somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধক্ষেত্র এবং জিজিয়া

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের নারী ও শিশুরা যেন অযথা অত্যাচারিত না হয় এবং তাদেরকে হত্যা করা না হয় সে বিষয়ে সহী বুখারী ও মুসলীম শরিফে বর্ণীত হাদিছে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কাফিরদের হাত থেকে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয় বরং যুদ্ধক্ষেত্রের বাহিরেও হাজার হাজার সাধারন বয়স্ক পুরুষ সহ নারী ও নিষ্পাপ শিশুদের রক্তে জনপদ রঞ্জিত হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এতকিছু দেখার পরও কতাপয় অবুঝ মানুষ সংক্ষিপ্ত ও দুর্বল হাদিছগুলো বাছাই করে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করছে। এভাবে তারা নিজেরা যেমন বিভ্রান্তিতে থাকছে, তেমনি অন্যকেও বিভ্রান্ত করে চলেছে এবং সত্য থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। এমনকি কতিপয় অজ্ঞ মুসলমানও ধর্মান্ধতা বশত ফেতনা- ফাসাদে জড়িয়ে পরছে। এরফলে তারা যেমন অন্যের উপর জুলুম করছে, তেমনি নিজেরাও জুলুমের শিকার হচ্ছে। এভাবে তারা(উভয় পক্ষ) শুধু নিজেকে নয়, বরং সমাজের একটা অংশকে অন্ধকার ও ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সবার কাছে অনুরোধ- কোন বিষয়ে ভালভাবে জানবার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বিস্তারিতভাবে বর্ণীত সহী অর্থাৎ শুদ্ধ হাদিছগুলো পড়ার দিকে মনোনিবেশ করুন। তাহলে সত্যের সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথে শান্তিও পাবেন, ইনশাল্লাহ্।

যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের সাথে কিরুপ আচরন করতে হবে এ বিষয়ে মুসলীম শরীফে বুরাইদা (রাঃ) কর্তৃক বিস্তারিতভাবে বর্ণীত ও ইবনে ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণীত দুটি এবং বুখারী শরীফে ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণীত একটি সহী হাদিছ তুলে ধরা হল। জিজিয়ার (কর) বিষয়টিও এখানে এসেছে-

১/ বুরাইদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)যখন কোন সেনাবাহিনী কিংবা সেনাদলের উপর আমীর নিযুক্ত করতেন, তখন বিশেষ করে তাঁকে আল্লাহ ভীতি অবলম্বনের এবং তাঁর সঙ্গী মুসলমানদের নেক আমলের উপদেশ দিতেন। আর বলতেন, যুদ্ধ করো আল্লাহর নামে, আল্লাহর রাস্তায়। লড়াই কর তাদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করে। যুদ্ধ চালিয়ে যাও, তবে গনিমতের মালের খেয়ানত করবে না, শত্রু পক্ষের অঙ্গ বিকৃত করবে না ও শিশুদেরকে হত্যা করবে না। যখন তুমি মুশরিক শত্রুর সম্মুখিন হবে, তখন তাকে তিনটি বিষয় ও আচরণের প্রতি আহবান জানাবে। তারা এগুলোর মধ্য থেকে যেটিই গ্রহণ করে, তুমি তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। প্রথমে তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবে। যদি তারা তোমার এ আহবানে সাড়া দেয়, তবে তুমি তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। এরপর তুমি তাদের স্বগৃহ ত্যাগ করে মুহাজিরদের এলাকায় চলে যাওয়ার আহবান জানাবে এবং তাদের জানিয়ে দেবে যে, যদি তারা তা কার্যকরী করে, তবে মহাজিরদের জন্য যে লাভ-লোকসান ও দায়-দয়িত্ব রয়েছে, তা তাদের উপর কার্যকরী হবে। আর যদি তারা স্বগৃহ ত্যাগ করতে অস্বীকার করে, তবে তাদের জানিয়ে দেবে যে, তারা সাধারণ বেদুঈন মুসলমানদের মত গণ্য হবে। তাদের উপর আল্লাহর সেই বিধান কার্যকরী হবে, যা সাধারণ মুসলমাদের উপর কার্যকরী এবং তারা গনিমত ও ফায় থেকে কিছুই পাবে না। অবশ্য মুসলমানদের সঙ্গে শামিল হয়ে যুদ্ধ করলে তার অংশিদার হবে। আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তবে তাদের কাছে জিজিয়া দানের দাবি জানাবে। আর যদি তারা তা গ্রহণ করে নেয়, তবে তুমি তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। আর যদি তারা এ দাবি না মানে তবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়। আর যদি তোমরা কোন দুর্গবাসীকে অবরোধ করো এবং তারা যদি তোমার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জিম্মাদারি চায়, তবে তুমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জিম্মাদারি মেনে নেবে না। বরং তাদেরকে তোমার ও তোমার সাথীদের যিম্মাদারিতে রাখবে। কেননা যদি তারা তোমার ও তোমার সাথীদের যিম্মাদারি ভঙ্গ করে, তবে তা আল্লাহ ও তার রসূলের যিম্মাদারি ভঙ্গের চাইতে কম গুরুতর। আর যদি তোমরা কোন দুর্গবাসীকে অবরোধ করো এবং তারা যদি তোমার কাছে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক অবতরণ করতে চায়, তবে তোমরা তাদেরকে আল্রাহর হুকুমের উপর অবতরণ করতে দেবে না, বরং তুমি তাদেরকে তোমার সিদ্ধান্তের ওপর অবতরণ করতে দেবে। কেননা তোমার জানা নাই যে, তুমি তাদের মাঝে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না? - (হাদিছ ৪৩৭৬)

২/ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, কোন এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। তখন রাসূল্লাহ (সাঃ) নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করলেন। - (হাদিছ ৪৩৯৮)

৩/ ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছিলেন, আমি যিম্মীদের (অমুসলীম সংখ্যালঘু) ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের যিম্মাদারী (দায়ীত্বভার) আদায়ের অছিয়ত করে যাচ্ছি, যেন তাদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করা হয়। আর তাদের আর্থিক সামর্থের বাহিরে তাদের উপর জিজিয়া ধার্য করা না হয়। (হাদিছ ১৭২১)

উপরে বর্ণীত হাদিছ তিনটি থেকে সহজেই বুঝে নেয়া যায় যে, যুদ্ধক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের হত্যা করা নিষেধ। তবে যুদ্ধেক্ষেত্রে পরাজিত কাফির অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের সামনে তিনটি সুযোগ রয়েছে। এর মধ্য থেকে যে কোন একটিকে তারা বেছে নিতে পারে। প্রথমত তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য দাওয়াত দেয়া যেতে পারে। কেন্তু কোন অবস্থাতেই ইসলাম গ্রহণের জন্য বাধ্য করা যাবে না। বরং তারা এ দাওয়াত গ্রহণ না করলে তাদেরকে নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তাদেরকে অবশ্যই মুসলিম রাষ্ট্রের আনুগত্য মেনে নিতে হবে। আর এই আনুগত্যের নিদর্শণ স্বরূপ মুসলিম নেতা কর্তৃক নির্ধারিত কর প্রদান করতে হবে। এই করই হলো- ’জিজিয়া’। তাদের সাধ্যের বাহিরে যেন এই জিজিয়া ধার্য্য করা না হয় সে বিষয়েও হাদিছে স্পষ্ট নির্দেশ আছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত সামর্থবান মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় বিধান অনুসারে যাকাত ও ফিতরা দেয়া ফরজ অর্থাৎ অবশ্য পালনীয়। এ ছাড়াও সাদকা ও দান করতে হয় এবং জিহাদের ডাক এলে প্রতিটি মুসলমানের জন্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামুলক। প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রের নেতা অর্থাৎ খলিফা মুসলমানদের উপর আলাদাভাবে করও আরপ করতে পারেন। অপরদিকে কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত আনুগত্যশীল অবিশ্বাসিদের জন্য জিজিয়া ব্যতীত যাকাত, ফিতরা আদায় করা বা জিহাদে অংশ নেয়া বাধ্যতামুলক নয়। বরং এই ’জিজিয়া’ বা করের বিনিময়ে একদিকে যেমন তারা ইসলামী রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা পাবে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করারও নির্দেশ আছে। অপরদিকে তেমনি জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে রেহাই পাবে। তবে পরাজিত হয়ে বন্দি হবার পরও যদি অবিশ্বাসীরা কোন প্রস্তাবে রাজি না হয় এবং ঔদ্ধত্য প্রদর্শণ ও বিরোধীতা করে, তাহলে একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারনই তো একমাত্র পথ। আর স্বাভাবিকভাবেই এরূপ চরম পরিস্থিতিতে পূণরায় বন্দি হওয়া বা বন্দি করার জন্য নয়, বরং একদল আরেক দলকে হত্যা করার জন্যই তো যুদ্ধ করবে। ফলশ্রুতিতে যে দল জয়ী হবে তাদের শাসনই প্রতিষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×