somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিয়ামত বা মহাপ্রলয় (৩য় পর্ব)

১০ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(Universal Cataclysm)
মহাবিশ্বের ধ্বংস হবে কি হবে না তা নিয়ে অবিশ্বাসীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে এবং অবিশ্বাসের ঘোরে তারা এ ব্যাপারে সব সময়েই দ্বন্দে ভোগে। তবে আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত কিয়ামত যে অবশ্যই সংঘটিত হবে এবং অবিশ্বাসীরা অচিরেই তা জানতে পারবে, এবিষয়টি আল-কোরআনে প্রদত্ত ঐশী তথ্যসমূহে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মহাবিশ্বের ধ্বংস যে অবশ্বম্ভাবি, বর্তমান বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার আলোকে এর পক্ষেই বেশী সমর্থন পাওয়া যায়। তবে এই ঘটনা বৃহৎ সংকোচনের মাধ্যমে ঘটুক অথবা বস্তু ও প্রতিবস্তু জগতের মধ্যে সংঘর্ষের ফলেই ঘটুক না কেন, এর ফলে যে মহাবিশ্বের বর্তমান অবয়বের আমুল পরিবর্তন সাধিত হবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই
পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক তথ্যসমৃদ্ধ আয়াতগুলোর মধ্য থেকে কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সম্পর্কিতকয়েকটি উল্লেখযোগ্য আয়াতের বাংলা আনুবাদ এই আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসাথে কিয়ামত সম্পর্কে বর্তমান যুগের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও ধ্যান-ধারণা { স্টিফেন ডব্লু হকিং-এর সাড়া জাগানো গবেষণা-ধর্মী (A Brief History of Time) এবং (Blackhole And Baby Universes And Other Essays) -শত্রুজিত দাশগুপ্ত- কর্তৃক বাংলায় অনুবাদকৃত (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) ও (কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশু-মহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা)} নামক পুস্তক দুটি থেকে সংগৃহিত এবং পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ইংগিতের সাথে সমন্বয় সৃষ্টির সাথে সাথে আমার নিজস্ব কিছু বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-ভাবনার বহিঃপ্রকাশই এই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। প্রকৃত খবর মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। সত্যের স্বরূপ উদঘাটনে যতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি তার সবটুকুই আল-কোরআনের ঐশীবাণীসমূহের মর্ম সঠিকভাবে অনুধাবনের ফলেই সম্ভব হয়েছে। আর ব্যর্থতার জন্য একজন অতি সাধারন মানুষ হিসেবে আমার অযোগ্যতা ও অজ্ঞতাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। হে বিশ্ববিধাতা করুণাময় মহান আল্লাহ, সর্বপ্রকার অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য সর্বদা অবনত মস্তকে ক্ষমাভিক্ষা চাই।
আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা নাযিয়াত- (79.An-Naziat // Those Who Drag Forth) -আয়াত নং-১ ও ২
.01وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا
(৭৯ : ০১) অর্থ:- শপথ তাদের যারা নির্মমভাবে টানে বা উৎপাটন করে বা পদচ্যুত করে বা নামিয়ে আনে,
(79 : 1) By those who extract or dismissed or bring down severely/vehemently,
.02وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا
(৭৯ : ০২) অর্থ:- এবং যারা বাঁধন খুলে বন্ধন-মুক্ত করে দেয়।
(79 : 2) And those who loosen the binding and then set free from all ties of the world.
সূরা ইনশিকাক- (84.Al-Inshiqaq // The Sundering) -আয়াত নং-৩ ও ৪
.03وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ
(৮৪ : ০৩) অর্থ- এবং পৃথিবীকে যখন টানা হবে,
(84 : 3) And when the earth will be stretched out,
.04وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
(৮৪ : ০৪) অর্থ- এবং পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বের করে দেবে ও শুন্যগর্ভ হবে।
(84 : 04) And the earth will casts forth what is in it, and becomes hollow.
সূরা যিলযিলা- (99.Az-Zalzala // The Earthquake) -আয়াত নং-১ ও ২
.01إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا
(৯৯ : ০১) অর্থ:- পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে,
(99 : 01) When the earth is shaken to her (utmost) convulsion,
.02وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا
(৯৯ : ০২) অর্থ:- এবং তার ভার বের করে দেবে।
(99 : 2) And the earth throws out its burden (from within).
সূরা ওয়াকিয়া- (56.Al-Waqia // The Event) -আয়াত নং-৪, ৫ ও ৬
.04إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا
(৫৬ : ০৪) অর্থ- যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী,
(56 : 04) When the earth shall tremble with severe shaking.
.05وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا
(৫৬ : ০৫) অর্থ- এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।
(56 : 5) And the mountains shall be broken to pieces completely smashed.
.06وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا
(৫৬ : ০৬) অর্থ- ফলে তা পর্যবসিত হবে উৎক্ষিপ্ত ধুলিকণায়।
(56 : 6) And will become like thin particles of dust scattered in the sunshine of the ventilator.
.75 أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ
(৫৬ : ৭৫) অর্থ- আমি শপথ করছি নক্ষত্রসমূহের পতিত হওয়ার স্থানের।
(56 : 75) Then I swear by the places where the stars are fallen down.
সূরা ইনফিতার- (82.Al-Infitar //Cleaving) -AvqvZ নং-৩
.03 الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
(৮২ : ০৩) অর্থ- সমূদ্র যখন উদ্বেলিত হবে।
(83 : 3) And when the seas will be overflown,
আলোচনা-
সূরা নাযিয়াতের (৭৯:১) ও (৭৯:২) নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা তাঁর এমন ধরনের বিশেষ সৃষ্টিকে নিয়ে শপথ করছেন যার সাথে কৃষ্ণগহ্বরগুলোর প্রচন্ড শক্তি ও ধ্বংসাত্বক প্রকৃতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কৃষ্ণগহ্বরগুলোই বিশালকায় কোন নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ সহ সব কিছুকে তাদের আওতার মধ্যে পেলে সেগুলোকে প্রচন্ড আকর্ষনে টেনে নিয়ে গতানুগতিক কক্ষপথের বাঁধন থেকে মুক্ত করে দেয় বা নির্দিষ্ট কক্ষপথ থেকে পদচ্যুত বা উৎপাটন করে নির্মমভাবে নামিয়ে আনে। এর ফলে অবশেষে সেগুলো সূরা ওয়াকিয়ার (৫৬:৭৫) নং আয়াতে উল্লেখিত ও শপথকৃত ‘নক্ষত্রসমূহের পতিত হওয়ার স্থানে’ অর্থাৎ ‘ব্ল্যাকহোলে’ পতিত হয়। { (৭৯:১) নং আয়াতে (নাযয়া) শব্দটি (নাযউ’ন) থেকে উদ্ভুত, অর্থাৎ কোন কিছুকে উৎপাটন করা। (গারক্বান) ও (আগারাকা) এর অর্থ কোন কাজ নির্মমভাবে করা-‘পবিত্র কোরআনুল করিম’-মূল-তফসীরে মাআরেফুল ক্বোরআন’-(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসির )--অনুবাদ ও সম্পাদনা--মওলানা মুহিউদ্দীন খান -১৪৩৪পৃষ্ঠা। (নাযউ’ন)= (অর্থ)-উৎপাটন করা, নামিয়ে আনা, পদচ্যুত করা ইত্যাদি-আল-কাওসার (আরবী বাংলা অভিধান)-মদীনা পাবলিকেশন্স। }
*কৃষ্ণগহ্বরগুলোর ধ্বংসাত্বক প্রকৃতি এবং কিয়ামত সংঘটনের ব্যাপারে এদের কি ধরণের প্রভাব বা ভূমিকা থাকতে পারে সে বিষয়ে জানার জন্য “আল-কোরআনে ব্ল্যাকহোল” প্রবন্ধটি পড়ে নিলে বুঝতে সুবিধা হবে।]
কোন এক সময় থেকে আল্লাহতায়ালার আদেশে এই কৃষ্ণগহ্বরগুলোর কারণেই হয়ত কিয়ামতের প্রাকৃতিক আলামতসমূহ প্রকাশ পেতে থাকবে। আদিকালে সৃষ্ট আদিম কৃষ্ণগহ্বরগুলোর সাথে ক্রমাগত নব কৃষ্ণগহ্বরগুলো সৃষ্টি হয়ে চলেছে বিধায় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর গতানুগতিক নিয়মের উপর হঠাৎ করেই হয়ত এদের সম্মিলিত প্রভাব শুরু হয়ে যেতে পারে অথবা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ফলে ভবিষ্যতে কোন ঘটনা ঘটার জন্য যতটা সময় লাগবে বলে এখন মনে হচ্ছে, যেমন সুর্য ও পৃথিবী একত্রে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে যে হিসেব দেখান হয়েছে, (এক হাজার মিলিয়ন, মিলিঃ, মিলিঃ, মিলিঃ বৎসর) এই সময়ের বেশ আগেই এবং পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে বিচরনরত অবস্থাতেই আল্লাহর ইচ্ছায় কোন এক নির্দিষ্ট সময় থেকে সেই মহাঘটনা অর্থাৎ কিয়ামতের আলামতগুলো প্রকাশিত হওয়া শুরু করতে পারে না কি ? অবশ্যই পারে,- বিশেষ করে যখন মানুষ জানতে পারবে যে সূর্য নিষপ্রভ হয়ে আসছে অর্থাৎ সূর্যের জ্বালানী ক্রমশঃ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, মহাকাশে শ্বেতবামন, নিউট্রন তারকা ও কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থারও ( আল-কোরআন ও হাদিছে বর্ণীত ) পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে:-এইরূপ পরিবেশে কোন এক অজ্ঞাত সময়ে আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় সৌরজগতের নিকটবর্তী [(৭৯:১)নং আয়াতে শপথকৃত ] কোন কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণে আপন আপন কক্ষে বিচরনরত চন্দ্র ও পৃথিবীসহ সকল গ্রহ ও উপগ্রহগুলোকে প্রবলভাবে টানা হবে। ফলে তাদের কক্ষপথের বন্ধন মুক্ত হতে থাকবে। (৭৫:৯) নং আয়াতে বর্ণীত তথ্যমতে সম্ভবত এ অবস্থায় আমরা সর্বপ্রথমে চাঁদকে তার কক্ষপথের গতানুগতিক সঞ্চালন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে সূর্যের সাথে মিলিত হতে দেখব। যেহেতু বিজ্ঞান আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে ২৪টি এবং পৃথিবীর পাশে বিরাট ব্ল্যাকহোল আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে, সুতরাং ধীরে ধীরে পৃথিবীর উপর নিকটবর্তী কোন কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় (৮৪:৩) প্রচন্ড টানের ফলে (৯৯:১) ঘন ঘন ভূ-কম্পন হবে। প্রচন্ড টানের কারণে পৃথিবীর সাভাবিক আকৃতির পরিবর্তন ঘটায় ভূপৃষ্ঠের ফাটল দিয়ে ভূ-গর্ভের উত্তপ্ত গলিত পদার্থ সহ সবকিছু (৮৪:৪) বাহিরে নির্গত হতে থাকবে। ভূমন্ডলের স্তরগুলোর বিন্যাস এলোমেলো হয়ে যাবে। বিশেষ করে লিথোস্ফেয়ারের খন্ডগুলো হঠাৎ স্থানচুত হওয়ায় (৫৬:৫) পর্বতমালাগুলো ধ্বসে যেতে থাকবে এবং বড় বড় পাহাড়গুলো আছড়ে পড়ায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলিকণায় পরিণত ও উৎক্ষিপ্ত হবে। একত্রিত সূর্য ও চাঁদের সম্মিলিত আকর্ষণের প্রভাবে (৮১:০৩) আগে থেকে স্ফীত অবস্থায় বিরাজিত সমূদ্র , অতঃপর কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণে (৮২:৩) আরও স্ফীত ও উদ্বেলিত হবে।
বিজ্ঞান:-
অনুমান করা যাক একজন সাহসী মহাকাশচারী একটি তারকার পৃষ্ঠে রয়েছেন। তারকাটি চুপসে যাচ্ছে। অবশিষ্ট থাকবে শুধু স্থানে একটি কৃষ্ণগহ্বর। তারকাটি কিন্তু মহাকাশযানটির উপর একই রকম মহাকর্ষীয় বল প্রয়োগ করতে থাকবে এবং মহাকাশযানটিও কৃষ্ণগহ্বর প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। তারকা থেকে যত দূরে যাবে মহাকর্ষও তত দুর্বল হবে। সুতরাং সাহসী মহাকাশচারীর পায়ের উপরের মহাকর্ষীয় বল মাথার উপরকার মহাকর্ষীয় বলের চাইতে সব সময়ই বেশী হবে। বলের এই পার্থক্যের কারণে মহাকাশচারীকে হয় টেনে সেমাইয়ের মত লম্বা করে দেবে, নয়তো ছিঁড়ে ফেলবে। ক্রান্তিক ব্যাসার্ধে পৌছানোর আগে তার কোন বিশেষ অনুভূতি হবে না। তবে যখন চুপসে যেতে থাকবে তখন কয়েক ঘন্টার ভিতরেই পায়ের সঙ্গে মাথার মহাকর্ষীয় বলের পার্থক্য এত বেশী হবে যে, সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। {‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-‘কৃষ্ণগহ্বর’ অধ্যায় থেকে সংগৃহিত।}
আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা ইবরাহীম-(14.Ibrahim // Abraham)-AvqvZ নং-৪২ ও ৪৩
.42وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ
(১৪ : ৪২)--অ লা-তাহ্ছ বান্নাল¬া-হা গ্বা-ফিলান আম্মা-ইয়া’মালুজজা লিমূন; ইন্নামা-ইউআখ্যিরুহুম লিইয়াউমিন তাশখাছূ ফাহিল আবছা-র;
{আবছার=(অর্থ)-চক্ষুসমূহ, দৃষ্টিশক্তি-“আল কাওসার”-মদীনা পাবলিবেশন্স}
(১৪ : ৪২) অর্থ:- তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অনবধান, তবে তিনি তাদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দেবেন যেদিন তাদের চক্ষুসমূহ বা দৃষ্টিশক্তি হবে স্থির।
(14 : 42) And never consider Allah unaware of the deeds of the unjust. He is not letting them loose but to a day in which their eyes shall be fixed.
.43مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاء
(১৪ : ৪৩) মুহতিঈনা মুক্কনিঈ রুউছিহিম লা-ইয়ারতাদ্দু ইলাইহিম ত্বারফুহুম, অ অফিয়িদাতাহুম হাওয়া-উ।
{ মুহতিয়িনা:=(অর্থ)-যারা দৌড়ে আসে, দ্রুতগামী -৩৪৩পৃষ্ঠা। মুক্কনিঈ=(অর্থ)-যারা মাথা উঠায়--৩৩২ পৃষ্ঠা। রুউছুন-(অর্থ)-মাথা (বহু)--১৯৬ পৃষ্ঠা। ইয়ারতদ্দু=(অর্থ)-তা পালাচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে--৩৯৮ পৃষ্ঠা। ইলাইয়া=(অর্থ)-আমার দিকে--৭৪ পৃষ্ঠা। তারফুন=(অর্থ)-দৃষ্টি, চোখ, পাশ, দিক--২৪০ পৃষ্ঠা-- ‘কোরআনের অভিধান’--মুনির উদ্দীন আহমদ। }
(১৪ : ৪৩) অর্থ:- তাদের মাথা উঠিয়ে বা মস্তক উপরে তুলে তারা দ্রুতগামী হওয়ায় অর্থাৎ দ্রুতগতিতে চলাচল করায় তাদের দৃষ্টি বা চোখ তাদের দিকে ফেরাতে (পরিবর্তন করতে) পারবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে বা অন্তরশুন্য হবে।
(14 : 43) They will come out running rashly raising their heads high, that their eyeballs do not turn back towards them, and there will be no strength in their hearts or there will be empty feeling in their hearts
আলোচনা-
আমরা বিজ্ঞানের বর্ণনায় দেখেছি যে, যদি মহাকাশযানে চড়ে কোন মহাকাশচারী এমন কোন তারকাকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে যে সেই তারকাটি চুপসে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বর অর্থাৎ ব্ল¬্যাকহোলে পরিণত হচ্ছে, তখন মহাকাশযানে থাকায় মহাকাশচারীর পা কৃষ্ণগহ্বরের নিকটতম প্রান্তে থাকবে। মাথা তার পা অপেক্ষা কিছুটা দূরে অবস্থান করায় মাথা অপেক্ষা পায়ে বেশী আকর্ষণ অনুভব করবে। তেমনি পৃথিবী যখন কোন কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণের আওতায় আসবে তখন আমাদের পা পৃথিবী পৃষ্ঠে থাকায় এবং মাথা কিছুটা উপরে অবস্থান করায় পা অপেক্ষা মাথায় বেশী টান অনুভুত হবে। আর (১৪:২) নং আয়ত থেকে অনুমান করা যায় যে, সেই দিন অর্থাৎ কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার অল্প কিছু সময় পূর্বে পৃথিবীর উপরে হয়ত এমন কোন বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি হবে যার কারণে চোখের মণির উপরেও সেই আকর্ষণ প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে চক্ষুসমূহ হবে স্থির। এদিক ওদিক ইচ্ছেমত তাকানো বা চোখের দৃষ্টি পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। যেহেতু বিজ্ঞান সৌরজগতের আশেপাশে ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতির বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছে, সুতরাং এদের আকর্ষণের কারণে এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আমরা আরও জেনেছি যে, গুরুভার বস্তুপিন্ড চলমান হলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সৃষ্টি করে এবং তাদের শক্তিক্ষয় হয়। আর এ কারণেই কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত গ্রহ, উপগ্রহগুলো ধীরে ধীরে সূর্যের নিকটতর হচ্ছে। কিন্তু এর হার এতই সামান্য যে সাভাবিক অবস্থায় অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া উপলব্ধিতে আসে না। সূর্য থেকে এই পৃথিবীটা, চাঁদ অপেক্ষা বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত। সুতরাং (৭৫:৯) নং আয়াত অনুসারে যখন সূর্য ও চাঁদকে একত্রিত করা হবে অর্থাৎ চাঁদ যখন সূর্যের অতি নিকটে আসবে ‘তখন’ অর্থাৎ ‘কিয়ামতের পূর্বে’ পৃথিবী থেকে মানুষ তা অবলোকন করবে। গতানুগতিক প্রাকৃতিক নিয়ম ও পদ্ধতি পর্যবেক্ষণের আলোকে বিজ্ঞানীরা সূর্য ও চাঁদের এই একত্রিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটার ব্যপারে অনেক বড় একটি সময়ের হিসেব দেখিয়েছেন। কিন্তু (৭৫:৯) নং আয়াতে যেহেতু ‘একত্রিত করা হবে’ বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, সুতরাং বাড়তি কোন কিছুর প্রভাবে অর্থৎ গতানুগতিক নিয়ম বহির্ভূত কোন কারণেই যে তা ত্বরান্নিত হবে সেটা অনুমান করা যায়। সম্ভবত সৌরজগতের নিকটবর্তী কোন কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণে তা উল্লেখিত সময়ের বেশ পুর্বেই ঘটে যাবে। একত্রিত সূর্য ও চাঁদের সম্মিলিত মহাকর্ষীয় বল তখন পৃথিবীর উপর এমন হারে প্রভাব বিস্তার করবে যে তা চোখের মনি এবং দৃষ্টিশক্তিকেও প্রভাবিত করবে। যেহেতু পা পৃথিবীর মাটি ছুঁয়ে থাকে এবং মাথা মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে অবস্থান করে, সুতরাং (১৪:৪৩) নং আয়াত অনুসারে এই অল্প দূরত্বের কারণেই হয়ত মাথার উপরে এই আকর্ষণ প্রবলভাবে অনুভূত হবে এবং মানুষ তখন মাথা উঠিয়ে থাকতে অর্থাৎ মস্তক উপরের দিকে তুলে থাকতে বাধ্য হবে। এই সম্মিলিত আকর্ষণ দেহের উপরেও প্রভাব বিস্তার করবে। এতে দেহের উপর পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ জনিত বলের প্রভাব বর্তমানের তুলনায় কিছুটা কমে যাবে। ফলে দেহের ওজনও কমে যাবে। তখন মানুষ না চাইলেও দ্রুতগতিতে চলাচল করতে বাধ্য হবে। নভোচারীরা যেমন চন্দ্রপৃষ্ঠে ওজন স্বল্পতার কারণে অল্প আয়েসেই অনেকটা পথ অতিক্রম করতে বাধ্য হয় এবং এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য তাদেরকে ভারি পোষাক পড়তে হয়। সেই সময় হঠাৎ করে এরূপ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় অর্থাৎ নিজের দেহের উপর থেকে নিজের কর্তৃত্ব ( control ) অনেকটা কমে যাওয়ায় ভীতির উদ্রেগ হতে পারে। আর এই ভীতির কারণে এবং সেই সাথে সূর্য ও চাঁদের সম্মিলিত মহাকর্ষীয় বল অথবা নিকটস্থ কোন কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণ পৃথিবীর উপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে যে হঠাৎ করে পৃথিবীর গতির পরিবর্তন ঘটায় বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ায় { (১৪:৪৩) নং আয়াত অনুসারে } অন্তর শুন্য বা অন্তর উড়ে যাওয়া বা বুক খালি হয়ে যাওয়ার মত অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে। উড়জাহাজ মাটি থেকে আকাশে উড্ডয়নের সময় বা মাটিতে নামার সময় এবং বিশেষ করে উড়ন্ত অবস্থায় বায়ুশুন্য স্থানে হঠাৎ বাম্পিং-এর মূহুর্তে খানিকটা যেরূপ অনুভূতি জন্মে অর্থাৎ বুকের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলেও যেমন শুন্যতার সৃষ্টি হয়, সেই সময় এই অনুভূতি হয়ত আরও প্রকটভাবে অনুভূত হবে এবং তা বেশ কিছুটা সময় স্থায়ী হওয়ায় মনে হবে যেন বুকের ভিতর থেকে অন্তর উড়ে গেছে। (ক্রমশঃ চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৩:১১
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×