somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মিডিয়া" বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের পোষ্ট মডার্ণ হাতিয়ার।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Hegemony হলো সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তারের একটা ইন্ডাইরেক্ট ফর্ম যেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকতৃক তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে সরাসরী সামরিক শক্তি প্রয়েগ না করেও কিছু কৌশল অবলম্বন করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। হাজার বছর পূর্বের সেই প্রিমেটিভ সোসাইটি থেকে শুরু করে বর্তমান পোষ্ট মডার্ন যুগের মধ্যবর্তী দাস প্রথা, রাজাবাদশা প্রথা, জমিদারী প্রথা ইত্যাদি যা বিভিন্ন জনগোষ্ঠিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচলিত ছিলো এর চাইতে সহস্রগুণ শক্তিশালী হলো বর্তমান Hegemony প্রথা। কারণ এখানে বোঝার উপাই নেই যে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে বা একশ্রেণী তাদের শোষণ করছে।

দাস প্রথা, রাজাবাদশা - জমীদারী শাষণ টিকে থাকতে পারেনি কারণ মানুষ একসময় বুঝতে শিখেছিলো যে এই পদ্ধতি সঠিক নয় এবং এই ব্যবস্থাগুলো শুধুমাত্র গুটিকয়েক ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় অনন্তকাল কাজ করে যাবে। মানুষ সংগঠিত হয়ে বিদ্রোহ করে এই সব প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়েছে। কিন্তু বর্তমান Hegemony প্রথায় এটা বোঝার উপয়ও নেই যে মানুষ একটি ধনীক শ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা নির্যাতিত হচ্ছে। কিছু কৌশল অবলম্বন করে গোটা বিশ্বে এমন একটা পরিস্থিতি তৌরী করে রাখা হয়েছে যে মানুষ বুঝতেও পারবে না যে তারা বিশেষ শ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রীত।

আমরা ভালো আছি। এই "আমরা" বলতে আপনারা কি বোঝেন? আপনি, আপনার মা-বাবা-ভাই-বোন- আত্নীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি। খুজেঁ দেখবেন এদের মধ্যে কেউ রিকশাওয়ালা, কোন দিনমজুর, রাখাল, গার্মেন্ট ওয়ার্কার, পরিচ্ছন্নকর্মী কিংবা ভিক্ষুক নেই। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকরীর সংখ্যা .৯৯%। আপনি আমি এদেশের জনগনের শতকরা ১% এর মধ্যেও পড়িনা। আর "আমরা" পড়ি বিশ্বের সেই ২০% এলিট শ্রেণীর মধ্যে যারা তিন বেলা বেটপুরে খেতে পারি। আর বাকি ৮০% মানুষের সাথে আমাদের নেই কোন যোগাযোগ নেই কোন খোজখবর। শুধু সিজনে সিজনে তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা উথলে পড়ে। যেমন আমরা মাঝে মাঝে তাদের শীতবস্র বিতরণ করি, খাবার দেই, কোরবানির সময় দুই টুকরা গরুর মাংশ দেই। এইটুকুই। এটাই আমার সোনার বাংলা। ইন্ডিয়াতে ও একই অবস্থা। মোম্বাই, দিল্লি, কলকাতা এই শরহগুলাই কিন্তু প্রকৃত ইন্ডিয়া না। এক গবেষনায় দেখা গেছে ইন্ডিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো (শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশি) শুধুমাত্র শ্রেণী এবং ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে (ব্রাম্মন, খত্রিয়, শুদ্র ইত্যাদি) বিশ্ব থেকে কয়েশ যুগ পিছিয়ে আছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ কন্টিনেন্টাল প্রায় সব দেশেরই একই অবস্থা।

Cultural hegemony
Monetary hegemony
Regional hegemony
Media hegemony


এগুলো হলো কিছু কৌশল যা দ্বারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রীয় হচ্ছে বিশেষকরে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে ইফেক্টিভ কৌশল হলো মিডিয়া হেজিমনি। এই মিডিয়ার উপর ভর করেই বিশ্ব নিয়ন্ত্রীত হচ্ছে। এই মিডিয়া যাই বলছে বিনা পরীক্ষা নিরিক্ষায় তাই মেনে নেওয়া হচ্ছে এবং এই মিডিয়াই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো পরিচালনা করছে।


"আমেরিকা বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর দেশ।" এটা একটা মিডিয়া হেজিমনিক স্টেটমেন্ট। কেউকি কখনো পরীক্ষা করে দেখেছে আমেরিকার সামরিক শক্তি। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের সাথে কি তাদের আলাদা করে সামরিক শক্তি পরীক্ষা হয়েছে। ইরাকে যখন হামলা চালিয়ে আমেরিকার তাথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ শুরু করে বিশ্বব্যাপি নির্লজ্জ দাদাগিরি কায়েম করতে চেয়েছিল তখন নর্থ করোয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (নামটা মনে নাই) জাতিসংঘে ঘামত ঘামতে বলেছিলো- মিস্টার বুশ, কামটু নর্থ কোরিয়া, ইউ কেন ফিল হোয়াট ইজ কল পাওয়ার। আমেরিকার স্তুপ করা মাইলকে মাইল অস্র ভান্ডার ধ্বংস করার জন্য একটা ক্ষুদ্র নিউক্লিয়ার বোমাই যথেষ্ট। NPT অধীনে পারমাণবিক-অস্ত্র সমৃদ্ধ পাঁচটি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চায়না। এছাড়া ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এবং সাউথ করোয়া হলো Non-NPT পারমানবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ। আর অঘোষিত পরমাণবিক ক্ষমতা আছে একমাত্র ইসরাইলের। নেটোভু্ক্ত বিভিন্ন দেশে পারমানবিক অস্র সাপ্লাই করে আমেরিকা- বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ইতালি এবং তুরকি। এগুলা হলো ফরমাল খবরাখবর। কিন্তু এর বাহিরেও ইরানকে দায়ী করা হয় মেস ডিস্ট্রাকশন উইপন তৈরীর জন্য। এছাড়াও ধরনা করা হয় সাউথ কোরিয়া থেকে আমেরিকার প্রতিটি স্টেটের দিকে মুখ করে তৈরী হয়ে আছে পারমানবিক কামান। এথন কোন দেশকে আপনি ছোট করে দেখবেন?

বিশ্বের সবচাইতে ঋণগ্রস্থ দেশ হলো আমেরিকা। countries by external debt গুললে সার্চ দিতে পারেন। ইরাক হামলার প্রকৃত রহস্য এখনো খোলাসা করেনি আমেরিকা। হত্যা করা হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। এত কিছুর পরও আমেরিকারই এখন বিশ্বের অপ্রতিরোধ্য প্রভুরুপে আমাদের কাছে প্রতিয়মান। আর এর একমাত্র কারণ মিডিয়া। আমরা বিশ্ব সম্পর্কে যা জানি তার অন্যতম মাধ্যমগুলা হলো বিবিসি, সিএনএসন, আল জাজিরা, ফক্স নিউজ ইত্যাদি। এগুলা কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হচ্ছে? ইরাক যুদ্ধ নিয়ে তাদের ভূমিকার কথা কি ভুলে গেছেন সবাই। এগুলার প্রতি কি আপনারা এখনো বিশ্বাস রাখেন? ইরাক যুদ্ধতো এখন কোন নিউজের মধ্যেই পড়ে না। কে করবে এতগুলা নিরীহ মানুষ হত্যার বিচার। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন মিডিয়া গুলো উঠে পড়ে লেগেছে বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে। তারা জরিপ করে পেয়েছে আমেরিকান এবং সাবকন্টিনেন্ট দেশগুলো নাকি ওবামার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বেজায় খুশি। এখন আমাদেরও সময় এসেছে ওবামাকে বাহ বাহ দেওয়ার।

রাজাবাদশাদের সময় রাজ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিলো। তাদের নিয়ন্ত্রীত প্রতিটা অঞ্চলেই দলপতি সহ সৈন্য পাঠাতে হতো যেন কেউ রাজাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পারে। কিন্তু এখন সৈন্য পাঠাতে হয়না। দেশে দেশে বিবিসি সিএনএন পাঠালেই চলে।

ওয়াল্ড ব্যাংক আমাদের দেশে চালের দাম নির্ধারণ করে দেয়। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বগুলো কতটা নগ্নভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা আর নাই বলি।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের শতকরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ সময় ব্যায় করি বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে। হোক সেটা ব্যক্তিগত আর অ-ব্যক্তিগত। এই যে এই লিখাটা পড়ছেন এটাও একধরনের তথ্য আদান প্রদান। এখন ৭০ ভাগ সময়টাই যদি আমাদের পূর্বনির্ধারীত ভুল জানানো হয় বা ভুল বোঝানো হয় এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়, তখন আমাদের বোঝারও উপায় নেই যে আমরা ভুল জানছি।

আমি বিশ্বাস করিনা অবাদ তথ্য প্রবাহে, যেই তথ্য আমাদের নিশ্চিত ভূল গন্তব্যে নেয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক সাহায্য বন্ধ করে দিলে দেশ অচল হয়ে যাবে। এই মানসিক দাসত্ব আমাদের মনে স্থায়ী করে দিয়েছে এই মিডিয়া। এখন তাই হবে। বিশ্বব্যাংক আইএমএফের পা চাটতে হবে। আমি বিশ্বাস করিনা কর্পোরেট ওয়াল্ডে যেখানে আমার দেশের হাজার কোটি টাকা বৈধভাবে!! গুটিকয়েক উন্নত রাষ্ট্রে চলে যাবে। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের দেশের মানুষও তো এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে এছাড়াও মিডেলিস্টেও তারা কাজ করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। হ্যা, আমাদের দেশের ফাইনেন্স মিনিস্ট্রিতে একজন ফরিন এডভাইজের ঘন্টায় বেতন পাঁচ হাজার ডলার। তিন লক্ষ পচাত্তর হাজার টাকা প্রতি ঘন্টায়। মাসিক হিসেবটা আপনারাই করেন। আমি বিশ্বাস করিনা গ্লোবালাইজেশনে যেখানে আমার হাতে মোবাইল কম্পিউটার ধরিয়ে আমার দেশের তেলগ্যাস নিয়ে যাবে।


(দ্রুত লিখাটা লিখে শেষ করলাম, তাই বানান ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদিও সময় নিয়ে লিখলেও আমার বানান ভুল হয়)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৮
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×