চিলেকোঠার প্রেম -১
০৩ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১৩
হুট করেই বিয়েটা করে ফেলেছিলাম আমরা। শুধুই হুট করেই নয় এমন করে আগ পাছ না ভেবে বিয়ে করে ফেলাটাও আমাদের জন্য বেশ রিস্কিই ছিলো। মুখোমুখি পরিচয় ছিলো না আমাদের। যা কিছু ভালো লাগা ভালোবাসা, প্রথম পরিচয় থেকে বিয়ে সবই হয়েছিলো অনলাইনের কল্যানে। যদিও সেই পরিচয়টা ছিলো দীর্ঘদিনের। প্রায় ৩ বছরের। এভাবেই একে অন্যকে জানাশোনা, ঘন্টার পর ঘন্টা এক সাথে গুটুর গুটুর। মুখোমুখি দেখা না হলেও মনের চোখে সারাক্ষনই দেখা হত আমাদের। তবে বিয়ের মত এমন গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেবার আগে ওর সাথে আমার দেখা মানে সামনা সামনি দেখা হয়েছিলো গুনে গুনে মাত্র ৩ বার। মুখোমুখি দেখা হবার বিষয়টা আসলে ততদিনে ছিলো গৌন। মুখ্য ছিলো পারস্পারিক নির্ভরতা, একে অন্যের উপর বিশ্বাস, মায়া আর ভালোবাসা। এটার জন্য মনে হয় না আজকাল আর এত সামনা সামনি দেখা শোনার প্রয়োজনও আছে। ওর সকাল থেকে সন্ধ্যে, ঘুম থেকে ওঠা বা ঘুমিয়ে পড়া এমন কি ঘুমের মধ্যটাকেও ততদিনে জেনে গিয়েছিলাম আমি। বর্তমানের অনলাইন, ফেসবুক, মুঠোফোনের যুগে এমন করে প্রায় সম্পূর্ণটাও জেনে ফেলা তেমন কঠিন নয়। লিখছি আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা। যখন আমাদের পরিচয়ের শুরু।
পরিচয়ের শুরুতে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আমি ওর প্রেমে পড়তে পারি বা সে আমার প্রেমে। আমরা আসলে খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম। তার মত এমন একজন বন্ধু আমার সারা জীবনের পুরোটা সময় জুড়ে কখনও পাওয়া হয়নি। এমনটাই মনে হত আমার। তাকে আমার কখনও ছেলে বা মেয়ে বন্ধু এমন করে জেন্ডারের হিসাবেও বন্ধু মনে হয়নি। সে নারী পুরুষ সকল কিছুর উর্ধে আমার বন্ধু হয়ে উঠেছিলো। সে যে কখনও আমার প্রেমেও পড়তে পারে এমনটা তাই আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। সে ছিলো আমার অতি বিশস্ত শুধুই এক বন্ধু। যাকে দিয়ে আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম। সে দিন বললে দিন আর রাত বললে রাতই মনে হত আমার। এত বিশ্বাস আমি আমার জীবনে কাউকেই করিনি। এত কনভিন্স আমি কখনও কাউকে দিয়ে হইনি। তবুও আজ মনে হয় আমি হয়ত তার প্রেমে পড়তাম না। কারণ দেবতা বা মহাপুরুষের প্রেমে মানুষ পড়তে পারে না। শুধুই শ্রদ্ধা করতে পারে। সেও কারো প্রেমে পড়তে পারে, তাও আবার আমার এও আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
কিন্তু এরপরেও বুঝলাম সে আমার প্রেমে পড়েছে মানে সে প্রেমে পড়েই গেলো এবং সে কথা আমাকে জানালো। এভাবে এক সাথে থাকতে থাকতে কখন সে আমাকে এইভাবে ভালোবেসে ফেলেছে নিজেও তা বুঝতে পারেনি। আমি তাকে ভালোবাসতাম ঠিকই কিন্তু তা ঠিক প্রেমে পড়ার মত নয়। কিন্তু তার সেই আহ্বান আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না। এতদিনের এমন একজন বিশস্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধুকে কি করে ফেরাবো আমি? কি করে উপেক্ষা করবো তাকে? তাকে ছাড়া জীবনে চলাটা তখন প্রায় অসম্ভব আমার কাছে। তাই মনকে বুঝালাম আর বুঝলাম আমার জীবনে তার মূল্য অপরিসীম। আর আমি তাকে ছাড়া চলতেই চাইনা। পারবোও না হয়ত।
এরপর আর দূরে থাকতেই চাইলাম না আমরা। আর তাই এক আলো ঝলমল বসন্ত সকালে আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরেই ফেললাম। এতক্ষন যারা এই লেখাটা পড়ছেন তারা হয়ত ভাবছেন এটা খুবই স্বাভাবিক ও চিরচেনা এক গল্প। মানছি এমন গল্প অনেকই আছে আমাদের জীবনে দেখা, জানা ও চেনা। আমিও শুনেছি। সে যাইহোক, চিরদিনের অপরিনামদর্শী আমি আরেক চির অপরিনামদর্শীর হাত ধরে আমার বাবার গুলশানের ঝাঁ চকচকে ফ্লাট ছেড়ে নাখালপাড়ার সরু গলির এক পলেস্তারা খসা বিল্ডিং এর রেলিংবিহীন সিড়ি বেয়ে তিনতলার ছাদের চিলেকোঠার এক কামরার সংসারে এসে উঠলাম। এমন না আমি এসব না জেনেই এসেছিলাম। এসবই আমার চেনা ও জানা ভিডিও চ্যাটের কল্যানে। কাজেই এসব জেনে শুনে ও মেনেই আমি তার হাত ধরে সেখানে এসে উঠেছিলাম। আমি কিশোরী ছিলাম না। আমি তখন রীতিমত জব করছি। কাজেই সেটা কিশোরী আবেগও ছিলো না। বলতে গেলে কিছুটা চ্যালেঞ্জ বা এক্সপেরিমেন্টও হতে পারে।
যেদিন বিয়ে করলাম সেদিন সকালবেলায় যখন মাকে জানিয়েছিলাম। মা তখন সবে মর্নিং ওয়াক সেরে এসে তার বেডরুমের প্রিয় বারান্দায় বসে তার প্রিয় পাখিদের সাথে মর্নিং টিকাপ হাতে বসেছিলেন। আমি যখন জানালাম আজ আমি একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। মা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমি বললাম মা এত অবাক হবার কিছু নেই। তুমি যে তোমার আনিসভাইকে ছেড়ে আমার বিত্তশালী বাবার সাথে বিয়ে করে ফেলেছিলে একদিন, তোমার বদরাগী বাবার ভয়ে সেটা আমি জানি। আর সেই কারণে তোমার আনিস ভাইও যে সেই রাতেই আত্মহত্যা করেছিলো সেই কথাটাও আমি জানি। এ নিয়ে সারাজীবন তুমি এক গোপন দুঃখ বয়ে বেড়াচ্ছো, যা তুমি কখনই কাউকেই বলতে পারোনা সেই কথা জানতেও আমার বাকী নেই। আমি তোমার ডায়েরী পড়েছি। তাই আমি কোনো সিনক্রিয়েট চাই না এবং সারাজীবন তোমার মত কোনো দুঃখও বয়ে বেড়াতে চাইনা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ওকেই বিয়ে করবো, যাকে আমি ভালোবাসি। আমাকে আমার বদরাগী বাবা বা সুন্দরী মা কেউই কোনোভাবেই আটকাতে পারবে না। আর তাছাড়া আমি নিজে জব করছি। দুজনে ভালোই থাকতে পারবো নিশ্চয়! এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত। তুমি দোয়া করো মামনি। মা একটাও কথা বলেননি। আটকাননি আমাকে। হয়ত তার ব্যর্থতা আজ আমার ভেতরে পূর্ণ হতে যাচ্ছে এটা ভেবেই। তবে ঘটনার আকস্মিকতায় উনি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে ছিলেন।
যাইহোক আমার বাবার বাড়ি, গাড়ি বিত্ত অহংকার সবকিছু ছেড়ে সম্পূর্ণ নিজের সিদ্ধান্তে এই চিলেকোঠায় উঠে আসা ব্যপারটাকে বাবা কি পরিমান ঘৃনার চোখে দেখবেন তা আমি দিব্য চোখেই দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্ত আমি এও জানতাম বাবা কোনোদিনও আসবেন না আমার সিদ্ধান্তে নাক গলাতে। এমনকি আমি না খেয়ে মরে যাচ্ছি সে খবর পেলেও উনি আসবেন না, আমাকে উদ্ধার করতে। মোট কথা আমি এই পরিমান স্বাধীনতাতেই বড় হয়েছিলাম এবং নিজের সিদ্ধান্তের উপরে কেউ কখনও জবরদস্তি করেনি আমার পরিবারেও।
কাজেই সেই সন্ধ্যায় মিটমিটে বাল্বের এক রুমের সংসারে শুরু হলো আমাদের টোনাটুনির পথচলা। আমি যদিও পড়ালেখা শেষ করে তখন প্রায় বছর দুই জব করছি একটা মালটিন্যাশনাল কোম্পানিতে। কিন্তু ও তখনও আই বি এর স্টুডেন্ট। চালচুলোহীন। তাতে আমরা চিন্তিত তো ছিলাম না মোটেও বরং আমি জানতাম আমি একা যা উপার্জন করছি তা দিয়ে আমাদের দুজনের খুব ভালোই চলে যাবে। আনন্দে আর ভালোবাসায়...... শুধু ছেলেরাই সংসার চালাবে আর মেয়েরা বসে বসে খাবে ? সেদিন হয়েছে বাসী। মানে আমি এবং আমরা সবখানেই ভালোই এক্সপেরিমেন্টাল ছিলাম।
কি? অবাক হচ্ছেন বা মুখ টিপে হাসছেন এ কথা শুনে?
আচ্ছা সবই বলবো। আমাদের সেই এক্সপেরিমেন্টের কাহিনী। লেখাটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। আজ থামছি। আবার আসবো খুব শিঘ্রীই...
চিলেকোঠার প্রেম- ২
০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৫
পলেস্তারা খসা ইট বেরিয়ে থাকা রেলিংহীন সিড়ি বেয়ে নতুন শাড়িতে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে পৌছালাম দোতলার সেই চিলেকোঠার ঘরে। দরজার কড়ায় ঝুলানো বড় সড় তালাটা চাবি ঘুরিয়ে খুলে ফেললো শুভ্র.....
https://www.somewhereinblog.net/blog/Mahrin/30305075
০৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫
সাত দিনের ছুটি শেষ হয়ে এলো। কাল থেকে অফিস শুরু। সত্যি বলতে এই সাত সাতটা দিন যেন উবে গেলো পাখির ডানায় ভেসে। এই সাত দিনে বাবা একটাবারও ফোন করেননি। আমি জানতাম উনি কখনই ফোন .....
চিলেকোঠার প্রেম-৪
১০ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০১
আজ শুক্রবার। আজ আর কাল আমার ছুটি। অনেকগুলো দিন পরে যেন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। সকাল থেকেই অকারণ আনন্দে মন ভরে আছে। এই সাত দিনেই আমার বিরহে আমার সাধের পাতাবাহার গাছগুলি যেন .......
চিলেকোঠার প্রেম-৫
৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৪
শুভ্রদের বাড়িতে যখন পৌছুলাম। তখন বেলা প্রায় ১১টা। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো ওর ছোট বোন শৈলী। ভাইকে দেখে বিস্ময় এবং খুশিতে চিৎকার দিতে গিয়েও আমাকে দেখে থমকে গেলো ......
চিলেকোঠার প্রেম - ৬
সারাটা রাত জেগে রইলাম আমরা দু'জন।এমন নির্ঘুম রাত আগে কখনও আসেনি। আমার চোখ দিয়ে অঝরে জল ঝরছিলো।চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছিলো। শুভ্র আমাকে বুঝিয়েই চলেছিলো যে আমার আসলে এত কষ্ট পাবার কোনো কারণই নেই। সে আসলে অবাক হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে এমন করে ভেঙ্গে পড়তে বা দুঃখ বোধ করতে দেখেনি সে কখনও। বরং তার নাকি মনে হত আমার ভেতরে বিধাতা দুঃখবোধের চেতনাটুকু অফ করে রেখেছেন। তাই সবকিছুতেই আমার কৌতুক লাগে। আনন্দে ভাসি আমি। কিন্তু আজ হঠাৎ তার মায়ের আচরণে আমিও যে এমন আচরণ করবো সে বোধ হয় এটা কখনও বুঝতেই পারেনি। নইলে আর একটু অন্যভাবে সামলাতে পারত।
শুভ্রের কথাগুলো ঠিক। ঠিক তার মায়ের কথাগুলোও। শুভ্র বলছিলো, দেখো যে কোনো ছেলেই এমন হুট করে বউ নিয়ে বাড়িতে হাজির হলে এমন সব অজানা অচেনা ঘটনা তো ঘটবেই। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে সেসব ভালোই জানো। তবুও কেনো মানতে পারছোনা বলোতো? আর মানতে পারো বা না পারো তোমার চোখে এমন অঝর কান্না কিন্তু একদমই শোভা পায়না জানো? হ্যাঁ আমিও জানি সেটা। তবুও কিছুতেই মানাতে পারছিলামনা নিজেকে। শুভ্র বললো চলো পুকুরঘাটে গিয়ে বসি। আমরা বাড়ির পিছে পুকুরঘাটের সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চিতে গিয়ে বসলাম।
পূর্নচন্দ্র শশী তখন ষোলকলায় তার ঝকঝকে রুপের সুধা ছড়াচ্ছে নিশুথী রাত্রিতে। তখন রাত প্রায় দুইটা। পুকুর ঘাটে বসে থাকার খুব একটা নিরাপদ সময় না। ভূত প্রেত তো দূরের কথা সাপ, ব্যাঙ ,তেলাপোকা টিকটিকি আসলেও ভয়ে আমার মরে যাবার কথা ছিলো। তবুও কেনো জানি সব কিছুর উর্ধে তখন আমি। হতাশা বা বেদনায় বুক ভেঙ্গে যাওয়া অনুভূতিটুকু ছাড়া আর কিছুই বোধ হচ্ছিলো না।
মরে গেলেও যেন কোনো দুঃখ থাকতো না।
তখন মনে হয় শরতের শুরু। নিশুথী সেই রাতে পুকুরপাড়ের ঝোপ ঝাড় বড় বড় গাছগুলোর পাতা হাল্কা বাতাসে দুলছিলো। শুভ্র আমাকে জড়িয়ে বসেছিলো তবুও একটু একটু শীত শীত করছিলো আমার। হঠাৎ সড়সড় করে উলটো দিকের সিমেন্ট বাঁধা বেদীটার ধার ঘেসে কি যেন চলে গেলো কিচ কিচ করে। আমি তো ভয়ে চমকে উঠে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। সেই চিৎকার খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো নিশুথী রাতের সেই পুকুরের শান্ত জলের উপর দিয়ে অশরিরী কোনো শব্দের মত। শুভ্র আমার ভয় দেখে হাসতে হাসতে শেষ। ওটা নাকি চিকা। মানে বড় সড় প্রায় বেজী আকারের চিকা। এরপর আমি তো আর থাকতেই চাইছিলাম না সেখানে। কিন্তু শুভ্র অভয় দিচ্ছিলো। সেই অভয়ে আমিও কি করে যেন ভয়কে জয় করে থেকে গেলাম ওখানে প্রায় সারা রাত্রী।
শুভ্রের কাঁধে মাথা রেখে পা তুলে পারলে ওর ভেতরে ঢুকে গিয়ে বসেছিলাম আমি বেঞ্চে। শুভ্র সে রাতে শুনিয়েছিলো তার ছোটফুপু কুমকুমের কথা। এই পুকুরে একদিন ডুবে মরেছিলো সে। ইচ্ছামৃত্যু বা আত্মহত্যা। তার সাথে তার প্রেমিকের প্রবঞ্চনা সহ্য করতে পারেনি সে। বড় ভালোবেসে একদিন যার হাত ধরে ঘরে ছেড়েছিলো সকলের অমতে। সেই প্রেমিক পুরুষটিকে অন্য নারীর সাথে সম্পর্কে জড়াতে দেখে ফিরে এসেছিলো সে আবার বাবা মায়ের কাছে, পরিবারের কাছে। কিন্তু বদরাগী বাবা আর তার পরিবারের লোকজনেরা আশ্রয় দিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু উঠতে বসতে তাকে যে গঞ্জনার শিকার হতে হত সেটা সে সহ্য করতে পারেনি । তাই একদিন এমনই এক পূর্নিমা রাতে এই পুকুরের শীতল জলে সকল জ্বালা জুড়িয়েছিলো কুমকুম ফুপু।
পুকুরের জলে তাকিয়ে ছিলাম আমি। ভালোবাসার কত রূপ, কত ইতিহাস। যুগে যুগে এই আবেগ, অনুভূতি আর বৈষম্য বিদ্বেষে বয়ে চলেছে মানুষের জীবন। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশ বিদেশ। কত পালটালো, কত বদলালো শুধু রহস্যময় এই আবেগের কাছে সকল কিছুরই পরাজয়। শুভ্র বলে চলে, কুমকুম ফুপু দারুন সুন্দরী ছিলেন। যখন তিনি মারা যান তখন শুভ্রের বয়স ৭/৮ হবে। ভোর থেকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা তাকে। দুপরের আগেই ভেসে উঠেছিলো তার লাশ। গোলাপী শাড়ির মাঝে ফুপু ঘুমিয়ে ছিলেন পদ্ম ফুলের মত। আমি চোখ বুঁঝে কুমকুম ফুপুর চেহারা দেখতে পাই।
শুভ্র বলে কুমকুমফুপুকে মনে পড়লেই চোখে ভাসে এক বিকেলে খড়ির চুলার আগুনে মিষ্টি আলু পুড়িয়ে গরম গরম ফু দিয়ে দিয়ে তার মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছিলো ফুপু সেই দৃশ্যটা। বিকেলবেলা জানালার ধারে দুই কলাবেনীতে চুল বেঁধে চোখে কাজল দিয়ে জানালায় দাঁড়াতো ফুপু। বাড়ির সামনে দিয়ে সাইকেলে ঘন্টি বাঁজিয়ে চলে যেত যে তারই জন্য ছিলো তার সকল সাজসজ্জা ও প্রতীক্ষা তখন না বুঝলেও এখন বেশ সে কথা জানে শুভ্র। আরও কত শত স্ম্বড়ু ঢ্যাপের খই বা পানিফল, তেঁতুল বরই এর আচার কিংবা আমসত্ব বা হাওয়াই মিঠাই এর মাঝে জড়িয়ে থাকে কুমকুম ফুপু শুভ্রের ছেলেবেলার স্মৃতির পরতে পরতে তা সেদিনই জেনেছিলাম আমি।
আমার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস নামে অদেখা সেই বালিকার বা তরুনী হয়ে ওঠা কুমকুম ফুপুর জন্য যে এক রাশ হতাশা, প্রবঞ্চনা বা দুঃখ নিয়ে চলে গেছে অজানায় .....
চলবে...
চিলেকোঠার প্রেম ১ থেকে ৫ পুরোনো এবং নতুন ৬ একসাথে
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৩