‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল না। তাই অনেক ইসলাম বিরোধী লেখক “ইসলামী রোজা পদ্ধতি”কে খারাপ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করতেন। তার সাথে কিছু ইসলাম দরদী লেখক “ইসলামী রোজা পদ্ধতি”কে ভালো প্রমাণ করার জন্যও বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করতেন।
এই অবস্থা 2016 সাল অব্যহত থাকে, 2016 সালে মেডিকেল সায়েন্সের পরিভাষায় রোজার নাম দেওয়া হয়-“অটোফেজি”। এই “অটোফেজি” আবিষ্কার করে 2016 সালে জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’। এবং আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় ‘নোবেল’ পুরষ্কারও পান।
অটোফেজি কি::- একদম সহজ ভাষায় বললে হবে-
আমাদের শরীরে এম,জি,এফ-1 হরমোন থাকে। এই হরমোনের কাজ হল- শরীরে নতুন কোষ তৈরী করা। এবং যখনই এই হরমোন শরীরে বেড়ে যায়, তখনই শরীরে হুহু করে কোষ বাড়তে থাকে এবং শরীরও বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্ম হবে। আর সেগুলো হল- সুগার, পেসার, ক্যানসার, সুগার ও পেসার থেকে হার্ট, চোখ ও কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হল- এই হরমোন শরীরে বাড়ে কেন?? উত্তর- যখনই প্রয়োজনের অধিক খাওয়া -দাওয়া হবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে- উপরিউক্ত বিজ্ঞানী নোবেল পেলেন কেন?
উত্তর- যদি কোন মানুষ বছরে অন্তত 20 বা 25 দিন 12 থেকে 14 ঘন্টা সম্পূর্ণ “উপবাস” করবে, তখন তার শরীর থেকে এই হরমোন(M.G.F -1)এর পরিমাণ প্রয়োজনের থেকে অনেকটাই কমে যাবে। এমন অবস্থায় তার শরীরে নতুন কোষ তৈরী হতে পারবে না। এবং শরীরের সবল কোষ গুলো দুর্বল কোষ গুলোকেই খেতে শুরু করবে। ফলে সুগার, পেসার ও ক্যানসারের সম্ভা বনা শূন্য(0) হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াকে “মেডিকেল সায়েন্স” এর ভাষায় “অটোফেজি” বলা হয়। এই গবেষ ণার জন্যই বিজ্ঞানী ইউসনোরি ওসুমি’কে “নোবেল” পুর ষ্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
বর্তমান সময়ে ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি আর নেই।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা:::
নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর তিনি বলেন- “আরও ভাল হয় যদি কেউ ঐ 20-25 দিন ছাড়াও সপ্তাহে আরও দুদিন সম্পূর্ণ উপবাস করেন”। তিনি এও বলেন- “আমি নিজেও এই পদ্ধতিতে জীবন যাপন করি”। এই ঘটনার কিছু দিন পর এক মুসলিম বন্ধুর থেকে জানতে পারেন- “মুসলিমরা বছরে গোটা এক মাস সম্পূর্ণ উপবাস করেন এবং সপ্তাহে দুই দিনও কিছু মুসলিম উপবাস করেন এবং 1500 বছর ধরে করে আসছেন”। এটা জানার পর বিজ্ঞানী চমকে ওঠেন এবং আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেন-“কে এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলে ন”? উত্তর পায়- বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স)। এবং এখন সেই বিজ্ঞানী কোরান নিয়ে গবেষণা করছেন- আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লেখ্য ওসুমি জাপানের ফুকুকায় জন্মগ্রহণ করেন। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক ও ১৯৭৪ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটির রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো ছিলেন।
১৯৭৭ সালে সহযোগী গবেষক হিসেবে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯৮৬ সালে প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৯৬ সালে ওকাজাকি সিটিতে অবস্থিত জাতীয় বেসিক বায়োলজি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হেয়ামার গ্র্যাজুয়েট এডভান্সড স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে অবসর নেয়ার পরও ইনোভেটিভ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও টোকিও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে অধ্যাপকের দায়িত্ব চালিয়ে যান।
ছবি-গুগলের সৌজন্যে তথ্য- দশদিক ডট কম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৩৭