somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আমিই সাইফুল
আমি একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের ঝড়-ঝাপটায় পাক খেয়ে গড়ে ওঠা আজকের এই আমি। ব্লগে তুলে ধরি মনের গভীরে লুকানো আবেগের রং, যা সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার আলোয় মেলে না। আমি অনুভূতির এক ফেরিওয়ালা, শব্দে বুনে যাই জীবনের অলিখিত গল্প…

বিসিএস বিতর্ক: রাজপথ তপ্ত রাখতেই সরকারের এমন অপকৌশল?

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিসিএস পরীক্ষার নতুন নিয়ম নিয়ে বিতর্কের ঢেউ যেন থামছেই না। সাম্প্রতিক সময়ে, সরকারের একের পর এক সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে যেন তারা নিজেরা ইচ্ছা করে নিজেদের জন্য চাপ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে, বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে নতুন বয়সসীমা এবং পরীক্ষার সুযোগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।

আগে সরকার বলেছিল যে, সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এই ঘোষণার পর অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছিল যে, বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে চাকরির জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর করা হলো এবং অংশগ্রহণের সুযোগ মাত্র তিনবার নির্ধারণ করা হলো। কেন এই সিদ্ধান্ত, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। এমনকি যারা আশা করছিল যে বয়সসীমা অন্তত ৩৩/৩৪ থাকবে, তারাও বিস্মিত।

বিসিএস পরীক্ষার বয়সসীমা নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তে আসলে কী বোঝা গেল? অনেকেই মনে করছেন, এটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটি সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে সরকার কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করছে। আগে একজন ছাত্র-ছাত্রী সাধারণত ২২-২৪ বছর বয়সে তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করত। এরপর, ৩০ বছর পর্যন্ত তারা বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত, এবং এই সুযোগগুলো ব্যবহার করে ৭-৮ বার পর্যন্ত চেষ্টা করা যেত। কিন্তু, নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মাত্র তিনবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে। ফলে বিসিএস পরীক্ষার নতুন নিয়ম তরুণ প্রজন্মের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

সরকার কি সত্যিই জানত না যে, এই সিদ্ধান্ত টিকবে না। এর উত্তর হ্যাঁ হতে পারে। তারা হয়তো ধারণা করেছিল, এই সীমাবদ্ধতা খুব বেশি দিন টিকবে না। কেননা, এটি নতুন পরীক্ষার্থীদের জন্য আসলে কোনো সুবিধা করবে না বরং তাদের জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করবে। কিন্তু, এই সিদ্ধান্তের পিছনে আরও কিছু রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। যেমন, যদি এই সিদ্ধান্তের কারণে যদি কোনো আন্দোলন শুরু হয়, তবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এবং এ কারণেই ছাত্রলীগকে আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এমন একটি সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যখন সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ ছিল অনেক বেশি। প্রশ্ন হলো, কেন এত তাড়াতাড়ি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? আসলে, সরকারের জন্য এই সিদ্ধান্ত ছিল দুই পাখি এক ঢিলে মারার একটি কৌশল।

সমন্বয়করা যখন গণভবন ঘেরাও করতে চেয়েছিল, তখনই বোঝা গিয়েছিল যে তাদের পেছনে সমর্থনের অভাব রয়েছে। কিন্তু এখন যদি তারা এই ইস্যুকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে পারে এবং তাহলে তারা মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে তারা সরকারের সাথে থেকেও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারে। এবং যেহেতু ব্যাক্তিগত কারণেই নতুন পরীক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে যোগ দিবে। সমন্বয়করা এর ফায়দা উঠাবে। তারা বুঝাতে চাইবে তাদের নেতৃত্বে এখনো লাখ লাখ মানুষ মাঠে নামে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত তরুণদের মধ্যে একপ্রকার হতাশা তৈরি করেছে। কেননা, একজন শিক্ষিত তরুণ-তরুণী যখন বছরের পর বছর ধরে পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়, তখন হঠাৎ করে এমন কঠোর নিয়ম তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩২ বছর বয়সের মধ্যেই তাদের সর্বোচ্চ তিনবার চেষ্টা করার সুযোগ দেওয়া হবে। আগে যেখানে তারা ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত ৭-৮ বার অংশগ্রহণ করতে পারত, সেখানে এখন মাত্র তিনবারের মধ্যেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, তাদের দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম বৃথা যেতে বসেছে। এই সিদ্ধান্তেই সরকারের বিপক্ষে ছাত্রদের এবং নতুন প্রজন্মের ক্ষোভ বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম মনে করছে, সরকার তাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলছে।


এদিকে, অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্তের পিছনে আরও কিছু গোপন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যেমন, সরকার হয়তো বুঝতে পেরেছে যে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আর তাই তারা আগে থেকেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে, যাতে তারা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারে। এর ফলে, আন্দোলনকারীরা তাদের শক্তি হারাবে এবং সরকারের উপর চাপ কমে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে, নতুন বিসিএস পরীক্ষার্থীরা কী করবে? তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলেছে? তাদের সামনে কী বিকল্প আছে? তারা কি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে নাকি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে। তবে, এটা স্পষ্ট যে, সরকার এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই বিবাদ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং এর প্রভাব দেশের ভবিষ্যতের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকার যদি নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু না হটে, তাহলে তরুণদের আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে। আর এই তীব্রতা সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে। কিন্তু, যদি সরকার তরুণদের দাবির প্রতি সংবেদনশীল হয় এবং তাদের দাবি মেনে নিয়ে একটি সমঝোতার পথে যায়, তাহলে হয়তো তারা রাজনৈতিকভাবে কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে পারবে।

সর্বশেষে, দেশের জনগণ এবং তরুণ প্রজন্মকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা আসলে পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকার যেভাবে জনগণের সঙ্গে খেলা করছে, তা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বা সরকারের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তরুণ প্রজন্ম এই সময়ে তাদের জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ, তা ভালো করেই জানে। তারা জানে, বিসিএস কেবল একটি চাকরি নয়, বরং এটি একটি স্বপ্ন।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×