somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ছোট্ট উপহার

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"প্রতিদান"
.
রাতুল দশম শ্রেনীর ছাত্র। ভেন্দা মারা ছাত্র বলতে আমরা যেরকম বুঝি সে অনেকটা ঐ কোয়ালিটির। লেখাপড়ায় মিডিয়াম, খেলাধুলায়ও মিডিয়াম। এমন এক ছেলে যাকে ক্লাস ক্যাপ্টেন বানানো যায় না আবার লাস্ট বেঞ্চের ছাত্রও বলা যায় না। ক্লাসের ভাল ছাত্র মাসুদের মত সে সামনের বেঞ্চে বসার সাহস রাখে না আমার মোটকা কালামের মত লাস্ট বেঞ্চে বসার মত ছেলেও সে না। সে সবসময় মাঝামাঝি দিকের বেঞ্চে বসে। কারন স্যারেরা হয় সামনের ভাল ছাত্রদের থেকে পড়া নিবেন অথবা পিছনের ছাত্রদের থেকে পড়া নিবেন। মাঝামাঝি দিকের স্টুডেন্টদের নিয়ে স্যারেরা খুব একটা মাথা ঘামান না।
.
কিন্তু আজকে মনে হয় রাতুলের কুফা দিবস। জল্লাদ নামে পরিচিত খেলন স্যার (আসল নামের বিকৃত রুপ, এখন অবশ্য আসল নাম ছাত্রদের অজানা) প্রথমেই রাতুলের কাছে পড়া ধরলেন। বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় থেকে প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নটা ছিল "মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন এগার নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের নাম কি?"
ইতিহাসে রাতুলের বরাবরই একটু এলার্জি আছে। তারউপর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এটাতো দু'চোখের বিষ। তার কেমন যেন মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের কি দরকার ছিল? মুক্তিযুদ্ধের জন্য এখন অমুক বীরশ্রেষ্ঠর নাম পড়তে হচ্ছে, তমুক এলাকা কোন সেক্টরের অন্তর্গত পড়তে হচ্ছে। আরও কত কি??
.
শাদেকুল ইসলাম, এক যুবক স্টেইন গান হাতে দাঁড়ানো একটা সাদা কালো ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার পরিচিত এই চার দেয়ালের মাঝে এই ছবিটাই তার সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী।ও আরেকটা সঙ্গী আছে হুইল চেয়ার। ছবিটার দিকে যে কয়বার তাকান সেই কয়বার ১৯৭১ সালের একটা কালো রাতের কথা মনে পড়ে যায়। আর প্রতিবারই চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ে। ছবিটার সাথে নিজের বর্তমান চেহারার হুবহু মিল রয়ে গেছে শুধু আগের সেই পা দু'টি আর নেই।আজকেও চশমা হাতে নিয়ে চোখের পানি মুছবেন ঠিক সেই সময় দরজায় ছেলের ডাক শুনতে পেলেন।
.
ছেলে ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন করল...
--বাবা মুক্তিযুদ্ধ কেন করেছিলে??
--কেন আবার? দেশ স্বাধীন করার জন্য।
--তোমাদের জন্য এখন আমাকে কত কষ্ট করতে হচ্ছে?? খেলন স্যারের কাছে বেতের বাড়ি খেয়েছি আজকে। ইস! মুক্তিযুদ্ধ না হলে কত ভাল হত।
--তুই ছোট তো তাই বুঝবি না। নিজের জীবন, শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এমনি এমনি উৎসর্গ করেনি লাখ লাখ মানুষ। স্বাধীনতা বেঁচে থাকার চেয়েও বড় একটা জিনিস।
--আচ্ছা এখন লেকচার বাদ। আজকে বলতেই হবে তোমার পা হারানোর ঘটনা।
--শুনবি?কান্না করবি নাতো??
--কান্না করব কেন? আমি বড় হয়েছি না??
--আচ্ছা শোন তাহলে..... ১৯৭১ সালের জুন মাসের কোন একটা দিনের ঘটনা। তখন আমাদের এই হাই স্কুলে পাকিস্থানি মিলিটারিরা ক্যাম্প করেছিল। আমাদের মিশন ছিল এই ক্যাম্প উড়িয়ে দেয়া। এখন যেটা প্রিন্সিপালের কক্ষ ওটা ছিল মিলিটারিদের গোলা বারুদের স্টোর রুম। এর সামনে বিশাল খোলা মাঠ, বামে ছিল ব্যারাক আর ডানে গার্ড রুম। গোলা বারুদের রুম থেকে যাতে কোন এমো বের করতে না পারে সেটা দেখা ছিল আমার দায়িত্ব। নির্দিষ্ট দিন রাতে স্কুলের ছাদ থেকে একযোগে আমার সহযোদ্ধারা আক্রমন শুরু করে। আমি শুধু স্টেইন গান হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছি। যেই এমো নিতে গোলা বারুদের রুমে ঢুকবে তাকেই গুলি করব। এভাবে গুলি করতে করতেই কোন ফাঁকে দুই তিনজন রুমে ঢুকে গেছে।এখন তো বিপদ! যদি গোলা বারুদ নিয়ে বের হয়ে আসতে পারে তাহলে আমাদের অপারেশন সম্পুর্ন ব্যার্থ। কারন অস্ত্রে তাদের সাথে আমরা পারব না। এদিকে আমার এমোও শেষ, উপায় না দেখে গ্রেনেট চার্জ করে রুমটা উড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করলাম। কিন্তু এতে একটা সমস্যা আছে। গ্রেনেট চার্জ করতে হলে আমাকে রুমের অনেক সামনে যেতে হবে এতে আমি খোলা মাঠে শত্রুর গুলির মুখে পড়ব। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি এমন সময় মায়ের মুখটা মনে পড়ল। এই মা, মাটিকে বাঁচাতে হলে কি আর নিজের কথা চিন্তা করা যায়?? এই মাটিতে গড়াগড়ি করে যে আমি বড় হয়েছি। মাটিকে বাঁচানোর জন্য নিজের একটা জীবনের কথা চিন্তা করলে কি চলে? দুই তিনটা গ্রেনেটের পিন খুলে চোখ বন্ধ করে দৌড়াতে শুরু করলাম। দরজার কাছে এসে গেছি, গ্রেনেট ছুড়ে মারব আর এই সময় দুই পায়েই তীক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলাম আর মাটিতে পড়ে গেলাম। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তাক্ত হয়ে গেছে দুই পা। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম আর হাতের গ্রেনেটগুলো ছুড়ে মারলাম দরজা লক্ষ্য করে। এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই। হাসপাতালে চোখ খুলে নিজেকে পঙ্গু হিসাবে আবিষ্কার করলাম। পরে অবশ্য শুনেছি আমার দুই পায়ে মোট আটটা গুলি লেগেছিল। আর গোলা বারুদের রুম উড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম বলে ক্যাম্পটা দখল করতে পেরেছিলাম।
.
রাতুলের চোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। পানি লুকানোর কোন প্রকার চেষ্টাও করছে না রাতুল। এখন যে তার কাঁদার সময়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কত অবজ্ঞা অবহেলা করেছে সে। এই পা হারানো বাবারা ছিল বলেই তাদের মত ছেলেরা নির্ভয়ে খোলা আকাশের নিচে আজ হেঁটে বেড়াচ্ছে। রাতুল কিছুক্ষন পর ধাতস্ত হয়ে বলল....
--বাবা তোমরা আমাদের পা ভাল রাখার জন্য নিজেদের পা বিলিয়ে দিয়েছ। এর প্রতিদান কি কখনও দেওয়া সম্ভব??
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×