[link|https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/à¦à¦²à§à¦à¦¿à¦¤-হতà§à¦¯à¦¾à¦°-বিà¦à¦¾à¦°à§-ধà§à¦°à¦à¦¤à¦¿|
আদৌ কি বিচার পাবে??
তিন বছরে জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে ঢাকায় খুন হন ৮ জন। একটি হত্যার রায় হয়েছে। বাকিগুলোর বিচার শেষ হয়নি।
আলোচিত হত্যার বিচারে ধীরগতি২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে একের পর এক ব্লগার, প্রকাশক ও লেখকদের হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিল। নড়েচড়ে বসেছিল সরকারও। ওই তিন বছরে রাজধানীতে সাতটি জঙ্গি হামলায় আটজন খুন হন। আলোচিত এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মাত্র একটির রায় হয়েছে। বাকি ছয়টি মামলার বিচারকাজ চলছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
আর এই সাতটি খুনের মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুটি হত্যাকাণ্ড বাদে (ব্লগার রাজীব ও ওয়াশিকুর) অপর পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নাম এসেছে। তবে জিয়াউল এখনো ধরা পড়েননি। বাকি দুটি হত্যায়ও জঙ্গিগোষ্ঠী যুক্ত বলে জানায় পুলিশ।
বিচারে ধীরগতি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগরের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে বিচারপ্রক্রিয়ায় কিছুটা ধীরগতি এসেছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে নিজ বাসার কাছে জঙ্গিদের চাপাতির কোপে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। চার বছর পর এই মামলার রায়ে দুই জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড আর ছয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। উচ্চ আদালতেও বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রয়েছে। রাজীব হায়দার খুন হওয়ার দুই বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জঙ্গিদের হাতে খুন হন লেখক অভিজিৎ রায়। দীর্ঘ তদন্তের পর গত বছরের মার্চে ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জঙ্গিনেতা মেজর জিয়ার নির্দেশে অভিজিৎকে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত মামলায় ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ৩৪ দিনের মাথায় রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পাঁচ জঙ্গির নাম উঠে আসে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া একেবারে শেষ পর্যায়ে। ২৭ অক্টোবর রায়ের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। ওয়াশিকুরকে হত্যার চার মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় খুন হন আরেক ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়।
নীলাদ্রিকে হত্যার আড়াই মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে জঙ্গিদের হাতে খুন হন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন। একই দিন একই জঙ্গি সংগঠনের অপর সদস্যরা শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলকে কুপিয়ে জখম করেন। হত্যাকাণ্ডের চার বছরের মাথায় গত বছর আট জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেখানে বলা হয়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা ওই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এখন পর্যন্ত মামলার ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ সাক্ষ্য নেওয়া গত ১৬ মার্চ।
ফয়সল আরেফিন দীপনের স্ত্রী চিকিৎসক রাজিয়া রহমান বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে আমার স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। আমি আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখনো আমার স্বামীর খুনের বিচার শেষ হলো না!’
ব্লগার অভিজিৎ ও দীপন হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে। এই ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান বলেন, করোনার আগে নিয়মিতভাবে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম চলছিল। তবে করোনার কারণে সেই কার্যক্রম একেবারে থমকে যায়।
২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার রাস্তায় জঙ্গিদের হাতে খুন হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্লগার নাজিম উদ্দিন। খুনের চার বছরের মাথায় গত ২০ আগস্ট ৯ জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ওই মামলাটিরও বিচার শেষ হয়নি।
নাজিম উদ্দিন খুন হওয়ার মাত্র ১৯ দিন পর ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগান এলাকার একটি বাসায় জঙ্গিদের হাতে খুন হন জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী। বেসরকারি সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ সমকামীদের অধিকারবিষয়ক সাময়িকী রূপবান সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর মাহবুব একজন নাট্যকর্মী। এই জোড়া খুনের মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আট জঙ্গির বিরুদ্ধে গত বছর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলা অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘আলোচিত ছয়টি হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ না হওয়াটা নিঃসন্দেহে খারাপ দৃষ্টান্ত। এত দিন পরও বিচার শেষ না হওয়াটা প্রমাণ করে, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারে রাষ্ট্রের মনোযোগ কম।’
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪৬