
২০০৩, ৪, ৫ সাল বা আগে পরে হতে পারে। সেসময় আমাদের থানার সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ ছিলনা। দাউদকান্দি বা ঢাকা যেতে প্রথমে ট্রলারে করে যেতে হতো। সেই ট্রলার চলাচল যুগের ঘটনাটা আজও মনে পড়ে যায় আর ভাবলে শিউরে উঠি।
ট্রলারঘাটে পৌছে ট্রলারে বসে আছি। এক ঘন্টা পর পর ট্রলার ছাড়ে। গরমকাল। খুব রোদ উঠেছে। ট্রলার প্রায় ভরে গেছে। টাইমও শেষ হয়ে আসছে। শেষ মূহুর্তে কয়েকজন যাত্রী দৌড়ে এসে উঠল। তাদের মধ্যে বাচ্চা কোলে এক নারীও ছিল।
ট্রলার ছেড়ে দিয়েছে। যাত্রীরা যে যার মত বসে আছে। নদীর ঢেউ কেটে কেটে ট্রলার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে পিছনে সরে যাচ্ছে গ্রাম, জনপদ, মাঠ, ফসলের ক্ষেত।
গরমে এক ঝলক বাতাস যেন শরীরে শান্তির পরস বুলিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ পরিচিত জনদের সাথে গল্পগুজব করছে। হঠাৎ সেই বাচ্চা কোলে রাখা মহিলা ঢুকরে কেঁদে উঠল। সে তার বাচ্চার দিকে চেয়ে আছে তারপর বাচ্চাকে নিবিরভাবে চেপে ধরে হাত দিয়ে আদর করছে আর কান্না করছে। ব্যাপারটা কেউ না বুঝে মহিলার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে।
একজন জিজ্ঞেস করল, আপনি কাঁদছেন কেন ? বাবু কি অসুস্থ ?
প্রশ্নটা শোনার পর মাহিলাটা আর্তনাদ করে উঠল। সে আহাজারি করে বলেতে লাগলো- আমার বাছা আর নাই গো। আমার যাদুরে ওরা মেরে ফেললগো। মহিলা বিলাপ করেই চলল।
মহিলা যাত্রীরা মহিলাকে শান্তনা দিতে লাগলো। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছেনা সে মরে গেছে বরং সে মায়ের কোলে পরম মমতায় ঘুমিয়ে আছে। তারপর আস্তে আস্তে সব জানা গেছে কিভাবে কি ঘটেছে।
মৃত বাচ্ছাকে আগলে রাখা একমাত্র একজন মায়ের পক্ষেই সম্ভব। মহিলার বাচ্চা অসুস্থ ছিল। মহিলা বাচ্চাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যেতে চেয়েছিল চিকিৎসার জন্য। কিন্তু গৃহস্তের বউ বাড়ি না থাকলে সিজনের এই সময়ে ফসল বোনা ও কামলাদের খাওয়া দাওয়া করানো কষ্টকর হয়ে যাবে তাই তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
কিন্তু বাচ্চা যখন পৃতিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে তখন মা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা তাই সে স্থানীয় ফার্মেসীগুলোতে না গিয়ে দাউদকান্তি বড় ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হবে যে তার বাচ্চা আসলেই মরে গেছে কিনা। তাই সে বাচ্চাকে দাফন কাফন না করিয়ে এক প্রকার পালিয়ে এসেছে।
সকলে এবার তার গ্রাম ও স্বামীর নাম জানতে চায়। সেই পাষন্ড লোককে গালিগালাজ করতে থাকে।
আমার শরীর মন কেমন যেন করতে লাগলো মৃত বাবুটাকে মহিলার কোলে পড়ে থাকতে দেখে। আজও মনে পড়লে কেমন যেন লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



