের কথা "আগুনপাখি" উপন্যাসে চিত্রের ন্যায় অঙ্কিত হয়েছে।
প্রায় পাঁচ দশকের লেখক জীবন শেষে গল্পকার হাসান আজিজুল হক আমাদেরকে যে উপন্যাস উপহার দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। প্রমিত ভাষা ব্যবহার না করে আঞ্চলিক ভাষায়ও যে মনোমুগ্ধকর এক উপন্যাস লেখা যায়, তা "আগুনপাখি" না পড়লে জানা হতো না কখনো।
বইয়ের নাম: আগুনপাখি
লেখক: হাসান আজিজুল হক
প্রকাশনী: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ
প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৬
অর্জন: প্রথম আলো বর্ষসেরা বই (১৪১২), আনন্দ পুরস্কার (২০০৮)
প্রচ্ছদ মূল্য: ২৭০৳
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:২৯