বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩ : বাংলাদেশের উন্নয়ন একটি অমীমাংসিত বিস্ময়: বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বব্যাংক একটি অমীমাংসিত বিস্ময় বলে মন্তব্য করেছে। বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থাটি বলেছে, কিছু দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে ভালো করেছে, কিছু দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভালো করেছে। যে গুটি কয়েক দেশ দুটি সূচকেই ভালো করেছে, তাদের একটি বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ ‘বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩’-এ। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে নৈরাশ্যবাদ বোধগম্য ছিল, কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অর্ধশতাব্দী ধরে পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে নগরায়ণের ফলে যে উন্নতি হয়েছে, তা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও ঘটছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার মতো বড় শহরকে কেন্দ্র করে শিল্পায়ন হচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩০ শতাংশ, ১৯৯০ সালে ছিল ২০ শতাংশ। এখন নগরায়ণের হার প্রায় ৩০ শতাংশ, ১৯৮০ সালের চেয়ে তা দ্বিগুণ। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান তিন গুণ বেড়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের কারণে, যেখানে নারী শ্রমিকের অবদান বেশি। এই কাঠামোগত রূপান্তরের সঙ্গে কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতার উন্নতি যুক্ত হয়ে জীবনমানের শ্রীবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
৪০১ পৃষ্ঠার বেশি বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদনের এবারের শিরোনাম ‘জবস’। এর অর্থ ‘কাজ’। মলাটে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফরাসি, জাপানি, চীনা—এ রকম নানা ভাষায় জব বা কাজের শব্দার্থ দেওয়া হয়েছে। পৃথক একটি পৃষ্ঠায় মলাটের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর লেখা প্রথম বইয়ে বলা হয়েছিল, যদি বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করা যায়, তাহলে যুক্তিসংগতভাবে আস্থা রাখা যায় যে এর চেয়েও কম জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরীক্ষা ক্ষেত্র হিসেবে এ কথা বলা হয়। অধিক জনঘনত্ব, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ, অনুন্নত অবকাঠামো, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এই নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে। কৃষকেরা জমিতে এক ফসল থেকে দুই ফসলে গেছেন ও উচ্চফলনশীল জাত বেছে নিয়েছেন। ভাগ চাষের পরিবর্তে জমি ইজারার মাধ্যমে জমি চাষে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। এতে লাভবান হয়েছেন ভূমিহীন ও প্রন্তিক চাষি। অন্যদিকে দেশের সুপরিচিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে ঋণ পাওয়ার বাধাগুলো দূর হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে এখন কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রমিক আছে। তা সত্ত্বেও কৃষি মজুরি এখন ছয় কেজি চালের আর্থিক মূল্যের চেয়ে বেশি। ১৯৮০ সালে তা ছিল দুই কেজি চালের আর্থিক মূল্যের চেয়ে কম। মঙ্গা সময়ের মৌসুমি ক্ষুধাও এখন আর নেই।
কৃষি খাতের বাড়তি শ্রমশক্তি চলে যাচ্ছে কাছের শহরে। বাংলাদেশের নগরায়ণে পোশাকশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই শিল্পে এখন ৩০ লাখ নারী কাজ করছেন। কৃষিকাজের লোক গিয়ে নির্মাণশিল্পেও কাজ নিচ্ছেন। অনেক অদক্ষ শ্রমিক দেশের বাইরে, বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশে কাজ করছেন। প্রবাসী আয় প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
সব শেষে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দারিদ্র্য, যুব ও নারীবান্ধব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এগুলো জনসংখ্যা কমাতে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারি-বেসরকরি বিনিয়োগে উৎসাহ জুগিয়েছে।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




