বাবা-মা চায় তার সন্তান ভালোভাবে পড়াশোনা করে ভালো একটা চাকরি করুক। এইজন্য তারা তাদের সন্তানের অনেকভাবে পড়াশুনার জন্য চাপ দেই। পড়াশুনার জন্য চাপ দেওয়া দরকার। সেটা যদি আমার সন্তান হয় তাহলে আমিও চাপ দিতাম। কিন্তু বেশীরভাগ বাবা-মা তাদের সন্তানদের জোর করে "বিজ্ঞান " শাখায় পড়াশুনা করার জন্য বাধ্য করেন। কিন্তু কতজন সফল হয়??
আপনার সন্তান কি নিতে পাড়বে "বিজ্ঞান" শাখার পড়াশুনার চাপ?? তাকে জিজ্ঞাস করার কি কোন দরকার নেই?? আমার জানামতে হাজার-হাজার ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরিক্ষা দিয়ে পাস করতে পারে না। কিন্তু কেন??
আমেরিকা বা ইউরোপ অঞ্চলে তাদের সন্তানদের বারো বছর বয়সে তাদের ইচ্ছার কথা শোনেন। তারা কি হতে চায় বা কি করতে চায়। যে যা হতে চায় বা যা নিয়ে পড়াশুনা করতে চায় তাকে সেটা নিয়েই পড়াশুনা করতে দেওয়া হয়। এজন্যই ওইসব অঞ্চল থেকেই বড়-বড় ডাক্তার, খেলোয়াড়, বিজ্ঞানী বের হয়। আপনারা বলতে পাড়েন তারা উন্নত দেশ। কিন্তু আমাদের বাবা-মা কি তাদের সন্তানের ইচ্ছার কথা একবারও শুনে?? তারা শুধু ব্যস্ত তাদের স্বপ্ন নিয়ে। তাদের সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে তা না হলে চলবে না। আগে আপনার দেখা উচিৎ, আপনার সন্তানকে যেই চাপ দিতে চাইছেন সেটা সে নিতে পাড়বে কি না বা তার ইচ্ছার কথা শুনুন।
শুধু বড়-বড় নামকরা স্কুল -কলেজে ছেলেকে পড়ালেই হবে না।একটু বুঝার চেষ্টা করুন আপনার সন্তান কি করতে চায় বা হতে চায়।এইসব নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছুই লেখার বা বলার আছে। কিন্তু আমি নিজেও জানি আমার এই কথার কোন দাম নেই বা মানে নেই কারো কাছে। তারপরেও আমি লিখলাম। যতদিন না এইসব আমাদের দেশের বাবা-মা না মানবে, না করবে ততদিন আমাদের দেশ থেকে বড়-বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানী তৈরি হবে না।
আপনার ছেলেকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে?? আর কি কিছু নেই আমাদের দেশে?? তার চাইতে বড় কথা আপনার ইচ্ছার চিন্তা বাদ দিয়ে একবার জিজ্ঞাস করুন আপনার সন্তানের ইচ্ছাটা কে। আপনাদের মতো বাবা-মার জন্য আজ দেশের হাজার-হাজার শিশু। আত্মহত্যা বা পড়াশুনা ছেড়ে দিচ্ছে শুধু আপনাদের ইচ্ছার জন্য।
এবার আসল কথায় আসি : এসএসসি পরিক্ষার পরে অনেক ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। কেউ পারিবারিক কারণে পড়াশুনা ছেড়ে দেয় আবার মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ পড়াশুনা বন্ধ হবার কারণ ছেলে-মেয়েরা যখন ফেল করে। তখন তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কেন এই ফেল??
আমাদের দেশে সাধারণত জে.এস.সি পরিক্ষার পর ছাত্র-ছাত্রী কে যে কোন বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে পড়াশুনা করতে হয়। আমাদের দেশে তিনটি শাখা আছে : মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায়ী শাখা। এই তিনটি শাখার মধ্যে "বিজ্ঞান" শাখাতে সবসময় বাবা-মা চায় তার সন্তান পড়াশুনা করুক তাতে করে তার সন্তান বড় ডাক্তার হতে পাড়বে। কিন্তু ডাক্তার হতে পারে কতজন?? পরিশেষে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে না পেরে অনেক ছাত্র ছাত্রী আত্মহত্যা বা পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। আর ঢাকা শহরে "বিজ্ঞান" শাখার পর "ব্যবসায়ী " শাখাতে ছেলে-মেয়ে বেশী পড়াশুনা করে আর "মানবিক" শাখায় একেবারে যারা খারাপ ছাত্র-ছাত্রী তারা পড়াশুনা করে। হয়তো কিছু সংখ্যক ভালো ছাত্র ছাত্রী মানবিক শাখায় পড়াশোনা করে। আমার প্রশ্ন "মানবিক "শাখা নিয়ে।
আমরা সবাই ভাল করেই জানি, যারা অনেক খারাপ ছাত্র-ছাত্রী তারা "মানবিক" শাখায় পড়াশুনা করে। তাহলে এস.এস.সি তে কেন "মানবিক"শাখায় গনিত নামে এক কঠিন বিষয় রাখা হয়েছে?? যারা মানবিক শাখায় পড়াশুনা করে তাদের কি প্রয়োজন এস.এস.সি তে গনিত বিষয়ের???তারা খারাপ ছাএ-ছাএী বলেই "মানবিক"শাখা নিয়ে পড়াশুনা করছে তাহলে কেন গনিত?? যদি এস.এস.সি পরিক্ষার পর "মানবিক"শাখায় গনিত বিষয় থাকতো তাহলে কোন সমস্যা ছিলো না। যেহেতু, এস.এস.সি পরিক্ষার পর গনিত বিষয় নেই তাহলে কেন এস.এস.সি তে গনিত বিষয়??
বাংলাদেশে সাধারণত পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এসএসসি পরীক্ষার পর। তার বড় কারণ- ছেলে-মেয়েরা ফেল করে আর পরবর্তীতে পড়াশুনা করতে চাইনা।আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা ৮০ ভাগ ফেল করে "গনিত " বিষয়ে। আমার প্রশ্ন : যেহেতু, আমরা জানি "মানবিক" শাখায় যে ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করে তারা একটু পড়াশুনায় খারাপ তাহলে কেন তাদের এস.এস.সি তে গনিত নামে অতিরিক্ত একটি বিষয় তাদের কাধে তুলে দেওয়া হয়?? তাদের তো কোন প্রয়োজন নেই এই বিষয়ের। অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে গনিতে ফেল করে পড়াশুনা বন্ধ করে দিচ্ছে আর এদের বেশীরভাগ ছেলে-মেয়ের "মানবিক"শাখার। তারা অন্যসব বিষয়ে পাস করলেও গনিত বিষয়ে পাস করতে হিম-শিম খাচ্ছে। কেন তাদের কাধে অতিরিক্ত বিষয় তুলে দিয়ে আমরা তাদের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যত নষ্ট করে দিচ্ছি। "মানবিক" শাখায় গনিত বিষয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ের কোন প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি এটাও অতিরিক্ত একটি বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:১৪