somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেঃ তুমি এবং তোমার নিজস্বতা

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের ছেলেদের খুব কমন একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা হলো যখন কোন মেয়ে কাউকে ডেকে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করে তখন উত্তর করার সময় আমরা যারপরনাই ভদ্র হয়ে যাই। এর ব্যতিক্রম যে একেবারেই নেই তাও নয়। এর ব্যতিক্রমও আছে। কিন্তু আমি বলছি মোটের উপর একটা পরিক্রমা। এই যে ডুয়াল পার্সোনালিটি তারা বহন করছে তা যে শুধু ডুয়াল থাকছে তাই নয়। ক্ষেত্র বিশেষে তারা মাল্টিপল পার্সোনালিটির বৈশিষ্ট্যও বহন করে। আমার পরিচিত একজন আছে যে ফেইসবুকে কয়েকজন মেয়ের সাথে চ্যাটিং করে কিন্তু একেকজনের সাথে একেক রকম স্টাইলে। আমার দ্বারা অবশ্য এসব সম্ভব না। তো বলছিলাম সে পরিচিতের কথা। তারপর ফেসবুকের পরিচয়, এরপর দেখা করার প্রসঙ্গটা আসলো। তো একদিন খুব সেজে গুঁজে তাদের তিন জনের সাথে দেখা করার জন্য যায়(তাদের মধ্যে থেকে তিন জনের); অবশ্য তাদের সাথে দেখা করবার বরাদ্দকৃত সময় ছিলো বিভিন্ন। প্রথম মেয়েটার সাথে দেখা করার জন্য আগে থেকেই বলা রেস্টুরেন্টের বসে অপেক্ষা করছিলো। কিছুক্ষণ পর তিনজনই একই সাথে (যে তিন জনের সাথে দেখা করার কথা ছিলো তারা) ছেলেটিকে একপ্রকার আক্রমনই করে। যেহেতু ছেলেটি একেক জনের সাথে একেক ভাবে অ্যাপ্রোচ করেছে তার ফলশ্রুতি তে তারাও তাদের স্বমূর্তিতে আবর্তিত হয়। পরে অনেক বাক্যবাণের পর মেয়েগুলো অর্ন্তহিত হয়। কিন্তু ছেলেটার জন্য রেখে যায় একগুচ্ছ বিব্রতকর মুহূর্ত। যেটার জন্য প্রথমত দায়ী হচ্ছে ছেলেটা। তাকে অবশ্যই মেয়েগুলো ভিন্নভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে বলেনি। ছেলেটা নিজের দোষেই এমন আপত্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এটা যে শুধু ফেসবুকের জন্য হচ্ছে তাও কিন্তু না। বাস্তব জীবনেও এর অনেক প্রভাব বিদ্যমান। আরেকটি ছেলের কথা বলি। ছেলেটি কোন একদিন মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। সহসা রিকসা যোগে জনৈকা মেয়ের আর্বিভাব ঘটে। কোন একজায়গার ঠিকানা মেয়েটি জানতে চায়। কিন্তু তার উত্তর দিতে গিয়ে ছেলেটা এতোটাই ভদ্রতার অভিনয় শুরু করে যে শেষতক ছেলেটার কতিপয় বন্ধু প্রকাশ্যে বলেই ফেলে অনেকটা এমন ভাবে,"কি রে হালার্পো এক্কেরে বিলাই হয়া গেলি কিল্লাই? মাইয়া দেইহাই এক্কেরে......" এতে দুটো ঘটনা ঘটলো; এক, মেয়েটা বিব্রত হলো আর দুই, একজন সম্পূর্ণ আপরিচিতার কাছে নিজের ইজ্জতের ফালুদা। কি দরকার ছিলো এমন আলগা ভদ্র সাজার? আজকাল আকাশ সংস্কৃতির যুগে প্রত্যেকেই চায় যে সবাই মনে করুক আমি অন্যের চেয়ে ভিন্ন। কারণ প্রত্যেকেই চাই সবকিছুতে একটু ভ্যারিয়েশন। এই ভ্যারিয়েশনের দোহাই দিয়ে অনেকেই নিজের যে বৈশিষ্ট্যগুলো আছে সেগুলো নগদে বিলীন করে দিয়ে উদ্ভট কিছু বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে যা তার নিজের তো দূরে থাক তার বংশেরও কারো কস্মিনকালেও ছিলো না।
এতে করে মূল যে সমস্যটার সৃষ্টি হচ্ছে সেটা হলো ক্রমে ক্রমে ছেলেটা আত্মবিসৃত হয়ে যাচ্ছে। আবার এর একটা প্রভাব পড়ছে তার পরিবারেও। যে ছেলেটা সব সময় হাসি-খুশি ছিলো হঠাৎ অজানা কোন কারণে চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। কথা কম বলছে, হুটহাট রেগে যাচ্ছে। বয়ঃসন্ধিতে যে ছেলেদের ভেতর একটা পরিবর্তন আসে সেটা থেকে এই পরিবর্তনটা পুরোটাই আলাদা। এটার শুরু অনেকটা হয় উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির আগে আর উচ্চমাধ্যমিকের সময় আর যার রেশটা থেকে যায় অনেকদিন। অনেকের আবার সেটা আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই হঠাৎ বদলে যাবার প্রবণতাটা আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রিয়ডে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অনেকটাই স্বাধীন জীবন যাপন করে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিকটা একটু সমস্যা হয়, কিন্তু এসময় মোটামুটি যারা স্বচ্ছল তাদের খুব একটা হাড়ে লাগে না।
এইযে হঠাৎ বদলে যাওয়া ছেলেটা, সে প্রথমত খুব একটা সচেতন থাকে না যে তার আসলে কি পরিবর্তন করতে হবে। চুলের স্টাইল, পোষাকের স্টাইল না লাইফ স্টাইল? প্রথমোক্ত দুই স্টাইলের পরিবর্তনে খুব একটা সমস্যা হবার কথা না আবার হয়ও না। কারণ সব সময় মদন ছাঁট দেয়া ছেলেটা তার চুলকে একটু সুন্দর ভাবে কাটতেই পারে আবার সব সময় গেঞ্জি পরা ছেলেটা ক্যাজুয়াল শার্টে অভ্যস্ত হতেই পারে। তাতে তার খুব বড়ো ধরণের পরিবর্তন হয় না, যেটা নিয়ে বিশেষত কোন চিন্তার দরকার আছে। সমস্যাটা তখনই হয় যখন কেউ ভাবতে থাকে যে আমি আমার লাইফ স্টাইলটাই পরিবর্তন করব।তখনই ফ্যাঁকড়াটা বাঁধে। আমার এক বন্ধু আছে। তার নিজের লাইফ স্টাইলের যে পরিবর্তন সে তার নিজের স্বীকারোক্তি। সে নিজেই বলেছে অনেকটা এরকমভাবে," ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর ইচ্ছা ছিলো লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করব। আগে সিগারেট খাইতাম না, এখন সিগারেট খাই। আগে ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম আর সকাল সকাল ঘুমাইতাম এখন রাত করে ঘুমাই আর বেলা করে উঠি....." ছেলেটি আরো কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছিলো যে গুলো একটু আপত্তিকর হওয়ায় এখানে লেখা গেল না। তাহলে কি হলো ছেলেটা পরিবর্তনের হাওয়া গায়ে লাগাতে গিয়ে নিজের প্রায় বারোটা বাজায়ে ফেলেছে। উল্লেখ্য যে ছেলেটার রেজাল্টের অবস্থাও খুব একটা সুবিধাজনক না, যে কিনা এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি তে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। আর আকাশ সংস্কৃতির যুগে যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর সহজ লভ্যতায় ছেলেরা নিজেদের নিজস্বতা কে ক্রমেই হারিয়ে ফেলার প্রতিযোগিতায় এক রকম লিপ্তই বলা যায়।
অনেকসময় এটা বলা হয় যে স্মার্টনেস ভালো কিন্তু অভার স্মার্টনেস ক্ষতিকর। এই স্মার্টনেসের দোহাই দিয়ে অনেকেই তাদের নিজস্ব গন্ডিকে অতিক্রম করে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। অনেকটা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ছে। আর ফলশ্রুতিতে আলোচনার প্রথম ছেলেটির মত মাল্টিপল পার্সোনালিটির জন্য ইজ্জতের ফালুদা বানাচ্ছে। আপনি যা সেটা যদি সঠিকভাবে অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারেন সেটাই স্মার্টনেস। আর অধিকাংশ মেয়েরাই চায় ছেলেটা তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করুক। এটা সঠিক যে আপনি যদি কোন মেয়ের সাথে ওভার অ্যাক্টিং করেন, সেটা কিন্তু সে ধরে ফেলতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটা তারা প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত। কারণ আপনার তো সবার চোখে খুব ডিফারেন্ট, স্মার্ট হবার দরকারও নেই এমনকি আপনি পারবেনও না। আপনাকে ঐ ক্ষমতাটাই দেয়া হয় নি। আপনি যা দিন শেষে আপনি আপনাকে সেরকমই পাবেন। অন্যদের কাছে নিজের পরিবর্তন দেখাচ্ছেন কিন্তু নিজের কাছে ঐ সেই, যেই লাউ সেই কদু হিসেবেই আছেন। তাই কি দরকার এতো ডিফারেন্ট পার্সোনাল হিসেবে মেয়েদের সামনে নিজেকে হাজির করার? কারণ যদি কোন মেয়ের সামনে নিজেকে খুব হাম্বি তাম্বি রকম ভদ্র, ডিফারেন্ট মাইন্ডেড এসব বলে পরিচয় দেই; আবার ভাগ্যগুণে দেখা গেল সেই মেয়েটির সাথেই আপনার বিয়ে হলো তখন তিনি যখন দেখবেন যে আপনার স্মার্টনেস, ভদ্রতা সবই ছিলো মেকি তখন কি তার কাছে সেভাবে দাম পাবেন? প্রশ্নই আসেনা। আপনাকে তখন সে আর সেভাবে কখনই সমাদর করবে না। তখন সংসারটা হবে শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব, ভালোবাসা থাকবে কিঞ্চিৎ। তাই শুধু শুধু নিজেকে মাল্টিপল পার্সোনালিটির ধারক না বানিয়ে নিজে যেমন তেমনই থাকুন। একবার নিজের মত করে হাত-পা ছাড়িয়ে লম্বা করে একটা শ্বাস নিয়ে দেখুনই না। জানি খুব খারাপ লাগবে না। দেখবেন সেখানেই খুঁজে পেয়েছেন আপনাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ পিতা-মাতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি নেই, তাই শূন্য লাগে

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

তোমার চলে যাওয়ার পর
ঘরে আর আলো জ্বালাই না,
অন্ধকারে নিজের মতো করে
সবকিছু চিনে নেই।

জানো, আজ সকালে চা বানাতে গিয়ে দেখলাম
চিনি শেষ,
ভাবলাম ঠিক আছে,
মিষ্টি না থাকলেও চা হয়।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ
তোমার মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×