somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ এখন বিপর্যয়ের অগ্রদূত

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন বিপর্যয়ের অগ্রদূত। বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর অন্যতম কারণ।
গতকাল গার্ডিয়ানে ‘বাংলাদেশস ওয়ান্স ওয়েলকাম ফ্লাডস আর নাউ হারবিঞ্জার্স অব ডিজাস্টার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হিমালয় থেকে নির্গত পানিপ্রবাহ এক সময় বাংলাদেশে প্রচুর পলি মাটি ও উর্বরতা শক্তি বয়ে নিয়ে এলেও এখন এদেশে অকাল বন্যায় বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। অভিন্ন নদীতে ভারত বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের জন্য এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এছাড়া নেপালের বন উজাড়করণ ও বৃষ্টির ধরনে পরিবর্তন এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়, নদ-নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ১০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। সংক্ষিপ্ত আকারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো :
১০ দিনের খাবার মজুত করে রেখেছেন মাজেদা বেগম। খাবার বলতে কয়েক কেজি নিম্নমানের চাল, মুলা, বেগুন আর আলু। দুই সন্তান ও স্বামীসহ চারজনের জন্য তাদের দৈনিক বরাদ্দ মাত্র এক কেজি চাল। সন্তানদের দু’মুঠো ভাত দেয়ার জন্য মাজেদা বেগম নিজে অনেক সময় অনাহারেই থাকেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ক্ষুধার জ্বালায় আমার সন্তানরা কান্নাকাটি করে। তখন আমাকে মিথ্যা বলতে হয় যে, তোমাদের বাবা খাবার নিয়ে আসছেন।’
কমিউনিটির অন্যান্য লোকজনের মতো মাজেদা বেগমও অপেক্ষা করছেন কখন তার স্বামী ব্রহ্মপুত্র নদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসবেন। তিনি সেখানে ধান কাটতে গেছেন। তবে গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরের অকাল বন্যায় কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে শ্রমিকরা এখন একদিকে যেমন কার্যত বেকার হয়ে পড়েছে, তেমনি অন্যদিকে চালের দাম বেড়ে গেছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশের অনেক লোকই তাদের জীবন ধারণের জন্য বন্যার ওপর নির্ভর করেন। হিমালয় থেকে বাংলাদেশে যে পানির ধারা নেমে আসে, এক সময় তা বয়ে নিয়ে আসত নতুন পলি ও উর্বরাশক্তি। এছাড়া ধান উত্পাদন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে পানির অভাবে বীজ রোপণ করার পর তা সবুজ হওয়ার পরিবর্তে সোনালী রঙ ধারণ করে। এর ফলে ভূমি, মানুষ ও আবহাওয়ার নিবিড় সম্পর্ক ভেঙে গেছে।
জীবনদায়ি বন্যা কেন এমন আচরণ করছে তার কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ব্রহ্মপুত্র তীরের মানুষ। এখন তারা উপর্যুপরি অনাহারে থাকেন। বাংলাদেশ সরকার অস্বীকার করলেও এসব এলাকার গ্রামীণ অধিবাসীদের জীবনে জড়িয়ে আছে মঙ্গা। গত বছর জুলাই ও সেপ্টেম্বরে বন্যা হয়। আগে কেউ এমনটা দেখেনি।
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদ ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত। কিন্তু বন্যা হলে তা এর কয়েকগুণ বেশি এলাকা প্লাবিত করে। বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা সমুদ্রসীমা থেকে মাত্র ৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। যে দুটো নদী বাংলাদেশের ল্যান্ডস্কেপকে নিয়ন্ত্রণ করে তার একটি হলো ব্রহ্মপুত্র ও অন্যটি গঙ্গা। কিন্তু এখন তা বদলে গেছে। ভারতের বাঁধ, নেপালের বন উজাড়করণ ও বৃষ্টির ধরনে পরিবর্তন আসায় এখন বন্যা আরও বেশি সহিংস রূপ নিয়েছে। ঘন ঘন এর প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এটা হলো প্রকৃত বিপর্যয়, যা সম্পর্কে কম পূর্বাভাসই দেয়া যায়।
শরতে যেখানে নতুন ধান ফলার কথা ছিল সেখানে এখন ধূসর কাদামাটি। কোহিনূর নামে এক নারী বলেন, ‘নদীর তীর ফেটে যেন পানি আসে। আমার সামান্য যে ফসল লাগানো ছিল তাও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আগামী মাসেই এসব ফসল ওঠার কথা ছিল।’ অন্য আরেক নারী সেরেনারও একই কথা। বন্যার পানি তাদের খাদ্য নিরাপত্তাকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আরেকজন নারী বলেন, ‘তিনবার নদী ভাঙনে আমার জমিজমা সবই বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এখন রাস্তায় কলাগাছের পাতাকে বিছানা বানিয়ে বসবাস করছি।’ বিধবা সাপিনা বলেন, ‘আমি শুধু পচা রুটি খেয়ে বেঁচে আছি।’
গত বছরের বন্যা মাজেদার সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অবশিষ্ট ছিল একটি ছাগল ও একটি টিনের বাক্স। দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে এখন তিনি বাঁশের তৈরি ঝুপরিঘরে বাস করেন। তার ঘরে কোনো নগদ টাকা নেই। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না তিনি। অভাবে পড়ে ছাগলটিও বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
গণউন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী আবদুস সালাম বলেন, ‘দুটো জিনিস বাংলাদেশকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। একটি হলো রাজনীতি আর আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।’ তিনি বলেন, ‘দাতারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমরা এখনও কেন তোমাদের অর্থসহায়তা দিচ্ছি? আমি বলি, নদীতে কি হচ্ছে সেটা একটু দেখুন।’
নদীর ওপর বাংলাদেশে ১০ কোটি লোকের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। কঠিন বাস্তবতায় মাজেদার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো দার্শনিক উক্তি, ‘আমাদের প্রতিটি দিনই সংগ্রামের’। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা টাকা পাই তবে খেতে পারি। অন্যথায় আমি ও আমার পরিবার দুর্ভোগকেই মেনে নিয়েছি। তবে আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

আমিও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত, সত্যিই কি আমরা অন্ধকার এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছি?
সুত্র: (আমার দেশ)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×