somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৫ম- পর্ব)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
তথাকথিত দাসপ্রথা ও ইসলামে যুদ্ধবন্দী এককথা নয়। ইসলাম যে দাস প্রথাকে একদমই প্রমোট করেনি- তা আমি খুবই বিশ্বাস করি। কিন্তু হাদিছ গ্রন্থে হাদিছ বাদেও জুড়ে দেয়া কিছু খাপছাড়া বক্তব্য আমার খুবই খারাপ লাগে। আমাকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ। এ বিষয়ে আল-কোরআনে প্রাথমিক পর্যায়ে নাযিলকৃত মক্কি-সূরার সাথে পরবর্তীতে মদীনায় অবতীর্ন সূরার বক্তব্যকে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন না করার কারনে সাধারন পাঠকগণ প্রায়ই বিষয়টি বুঝতে পারেন না। তাই যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে আল-কোরআনে নাজিলকৃত সূরা গুলোর সাথে সহী হাদিছ গুলো ধারাবাহিকভাবে পেশ করলে আসল বক্তব্য স্পষ্ট হবে এবং সবারই বুঝতে সুবিধা হবে। ......[বিস্তারিত জানতে যারা আগের পর্বগুলো দেখেন নাই তারা-
১/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (১ম- পর্ব)
২/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (২য়- পর্ব)
৩/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৩য়- পর্ব)
৪/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৪র্থ- পর্ব)] -দেখে নিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
..................................................................................................
এক ভাই আশংকা করে মন্তব্য করেছেন-
আপনার দাবী- পরবর্তী সূরাগুলো দ্বারা দাসীদের সাথে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক রহিত হয়ে গেছে - এটা সত্য হলে, জিনার অপবাদ আসতে পারে সাহাবীদের ওপরে এবং তাদের ওপরে যিনি আছেন তার ওপরও।
..................................................................................................

আমার জবাব-
ভাই, আমি আপনার এই আশংকাকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখছি। আপনার স্থানে আমি হলে বোধ হয় এমনই ভাবতাম। আপনারা ধর্ম শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক বলয়ের ছকে বাধা ও ছাঁচে গড়া জ্ঞানী মানুষ। আর আমি 'মাহফুজ', - এই অধম জীবনের কোন এক সন্ধিক্ষণে আল-কোরআনের বাণীতে বিমোহিত হয়ে নানা মত ও পথের ক্ষতবিক্ষত চরাই উৎরাই গুলোতে হোচট খেতে থেতে ছুটতে ছুটতে অবশেষে ঠিকানা খুঁজে পাওয়া এক 'শান্ত' পথিক। তাই আমি 'মাহফুজশান্ত';আমার পথের কোন শাখা নেই, নেই কোন প্রশাখা, নয় উঁচু-নীচু বা আঁকা-বাঁকা। আমি সূতা বা চুল ধরে ঝুলতে রাজি নই, আল্লাহর রশিতে বাঁধা দোলনায় আমি আমৃত্যু দুলতে চাই। আমি জানি, আমার আবেগময় এ কথাগুলো শোনা, আপনার কাছে অযথা কালক্ষেপণের সামিল। তারপরও বললাম। কেন বললাম তা সর্বজ্ঞ আল্লাহতায়ালা- যাঁর হাতে আমার প্রাণ তিনিই ভাল জানেন।

আপনার মন্তব্যের প্রথম অংশ-
আপনার দাবী- পরবর্তী সূরাগুলো দ্বারা দাসীদের সাথে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক রহিত হয়ে গেছে-

না ভাই, এমন দাবি আমি তো কখনই করি নাই। কারন অপবিত্র কর্ম ব্যভিচারকে জায়েজ বলা হয়েছে!! এমন কোন আয়াত পবিত্র কোরআনে নেই। তাই রহিত হবার প্রশ্ন আসে না।

আমি কি বলেছি ও বোঝাতে চেয়েছি তা লক্ষ করুন-
৪:২৩ নং আয়াত নাজিলের আগে যাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ তাদেরকেও স্ত্রী রূপে গ্রহণ করার রেওয়াজ ছিল এবং আমি আগেই বলেছি যে, ইসলাম পূর্ব সমাজব্যবস্থায় দাসপ্রথার ব্যপক প্রচলন ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে নাজিলকৃত মক্কি সূরাগুলোতে ইসলাম পূর্ব দাসীদের সাথে তাদের মালিক/ অভিভাবকদের যৌন সম্পর্কের বিষয়টি কিছু সময়ের জন্য বহাল রাখা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই সূরাগুলোতে এ বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়নি। তাই সেই সময় বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ও অনুমতি সাপেক্ষে যুদ্ধবন্দীনিদের ক্ষেত্রেও পূর্বের সেই রীতিকে অনুসরন করা হত। অতঃপর ৪:২৩ নং আয়াত নাজিলের পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যাদের সাথে বিয়ের অনুমতি আছে তাদেরকে বিয়ে করেই যৌন সম্পর্ক করতে হবে- বিয়ে না কোরে sexual relation করা জায়েজ না।

৪:২৪ নং আয়াতে আরও পরিষ্কার কোরে বলা হলো- স্বাধীন সধবা নারীকে বিয়ে করা চলবে না, তবে যুদ্ধবন্দীনি সধবা হলে শর্ত সাপেক্ষে তাকে বিয়ে করায় কোন বাধা নেই- কিন্তু তাদের সাথে ব্যাভিচার করা বা রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করা আর চলবে না।

(০৪:২২) নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বিয়ে সম্পর্কে বক্তব্য শুরু করা হয়েছে। সুতরাং পরবর্তী আয়াত গুলোতে (০৪:২৩) ও (০৪:২৪) হারাম এবং হালাল বলতে কোন বিষয়টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নিষিদ্ধের গন্ডির বহিরে রাখা হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। এখানে যে অবৈধ যৌন কর্মকে হালাল করার প্রশ্ন আসেনা, বরং কাকে বিয়ে করা যাবে বা যাবে না সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- তা কি বুঝতে অসুবিধা হবার কোন কারন আছে?

এখন আসা যাক সেই দু'ট মক্কি সূরার আয়াত সম্পর্কে, যার উপর ভিত্তি করে যুদ্ধবন্দীনি/ইসলাম পূর্ব দাসীদের সাথে তাদের মালিক/অভিভাবকদের অবৈধ যৌন কর্মকে সর্বকালের জন্য হালাল বানানোর দাবি করা হয়। এরূপ দাবি করা কি আদৌ ঠিক? অজ্ঞাতসারে এমন দাবি করলে তওবা করে এখনও মাফ পাবার সুযোগ আছে। কিন্তু জ্ঞাতসারে করলে তার পরিনতির কথা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।

Click This Link
023.005 Who abstain from sex, (রতিক্রিয়া ঘটিত বা রতিক্রিয়া পরিচালিত কার্যালাপ; যৌনক্রিয়া)
023.006 Except with those joined to them in the marriage bond, or (the captives) whom their right hands possess,- for (in their case) they are free from blame,
023.007 But those whose desires exceed those limits are transgressors;-

(২৩:০৫) নং আয়াতে ( لِفُرُوجِهِمْ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ লজ্জাস্থান, যৌন অঙ্গ
অথচ কেন এর অর্থ sex (রতিক্রিয়া ঘটিত বা রতিক্রিয়া পরিচালিত কার্যালাপ; যৌনক্রিয়া) বানানো হলো তা বোধগম্য নয়।

আবার একই (فُرُوجَهُمْ ) শব্দের অর্থ (২৪:৩০) নং আয়াতে modesty হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে-

Click This Link
024.030 Say to the believing men that they should lower their gaze and guard their modesty: that will make for greater purity for them: And Allah is well acquainted with all that they do.

Modesty= (অর্থ) বিনয়, বিনয়শীলা, নিরাভিমান, অভিম্নশুণ্যতা, নিরহঙ্কারিতা, সংযম, পরিমিতিবোধ, মিতাচার, শালীনতাবোধ

একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ হতেই পারে। কিন্তু সেই অর্থেরও তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে নিশ্চয়। আমাদের মনে রাখা দরকার আল-কোরআনেন এমনই এক মহাগ্রন্থ যেখানে এসব সেনসেটিভ বিষয় আলোচনার সময় আল্লাহতায়ালা আবছা আবছা কোন বক্তব্য রাখেন নাই, সরাসরি এবং বিস্তারিত বলেছেন যেন কামলিপসু মানুষ ছুঁতা খোঁজার সুযোগ না পায়।

এখানে যেমন পূর্বের রীতিকে বাতিলও করা হয়নি তেমনি সর্বকালের জন্য যুদ্ধবন্দীনিদের সাথে বিবাহ ছাড়াই (এমনকি সে যদি মুশরিকাও হয়) যৌন সম্পর্ককে জায়েজ রাখা হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়, সেটাও সঠিক কি?

তাই আমি বলেছি যে, জাহেলি যুগে দাসপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের সাথে সাথে তাই হঠাৎ কোরে তা রহিত করা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে যুক্তিযুক্ত ছিলনা। ইসলামে দাসপ্রথাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছিল তা অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ বলেই আমি বিশ্বাস করি।

মুসলমানের জন্য যেহাদ করা ফরজ। সুতরাং বর্তমানে কোন কারনে যদি আপনাকে বা আমাকে যেহাদে যেতে হয় তাহলে যুদ্ধবন্দীনিদের সাথে তখন আমরা কি আচরন করব তা জানাটা জরুরী নয় কি?

একটি হাদিছের ব্যাখ্যায় পরিচ্ছদে (প্রথম পর্বে উল্লেখিত) জুড়ে দেয়া অংশে অপরের দ্বারা অন্তঃসত্বা দাসীকে ভোগ করা জায়েজ বলা হয়েছে। অথচ উক্ত হাদিছে এই বিষয়ে কোন ইংগিত পর্যন্ত নেই।

আল-কোরআনের বক্তব্য অনুসারে- যুদ্ধবন্দীনিদের সাথে, এমন কি তারা মুশরিকা হলেও শুধুমাত্র কারও 'ডান হাতের অধিকারভুক্ত' বানিয়ে দিয়ে তাদের সাথে সেই মালিকদের যৌন ক্রিয়া করা কি এখনও জায়েজ রাখা হয়েছে?

কিংবা অপরের দ্বারা অন্তঃসত্বা হলেও কি কোন যুদ্ধবন্দীনিকে অন্য আরেকজন চুম্বন করতে পারবে?
২৩:৫- নং আয়াত কি সেই পারমিশন দেয়? নাকি এরও একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে?

এখন লক্ষ করুন- (৭০:২৯, ৩০, ৩১) ও (২৩: ৫-৭) আয়াতের অনুবাদ আরবী শব্দের মূল অর্থ অনুযায়ী করলে কি দাঁড়ায়-

সূরা আল মাআ'রিজ ৭০: ২৯-৩১ ও সূরা আল মু'মিনুন ২৩: ৫-৭ ( মক্কায় অবতীর্ণ)-
(৭০:২৯) এবং যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে
(৭০:৩০) তবে নিজেদের দম্পতি অথবা তাদের ( مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ ) 'ডান হাতের অধিকারভুক্তদের' (যুদ্ধবন্দী-বন্দিনী/দাস-দাসীদের) ক্ষেত্রে অন্যথা করলে তিরস্কৃত হবে না।
(৭০:৩১) অতএব, যারা এমনটি ছাড়া অন্য কিছু অন্বেষণ করে, তারাই সীমালংঘনকারী।

বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় যে, এখানে ব্যবহৃত 'মা-মালাকাত-আইমানুহুম' উভয় লিঙ্গের অর্থই প্রকাশ করে অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী-বন্দিনী/দাস-দাসী উভয়কে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু বিবাহিতা কিংবা অবিবাহিতা নারীদের জন্য তো তাদের অধীনস্ত কোন যুদ্ধবন্দী/দাসদের সাথে যৌন সম্পর্ক কখনই জায়েজ হতে পারে না। সুতরাং এখানে ( لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ) 'তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করা' বলাতেই যেমন শুধুমাত্র যৌন কর্মকে দমন রাখার ভাব প্রকাশ পেতে পারে না। ঠিক একই ভাবে লজ্জাস্থান বা যৌন অঙ্গের হেফাজতের অন্যথা বললেই কি এক লাফে তাকে যৌন কর্ম বানিয়ে দিতে হবে!!?? ঢেকে-ঢুকেও তো লজ্জাস্থান বা যৌন অঙ্গের হেফাজত করার কথা ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে এবং ইমানদার মানুষ মাত্রই সেটাই ভাবা উচিত। আর গৃহে অবস্থানরত স্ত্রী ও যুদ্ধবন্দী-বন্দিনী/দাস-দাসীদের সামনে প্রাত্যহিক গোসল, ঘুম এবং অতিরিক্ত গরমে ঘরে অবস্থানের সময় তো এই ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে শিথিলতা অর্থাৎ অন্যথা হতেই পারে- আর এটুকুর জন্য কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তাই বলে আবার লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার অন্যথা হতে পারে বলাতেই একেবারে উলঙ্গ থাকার পারমিশন দেয়া হয়েছে, এমনটি ভাবাও ঠিক নয়। আল্লাহতায়ালা তো আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্যই এত খুটিনাটি বিস্তারিত বলে দেন যেন তার বান্দা অযথা কষ্ট না পায়। কিন্তু হায়! আমাদের মধ্যে কারও কারও মন এতই বক্র যে তারা স্রষ্টার সরল কথা বাঁকিয়ে কোথায় নিয়ে যায়। প্রকৃত ইমানদারের অন্তর কেনা-বেচা করা এত সহজ নয়, তারা ঠিকই বোঝে- বোঝেনা শুধু অন্ধদের অন্তর।

মানুষের মধ্যে অনেকের চাওয়া পাওয়া এমনই যে সে নিজেকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ না করলেও উন্মুক্ত করে প্রদর্শন করতে চায়। অনেকে তো লজ্জা-শরমের ধারই ধারেনা। অথচ আল্লাহতায়ালা মুসলিম পুরুষ ও নারীদের জন্য এ ধরনের কোন রূপ বেহায়াপনাকে হারাম করে দিয়েছেন। আবার শুধু নারীই নয়, পুরুষদের মধ্যেও অনেকে অযথা এমন ভাবে চলাফেরা করে যে অনেক ক্ষেত্রে তাদের গোপন অঙ্গ প্রদর্শনের সামিল হয়ে পড়ে। যেমন পশ্চিমাদেশ, এমনকি আজকাল আমাদের দেশেও যুবকেরা এমন সব টাইট-ফিটিংস জামা-কাপড় পরিধান করছে যে, মনে হয় তারা তাদের গোপন অঙ্গের স্থানগুলোকে হাইলাইট করছে। এ ধরনের কু-রুচিপূর্ণ চালচলন যে সীমালংঘনের পর্যায়ে পড়ে- তা হয়ত তারা জানেই না। একজন প্রকৃত মুসলমানের যে এভাবে চলা ঠিক নয় তা মহান সষ্টা অনেক আগেই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

এবার 'লজ্জাস্থানের হেফাযত' করা বলতে যে আল্লাহতায়ালা পর্দা করার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন তার প্রমান দেখুন-

সূরা আন-নূর ( মদীনায় অবতীর্ণ ) এর (২৪:৩০) ও (২৪:৩১) নং আয়াতের দিকে লক্ষ করুন-
(২৪:৩০) মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম/পবিত্রতর; নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা পূর্ণাঙ্গভাবে অবগত আছেন।
(২৪:৩১) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ( لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ) লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায় এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না দ্বারা বক্ষদেশ আবৃত করে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, নিজেদের স্ত্রীলোক, নিজেদের ( مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ ) 'ডান হাতের অধিকারভুক্ত' (যুদ্ধবন্দী-বন্দিনী/দাস-দাসী), যৌনকামনামুক্ত পুরুষ এবং বালক যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ- এদের ব্যতীত অন্য কারো সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

দেখা যাচ্ছে (২৪:৩০ ও (২৪:৩১) নং আয়াতে উল্লেখিত 'লজ্জাস্থানের হেফাজত'- এই বক্তব্যটি পর্দা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট। এখানে কিভাবে পর্দা রক্ষা করতে হবে তার বিষদভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে আর কোন দ্বিধা থাকার কথা নয়।

সুতরাং (৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতে 'লজ্জাস্থানের হেফাজত' এর অন্যথা অর্থাৎ পর্দার অন্যথা করা বলাতেই 'মা-মালাকাত-আইমানুকুম'-দের সাথে কাম-লালসা চরিতার্থ করার জন্য ব্যভিচার করার ইংগিত বহন করতে পারে না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- লজ্জাস্থান বলতে এখানে কি বোঝানো হয়েছে? এখানে কি শুধু সেক্স অর্গানকেই অর্থাৎ পেনিসকেই নির্দেশ করা হয়েছে?

তাহলে তো আরবী শব্দ قضيب ব্যবহার করার কথা। আমার যতটুকু জানা আছে তাতে তো মনে হয় লজ্জাস্থান বলতে আরও অনেক কিছুকেই বোঝায়।

লজ্জাস্থান বলতে শুধু পেনিসকে বোঝায় না। আরও খুলে বলি। পরুষদের জন্য হাঠাৎ অসাবধানতা বশত নাভির নীচ থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা কাপড় সরে যাওয়াকে আমি লজ্জাস্থানের হেফাজত করার অন্যথা বুঝি। সুতরাং এখানে 'লজ্জাস্থানের হেফাজত করার অন্যথা' বলতে কামবাসনা চরিতার্থ করাকে কখনই বোঝায় না।

এবার নিচের আয়াতের দিকে লক্ষ করুন-
(২৪:৫৮) হে মুমিনগণ! তোমাদের দাস-দাসীরা ('মা-মালাকাত-আইমানুকুম') এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

এখানে পর্দা রক্ষার ক্ষেত্রে দাস-দাসীদের পাশাপাশি অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অনুমতি গ্রহণের বিষয়টিও এসেছে। যাদের সাথে সেক্স করায় অসুবিধা নেই তাদেরকে অনুমতি গ্রহনের ক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের স্তরে রেখে দেয়া হয়েছে কেন?

(এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়)- এখানে খুব সোজা ভাবে দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের জন্য স্বাভাবিক যাতায়াতের বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু এই 'যতায়াত' কথাটাকেও কাম-চরিতার্থ করার জন্য যাতায়াত ভাবলে তো করার কিছু নাই। বক্র মানষিকতা সম্পন্নরা ছাড়া তো এমনটি ভাববার কথা নয়।

নিশ্চয় এর মাধ্যমে যারা সত্যকে উপলব্ধি করতে ও বুঝতে চায় আল্লাহতায়ালা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, 'মা-মালাকাত-আইমানুকুম'-দের সাথে সেক্স করার তো প্রশ্নই আসেনা, বরং তাদের থেকেও পর্দা করা জরুরী।

সুতরাং 'মা মালাকাত আয়মানুকুমদের থেকে শুধু সেক্স অর্গান হেফাজত করার অন্যথা করা হলে'- বলাতেই এর অর্থ বিকৃত করে যদি কেউ একলাফে 'কামবাসনা চরিতার্থ করলেও তিরষ্কৃত হতে হবে না'- এমন উদ্ভট অর্থ বোঝেন, তাহলে সেই কু-কর্মকে অন্য কেউ সাপোর্ট করলেও এই ব্যাপারে আমি তার সাথে কখনই একমত হতে পারব না।

(৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতে 'ডান হাতের অধিকারভুক্ত' অর্থাৎ যুদ্ধবন্দীনি/দাসীদের সাথে পুরুষদের (মালিকদের) অবৈধ যৌন বাসনা পূরণের ফ্রি-পারমিট সর্বকালের জন্য দেয়া হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়- এমনটি ভাববার মত কোন বক্তব্য বা সামান্যতম ইংগিতও এখানে আছে কি?

আল-কোরআনে সমসাময়িক আরেকটি সূরায় স্পষ্ট-ভাষায় ব্যভিচারের ধারে কাছে যেতেও যেখানে নিষেধ করা হয়েছে, এটাকে অশ্লীল ও মন্দ পথ বলা হয়েছে। অন্য স্থানে ব্যভিচারী-কে শাস্তি প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূরা বণী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ)-
(১৭ : ৩২) অর্থ- আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও মন্দ পথ

তাই এমন একটি অবৈধ কর্মকে বৈধ বানাতে চাইলে তো এক্ষেত্রেও লজ্জাস্থানের হেফাজতের কথা না বলে স্পষ্ট-ভাবেই সহবাস করার পারমিশনটা দিয়ে দেবার কথা। কারন বৈধ বা অবৈধ বিধান দেবার সময় মহান আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবেই তা প্রকাশ করেন। তাছাড়া লজ্জাস্থানের হেফাজতের অন্যথা বলতে যদি অবৈধ যৌন কর্মের পারমিশন বোঝায়, তাহলে তো 'ক' কইতে শুধু 'কলিকাতা'- বোঝার মত দশা হলো। সুতরাং (৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতের বক্তব্যে পুরুষদের (মালিকদের)-কে যুদ্ধবন্দীনি/দাসীদের সাথে অবৈধ যৌন ক্রিয়া করার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে- এমনটি ভাবার আদৌ কোন সুযোগ নেই।

তাহলে (৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতে কি বিষয়ের উপর বক্তব্য দেয়া হলো?

আমরা জানি যে, সেই জাহেলি যুগের রীতি অনুসারে উলঙ্গ হয়ে উন্মুক্ত আকাশের নীচে সবার সামনে কাবাঘর তাওয়াফ করাটা কোন ব্যপার ছিলনা এবং বেহায়াপনা তাদের মজ্জাগত কালচারে পরিণত হয়েছিল। বহুদিনের সেই নির্লজ্জ বেহায়াপনা থেকে মুসলিমরা যেন সরে আসে, তার প্রথম পদক্ষেপ স্বরূপ এই নির্দেশ দেয়া হলো। মাঠে-ঘাটে, ক্ষেতে- খামারে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের সময় পুরুষরা যেন তাদের শরীরের লজ্জাস্থান ঢেকেঢুকে রাখে, প্রথমত সেই শিক্ষাই দেয়া হয়েছে। তবে গৃহে তাদের স্বামী-স্ত্রীর সামনে বা দাস-দাসীদের সামনে অসাবধানতা বসত যেমন ঘুম, বিশ্রাম বা গোসলের সময় একটু অন্যথা হয়ে গেলে তাতে উদ্বিঘ্ন হবার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সুতরাং সচেতনভাবে চিন্তা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, (৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতে পর্দার বিধানের প্রাথমিক ধাপ সম্পর্কে প্রথমত পুরুষদেরকে অবহিত করা হয়েছে। কারন কোন সমাজে পুরুষরা যদি সংযত হয়ে চলা শুরু করে তাহলে সেই প্রভাব নারীদের উপরেও পড়ে। এভাবে একটি জাহেলি সমাজকে ধীরে ধীরে পর্দা সম্পর্কে সচেতন ও আইন প্রণয়নের মাধমে সেই বিধানটিকে কার্যকর করার ধরাটি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ বলেই আমি বিশ্বাস করি।

এরপর (৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতে পর্দার বিধান সম্পর্কে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, বেশ কিছু সময়ের ব্যবধানে তারই রেশ ধরে (২৪:৩০) ও (২৪:৩১) নং আয়াতে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে একই ভাষায় বক্তব্য দেয়ার পর নারীদের পর্দা সম্পর্কে বিষদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে পুরুষ এবং নারী উভয়কেই দৃষ্টি নত রাখতে বলা হয়েছে। কারন সরাসরি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলে তাতে যেমন নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, তেমনি পুরুষ বা নারী যার দিকেই তাকিয়ে থাকা হোক না কেন এটি যে খুবই অস্বস্থিকর ব্যাপার তা বিবেক সম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারার কথা। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে শালীন ভাবে মেলামেশা, কথাবার্তার সময় পুরুষ-নারী উভয়ের দিকে চোখ পরতেই পারে। কিন্তু এই চোখে চোখ রাখাটা যেন মাত্রা না ছাড়ায় অর্থাৎ শালীনতার পর্যায়ে থাকে সেই জন্য পরস্পরের প্রতি একনাগারে না তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি নত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া রাস্তা ঘাটে অশালীন কিছু থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে দৃষ্টি নত/সংযত করলেই তো তার কু-প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে লজ্জাস্থানের হেফাজত করা অর্থাৎ ঢেকে রাথাটাও খুবই জরুরী। তাই আগে লজ্জাস্থানের হেফাজত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এমন কোন স্থানে যেতে হলো যে, সেখানকার মানুষেরা লজ্জাস্থান ঢাকার প্রতি যত্নশীল নয়। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টি নত করার অর্থাৎ সেদিকে তাকিয়ে না থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এভাবে একটি জাহেলি সমাজকে ধীরে ধীরে পর্দা সম্পর্কে সচেতন ও আইন প্রণয়নের মাধমে সেই বিধানটিকে কার্যকর করার ধরাটি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ বলেই আমি বিশ্বাস করি। এই আয়াতগুলোর ধরাবাহিকতা ও বক্তব্য থেকে এটাও বোঝা যায় যে, পর্দার বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয়কেই সচেতন হতে হবে, তবে পুরুষদেরকেই অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে।

যেহেতু (৭০: ২৯-৩১) ও (২৩: ৫-৭) নং আয়াতে অবৈধ যৌণ সম্পর্ক স্থাপনকে জায়েজ করা হয়নি, তাই (০৪:২৪) নং আয়াতে তা রহিত করার প্রশ্ন আসেনা। আর এ কারনেই আমি বলেছি যে, (০৪:২৪) নং আয়াতে আরও পরিষ্কার কোরে বলা হলো- স্বাধীন সধবা নারীকে বিয়ে করা চলবে না, তবে যুদ্ধবন্দীনি সধবা হলে শর্ত সাপেক্ষে তাকে বিয়ে করায় কোন বাধা নেই- কিন্তু তাদের সাথে ব্যাভিচার করা বা রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করা আর চলবেনা। এখানে কোন আয়াতের নির্দেশকে রহিত নয়, বরং পূর্বের প্রচলিত প্রথাকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কোন কোন হাদিছে ক্রীতদাসীর সাথে মালিকের সহবাস সংক্রান্ত কিছু বক্তব্য এসেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করলে সেগুলোকে (০৪:২৪) নং আয়াত নাযিলের পূর্বেকার অর্থাৎ মক্কি জীবনের সাথে সম্পৃক্ত হাদিছ বলেই মনে হয়। যেহেতু (০৪:২৪) নং আয়াত নাযিলের আগে পর্যন্ত ইসলাম পূর্ব রীতি অনুসারে 'ডান হাতের অধিকারভুক্ত'/ ক্রীতদাসীর সাথে মালিকের যৌন সম্পর্কের বিষয়টিকে নাকচ করার মত কোন ওয়াহী আসে নাই। তাই আল-কোরআনে সে বিষয়ে নির্দেশনা আসার পূর্ব পর্যন্ত 'ডান হাতের অধিকারভুক্ত/ক্রীতদাসী ও মালিকের সম্পর্কের বিষয়টিকে তখনকার রীতির মধ্যে রেখেই কিছুটা মর্যাদা দেবার অভিপ্রায়ে রাসূল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে কিছু সদুপোদেশ দেয়া হয়েছিল মাত্র। পরবর্তীতে কোন হাদিছ দ্বারা যদি অন্য কোন ভাব প্রকাশ পেয়েও থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদান জনিত ঘাটতি বা বর্ণনা ভঙ্গির দূর্বলতার কারনেই এমনটি হয়েছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।

Narrated 'Abdullah (Radi-Allahu 'anhu): Bukhari Vol. 7 : No. 4
We were with the Prophet (Sallallahu 'Alaihi Wa Sallam) while we were young and had no wealth whatever. So Allah's Apostle (Sallallahu 'Alaihi Wa Sallam) said, "O young people! Whoever among you can marry, should marry, because it helps him lower his gaze and guard his modesty (i.e. his private parts from committing illegal sexual intercourse etc.), and whoever is not able to marry, should fast, as fasting diminishes his sexual power."

Modesty= (অর্থ) বিনয়, বিনয়শীলা, নিরাভিমান, অভিম্নশুণ্যতা, নিরহঙ্কারিতা, সংযম, পরিমিতিবোধ, মিতাচার, শালীনতাবোধ

মূল হাদিছে ব্যবহার করা হলো guard his modesty, ব্রাকেটে বলা হলো (i.e. his private parts from committing illegal sexual intercourse etc.)- এভাবে মূল হাদিসের সাথে এ ধরনের বক্তব্য যুক্ত করে দিয়ে সহজ, সরল স্পষ্ট বাণীকে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা কি ঠিক হয়েছে?

সময় মত বিয়ে সাদির ব্যবস্থা নিলে যে একজন মানুষের বিনয়, বিনয়শীলা, নিরাভিমান, অভিম্নশুণ্যতা, নিরহঙ্কারিতা, সংযম, পরিমিতিবোধ, মিতাচার, শালীনতাবোধ রক্ষিত হয়- সেই ব্যাপক বক্তব্যটি এর ফলে উহ্যই থেকে গেল। (২৩:০৫)নং আয়াতে লজ্জাস্থান বা যৌন অঙ্গের হেফাজতের কথাও যদি বোঝানো হয়ে থাকে, তবুও কি তার পরবর্তী আয়াতে শুধুমাত্র এর অন্যথা করার কথা বলার কারনে হারাম যৌন কর্মটি হালাল বলে বিবেচিত হতে পারে?

শুধু তাই নয়, আল-কোরআনে মুশরীক নারীদের বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে-

সূরা বাকারা (মদীনায় অবতীর্ন)-
(২:২২১) আর তোমরা মুশরেক/অংশীবাদী নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। নিশ্চয় বিশ্বাসী ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের খুব ভালো লেগে যায়। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের (পুরুষ) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হয়ে যাও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

কিন্তু আশ্চর্য লাগে যখন এও বলা হয় যে, মুশরীক যুদ্ধবন্দীনিদের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক করায় নাকি কোন সমস্যা নেই। অথচ পবিত্র কোরআনে কোথাও একটি বারও মুশরীক যুদ্ধবন্দী/যুদ্ধবন্দীনি ইমান না আনলেও তার সাথে বিবাহ/যৌন সম্পর্ক জায়েজ হতে পারে (নাউযুবিল্লাহ) তার সামান্যতম ইংগিতও নেই। পবিত্র কোরআনের সাথে এমনতর অদ্ভুত অপবিত্র বিরোধীতা!! জ্ঞাতসারে নাকি অজ্ঞতা বসত করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।

আল্লাহতায়ালা কাদের সাথে কতটুকু খোলামেলা হতে হবে তা স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন না। আর যাদের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ এইরূপ স্পষ্টভাবে খোলামেলা মেলামেশা করার পারমিশন দেন সেটাকে আমি অবশ্যই স্বীকার করি এবং সেক্ষেত্রে আমার কোনরূপ দ্বিধা-দন্দ নেই। নিচে দেখুন-

সূরা বাকারা-
(০২:২২৩) তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।

২৪৯- (ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহিত যৌনজীবন অত্যন্ত পবিত্র। এই জীবন সম্বন্ধে লজ্জিত হওয়ারও কিছু নাই বা একে হালকাভাবে গ্রহণ করা উচিত নয় বা এ নিয়ে অত্যাধিক বাড়াবাড়ি করারও প্রয়োজন নাই। মানব জীবন চক্রের এ এক অপরিহার্য অংশ। এই জীবনকে আল্লাহ্‌ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, বিবাহিত স্ত্রীরা হচ্ছে শস্য ক্ষেত্র স্বরূপ। স্বামীরা সেই শস্য ক্ষেত্রে বীজ বপন (শুক্র) করবে এবং ফসল ঘরে তুলবে, এখানে সন্তান তার ফসলস্বরূপ। সুতরাং স্বীয় জমি যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। অর্থাৎ কৃষিকাজে যেমন জমি চাষ করা এবং ফসল বোনার নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম আছে; সেইরূপ আল্লাহ্‌ মানুষকে বলেছেন তার সময়, সুযোগ ও ইচ্ছা অনুযায়ী তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে। সে এমনভাবে তার ফসল বুনবে না যাতে তার জমির ক্ষতি হয় বা তার ফসল পরিপক্কতা লাভ করতে না পারে। এই উক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অল্প বয়সে ঘন ঘন সন্তান ধারণের ফলে বহু নারীই অকালে বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং ফলে স্বামী দ্বারা পরিত্যক্ত হয়। স্ত্রীকে বলা হচ্ছে 'ফসলের জমি' যা আল্লাহ্‌ তাকে ইচ্ছা বা বিবেক অনুযায়ী কর্ষণ করার অনুমতি দিয়েছেন, তার অপব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। যেন 'ভূমি' অর্থাৎ স্ত্রীর কোনও ক্ষতি না হয়। শুধু যে স্ত্রীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তাই নয় ঘন ঘন সন্তান জন্মের ফলে তারা উপযুক্ত যত্ন পায় না, ফলে ভগ্ন স্বাস্থ্য এবং যত্নের অভাবে দেশের উপযুক্ত নাগরিকরূপে গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং ভুল কর্ষণ ও ভুল বপনের ফলে শুধু যে জমিরই ক্ষতি হয় তাই নয় উপযুক্ত পরিপুষ্ঠ ফসল লাভ থেকেও জমির মালিক বঞ্চিত হয়। এখানে ইচ্ছামত কর্ষণ করার অর্থ এই যে, স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে সহানুভূতি সম্পন্ন হবে এবং নিজের বিবেক ও বুদ্ধির ব্যবহার করবে। নিজের বিবেক ও বুদ্ধির ব্যবহারকেই আল্লাহ্‌ বলেছেন 'তোমাদের শস্য ক্ষেত্রে যখন যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার'। অর্থাৎ বিবেকের স্বাধীনতা দেওয়া হলো। বৈবাহিক সম্পর্ক শুধুমাত্র ভোগ-উপভোগের জন্য নয়। সুন্দর শান্তিপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, সৎ সন্তানের জন্ম দেওয়া ও তাদের সুষ্ঠু লালন পালন এর অন্যতম উদ্দেশ্য।)

কিন্তু 'মা-মালাকাত আইমানুকুম'-দের সাথে কি এ ধরনের খোলামেলা মেলামেশা করাকে যায়েজ ভাবা ঠিক?

এখানে তো নয়ই, অন্য কোথাও কি 'মা-মালাকাত আইমানুকুম-দের' সাথে এমনকি মুশরিকদের সাথেও শুধু পুরুষ হয়েছে বলেই এমন স্পষ্টভাবে খোলামেলা মেলামেশার পারমিশন কাউকে আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন?

অথচ আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন-
(২:২২১) অর্থ- আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য ( وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ ) মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

যদি আল্লাহতায়ালার এমন স্পষ্ট একটি বাণীও কেউ দেখাতে পারে, যেখানে স্পষ্টভাবে 'মা-মালাকাত আইমানুকুম-দের' সাথে এবং মুশরিক মহিলাদের সাথে (যাদেরকে বিয়ে করারই হুকুম নেই) ব্যভিচার টাইপ সব করার পারমিশন মুসলিম পুরুষদেরকে দেয়া হয়েছে। তাহলে আমি তা সত্যিই মেনে নেব। কারন আল্লাহর স্পষ্ট হুকুম মানতে আমি কোন লজ্জা বা ভয় পাই না। তবে তা স্পষ্ট হতে হবে। আবছা খাপছাড়া গোছের বুঝ দিলে কখনই মানব না।

এরপরও কেউ যদি 'মা-মালাকাত আইমানুকুম-দের' সাথে যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে সেভাবে ব্যবহার করার পক্ষে থাকতে চান। তবে থাকুন।

শুধুমাত্র লজ্জাস্থানের হেফাজতের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের কথা বলার কারনেই কে কি মত দিল সেটা নিজে ভালভাবে না বুঝে তাদের উপর ভর করে আমার পক্ষে এমন জঘন্য পাপের কথা ভাবা মোটেই সম্ভব নয়। কারন আমি এতে খুবই লজ্জা ও ভয় পাই। আমাকে ক্ষমা করবেন। কারন আল্লহতায়ালা এতটা বে-শরম হবার জন্য পারমিশন দিতে পারেন বলে যারা মনে করেন- তাদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন-

(৪:২৭) অর্থ- আল্লাহ তোমাদের প্রতি ফিরতে (ক্ষমা করতে) চান; কিন্তু যারা কাম-লালসার অনুসারী, তারা চায় তোমরাও যেন (তাঁর কাছ থেকে) অনেক দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়।

তাই এ ব্যাপারে আমার ফয়সালা আমি যা বলেছি আমৃত্যু তাই থাকবে এবং আমি বিষয়টা আল্লাহর হাতেই ন্যাস্ত করতে চাই-

আপনার মন্তব্যের ২য় অংশ-
এটা সত্য হলে, জিনার অপবাদ আসতে পারে সাহাবীদের ওপরে এবং তাদের ওপরে যিনি আছেন তার ওপরও।

আমি রসূল সোঃ) এর জীবনকে আলে-কোরআনের বাস্তব প্রতিফলন হিসেবেই বিশ্বাস করি। যদি গোড়াতেই গলদ ছিল বলে আমি ভাবতাম, তাহলে নিজেকে অহেতুক মুসলিম হিসেবে পরিচয়ই দিতাম না। (ক্রমশ চলবে--------)
৬/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×