ছোট থাকতে মাঝেমধ্যেই মাকে
কাঁদতে দেখতাম।দাদি মাকে বলত
মাগীর বেটি তোর পাঁচটা সন্তান তো
সব খেয়ে ফেলছে তুই আবার কি খাবি।
প্রসংঙ্গক্রমে বলে রাখি দাদার
দরিদ্রিত যৌথপরিবারে
চাচা,চাচি,ফুফু, কাজিন কৃষাণসহ মোট
বাইশ জনেরর মুখ একবাড়িতে ছয়টি ঘরে
বসবাস করত। মা রান্না করত শশ্বুর
বাড়িতে
আর খাবার খেতে মায়ের সাথে
আমরা
যেতাম নানীর বাড়িতে। কৈ মা তো
আমাদের মেরে ফেলে দেই নি? বড় দুই
ভাই নানীর বাড়িতে ঘুমাতে যেত আর
বড় দুই বোন আর মা একটি খাটলাই আর
আমি আর আব্বা চৌকিতে ঘুমাতাম।
রাতে যখন ঘুমাতাম দু একদিন পরপরই
আব্বা আমাকে কোলে করে নিয়ে
বোনদের পাশে শুয়ে দিত।পাঁচ সাত
মিনিট পর হঠাৎ মার কেমন জানি
কান্নার শব্দ
পেতাম, তখন আব্বার উপর আমার খুব রাগ
হত।কৈ মা-বাবা তো আমাদের মেরে
ফেলে দেইনি।এখনকার বাবা
মায়েরা তাদের সন্তান কান্নাকাটি
করলে বলে ওরে আমার চমচম,আমার
রসগোল্লা ব্লা ব্লা কাঁদে না, কাঁদে
না।তারপরে ও সন্তানরা কাঁদতে
থাকে। তারপর যখন দেখে বাবা-
মায়েদের ভয়ংকর রূপ তখন তারা কান্না
থামিয়ে দেই।আমরা যখন কাঁদতাম তখন
এ রকম ছিল না। এই কাদিস না ভুত
আইলো,কাদলে ভুত চলে আসবে..... বলে
কান্না থামাতো।একদিন এমন
কান্নাকাটি করতে লাগলাম যে ভুত
দেখিয়েও আমার কান্না থামাতে
পারল না।তখন বাবা আমার দুই হাত আর
দুই পা ধরে নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে
আসলো। কান্না না থামালে আমাকে
পুকুরে ফেলে দিবে। তারপরেও জেদ
করে কেদেছিলাম। কৈ এখন ও তো
বেচে আছি।ছোট থাকতে স্কুলে
যাওয়ার চেয়ে গরু চড়াতে মাঠে
যেতে ভালো লাগতো। কৈ আমার
মধ্যে কোন স্বপ্ন দেখতে না পেয়ে
বাবা- মা আমাকে তো মেরে
ফেলে দেইনি। এখন আমরা তিনভাই
একজন প্রফেসর,একজন
বিজনেস ম্যান, আর আমি
ইন্জিনিয়ার।দুই বোনের একজন
ডাক্তার,একজন ব্যাংকার।
.
.
এবার একটু ইতিহাসের দিকে তাকাই।
আমরা যাকে বাংলাদেশের
রত্নাগর্ভা বলি সেই আয়েশা ফয়েজ
কত কষ্ট করে হুমায়ূন আহমেদ,জাফর ইকবাল
আর আহসান হাবীবদের মানুষ করেছেন
সেটা আয়েশা ফয়েজের "জীবন যে
রকম" বা হুমায়ূন আহমেদের
"ছেলেবেলা" বই দুটি পাট করলেই
বুঝতে পারি।একবার হুমায়ূন আহমেদ তার
মাকে জিঙ্গেস করেছিলেন আমাদের
প্রতি আপনার কোন উপদেশ আছে কি
না? জবাবে তিনি ( আয়েশা ফয়েজ)
বলেছিলেন উপদেশ না তোমাদের
প্রতি আমার একটা আদেশ আছে আর তা
হল " কেউ যদি তোমাদের কাছে টাকা
ধার চাই,তবে কখনও না বলবে না।
আমাকে অসংখ্যবার মানুষের কাছে
ধারের জন্য হাত
পাততে হয়েছে। ধার চাওয়া যে কি
লজ্জা এবং অপমান আমি তা জানি।"
.
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস"জোসনা ও
জননীর
গল্প "তেও তাদের দুর্দশার করুন
চিত্র আমরা লক্ষ করি। এপি জে আব্দুল
কালামের আত্বজীবনী উয়িংস অব
ফায়ার পড়লে বুঝতে পারি তাকেও
মেরে ফেলা উচিৎ ছিল। বোনের
বিবাহের হাতের বালা বিক্রি করে
সে পড়ালেখা চালিয়ে গেছে।
.
বনশ্রীতে দুই ভাই বোনকে শ্বাস রোধ
করে তাদের মা মেরে ফেলল।যুক্তি
তাদের ফিউচার খারাপ,দারিদ্র্যতা ।
এই খোড়া অজুহাতে পিতা - মাতারা
যদি তাদের সোনামনিদের মেরে
ফেলত তাহলে আজ ও আমরা অন্ধকারে
থেকে যেতাম,কারন আমরা পেতাম
না টমাস আলভা
এডিসনকে।আমরা পেতাম না বিখ্যাত "
মা "
উপন্যাসের মাক্সিম গোর্কি কে।আমরা
পেতাম
না বিদ্যারসাগর ইশ্বর চন্দ্রকে।আমরা
পেতাম না বিদ্রোহী কবি কাজী
নজরুল ইসলাম কে।আমরা পেতাম না
বাংলাদেশ বাংকের গর্ভনর আতিয়ার
রহমান কে।