নিউটন মণ্ডল: ঢাকা ক্রেডিটের বি কে গুড কনফারেন্স হলে আয়োজিত মতবিনিময় ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়েছেন মেহেরপুরের খ্রিস্টভক্তরা।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৬.০০ টায় মি. ইমানুয়েল বাপ্পী মন্ডলের সভাপতিত্বে বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (মো: আয়ূব হোসেন) ও ২ জন খ্রিস্টান মেম্বারকে (সংকর বিশ্বাস ও দিলীপ মল্লিক) সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান মি. পিউস কস্তা, দি মেট্রোপলিটান খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান মি. আগষ্টিন পিউরীফিকেশন এবং দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:-এর প্রেসিডেন্ট মি. বাবু মার্কুজ গমেজ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব, প্রধান অতিথিসহ বিশেষ অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় মেহেরপুরেরবাসী। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি এবং সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মতবিনিময় ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ও আহ্বায়ক মি. ইমানুয়েল বাপ্পী মন্ডল। তিনি বলেন, আমরা মেহেরপুর-১ আসনসহ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার অনেক খ্রিস্টভক্তগণ ঢাকায় বসবাস করছি। কিছুদিন আগে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বেশ চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন ছিলাম। এলাকার গির্জায় ডাকাতি, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক খ্রিস্টান ধর্মীয় শিক্ষিকাকে নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে ছিল না। এ সকল বিষয় নিয়ে আমরা ঢাকাস্থ মেহেরপুর-১ আসনের সদস্য/সদস্যারা এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজনের তাগিদ অনুভব করি। এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যতে যেন আমাদের এলাকায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই লক্ষে মতবিনিময় সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
এলাকার বাস্তবচিত্র, এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এবং ১৯৭১ এর অস্থায়ী সরকার গঠনে খ্রিস্টান সমাজের অবদান লিখিত বক্তব্য আকারে উপস্থাপন করেন মি. ফিলিপ এস, মন্ডল। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় মিশন দ্বারা পরিচালিত যে এতিমখানা গুলো আছে সেখানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাননীয় এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ছাড়া মুজিবনগরকে স্থল বন্দর ও পৌরসভা ঘোষাণারও জোর দাবী জানাচ্ছি। এ সময় তিনি মেহেরপুরের খ্রিস্টান সমাজের উদ্বিগ্নতার কথাও তুলে ধরেন।
বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মি. সংকর বিশ্বাস বলেন, আমি নেতা হতে চাই না। আমি বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদ ও মুজিবনগরকে সুসংগঠিত ভাবে সাজাতে চাই। এরপর তিনি বর্তমান সরকারের আমলে বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদে সংগঠিত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। বাগোয়ান ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মি. দিলীপ মল্লিক বলেন, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুজিবনগর সরকার গঠনের সময় যে সমস্ত খ্রিস্টানরা বিশেষ অবদান রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে মি. পিন্টু বিশ্বাস অন্যতম। অনেককে মুক্তিযোদ্ধা বা অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হলেও পিন্টু বিশ্বাসকে এখনও পর্যন্ত সরকারি কোন স্বীকৃতি বা ভাতা প্রদান করা হয়নি। বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের বিশিষ্ট সংগঠন মি. আবু বক্কর বলেন, আমাদের এলাকায় আমরা খুব শান্তিতে বসবাস করছিলাম। কিন্তু কিছু অসৎ মানুষের দ্বারা এলাকার নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। আমাদের এলাকা সাম্প্রদায়িকতার কালো থাবা থেকে মুক্ত। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই শ্লোগানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে দিনাতিপাত করছে মুজিবনগরের খ্রিস্টভক্তরা। দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব আয়ূব হোসেন ভোটের সময় খ্রিস্টানদের অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, ভোটের সময় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ আমাকে বুদ্ধি, পরামর্শ এমনকি আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করেছেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে আমি ঋণী। দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান মি. আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, ঐতিহ্যবাহী মুজিবনগরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাংলাদেশে অনস্বীকার্য। যতদিন বাংলাদেশ রবে ততোদিন মুজিবনগর থাকবে। একজন খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের গর্ব ও অহংকার করার একটা ব্যাপার হচ্ছে এ দেশে একজনও খ্রিস্টান রাজাকার নেই। মুক্তিযুদ্ধে খ্রিস্টানরা বিভিন্ন ভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। অস্থায়ী সরকার গঠনের সময় ভবরপাড়া মিশন হতে সরবরাহকৃত আসবাবপত্রাদি (চেয়ার, টেবিল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি) মুজিবনগর জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মাননীয় সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের মত জনপ্রিয় নেতা থাকতে আমি মনে করি মুজিবনগরবাসীর নিরাপত্তার কোন অভাব হবে না। দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন-এর প্রেসিডেন্ট মি. বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, দেশে ০.০৩% খ্রিস্টানদের মধ্যেও দুজন খ্রিস্টান মেম্বারকে সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাওয়া গর্বের বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি খ্রিস্টান সমাজে আরও অনেকে জাতীয় নেতৃত্বে অবদান রেখে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবে। অতিরিক্ত সচিব মি. পিউস কস্তা বলেন, আমরা যারা এখন দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছি আমরা যেন দেশকে ভালোবাসি এবং আগামী প্রজন্মকে যেন স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার দেই। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মেহেরপুর-১ আসনের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও আলোকিত ব্যক্তিত্ব জনাব ফরহাদ হোসেন, এমপি বলেন, মুজিবনগর হতে বাংলাদেশের জন্ম। কিছুদিন আগে ২/১ টা ঘটনা ঘটেছে যা আমাকে ব্যথিত করেছে। ঘটনার পরপরই আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছি। মুজিবনগরের মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি যেন বিঘিœত না হয় সে ব্যাপারে তৎপড় থাকার জন্যও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মুজিবনগরকে আধুনিকায়ন করতে আমরা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে দেশের অন্যান্য জেলার সাথে মুজিবনগরকে রেলযোগাযোগের আওতায় আনা হবে এবং খুব শীঘ্রই মুজিবনগরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়াও মুজিবনগর ও মেহেরপুর জেলাকে ঘিরে তাঁর ও সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তিনি তুলে ধরেন। ঢাকাস্থ খ্রিস্টভক্তবৃন্দকে তিনি মেহেরপুর এলাকায় বিনিয়োগ করার জন্যও আহ্বান জানান। সরকারিভাবে যে ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তা তিনি প্রদান করবেন বলেন আশ্বাস প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এলাকার সার্বিক উন্নয়নে দক্ষ ও সাহসী ভূমিকা সাথে সাথে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় চেয়ারম্যান, মেম্বারদ্বয় এবং মাননীয় সংসদ সদস্যকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৩