(Universal Cataclysm)
৩য় পর্বের পরের অংশ
মহাবিশ্বের ধ্বংস হবে কি হবে না তা নিয়ে অবিশ্বাসীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে এবং অবিশ্বাসের ঘোরে তারা এ ব্যাপারে সব সময়েই দ্বন্দে ভোগে। তবে আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত কিয়ামত যে অবশ্যই সংঘটিত হবে এবং অবিশ্বাসীরা অচিরেই তা জানতে পারবে, এবিষয়টি আল-কোরআনে প্রদত্ত ঐশী তথ্যসমূহে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মহাবিশ্বের ধ্বংস যে অবশ্বম্ভাবি, বর্তমান বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার আলোকে এর পক্ষেই বেশী সমর্থন পাওয়া যায়। তবে এই ঘটনা বৃহৎ সংকোচনের মাধ্যমে ঘটুক অথবা বস্তু ও প্রতিবস্তু জগতের মধ্যে সংঘর্ষের ফলেই ঘটুক না কেন, এর ফলে যে মহাবিশ্বের বর্তমান অবয়বের আমুল পরিবর্তন সাধিত হবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই
পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক তথ্যসমৃদ্ধ আয়াতগুলোর মধ্য থেকে কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সম্পর্কিতকয়েকটি উল্লেখযোগ্য আয়াতের বাংলা আনুবাদ এই আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসাথে কিয়ামত সম্পর্কে বর্তমান যুগের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও ধ্যান-ধারণা { স্টিফেন ডব্লু হকিং-এর সাড়া জাগানো গবেষণা-ধর্মী (A Brief History of Time) এবং (Blackhole And Baby Universes And Other Essays) -শত্রুজিত দাশগুপ্ত- কর্তৃক বাংলায় অনুবাদকৃত (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) ও (কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশু-মহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা)} নামক পুস্তক দুটি থেকে সংগৃহিত এবং পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ইংগিতের সাথে সমন্বয় সৃষ্টির সাথে সাথে আমার নিজস্ব কিছু বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-ভাবনার বহিঃপ্রকাশই এই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। প্রকৃত খবর মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। সত্যের স্বরূপ উদঘাটনে যতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি তার সবটুকুই আল-কোরআনের ঐশীবাণীসমূহের মর্ম সঠিকভাবে অনুধাবনের ফলেই সম্ভব হয়েছে। আর ব্যর্থতার জন্য একজন অতি সাধারন মানুষ হিসেবে আমার অযোগ্যতা ও অজ্ঞতাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। হে বিশ্ববিধাতা করুণাময় মহান আল্লাহ, সর্বপ্রকার অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য সর্বদা অবনত মস্তকে ক্ষমাভিক্ষা চাই।
বিজ্ঞান-
অসীম সংখ্যক তারকা সংগ্রহ গতিহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। এককালে যদি তারা পরস্পরের সাপেক্ষ চলমান না হয় তাহলে তাদের পারস্পরিক আকর্ষণের ফলে তারা পরস্পরের উপরে পতিত হতে শুরু করবে। একটা কৃষ্ণগহ্বরের বিস্ফোরণে বিরাট পরিমাণ উচ্চ শক্তি সম্পন্ন গামা রশ্মি উৎপন্ন হয়ে উপচে পড়ে এবং তা বায়ুমন্ডলে ঢুকে পড়লে ইলেকট্রন-পজিট্রন জোড়ের বর্ষন সৃষ্টি করবে। এভাবে ইলেকট্রন ও পজিট্রন এক ধরণের স্বরভিত্তিক আকস্মিক বৃদ্ধি (Sonic boom) কিংবা বিদ্যুৎ চুম্বকিয় ক্ষেত্রে অভিঘাত তরঙ্গ সৃষ্টি করবে। এই ধরণের অভিঘাত তরঙ্গের (Shock wave) নাম চেরেনকভ বিকিরণ। এগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে দৃশ্যমান আলোকের ঝলক রূপে চেনা যায়। {‘কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশুমহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা’- থেকে সংগৃহিত }
আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা ইনফিতার- (82.Al-Infitar // The Cleaving) -আয়াত নং-১ ও ২
.01إِذَا السَّمَاء انفَطَرَتْ
(৮২ : ০১) অর্থ- আকাশ যখন বিদীর্ণ হবে বা ফেটে যাবে,
(82 : 01) When the space will be cleft,
.02وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ
(৮২ : ০২) অর্থ- যখন গ্রহ-উপগ্রহগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে।
(82 : 02) And when the stars will be fallen off scatteredly.
সূরা ইনশিকাক- (84.Al-Inshiqaq // The Sundering) -আয়াত নং-১ ও ২
.01إِذَا السَّمَاء انشَقَّتْ
(৮৪ : ০১) অর্থ- যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে বা ফেটে যাবে।
(84 : 01) When the space is rent as-under.
.02وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
(৮৪ : ০২) অর্থ- ও তার প্রতিপালকের আদেশ পালন করবে এবং এটাই তার প্রকৃতিগত কর্তব্য।
(84 : 02) And listens to the command of its Lord, and it has to do so.
সূরা কারিয়াহ্- (101.Al-Qaria // The Calamity) -আয়াত নং-১, ২ ও ৩
.01الْقَارِعَةُ
(১০১ : ০১) আলক্বা-রি‘আতু,
{ক্বা-রিআতুন=(অর্থ)-কঠোর, কর্কশ শব্দবিশিষ্ট, কিয়ামত - ‘আল কাওসার’ -মদীনা পবলিকেশন্স}
(১০১ : ০১) অর্থ- কঠোর, কর্কশ শব্দবিশিষ্ট ঐ জিনিস বা স্ব-শব্দে আঘাতকারী,
(101 : 01) The maker of cruel, harsh sound or the stricker with sound.
.02مَا الْقَارِعَةُ
(১০১ : ০২) মাল ক্বা-রি‘আহ্
(১০১ : ০২) অর্থ- কঠোর, কর্কশ শব্দবিশিষ্ট ঐ জিনিস বা স্ব-শব্দে আঘাতকারী কি?
(101 : 02) What is that maker of cruel, harsh sound or the stricker with sound?
.03وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ
(১০১ : ০৩) অমা-আদরা-কা মাল ক্বা-রি‘আহ্ ,
(১০১ : ০৩) অর্থ- কঠোর, কর্কশ শব্দবিশিষ্ট ঐ জিনিস বা স্ব-শব্দে আঘাতকারী সম্পর্কে তুমি কি জান ?
(101 : 03) And what do you known about that maker of cruel, harsh sound or the stricker with sound?
সূরা মায়ারিজ- (70.Al-Maarij // The Ascending Stairways) -আয়াত নং-৮ ও ৯
.08يَوْمَ تَكُونُ السَّمَاء كَالْمُهْلِ
(৭০ : ০৮) অর্থ- যেদিন আকাশ হবে গলিত ধাতুর মত।
(70 : 08) The day when the space will become like molten silver.
.09وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ
(৭০ : ০৯) অর্থ- এবং পর্বতগুলো হবে রঙীন পশমের মত,
(70 : 09) And the mountains will become as coloured wool.
সূরা তূর- (52 .At-Tur //. The Mount) -আয়াত নং-৯ ও ১০
.09يَوْمَ تَمُورُ السَّمَاء مَوْرًا
(৫২ : ০৯) অর্থ- যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে
(52 : 09) The day when the space will shake with awful shaking.
10وَتَسِيرُ الْجِبَالُ سَيْرًا
(৫২ : ১০) অর্থ- এবং পর্বতমালা হবে উন্মূলিত।
(52 : 10)= And the mountain will move with an awful movement.
সূরা রাহমান- (55.Ar-Rahman // The Beneficent) -আয়াত নং-৩৭
.37فَإِذَا انشَقَّتِ السَّمَاء فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ
(৫৫ : ৩৭) অর্থ- যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে সেদিন তা রক্তবর্ণে রঞ্জিত চর্মের রূপ ধারণ করবে।
(52 : 37) And when the sky will split it will become rose like red hide.
আলোচনা-
যেহেতু মহান আল্লাহতায়ালার আদেশে প্রথম আসমানের সর্বত্র অসংখ্য শ্বেতবামন, নিউট্রন তারকা ও কৃষ্ণগহ্বরগুলো পরিগঠিত হয়ে চলেছে, সুতরাং কিয়ামতের সময় সেগুলোর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু নক্ষত্রগুলোর জ্বালানী ফুরিয়ে যাওয়ায় শ্বেতবামন ও নিউট্রন তারকা রূপে স্থিতিলাভ করছে, সুতরাং ধীরে ধীরে এগুলোর গতিরও পরিবর্তন হওয়াটাই সাভাবিক। খুব সম্ভব এগুলোর গতি কমতে থাকবে এবং এক সময় এরা পরস্পরের সাপেক্ষ গতিহীন বা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প গতি প্রাপ্ত হওয়ায় এদের পারস্পরিক আকর্ষণের কারণে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরস্পরের উপরে পতিত হতে শুরু করবে। সেই সময় ব্ল্যাকহোলগুলোর প্রভাবে প্রতিটি গ্যালাক্সি বা বুরূজের (তারকার ঘর) সৌরমন্ডলীয় ব্যবস্থায় (৮৪:১), (৮২:১) ফাটল বা অনিয়ম দেখা দেবে। এর ফলে গ্রহ ও উপগ্রহগুলোও (৮২:২) ঝরে যেতে থাকবে। মহান আল্লাহতায়ালার আদেশে (৮২:২) আমাদের ছায়াপথের নিকটবর্তী কৃষ্ণগহ্বরগুলোর ঘন ঘন বিষ্ফোরনের ফলে বিচ্ছুরিত গামা রশ্মির আলোয় (৭০:৮) আকাশ গলিত ধাতুর মত মনে হবে। (১০১:১,২,৩) নং আয়াতগুলোতে স্ব-শব্দে আঘাতকারী বলতে- এমন কিছু যা থেকে শব্দ উৎপন্ন হয় এবং তা সেই শব্দ-তরঙ্গের মাধ্যমে আঘাত হানতে সক্ষম, এই কথাটিই বোঝানো হয়েছে। এখানে স্ব-শব্দে আঘাতকারী বলতে সম্ভবত কৃষ্ণগহ্বরগুলোর প্রতিই পরোক্ষভাবে ইংগিত দেয়া হয়েছে। কিয়ামতের সময় এই কৃষ্ণগহ্বরগুলোর অন্তিম বিস্ফোরনের ফলে উৎপন্ন প্রচন্ডতম শব্দে (৫২:৯) আকাশ আন্দোলিত হবে এবং শব্দ জনিত তরঙ্গের আঘাতে পর্বতমালাগুলো (৫২:১০) সমূলে উৎপাটিত হয়ে পশমের মত উড়তে থাকবে। সেগুলোর উপরে বিচ্ছুরিত গামা রশ্মির আলো এসে পড়ায় (৭০:৯) রঙীন পশমের মত মনে হবে। চেরেনকভ বিকিরণের কারণে (৫৫:৩) বায়ুমন্ডল রক্তবর্ণে রঞ্জিত হবে। (ক্রমশঃ চলবে).....
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৩:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






