ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় লাশের মিছিল লম্বা হচ্ছে।শিক্ষক মিজানুর এর পর এবার প্রান দিলেন এক মা।ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর জেলায়।এবার বখাটেরা মোটর সাইকেল চাপা দিয়ে ফরিদপুর চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের
দশম শ্রেনীর ছাত্রী হীরা র মা কে হত্যা করেছে। ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সরকারের কি করা উচিত । একটার পর একটা লাশ হচ্ছে ইভটিজিং এর স্বীকার কোন স্কূল ছাত্রি অথবা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কারী কেউ। আমার মনে হয় ৭১ এর মত এখন সময় হয়েছে ইভটিজিং কারীদের বিরুদ্ধে একতা বদ্ধ হয়ে রুখে দাড়ানোর । যেখানেই ইভটিজিং হবে সেখানেই এদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে স্থানীয় লোকদের ।
মস্যাটা যেমন জটিল, সমাধানও তার চেয়ে কম জটিল নয়। তবে এর সুষ্ঠ সমাধানের কাজটা কোথা থেকে ও কিভাবে শুরু করতে হবে সেই দিকনির্দেশনাটা খুবই জরুরী। কেননা তথাকথিত সভ্যদেশ বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি সেই পশ্চিমা দেশগুলোও এ সমস্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নয় । যদিও সেখানকার ঘটনার ধরন এবং আমাদের দেশের ঘটনার ধরন ও প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। তথাপি দুটোর ক্ষেত্রেই মনস্তাত্বিক ভাবাদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ বলে আমি মনে করি। সেইসাথে যৌন আবেদনকে উস্কে দেয়ার মত পর্ণ-পত্রিকা, ব্লুফিল্ম ও ঘরে ঘরে প্রদর্শিত ছায়াছবির খপ্পরে পরে শুধু যুব সমাজই নয়, কচি বয়েসের ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও যে কম বেশী প্রভাবিত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যখন রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করে তখন বুঝতে হবে যে, শিক্ষার আলো তার হৃদয়কে ছুঁতে পারেনি। ফলে তার ব্যক্তিত্ব ও নৈতিকতা এমন পর্যায়ে উন্নিত হয়নি যা তাকে এরূপ ছ্যাবলামো কাজ করা থেকে বিরত রাখবে। এ ধরনের অর্ধ শিক্ষিত ইভ টিজিং, সাইবার মবিং কারিদের জন্য এমন ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে যা তাদের বিবেককে নাড়া দেবে। অশিক্ষিত হলে প্রথমত কাউন্সিলিং এর কথা ভাবা যেতে পারে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধও বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রয়োজনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় বখাটেরা শুধু একটি মেয়েকেই নয়, গোটা পরিবাটিকেও জিম্মী করে রাখে। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পাড়া বা মহল্লার বিভিন্ন পরিবার থেকে প্রতিনিধি নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কোন পরিবার বখাটেদের দ্বারা আক্রান্ত হলে এই কমিটি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করবে ও প্রতিকারের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারবে। সমাজে এমন কিছু ব্যক্তি বাস কের যাদেরকে ভাল কথা বলে সচেতন করতে চাইলে উল্টো তেড়ে আসে। এরা শক্তের ভক্ত, নরমের জম। এইসব চৈতন্যহীন ঘাড়ত্যাড়াদের কয়েকজনকে ধরে কঠিন সাজা দিলে বাকীরাও সাইজ হয়ে যাবে।
কাজেই এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল স্তরের জনগণকে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ইভ-টিজিং যে নৈতিকতা বিবর্জিত ও ব্যক্তিত্বহীন একটি কু-কর্ম, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই ছেলেমেয়েদের মনে সেই বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে মেয়েরা যেন মানসিকভাবে সহজে ভেঙে না পড়ে সেই ধরনের মনস্তাত্বিক সাপোর্ট দিতে হবে। তাদের জীবন যে অনেক মূল্যবান সেই বোধ জাগাতে পারলে তারা নিশ্চয় সামান্য একজন বখাটের কারনে আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে বরং তার প্রতিবাদ করতে শিখবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও কু-সংস্কারমুক্ত স্বচ্ছ ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের উপরে যেন বখাটেরা প্রভাব খাটতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে না পারলে সমস্যার সমাধান করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সরকারকে সময় উপযোগী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




