somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসে বন্ধু বান্ধব এবং আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা। নিউজল্যান্ড টু ইউরোপ। (পর্ব ৭)

১৮ ই জুন, ২০২১ সকাল ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউজিল্যান্ডে এসে বুঝতে পারলাম এক ডলারেরও অনেক দাম। এখানে সবাই সেন্ট সহ হিসেব করে, সম্ভবত বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করে হিসেব করার জন্যই এত কিপটেমি। এখানে সিনিয়ররা সহজে জুনিয়রদের সাথে মিশতে চায়না তাই সমসাময়িক সময়ে যারা নিউজিল্যান্ডে গিয়েছে তাদের মধ্যেই সার্কেল গড়ে উঠে। বিপদে পাশে মানুষ পাওয়া দুষ্কর তার মধ্যেও দু একজন থাকে যারা ব্যাতিক্রম। আমি যখন আসি তখনকার সময়ে শীমন মামা আসে। শীমন আমার চেয়ে বয়সে অনেক সিনিয়র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও শুধুমাত্র রাজনৈতিক কানেকশন না থাকায় ফ্যাকাল্টিতে জায়গা হয়নি। রাগে দুঃখে বেচারা নিউজিল্যান্ডে চলে আসে, যেহেতু বয়সে অনেক সিনিয়র তাই উনাকে শীমন মামা বলেই ডাকতাম আমি। পরবর্তীতে যত বছর নিউজিল্যান্ডে ছিলাম উনাকে আমি মামা বলেই ডাকতাম।



এমনিতে বিদেশের মাটিতে বন্ধু বান্ধব পাওয়া খুব কঠিন, একেকজন একেক পরিবেশ থেকে উঠে আসা। কেউ হয়ত গ্রামে বড় হয়েছে, নিজের যোগ্যতায় নিউজিল্যান্ডে এসেছে কিন্তু এখানেও শান্তি নেই। বাঙালি অন্যান্য ছাত্ররাই হয়ত তাকে ক্যাফেটেরিয়ায় উপেক্ষা করছে। আর যদি ভেবে থাকেন বিদেশের মাটিতে সবাই পোলাইট হয় তাহলে আপনার ধারনা ভুল। এই যেমন, এক বন্ধু ছিলো দেখতে কালো তারে বন্ধু বান্ধব ডাকতো ব্ল্যাক ডায়মন্ড। আরেকজন প্রেম করে অল্প বয়সে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলেছে তাকে ডাকত মজনু। একজন অন্যজনের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছে তাকে ডাকত ভোদাই, এরকম অসংখ্য নামকরণ দেখেছি এই বিদেশে এসে। তাই যদি ভেবে থাকেন শিক্ষিত মানেই সে ভদ্র কিংবা ম্যানার জানে এটা আপনার ভুল ধারনা। এইত কয়েক মাস আগের কথা, বাসায় সুইজারল্যান্ড থেকে গেস্ট আসছে তিনি দেখতে একটু কালো। তো যার বাসায় সাবলেট থাকতাম সেই ভাবি গেস্টের নাম রেখে দিলেন কাল্লু। কিন্তু এই ভাবি নিজেও যে খুব আহামরি সুন্দরী তা কিন্তু না। রেসিজম শুধু বিদেশিরা করেনা, আমরা দেশি ভাই বোনেরাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।

একবার সীমন মামা আরেক বাঙালি ভাইয়ের সাথে কাজে যাচ্ছিলেন। তো পথে ঐ ভাই সীমন মামার মোবাই চাইলেন, মামাত সরল বিশ্বাসে দিয়ে দিলেন। ঐ লোক কি করল আপনি আন্দাজ করতে পারবেন!!! ভেবে দেখুনতো সে কি করতে পারে??? সে সীমন মামার ফোন থেকে ৮০০ ডলার তার নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করে নিয়েছে!!! পরে কমিউনিটির উঠতি নেতা, সিনিয়র নেতা কাউকে ধরেই লাভ হয়নাই। পরে পুলিশে কমপ্লেইন করতে গেছে, তারা বলে এটা ফাইনান্সিয়াল ফ্রড! ব্যাংকে যোগাযোগ কর, তারা যদি লেটার দেয় তাহলে আমরা একশন নিবো। বেচারা আশাহত হয়ে ব্যাংকে গেলো। কিন্তু ব্যাংক বলে; এটা তোমার মোবাইল থেকে ট্রানজেকশন হয়েছে। এটা কোন ফ্রড না, তোমার ফোন তুমিই ট্রান্সফার করেছ। তুমি কি কোনভাবে প্রমাণ করতে পারবে সে তোমার ফোন নিয়ে গিয়েছে? তখন মামা বললো তোমরা অন্তত তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ। তাদের উত্তর আমরা এভাবে কাউকে এসব জিজ্ঞেস করতে পারিনা। এটা হ্যারাসমেন্ট!!! তুমি শুধু শুধু কেন তোমার দেশের লোককে হ্যারেস করছ? বরং তুমি তোমার কমিউনিটির মুরুব্বিদের সাথে কথা বলে নিজেরা মিউচুয়াল করে নাও। কমিউনিটির আব্বা যারা আছে তাদের আবার সময় নেই!! কারণ নিউজিল্যান্ডে প্রতি ঘন্টা সময়ের দাম ১৫ ডলার। অবশেষে মামা পরাজয় বরন করলেন। ৮০০ ডলারের চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দিলেন।

আরেকবার এক বড়ভাই আরেক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে একটা গাড়ি কিনলেন। আনফরচুনেটলি, যে ভাই গাড়ি কিনলেন ওনার বাবা সেই রাতেই স্ট্রোক করে বসলেন। আমরা সবাই ভাইয়াকে শান্তনা দিচ্ছি!!! ওই ভাই যার কাছ থেকে গাড়ি কিনলেন তাকে অনুরোধ করলেন যেন তার গাড়িটা ফেরত নিয়ে যায়। আর টাকাটা তাকে ফেরত দিয়ে দেয় কারন তার বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা প্রয়োজন আর উনি দেশে আসবেন। ওনারা দুজন দীর্ঘ দিনের রুমমেট কিন্তু তাও তিনি কোন সিম্পেথি না দেখিয়ে বরং বাকি ৩০০ ডলার দাবি করে বসেন। তখন ঐ ভাই বলল টাকা দিতে পারবেননা; তখন গাড়ি বিক্রেতা ভাই পুলিশে ইমার্জেন্সি কল দিয়ে বসেন। অতটা নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয়েই নিজের কাছে খারাপ লাগলো। পরে আমরা কয়েকজন টাকা দিয়ে সেই বিক্রেতা ভাইকে পে করে দেই।

আরেকবার এক ভাই আমাকে অনুরোধ করলো তার ক্রেডিট কার্ড ব্লক আমি যেন তাকে অনলাইনে একটা পেমেন্ট করে দেই। আমিও সরল মনে রাজি হই; উনি আমাকে ২০০ ডলার পাঠালেন আমি আমার কার্ড থেকে পেমেন্ট করে দেই। পরে জানতে পারি উনি জুয়া খেলার ওয়েবসাইট বেট৩৬৫.কম এ আমার নামে একাউন্ট খুলে আমার কার্ড থেকে পে করে ডিপোজিট বোনাস ২০০ ডলার দিয়ে জুয়া খেলেছেন। বিষয়টা এমন যে; নতুন একাউন্টে যত ডলার ডিপোজিট করবে ঠিক তত ডলার বোনাস দিবে। তাই তিনি আমার নাম আর কার্ড ব্যাবহার করে একাউন্ট খুলেছেন। তখন আমি বুঝলাম বাটপারি কত প্রকার ও কি! কি!!

একবার কিভাবে যেন নোয়াখালীর দুই বন্ধুর সাথে আমার সখ্যতা ভড়ে উঠে। তারা খুব ভালো বন্ধু ছিলো, তো তাদের সাথে আমার ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ধরি তাদের নাম রাজ আর শুভ। রাজ নোয়াখালিতেই বড় হয়েছে আর শুভ ইন্টার ঢাকায় করে। রাজ শান্ত স্বভাবের ছেলে আর শুভ একটু উগ্র। তারপরো একই এলাকার হওয়ায় তারা দুজন খুবই ভালো বন্ধু। আমরা তিনজন তিন ভার্সিটির মাল:) । মাঝে মাঝে আমরা একজন আরেকজনের কলেজে গিয়ে আড্ডা দিতাম। কিন্তু বেশ কিছুদিন পরেই ঘটে বিপত্তি; তারা কি যেন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি করে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে। মারামারি মানে রক্তারক্তি লেভেলের মারামারি!!! রাজ শান্ত স্বভাবের ছেলে তাই শুভ তাকে ইচ্ছামত পিডাইলো। এরপর শুভকে একদিনের নোটিশে বাসা থেকে বের করে দিলাম আর জীবনে একটা শিক্ষা হলো; উগ্রতাকে প্রশ্রয় দিবোনা। আমি সাধারণত উগ্র মানুষ এড়িয়ে চলি, যারা মুখের কথা যুদ্ধ করতে জানে না তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। এরা সুযোগ পেলেই নিজের পেশী শক্তি দেখাবে!!! আমার কাছে উগ্রতার কোন ঠাই নাই। আসলে বিদেশের মাটিতে বন্ধু বান্ধব খুজে পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। সবাই সবার ধান্দায় থাক! বিদেশে যাওয়ার আগে অবশ্যই এটা মাথায় রাখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:০৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×