somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমি এবং বন্ধুরা/ ক্ষনিকের ডায়েরী-১৬"

০১ লা নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চিত্রঃ- গুগল হতে ডাউনলোডকৃত

(আসসালামু আলাইকুম
হয়তো অনেকে আমার একটা ধারাবাহিক ক্ষনিকের ডায়েরীর সাথে পরিচিত। ভার্সিটিতে থাকতে এটা প্রতি সপ্তাহে এক পর্ব করে লিখতাম। চাকরী জীবনে এসে আর নিয়মিত করা হয়নি। তারপরও চেষ্টা করছি আবার শুরু করার। এটা ১৬তম পর্ব। লেখাটার প্রেক্ষাপট আজ থেকে দুই বছর আগের ঘটনা)

গত শনিবার ঢাকা গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করা। একসাথে সাড়ে চার বছর একই ছাদের নিচে কাটানো বন্ধুগুলোকে প্রায় ৮-৯ মাস পর দেখতে পাব এটাই ছিল মুল ইচ্ছা। যদিও আমার বন্ধু রাতে ফোন দিয়ে বলেছিল যেন খুব সকালে রওনা দেই। কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেলা ১০ টা বেজে যায়। যাত্রাপথে আমার বই পড়ার অভ্যাস আছে। গাড়িতে চড়ে সামান্য দুরুত্বের কোথায় গেলেই সাথে একটা বই নিয়ে নেই। আমার হাতে ছিল Abu Lubabah Shah Mansoor এর লেখা Spain to America বইটি। বইটা খুব কষ্টের ইতিহাস নিয়ে রচিত। অবশ্য আপনারা বইয়ের নাম দেখেই বুঝতে পারছেন। তবে অনেক হৃদয়বিদারক এবং অজানা তথ্য জানতে পেরেছি বইটা পড়ে। কলোম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছে, আমরা শুধু আমেরিকার জন্ম সম্পর্কে এই তথ্যটুকুই জানি কিন্তু এর পিছনের রক্তের দাগ কিংবা ইসাবেলাকে কলোম্বাস কর্তৃক দাস উপহার দেওয়ার মত নোংড়া আরও অনেক ঘটনাই হয়তো আমরা জানিনা। স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর গ্রানাডা আবি আবদিল্লাহর মত স্বার্থান্বেষী মুসলিম শাসকের জন্য কিভাবে হাতছাড়া হয়েছিল সেটা পড়ে চোখটা ছাপসা হয়ে গিয়েছিল।

যাইহোক ঘটনায় ফিরে আসি। মাথা নিচু করে বাসে বসে বই পড়ছি। জানালার পাশের সিটে বসেছি, জানালা হালকা খোলা। কখন বৃষ্টি শুরু হয়েছি খেয়াল করিনি। পাশের ভাইয়ের ধাক্কায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম এবং জানালা টেনে দিলাম। এরকম আত্মভোলা হয়ে বই পড়ার অভ্যাস হয়তো আমার মত অনেকেরই আছে। বই পড়তে পড়তে কখন আসাদ গেটে চলে এসেছি খেয়ালই করিনি। আমাকে ফার্মগেটে যেতে হবে। তাই বাস থেকে নেমে ট্যাম্পুতে চড়লাম। সার্ট, প্যান্ট পড়া একটা ছেলে হাতে কিছু নেই শুধু একটা বই তাও আবার পাঠ্য বই না। দৃশ্যটা দেখে অনেকেই আড় চোখে তাকাচ্ছে বুঝতে পারলাম। এত কিছু খেয়াল না করে ফার্মগেটে পৌঁছে গেলাম। ততক্ষনেই সবাই পরীক্ষা দিতে চলে গেছে। বলা হয়নি, NSI এর সরকারি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই মুলত আমার বন্ধুদের এই ঢাকা শহরে আগমন। ম্যাসে গিয়ে দেখি সবাই ইতোমধ্যে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে পড়েছে। এক একজনের সীট পড়েছে এক এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

আমি ম্যাসে দুপুরের খাওয়া সেরে হালকা গড়িয়ে নিলাম। কারন বাকী সবার পরীক্ষা দিয়ে আসতে সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টা বেজে যাবে। শুয়ে থাকতে থাকতেই দেখি এক বন্ধু দরজা দিয়ে এসেই মামুন বলে একটা ডাক দিল। নিজেকে আর বিছানায় বসিয়ে রাখতে পারলাম না। সাড়ে চার বছর একই ছাদের নিচে থাকা এই বন্ধুটিকে দেখে। উঠেই জড়িয়ে ধরলাম পরম এক ভালোবাসায়। ও আসার পরপরই একেএকে আরও ৪-৫ জন বন্ধু প্রবেশ করল রুমে। সবাইকে বুকিয়ে জড়িয়ে স্বাগতম জানালাম। বের হতে হবে আবার আসরের নামাযের সময়ও হয়ে গেল। যে বন্ধুটাকে ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় অনেকবার বলেও নামাযে নিতে পারিনি সেই বন্ধুটাকে অযু করে এসে ছোট্ট একটা জায়গায় নামায পড়তে দেখে হৃদয়টা ভরে গেল। তার নামায পড়া শেষ হলে একে একে আমরা আরও দুই তিনজন নামায পড়ে ফেললাম। জায়গা অনেক ছোট হওয়ায় জামা'আত করার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়নি।

এবার বিদায়ের পালা। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বন্ধুরা আগেই বিদায় নিল। আমি আর আমার আরও দুইটা বন্ধু মাগরিবের নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে রওনা দিলাম। একেবারে রাস্তার পাশেরই মসজিদ। মসজিদে লোক সমাগম দেখে মনটা আরও একবার ভরে উঠল। নামায শেষে পাশের টং থেকে চা খেলাম। মনে পড়ে গেল ভার্সিটির দিনগুলোর কথা। কালাম মামা, আবুল মামা, সাইফুলের দোকানে পাঁচ টাকার চিনি আর গরম পানির যে গরম সরবতে (যদিও আমরা চা বলি, তবে এতে অসাধারন এক ভালবাসার স্পর্শ থাকে) অভ্যস্ত হয়ে এসেছি সেই স্মৃতি আবার মনে পড়ে গেল।
ভালবাসি মধুর এই স্মৃতিগুলোকে। যা আজও আমাকে ফিরিয়ে নিতে চায় সেই অতীতে। ভালবাসি এত প্রতিকুলতার মাঝে থেকেও দ্বীনচ্যুত না হওয়া বন্ধুগুলোকে। যারা জান্নাতে গেলে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে হয়তো বলবে, "হে আল্লাহ মামুন নামের আমার একটা বন্ধু ছিল তাকেও এখানে আমি দেখতে চাই।"

#ক্ষনিকের_ডায়েরী
#পর্ব_১৬
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×