somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বারান্দা থেকে রাতের ফার্মগেট

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন হোস্টেলে থাকতাম, প্রায় দিন/রাতেই আমি একা একা কড়িডোর দিয়ে হেঁটে বেড়াতাম, বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম‌। মাঝে মাঝে বারান্দায় পরিত্যক্ত টেবিল/চেয়ার পেলে, সেখানে বসে থাকতাম। অনেক নির্ঘুম রাতে বুকে অস্বস্তি নিয়ে রাত আড়াইটা-তিনটার দিকে বের হয়ে বারান্দায় বসে রাতের ঢাকা দেখতাম। তখন যে শুধু আমিই ঘুমের রাজ্যে নির্ঘুম প্রাণী ছিলাম, সেটা না। বেশিরভাগ রুমেই তখনও বাতি জ্বলতো। মেয়েরা পড়তো, প্রাকটিক্যাল করতো, আড্ডাও দিত। আমি সুযোগ বুঝে এখানে সেখানে খানিক গল্প করে মেইন রোডের সাথের বারান্দায় গিয়ে বসতাম। দু'টো পা দোলাতে দোলাতে স্তব্ধ ফার্মগেটকে দেখতাম। একটু খেয়াল করে কলেজের অডিটরিয়াম বরাবর তাকালে মনের মধ্যে কেমন কাঁপন ধরতো। আজ সকালে যেখানে ভিড় ছিল, কাল সকালে যেখানে শত শত মেয়ে ঘুরে বেড়াবে- সেখানে এখন শুধু একটি বাতি একা একা জ্বেলে রয়েছে। কোনোভাবে ওখানে পৌঁছে দাঁড়ালে আমি প্রায় ভুতুড়ে এক পরিস্থিতিতে পড়ে যাবো। হাজার ডেকেও কাউকে পাওয়া যাবে না।

হুট করেই আবার মনোযোগ দিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। রোজ কত-শত মানুষ এ পথ দিয়ে চলাচল করে। অথচ এখন কেমন সুনশান! হঠাৎ এক-দুইটা পিক আপ ভ্যান বিজ্ঞান কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে রেললাইনের দিকে যেতে নিলে, আমার চোখ পড়তো ভ্যানের পেছনের অংশে। কেমন এলোমেলোভাবে মানুষগুলো আলুর মতো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। প্রথম দেখায় মনে হতো আলু কিংবা আলুর বস্তাই বুঝি! পরে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করলে দেখতে পেতাম, ওগুলো ঘুমন্ত মানুষের মাথা কিংবা পশ্চাৎদেশ; এ দুয়ের দূরত্বের মধ্যে আর দূরত্বকে ছাড়িয়ে তাদের বুক, পেট, পিঠ পা- সব‌ই চাদর সদৃশ কিছু দিয়ে আবৃত। এমন নিশুতি রাতে অদ্ভুত অবস্থায় ঘুমিয়ে কোথায় যাত্রা করেছে তারা? জীবিকার সন্ধানে? হয়তো ঢাকার বাইরের কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে, কিংবা ঢাকাকে পেছনে ফেলে অনেক দূরের কোনো অঞ্চলের উদ্দেশ্যে ছুটছে।

৪০৩ নম্বর রুমে আমার একটা ছোট্ট, সিঙ্গেল বিছানা আছে। ফ্যানের বাতাসে সেখানে আরামে ঘুমানো যায়। অথচ আমার চোখে ঘুম নেই। নানা উদ্বেগ-যন্ত্রণা নিয়ে আমি একা একা বারান্দায় বসে নির্ঘুম রাত্রি যাপন করছি। আর ওই মানুষগুলো চলন্ত গাড়িতেও খোলা আকাশের নিচে কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে!

আরেকদিন রাতে.. সেদিন খুব বেশি রাত‌ও হয়নি। সাড়ে এগারোটা কিংবা সাড়ে বারোটা বাজবে হয়তো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, বিজ্ঞান স্কুলের সামনে এক নারী মোটরসাইকেল থেকে নামছে। মোটরসাইকেলের চালক তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। মনটার মধ্যে কেমন যেন খচ করে উঠলো। এ কি তবে ঢাকা শহরের রাতের পরী? প্রায় উপন্যাস কিংবা নাটকে যাদের দেখা পাই? ঐ লোকটাও কি তবে খারাপ কেউ?

সেদিন কেন এমনটা ভেবেছিলাম? মেয়েটা তো কোনো চাকরিজীবীও হতে পারে! ঢাকা শহরে জ্যামের কারণে এতো রাতে বাসায় ফেরাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। ছেলেটা হতে পারে উবার ড্রাইভার। কিংবা ছেলেটা মেয়েটার বন্ধু/ভাই‌ও হতে পারে। হয়তো এতো রাতে তাকে নিয়ে কোনো জরুরি প্রয়োজনে এসেছে এদিকে। স্বামী হ‌ওয়াটাও আশ্চর্যজনক কিছু না, মনে হয়। তাড়াহুড়ো করে স্ত্রীকে হয়তো তার বাবার বাড়ির কাছাকাছি রাস্তায় নামিয়ে দিয়েই চলে গিয়েছে।

এত এত ইতিবাচক সম্ভাবনার মধ্যে আমার মনে কেন নেতিবাচক চিন্তাই আগে এলো? যে সমাজে বাস করি, সে সমাজের থেকেই সম্ভবত এই ধরণের চিন্তার উদ্ভব। আমাদের সমাজে, সন্ধ্যার পরে কোনো মেয়ের একা বাইরে থাকা একটু দৃষ্টিকটু বিষয়‌ই বটে। তবে এখন অনেকটা পরিবর্তন এলেও, তা বুঝি কেবল "রিচ সোসাইটি"তে কিংবা যথাযথ কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার পরেই মেনে নেওয়া হয়। অন্যথায়, সবার‌ই একটু আধটু ভ্রূ কুঁচকে যায়।
অথচ ওই অচেনা অজানা মানুষটা কোথা থেকে এসেছে/কেন এসেছে/কীভাবে এসেছে- এ নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই আমার। তবুও কেন ভাবলাম? এই অহেতুক পরচর্চার দায় কি আমি এখন সমাজকে দিয়ে পালাতে পারি? অবশ্য পালিয়ে যাবোই বা কোথায়? আমিও তো এই সমাজের‌ই একটা ছোট্ট অংশ!

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:২৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×