somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দেয়াল" (গল্প)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্যাওলা ধরা দেয়ালটি দেখেই বলে দেয়া যায় বাড়িটির বয়স তিরিশ বছরের কম নয়, বেশিও হতে পারে। কিছু কিছু জায়গায় ফাটল ধরে গেছে, কিছু ফাটল এত বড় যে ভালো করে খেয়াল করলে দেয়ালের ওপারের কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে। আসলে বাড়িটির বয়স পঁয়ত্রিশ বছর পার হয়ে গেছে, বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন বর্তমান বাসিন্দা আশফাক এর প্রয়াত বাবা। অন্যান্য অংশ সংস্কার করা হলেও পাশের বাড়ির সাথে যে সীমানা প্রাচীর আছে তা একবারও সংস্কার করা হয়নি।

দেয়ালের ওপারের বাড়িতে থাকে এক দম্পতি, তারা দুজনেই চাকরি করে অন্য শহরে, সকাল হলেই দুজনেই তাড়াহুড়ো করে কর্মস্থলে বেরিয়ে যায়। তাদের ছোট্ট মেয়ে পৃথা, দেখতে পুতুলের মত, বয়স সাড়ে তিন, তাকে সকালের খাবার খাইয়ে মা বেরিয়ে যায় কাজে, ফেরে সেই সন্ধের পর। বাকিটা সময় কাজের মেয়ে ফরিদা তার দেখাশোনা করে। ফরিদার দেশ পৃথার নানার বাড়ির পাশের গ্রামে, পৃথার নানীই বাধ্য হয়ে ফরিদাকে এই বাড়ির জন্য দিয়েছেন, মেয়ে-জামাই দুজনে বাইরে গেলে ছোট্ট পৃথাকে কে দেখবে? প্রথমে দেখার দায়িত্ব তারই ওপর ছিল, কিন্তু তিনি নিজ সংসার ছেড়ে আর কতদিন থাকবেন? গ্রামের বাড়িতে এত কাজ যে তার ছেলের বউরা সব একা সামলাতে পারেনা, তাই মেয়ের বাড়ি গিয়ে বেশি দিন থাকা হয়ে ওঠে না।

পৃথার মায়ের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হবার পর মা যখন কর্মস্থলে যেত তখন সে নানীর কাছেই থাকতো, কখনো তার দাদী এসেও তার দেখাশোনা করত, কিন্তু বিপত্তি বাধে একটু বড় হবার পর মা বেরিয়ে যাবার পর-পরই কান্না জুড়ে দিত উচ্চস্বরে, কিছুতেই থামানো যেত না, এক সময় কাঁদতে-কাঁদতে ছোট্ট মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়তো। এভাবে কিছুদিন চলার পর পৃথা মাকে ছাড়া থাকতে অভ্যস্ত হতে লাগলো। এরপর পৃথার নানী ফরিদাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসে নিজে বিদায় নিলেন। এখন সকাল বেলা মা টিভিতে কার্টুনের চ্যানেল চালু দিয়ে কর্মস্থলে চলে যায়, ফরিদা ঘরের কাজকর্ম করে। এখন সমস্যা একটাই দুপুর বেলা পৃথাকে খাওয়ানো, খাবার নিয়ে ফরিদা সামনে গেলেই পৃথার একটাই কথা “আম্মু আসলে খাব”, কিছুতেই তাকে খাওয়ানো যায়না, অনেক ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাজা-রাণীর গল্প বলতে বলতে ধীরে ধীরে খাওয়াতে হয়। কিন্তু এভাবে একা থাকতে থাকতে পৃথা অন্য বাচ্চাদের তুলনায় নিরব প্রকৃতির হয়ে যেতে লাগলো। তার হাসি-কান্না-উচ্ছাস সবই অন্যদের চেয়ে আলাদা।

এর মাঝে একদিন মাঝরাতে মেঘের গর্জনে পুরো বাড়িটা কেঁপে উঠল, পৃথার ঘুম ভেঙে গেলো, ভয় পেয়ে সে মাকে জড়িয়ে ধরল। বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন সমান তালে চলতে থাকলো। হঠাত্‍ বিকট শব্দে কোনও কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ হল। পৃথার বাবা টর্চ হাতে বারান্দায় এসে দেখলো পাশের বাড়ির পুরো দেয়ালটি ভেঙে তাদের উঠোনের উপর পড়ে গেছে। মেজাজটাই বিগড়ে গেলো তার, পাশের বাড়ির আশফাককে এতবার বলার পরও ব্যবস্থা নিল না, ভেতরে এসে স্ত্রীর উপর রাগ ঝাড়ল, “আশফাককে এত করে বললাম যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তাই দেয়ালটি ভেঙে নতুন করে দিন, কিন্তু শুনল না”।

দেয়ালের অন্য প্রান্তে বিকট শব্দ শুনে আশফাক বেরিয়ে এসেছেন, বিদ্যুতের ঝলকানির মাঝে ভেঙে পড়া দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে হতাশার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এমনিতেই কিছুদিন হল তার ব্যবসার অবস্থা খারাপ যাচ্ছে আর এখন এই অবস্থা, নতুন করে এত বড় দেয়ালটি দিতে হবে, এ যে অনেক টাকার ব্যাপার। পরে নিজেকে নিজেই সান্তনা দিয়ে ভেতরে চলে গেল। ধীরে ধীরে ঝড়ের বেগ কমতে থাকলো।

পরদিন ভোরে পৃথার মা উঠোনে এসে হতাশ হয়ে গেলো, তার এত সাধের ফুলের বাগানে দেয়াল পড়ে সব তছনছ হয়ে গেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক দুর্লভ গাছের চারা সংগ্রহ করে অনেক শখ করে এই বাগান সে নিজ হাতে গড়েছিল, আর এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেল! তার সব রাগ গিয়ে পড়ল পাশের বাড়ির আশফাকদের উপর। অপরদিকে আশফাক এসে অভিযোগ জানালো যে, “দেয়াল ঘেষে বাগানে পানি দেবার জন্য আপনার যে নালা কেটে দিয়েছেন তার ফলেই দেয়ালটি দুর্বল হয়ে এই অবস্থা হয়েছে। আপনাদেরকে নালা সরিয়ে নিতে বলার পরও আপনারা দেয়াল ঘেষে থাকা নালাটি সরিয়ে নেননি”।

এর পর দুই পরিবারের মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। পরে আশফাকের স্ত্রী সায়রা এসে স্বামীকে ভেতরে নিয়ে গেল। সায়রা পুরোদস্তুর গৃহিনী, সে কারো সাথে ঝামেলায় জড়ানো পছন্দ করেনা। সে স্বামীকে বোঝাল “হোক একটু কষ্ট আবার নতুন করে দেয়ালটি দিয়ে দাও”।

আশফাকের মেজাজ তখন খারাপ হয়ে আছে, সে রেগে গিয়ে বলল, “ওরা তৈরি দেয়াল পেয়েছেতো তাই সুযোগ পেয়ে গেছে, কেন ওরা একটা সীমানা প্রাচীর দিতে পারেনা, সব দায়িত্ব কি আমাদেরই”? সায়রা স্বামীকে বুঝিয়ে ধীরে ধীরে শান্ত করল। আশফাক লোক ডেকে এনে ভেঙে পড়া দেয়ালের ইট গুলো সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করল। ঠিক করল দুই-তিন দিন পর দেয়াল তোলার জন্য মিস্ত্রী ধরাবে।

এসব তিক্ত ঘটনার পর পৃথার মা ব্যথিত মন নিয়ে অফিসে চলে গেল। পৃথা টিভি দেখছিল, হঠাত্‍ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল, পৃথা ফরিদাকে খুঁজতে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে ফরিদা ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে একপাশে ঝাড়ুটি রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে, পৃথা ডাকল “আপু তুমি ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠো আমরা খেলি”। ফরিদা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল তুমি কার্টুন দেখো….” পৃথা বোঝানোর চেষ্টা করল, “কারেন্ট নেইতো”, কিন্তু ফরিদার আর কোনও সাড়া না পেয়ে সে উঠোনে বেরিয়ে আসল। আপন মনে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, একসময় ভেঙে পড়া দেয়ালটির ফাঁকা যায়গায় এসে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে পাশের বাড়ির দিকে উঁকি দিল।

সায়রা ঘরের কিছু কাজ সেরে চুলোয় রান্না বসিয়ে কাপড় ধুতে আসলো। আশফাক বাইরে চলে যাবার পর ছেলে দুটিও স্কুল চলে যায়, একটি ক্লাস সেভেনে পড়ে, বড়টি পড়ে ক্লাস নাইনে। আশফাক ইদানিং দুপুরের খাবার বাইরেই খেয়ে নেয়, আর ছেলেরা বিকেলে স্কুল থেকে এসে খায়। সবাই চলে যাবার পর সায়রা বড্ড একা হয়ে যায়, মূলত বাড়ির কাজ করেই তার সময় কাটে। কাপড়ে সাবান ডলতে গিয়ে হঠাত্‍ ডান দিকে চোখ গেল, দেখল ছোট্ট একটি মেয়ে দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকে দেখছে। সায়রা তাকে কাছে ডাকল, “তোমার নাম বুঝি পৃথা? আসো, আমার কাছে আসো”। পৃথা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো, কিন্তু চলে গেলো না। সায়রা আবার ডাকল। পৃথা আস্তে করে বলল, “তুমি কে”? “আমি তোমার আন্টি হই” জবাবে সায়রা বলল। পৃথা কাছে আসছে না দেখে সায়রা এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো। ঘরে নিয়ে এসে বলল, “কি খাবে বল”? পৃথা নিরব রইল। সায়রা তাকে একটি আপেল ধুয়ে খেতে দিল এবং ঘরের কাজ করতে করতে পৃথার সাথে কথা চালিয়ে গেলো।

ফরিদা ঘুম থেকে উঠে পৃথাকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো, পুরো বাড়ি তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও না পেয়ে ভেঙে পড়া দেয়ালের জায়গাটি দিয়ে পাশের বাড়িতে আসলো, দেখলো সায়রা পৃথাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। ফরিদা হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল, “ভাবী ও আপনের কাছে কেমন করি আসলো? যাউক তাও খুজি পাইলাম, খুব পেরেশানির ভিতর ছিলাম, -আফাক কি জবাব দিম”, সায়রা বলল, “তুমি ওদের বাসায় থাকো? কোনও চিন্তা করনা, এখানে বস”, একটি পানির গ্লাস এগিয়ে দিল আর বলল, “পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা কর”, পৃথার খাওয়া শেষ হলে ফরিদা তাকে নিয়ে যেতে চাইলে সায়রা বলল, থাকুক না একটা দিন আমার কাছে”। “কিন্তু ভাবী.....আচ্ছা থাকুক কিন্তু ওর মা আসার আগে ওরে নিয়া যাইতে হবে”, উত্তরে ফরিদা বলল। সন্ধার আগেই ফরিদা এসে পৃথাকে নিয়ে গেলো, যদিও তার যাবার ইচ্ছা ছিলনা। তার আগে সায়রার দুই ছেলে স্কুল থেকে ফিরে মায়ের সাথে হাসাহাসি করলো, “এইতো মা এতদিনে একটি মেয়ে পেয়ে গেছে.........”।

পরদিন, একই সময়ে পৃথা সায়রাদের বাসায় আসলো, ফরিদাও নিশ্চিন্তে যেতে দিল। কালকের পর পৃথার প্রাথমিক ভয় কেটে গেছে, সায়রার আন্তরিক ব্যবহারে সে সায়রাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে।

দুপুর দুটা, কলিং বেল বেজে উঠল, ফরিদা ভাবল, হবে কোনও ভিখিরি, ইদানিং ভিখিরিরা খুব বিরক্ত করছে। ফরিদা দরজা খুলে চমকে উঠল, “আফা আপনি আইজ এত তাড়াতাড়ি”? “শরীরটা আজ ভালো নারে ফরিদা, মাথাটা খুব ব্যাথা, তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম”, ভেতরে আসতে আসতে বলল পৃথার মা। ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলো “পৃথা কোথায়”? ফরিদা ভীত গলায় বলল, “পাশের বাড়ির ভাবীর কাছে গেছে”, কথাটা শুনে পৃথার মা ভীষণ চটে উঠল, “তুই জানিসনা ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল না, আগে থেকেই ওরা আমাদের দেখতে পারে না আর এখনতো দেয়াল পড়ার পর আরো......আল্লাহ না জানি আমার মেয়েটাকে নিয়ে কি করছে, যা তুই এখনই পৃথাকে নিয়ে আয়”, ফরিদা দৌড়ে গেলো পাশের বাড়িতে, সায়রার কোল থেকে পৃথাকে নিতে গেলো, পৃথা অসম্মতি জানালো, “আমি যাবনা”, ফরিদা জোড় করতে লাগলো। সায়রা বলল, “থাকনা আমার কাছে, যেতে চাইছেনা যখন....” ভাবী ওর মা আসি খুব রাগ হইছে, নিয়া যাওয়াই লাগবে”। ফরিদা জোর করে পৃথাকে প্রায় কেড়ে নিলো সায়রার কোল থেকে, পৃথা কেঁদে উঠল, “আমি যাবনা....আমি যাবনা.....আমি আন্টির মেয়ে....”, কথাটা শুনে এবং ঘটনায় আকস্মিকতায় সায়রা হতবাক হয়ে গেলো, বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল, কিন্তু তার কি সাধ্য অন্যের মেয়েকে আটকে রাখার? বরং তা উচিত্‍ না।

পরদিন পৃথার মা অফিসে যাবার আগে ফরিদাকে বলে গেলো, “আজ যাতে পৃথা ওদের বাসায় যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখবি”, মা চলে যাবার পর পৃথা যেতে চাইলে ফরিদা তাকে আটকাল, বলল, “যাওয়া হবেনা, তোমার মা মানা করছে”, এই কথা শুনে পৃথা উঠোন থেকে ইটের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে ফরিদার দিকে ঢিল ছুড়তে লাগলো। কিছুতেই পৃথাকে বোঝাতে না পেরে শেষে কোলে করে সায়রার কাছে নিয়ে এসে বলল, “ভাবী একে থামাইতে পারতিছিনা, আপনের কাছে আসার জন্যে কানতেছে, কিন্তু এরে বুঝান, পরতেক দিন এইরম করলে কেমনে চলবে? আইজ দিয়া গেলাম, কলিং বেলের শব্দ পাইলে আবার নিয়া যাব”।

বিকেলে ফরিদা এসে পৃথাকে নিয়ে গেলো। পরদিন আশফাক মিস্ত্রী ডেকে এনে কতটুকু ইট-সিমেন্ট-বালু লাগবে তা হিসেব করে কাজে ধরিয়ে দিল। ভেঙে পড়া দেয়াল থেকে যেসব ইট কাজে লাগানো যাবে তা পরিষ্কারের জন্য আলাদা লোক লাগিয়ে দিল। বাড়ির পেছন দিক থেকে দেয়ালের কাজ এগিয়ে চলতে থাকলো। আশফাক মিস্ত্রীদের সাথে কাজ তদারকি করতে বাড়িতেই থাকলো। পৃথা নিয়ম করে সেদিনও আসলো, সিড়িতে পা রেখে সায়রার পাশে আশফাককে দেখে থমকে দাঁড়াল, সায়রা আশফাককে বলল, “পাশের বাড়ির মেয়ে, দেয়াল ভেঙে যাবার পর থেকে রোজ আসে, সারাদিন আমার সাথেই থাকে”| শুনে আশফাক হেসে ফেলল, “তোমার মনে হয় নিজের মেয়ে না থাকার অতৃপ্তি এখনো থেকে গেছে”| আশফাক পৃথাকে কাছে ডাকল, কিন্তু সে আসলো না। সায়রা এগিয়ে এসে পৃথাকে কোলে নিলো। আশফাক বেরিয়ে গেলো মিস্ত্রীদের কাছে।

দেয়াল তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, প্রথম দিন এক চতুর্থাংশ এগিয়ে গেলো। বড় দেয়াল হওয়ায় মিস্ত্রীরা পরামর্শ দিল দেয়ালটি দুটো অংশে ভাগ করতে, দুটো অংশের মাঝে একটা শক্তিশালী পিলার দেয়ার কথা বলল। আশফাক রাজি হল। বাড়ির পেছনদিক থেকে মাঝখানের পিলার পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনেই সম্পন্ন হয়ে গেলো।

মাঝখানে একদিন শুক্রবার থাকায় পৃথার মা বাড়িতে ছিল, তাই সে সায়রার কাছে আসতে পারেনি, শনিবার আবার সে সায়রার কাছে আসলো, ততদিনে দেয়ালের অর্ধেক কাজ শেষ। রবিবার বাকি অর্ধেকের কাজ শুরু হয়েছে। সকাল নটা থেকে তুমুল গতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। আজ পৃথার মা অফিস যেতে দেরি করছে, অফিসের উদ্দেশে বেরুতে আজ সকাল এগারোটা বাজিয়ে ফেলল। মা বেরিয়ে গেলে পৃথা উঠোনে এসে দেখলো দেয়াল দ্রুত বেড়ে চলেছে, দেয়ালের কিছু জায়গার উচ্চতা তার মাথা ছাড়িয়ে অনেক উপরে চলে গেছে আর কিছু জায়গার উচ্চতা আর কাঁধ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। অবাক চোখে, ব্যথিত মন নিয়ে সে দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে রইল।

এভাবে চলে গেলো অনেক সময়। পৃথার চোখের সামনে দেয়ালটির উচ্চতা বাড়তেই থাকলো, তার নিরব দৃষ্টি একসময় ঝাপসা হয়ে আসলো, দুচোখের কোন দিয়ে অবিরাম অশ্রুধারা ঝরতেই থাকলো।

সায়রা চুলোয় রান্না চড়িয়ে দিয়ে ঘরে এসে জানালা দিয়ে বেড়ে ওঠা দেয়ালটির দিকে দেখলো, তার বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেলো, সে দেয়ালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, বোঝা গেলো না তার চোখেও জল ছিল কিনা, হয়তো সে নিজের কাছেই নিজের চোখের জল গোপন করতে চাইল।


কিছু কথা: প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে এই গল্পটি লেখার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু আলসেমির কারণে লেখা হয়নি। "দেয়াল" আমার লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছোট গল্প, তাই ভুল-ত্রুটি থাকাটা স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটি হলে তা জানালে খুশি হব। গল্পে কাজের মেয়ে ফরিদা চরিত্রটির ভাষার ক্ষেত্রে রংপুর অঞ্চলের ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তবে সবাই যাতে সহজে বুঝতে পারেন এজন্য অপেক্ষাকৃত সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে তা সম্পূর্ন কাকতালীয়। ধন্যবাদ সবাইকে।

লেখাটি একই সাথে আমার নিজের ব্লগে প্রকাশিত, আমার ব্লগের ঠিকানা: http://mazedul.blogspot.com/
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৫০
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×