
অভিজাত শপিংমল বসুন্ধরায় "দেশীদশ" এর আজকের ছবি
সারাবছর ইন্ডিয়ান সিরিয়াল এবং সিনেমার প্রভাবে এদেশের উঠতি বয়সী তরুনী থেকে শুরু করে খালাম্মা পর্যায়ের নারীদের ইন্ডিয়ান পোশাক প্রীতি পুরানো একটা বিষয়। বাদ যায়না তরুণরাও। কিন্তু এই পোশাক প্রীতি ঈদ এলেই হাজার গুন বেড়ে যায়। প্রতি ঈদের মত এবারো ভারতীয় পোশাকে মার্কেট গুলো ছেয়ে গেছে। মাসাককলি, কারিনা কাপুর, ওয়াকা ওয়াকা, ক্যাটারিনা আর প্রিয়াংকাদের দাপটে দেশীয় প্রোডাক্টের অবস্থা বেহাল। অথচ মানে এবং ডিজাইনে দেশীয় প্রোডাক্টগুলো ভারতীয়দের তুলনায় বহুগুণ ভাল এবং রুচিসম্মত।

উপচেপরা ভিড়
তবে এবার ব্যক্তিগত ভাবে কিছু অভিজাত এবং মধ্যম সারির মার্কেটে গিয়ে কিছুটা আশাবাদী হয়েছি এই কারনে যে জানতে পারলাম এবার বিদেশি পোশাকের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে দেশে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক। আর ক্রেতাদের রুচির সঙ্গে মানিয়ে দেশীয় বুটিকস হাউজগুলোও ঈদকে সামনে রেখে বুনন ও নকশায় এনেছে নতুনত্ব ও আধুনিকতা। আর দেশীয় এই পোশাক জাগরণে যাদের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য সেটি হল দেশীয় দশটি ফ্যাশন হাউসের সম্মিলিত ব্র্যান্ড ‘দেশীদশ।’ মূলত বিদেশী পোশাকের আগ্রাসন থেকে দেশীয় পোশাক কে বাচাতেই ‘দেশীদশ’ এর যাত্রা শুরু। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও সময়ের পরিক্রমায় ‘দেশীদশ’ এখন সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

অভিজাত শপিংমল বসুন্ধরায় "দেশীদশ" এর আজকের ছবি
কিন্তু থেমে নেই ভারতীয় পোশাক আগ্রাসন। দুই তৃতীয়াংশ বাজার এখনো ভারতীয় পোশাকের হাতে। কিছু নিম্নরুচির মানুষ দেশীয় পোশাককে বাদ দিয়ে দেদারচ্চে কিনছে ভারতীয় পোশাক। শুধুমাত্র রঙ্গচংগা ডিজাইনে আকর্ষিত হয়ে তারা এসব পোশাক কিনছে। অথচ এসব পোশাকের মান দেশীয় পোশাকের তুলনায় অনেক নিচে। তারপরেও কেন একশ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত দাবিদার তরুণ তরুণী ভারতীয় পোশাক কিনছে??
আসুন নিজের ঘর থেকেই দেশপ্রেম শুরু করি। যেহেতু আমাদের পোশাক এখন বিশ্বমানের এবং সবদিক দিয়ে বেটার সেহেতু আমরা আমাদের দেশীয় পোশাক কিনে আমাদের দেশপ্রেমের কিছুটা হলেও বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এছাড়া অন্যান্য যেসব শিল্পে আমরা পিছিয়ে আছি সেসব দিকে নজর দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় যার যার অবস্থান থেকে।

তরুণরাও ভিড় জমিয়েছে এসব দেশীয় পোশাক প্রতিষ্ঠানে
আপনাদের সুবিধার্থে দেশীয় কিছু পোশাক এবং জুতার ব্রান্ডের নাম ও কিছু পণ্যের দ্রদাম নিচে দিলামঃ
দেশীয় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় আবহাওয়া চিন্তা করে শিশু, তরুণ, তরুণী সবার পোশাকেই কাপড়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে সুতি, অ্যান্ডি ও পাতলা খাদি কাপড় দিকে। এরপরেই রয়েছে সিল্ক, ভয়েল, কটন, হাফ সিল্ক, মসলিন, ডুপিয়ান। টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জের তাঁত, কুমিল্লার খাদি, মানিকগঞ্জের অ্যান্ডি কটন ও রাজশাহী সিল্কের ব্যবহারও করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। এর সঙ্গে আছে সফট সিল্ক, কাতান কাপড়। ওড়নায়ও ব্যবহার করা হয়েছে নিজস্ব তাঁতে বোনা কাপড়। কাপড়ের মধ্যেমিল থাকলেও নকশা ও কাজে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছে দেশিয় বুটিক হাউসগুলো।
"দেশীদশ"
সাদাকালো: পোশাকে সাদা আর কালোর মিশেলে হাল ফ্যাশনের পোশাক তৈরিতে নতুনত্ব নিয়ে এসেছে সাদাকালো। প্রতিষ্ঠানটি এবারের ঈদেও ফ্যাশন সচেতনদের জন্য নিয়ে এসেছে বাহারি পোশাক। শিশু, তরুণ, তরুণী থেকে সব বয়সের জন্যই তাদের আয়োজন। এখানে ছোটদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ৩৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়, ফতুয়াও পাবেন প্রায় একই দামে, কুর্তার দাম পড়বে ৫২০ থেকে ২৬শ ২০ টাকা। পাঞ্জাবি দাম রাখা হচ্ছে ৫৮০ টাকা থেকে ৯ হাজার টাকা। মেয়েদের থ্রি পিসের দাম ১২শ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর সাদাকালোর শাড়ির দাম এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
নগরদোলা: বাহারি পোশাকের সঙ্গে নগরদোলায় পাবেন গৃহস্থলিও। এখানে ছেলেদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ৬৯০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজারে, শাড়ী দেড় হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা, ফতুয়া মিলবে ৫৩০ থেকে ৭২০ টাকাতে। মেয়েদের থ্রি পিসের দাম এক হ্জাার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। আর কাপড় পড়বে ৭৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাংলার মেলা: বাংলার মেলায় আপনি পাঞ্জাবি পাবেন ৫৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায়, শাড়ি কিনতে লাগবে ৫০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা, আর থ্রি পিসের দাম রাখা হয়েছে ১৫শ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখানে ছেলেদের শার্টস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
ক্রে ক্রাফট: দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লাগবে আপনি যদি এখান থেকে থ্রি পিস কিনতে চান। আর পাঞ্জাবির দাম ৭০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। বাহারি রং ও চোখ ধাঁধানো কাজের শাড়ি পাওয়া যাবে ৭০০ টাকা থেকে ১১ হাজার টাকা। সুতি শার্টের দাম ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা।

দেশীয় একটি জুতার দোকান
নিপুন: ফ্যাশন সচেতনদের জন্য নিপুনের আয়োজন বরাবরের চেয়ে এবারর ঈদে আর নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান এর ব্যবস্থাপক রফিকুল মিয়া। নিপুনের থ্রি পিসের দাম ১২শ থেকে ৪ হাজার, পাঞ্জাবি ১৩শ থেকে ২৫শ টাকা। আর শাড়ির দাম পড়বে ৯০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এছাড়া নিপুনে শার্ট ও ছোটদের পোশাকও মিলবে।
বিবিয়ানা: বিবিয়ানা মূলত নারীদের ফ্যাশন হাউস। এখানে নারীদের প্রায় সব ধরনের পোশাক পাওয়া যাবে। এখানে মেয়েদের স্যান্ডেল থেকে শাড়ি পর্যন্ত পাওয়া যাবে। শাড়ির দাম ৭০০ থেকে ৬ হাজার টাকা, পাঞ্জবি ৫০০ থেকে ১৭শ। সালোয়ার কামিজের দাম পড়বে এক হাজার থেকে ২৬শ টাকা। মেয়েদের ফতুয়ার দাম ৪০০ টাকা থেকে ১২শ টাকা।
অঞ্জনস: ছোটদের পাঞ্জবির দাম হবে ৬০০ টাকা থেকে ১৭শ টাকা। ৯ হাজার টাকায় বিয়ের সেরওয়ানি পাবেন। আর সাধারণ পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ৯৫০ থেকে ৫ হাজার ৬৯০ টাকাতে। কটনের থ্রি পিসের দাম দেড় হাজার থেকে ৮ হাজার ৯০০ টাকাতে। শাড়ীর দাম পড়বে ৭৫০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা।
দেশাল: দেশালে বাচ্চাদের ফতুয়া পাওয়া যাবে দেড়শ টাকা থেকে ২৫০ টাকাতে। শর্ট পাঞ্জাবির দাম ৪৩০ থেকে ৫৭০ টাকা, মেয়েদের শুধু ওড়না ২০০ টাকা থেকে ৩৩০ টাকা। টপস পাওয়া যাবে ৪২০ থেকে ৮৬০ টাকাতে। থ্রি পিসের দাম ৮০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা।
রঙ: বিভিন্ন কাজ কার রঙের পাঞ্জাবির দাম ৮৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, মেয়েদের থ্রি পিসের দাম ১২শ থেকে আড়াই হাজার টাকা। শার্ট কিনতে লাগবে ৫৯০ থেকে ২২শ টাকা। আর যারা শাড়ি পাবেন ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
প্রবর্তনা: প্রবর্তনার পাঞ্জাবির দাম ৮০০ টাকা থেকে ২২শ টাকা। আর ছোটদের পাঞ্জাবি পাবেন ৩৪০ টাকা থেকে এক হাজার টাকাতে। মেয়েদের সালোয়ারের দাম ১৪শ টাকা থেকে ২২শ টাকা। তবে গজ কাপড় কিনতে লাগবে ১৯০ টাকা গজ থেকে ২৭৫ টাকা গজ। শাড়ি কিনতে খরচ পরবে ৪৪০ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা।
এছাড়া দেশীয় অন্যান্য ব্রান্ডের মধ্য রয়েছে আড়ং, শৈল্পিক, নবরুপা, ড্রেসিডেল আর জুতার জন্য বিখ্যাত এপেক্সতো রয়েছেই।
সুতারাং কোনদিকেই আমরা পিছিয়ে নেই। দেশকে ভালবাসুন, দেশের প্রোডাক্ট কিনুন। ফেলানীদের হত্যার লক্ষ্যে চাঁদা তোলা হচ্ছে, আমরা যারা চাঁদা দিবো...!!! লেখাটি পড়ে আরো ভাবুন কেন ইন্ডিয়ান পোশাক বর্জন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবুজে শ্যামলে আঁকা থোকা থোকা জুঁই...
নাও-নদী-ঢেউ-জল দেব না কিছুই...
উজাড় দু'হাত জুড়ে শোধ নেব ঋণ...
দেব না সীমানা ছেড়ে ইঞ্চি জমিন..

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




