somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষক হবার ব্যার্থ চেষ্টা এবং প্রথম আয়। নিউজল্যান্ড টু ইউরোপ। (পর্ব৬)

১৬ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউজিল্যান্ডে আমি যখন আসি তখন আমার হাতে ছিলো মাত্র ১১শ ডলার। নিউজিল্যান্ডে সবকিছু সপ্তাহিক হিসেবে চলে, তাই যে হোস্টেল/মেসে উঠেছিলাম সেটার সাপ্তাহিক ভাড়া ছিলো ৮০ ডলার। খাবার প্রতি সপ্তাহে ৪০/৫০ ডলার আর বাস ভাড়া সপ্তাহে ১০ ডলার। তার মানে প্রতি সপ্তাহে আমার খরচ হতো ১৩০ ডলার, এর মধ্যে নতুন অনেকের সাথে পরিচয়। কফি কীংবা আইসক্রিম অফার করতাম সব মিলিয়ে সপ্তাহে ১৫০ ডলার। তার মানে আমার কাছে দুই মাসের মত চলার পয়সা আছে, বাড়ি থেকে আর পয়সা আনা সম্ভব না কোন ভাবেই তাই যেভাবেই হোক দুই মাসের মধ্যে কোন একটা জব পেতেই হবে। জবের জন্য মোটামুটি ডেস্পারেট লেভেলের খোজাখুজি শুরু করলাম। বলে নেই, আপনি যে দেশেই যান বাঙালি কিছু ব্যাবসায়ী বসে থাকবে আপনাকে বাশ দেয়ার জন্য। কেউ পিআরের আশায় গাধার মতো খাটছে কেউবা আবার সার্ভাইব করার জন্য।


তো জব খোজার জন্য সিভি বানালাম, বিপত্তি হলো এক্সপেরিয়েন্স লিখতে গিয়ে। জীবনে কোনদিন কোন প্রকার কাজ করিনি তাহলে এক্সপেরিয়েন্স আসবে কোথা থেকে? এখানে আরেক মজার জিনিস ঘটে, কিছু বাঙালি দোকান আছে যারা শুধুমাত্র সিভিতে এক্সপেরিয়েন্স লিখতে দিবে সেজন্য ফ্রীতে আপনাকে ১ সপ্তাহ খাটিয়ে নিবে। আমি সেসবের ধারে কাছেও নাই, কুইন্স স্ট্রিটে এক ঘন্টা হেটে ভিবিন্ন রেস্টুরেন্টের নাম লিখলাম। তারপর সেখান থেকে দুইটা ভুয়া এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে দিলাম। এরপর পন্সন বে, মিশন বে, কুইন্স স্ট্রিট, সেন্ড্রিংহাম ভিবিন্ন যায়গায় সিভি দিতে লাগলাম কিন্তু কোন রেসপন্স পাইনি। এক মাস হয়ে গেলো জব না পেয়ে মাথা মোটামুটি খারাপ হওয়ার অবস্থা। এর মধ্যে কিছু ইন্ডিয়ান বন্ধুবান্ধব জুটে গেলো, এরা আবার এসেই কৃষি কাজে লেগে যায়। তাই এদের কাছে ভিবিন্ন ফার্মের নাম্বার থাকে, কৃষি কাজের জন্য ইন্ডিয়ানরাই বেস্ট।

সব কিছু ভেবে ডিসিশন নিলাম কৃষি কাজে যাবো। শহর থেকে ৩/৪ ঘন্টা ড্রাইভ, কয়েকজন মিলে একটা গাড়িতে করে যায়। গাড়ির মালিককে আনা নেয়ার জন্য ২০ ইউরো দিতে হয়। তবে সেখানে কাজ করতে পারলে প্রতিদিন ৮০/১০০ ডলার ইনকাম করা যায়। ভেবেছিলাম দুই-এক সপ্তাহ কাজ করে কিছু টাকা সেভ করে আবার সিটিতে কাজ খোজা শুরু করবো। সেই টার্গেটেই ইন্ডিয়ান বন্ধুদের সাথে ১দিন গেলাম, গিয়ে ১ দিন কাজ করেই বুঝলাম যতই টাকা দিক এই কাজ আমার দ্বারা সম্ভব না। কোনমতে একদিন কাজ করে আরেক দিন যাওয়ার সাহস হয়নি। সেই টাকাটাই আমার জীবনের প্রথম ইনকাম। বাসায় এসে দেশ থেকে নিয়ে আসা নাপা খেয়ে দুইদিন শরীরের ব্যাথায় উঠতে পারিনি। এরপরই ডিসিশন নিলাম সিটিতেই একটা জব যেভাবেই হোক ম্যানেজ করবো।

এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে এক বড়ভাই রেফার করলো, প্রতিদিন ডিনারে ৪ ঘন্টা করে কাজ করবো সপ্তাহে ১০০ টাকা। শুরু করে দিলাম কাজ, লোকটা ইন্ডিয়ান ছিলো কিন্তু ওনার ছেলে কিউই ছিলো। সে আবার নিউজিল্যান্ড পুলিশে কর্মরত ছিলো। সে আমাকে প্রতিদিন বাসায় এসে নামিয়ে দিয়ে যেতো, আমরা ভিবিন্ন গল্প গুজব করতাম। ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও সে কখনো ইন্ডিয়া যায়নি। তার গার্লফ্রেন্ডও কিউই!!! সে তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তার বাবার রেস্টুরেন্টে ডেট এ ডিনারে আসে। তার বাবা তাকে সার্ভ করে, আর আমাদের দেশে হলে আচ্ছামত আগে ধোলাই দিতো। তাদের এসব আচরণ দেখেত আমি মুগ্ধ!! এও কি সম্ভব!!! যাইহোক, ১০০ ডলারে আমার কোনমতে বাসা ভাড়া দিতে পারলেও আমার খাবার খরচত উঠছেনা। তাই ভিবিন্ন দিকে খোজ নিতে শুরু করলাম! এর মধ্যে মায়ানমারের এক মালিকের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে জব পেলাম। এটায় সপ্তাহে ২০০ ডলার দিবে। তাই আগের জব ছেড়ে এটাতে ঢুকলাম।

এর মধ্যে ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড এপ্লাই করলাম ১০০০ ডলার তারপর ওভার ড্রাফট ২৫০০ ডলার। তারমানে আমার পকেটে ব্যাংকের ৩৫০০ ডলার আছে। দুইশ ডলার দিয়ে সাপ্তাহিক যা খরচ আছে কোনমতে চালিয়ে নিতাম এটাও মন্দের ভালো। এর মধ্যে এখানকার সবচেয়ে পরিচিত কোম্পানি স্কাইসিটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলো। ক্যাজুয়াল ওয়ার্কার হিসেবে জয়েন করলেও প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ পেতাম আর সপ্তাহে ২৮০ টাকার মত পেতাম এটা আমার জন্য খুবই বড় ব্যাপারটি ছিলো। কারণ বড়ভাইরা বলতো সামার ভ্যাকেশনে এখানে ৪০/৫০ ঘন্টাও কাজ করা যায়। তাই টিউশন ফীর ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। সামারে কাজ করেই টিউশন ফী টা উঠিয়ে ফেলা যাবে। এরপর নিউজিল্যান্ড ছেড়ে আসার আগ পর্যন্ত ওয়েটার, স্টিওয়ার্ড, কমি সেফ হিসেবে কাজ করি। অন্য কোথাও কাজ খুজিও নি, করিও নি।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:০৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×