somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিটিং - অজি স্টাইল

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাদের দোয়ায় আর আল্লাহর রহমতে চিটার বাটপার মোটামুটি দুনিয়ার সবখানেই আছে।আর অস্ট্রেলিয়া যেহেতু দুনিয়ার বাইরে না সেহেতু এইখানেও বাটপারি চিটারি হয়।কিন্তু সরকার অথারিটির কড়া নজরদারী সিস্টেমের কারনে বাংলাদেশ বা এশিয়ার দেশগুলির চাইতে কিছুটা কম কিন্তু একদম বাটপার মুক্ত না।চোখ কান খোলা না রাখলে বা সাবধান না হইলে ধরা খাইয়া বোল্ড আউট হবার সম্ভাবনা ১০০ তে ১০০।
ইদানিংকালে টেলিভিশন পত্রপত্রিকায় আসতেছে ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক কার্ড স্কি্মিং এর কাহিনি অনেকেই হয়ত দেখছেন টিভিতে তাই এই বিষয়ে বেশিদুর যাবো না তার চাইতে কিছু ব্যাক্তিগত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
শুরুতেই বইলা নেই ঘটনা শতভাগ সইত্য কিন্তু অজি প্রাইভেসির কারনে নাম এবং চরিত্র উলটা পাল্টা কইরা দিলাম।
১)রহমান ভাই গাড়ি কিনবেন আমারে নিয়া গেলো গাড়ি দেখতে আমি আবার ম্যাকানিক কিনা B-) আন-অফিশিয়াল প্রি-পারচেজ ইন্সপেকশন করতে আসার পথে ম্যাকডোনাল্ডে ঢুকলাম চা খাইতে ম্যাকের দারচিনি দেয়া ঘন দুধের চাই-টি আমাদের দুই জনেরই প্রিয়।চা খাওয়া শেষ করে মুখে মুখে ব্যাপক রাজা উজির মেরে রহমান ভাই আমাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় যাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে ফোন উনার ওয়ালেট হারায়ে ফেলছেন।
উপসসসস
হিসাব কইরা বের করলাম ওয়ালেট টা ম্যাকেই পড়ছে আবার দুইজনে ছুটলাম ম্যাকের উদ্দেশ্যে ।যেই টেবিলে বসছিলাম তার আশে পাশে কাউন্টারের আশে পাশে তন্ন তন্ন করে খুজলাম ।
ওয়ালেট নাই।
এরই মধ্যে ডিউটি ম্যানেজার এসে হাজির সে আমাদের কথা শুনে একটা আনুমানিক টাইম বের করে সিকিউরিটি ফুটেজ দেখতে বসলো।
এমন সময় আরেকজন বললো বিনগুলি খুজে দেখতে
এইবার সফলতা মিললো
খুজতে খুজতে একটা বিনে ওয়ালেট পেলাম রহমান ভাই সব দেখে বললেন সব ঠিক আছে কিন্তু ক্রেডিট কার্ড টা নাই।
আমরা বাসায় এসে ব্যাংকে ফোন দিলাম।
ফোন রেখে রহমান ভাই জানালেন এর মধ্যেই চোর ব্যাটা কোলস থেকে ৩৫ ডলারের বাজার সেরে ফেলেছে।
২)শফিক ভাইয়ের ছেলের পড়াশুনার অবস্থা ভালো না ত এক ওয়েব সাইটে এক মাসের জন্য বিশ ডলারের একটা প্ল্যান নিলেন যেখানে অন-লাইনে প্রাইভেট পড়ানোর মত বিভিন্ন বিষয়ের উপর টিউটোরিয়াল এবং প্র্যাকটিসের ব্যাবস্থা আছে দাম মাত্র আশি টেকা পে-করতে হবে ক্রেডিট কার্ডে।উনি ভাবলেন শুধু এক মাসের জন্য আশি টাকা তাও পরীক্ষার আগে একটু প্র্যাকটিস করলে ছেলের জন্য ভালই হবে।
ত প্রথম মাস ক্রেডিট কার্ডের ৮০ টা গেলো টিউশনি খাতে।
২য় মাসের বিলে দেখলেন আবার আশি টাকা গেছে টিউশনি খাতে।
এইবার কিছুটা নড়ে চড়ে বসলেন শফিক ভাই।
ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখলেন সাবস্ক্রিপশনের কোন অপশন আছে কিনা মানে ভুল করে সাবস্ক্রিপশন বাটন চেপে বসে আছেন কিনা।
নাহ সেই রকম কিছু নাই।
তাদের ফাক (ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোশ্চেন) পেইজে যেয়ে দেখলেন সেখানেও সঠিক করে কিছু বলা নাই।
এর মাঝে ৩য় মাসের বিল চলে আসলো সেইখানেও আবার ৮০ টাকা
এইবার তাদের কন্ট্যাকট নাম্বারে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন কাহিনী কি ওরা এইবার সরি টরি বলে শফিক ভাইয়ের ৩য় মাসে টাকা ফেরত দিলো কিন্তু ২য় মাসের টাকা মাইর কারন শফিক ভাই তাদেরকে ৭ দিনের মধ্যে জানান নি যে উনি আর কন্টিনিউ করতে যাচ্ছেন না।
তাদের প্রডাক্ট ডিসক্লোজার স্টেটমেন্টে নাকি সেরকমটাই লেখা ছিলো যে পছন্দ না হলে মাসের প্রথম সাত দিনের মধ্যে তাদের ন্যাশনাল নাম্বারে ফোন করে জানাতে হবে আর না হলে তারা টাকা কাটতেই থাকবে।

৩)মনসুর ভাই গাড়ী বিক্রি করবেন ত সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দিলেন কার সেলস ডট কম আর গাম ট্রি ডট কমে।
এক লোক ই-মেইল করে জানালো সে বাইরে থেকে আসছে নতুন মাইগ্রেন্ট এবং এইরকমই পুরানো গাড়ী খুজছে দাম কিছুটা কমাতে পারবে কিনা?
মনসুর ভাই ভাবলেন উনি নিজেও মাইগ্র্যান্ট অনেক কষ্ট করে এই দেশে টিকতে হয়েছে ত সাথে সাথে মেইল ব্যাক করলেন যাও তিন হাজার টাকার গাড়ীতে ৫০০ টাকা কম দিও।
এইবার ক্রেতা জানালো আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে চেক পাঠিয়ে দিচ্ছি আর আমি যেহেতু নতুন মাইগ্র্যান্ট তাই লাইসেন্স নাই সেহেতু গাড়ীটা টো করে নিতে হবে তুমি চিন্তা করো না আমি টো-ট্রাক পাঠিয়ে দিবো তুমি গাড়ীর চাবিটা টো-ট্রাকের ড্রাইভারের হাতে দিয়ে দিও সাথে কাগজপত্র আমি টো-ট্রাকের ড্রাইভারের কাছ থেকে কালেক্ট করে নিবো। ।
এই অবস্থায় এসে মনসুর ভাইয়ের মনে একটু খটকা লাগলো উনি উনার নাম্বার দিয়ে ক্রেতা কে বললেন ফোন দিতে।
ত ক্রেতা ফোন দিয়ে জানালো শুক্রবার বিকেলে সে টো-ট্রাক ড্রাইভার পাঠাবে তার কাছে সে ২৫০০ ডলারের চেক পাঠিয়ে দেবে।এক হাতে চেক আরেক হাতে চাবি।
মনসুর ভাই ভাবলেন সাউন্ডস ভেরি গুড ।
শুক্রবার বিকেলে টো-ট্রাক আসলো মনসউর ভাই ভাবি তাদের গত পাচ বছরের সুখ দুক্ষের সাথিকে টো-ট্রাকে উঠিয়ে দিলেন।এইবার টো-ট্রাক ড্রাইভার বলে এই টো এর টাকা মনসুর ভাইকে পে করতে এমনটাই নাকি বলেছে ক্রেতা।
উনি সাথে সাথে ক্রেতাকে ফোনে ধরলেন।
ক্রেতা বেশ নাটকিয় ভংগিতে মনসুর ভাইকে বললেন তুমি চেকটা খুলে দেখো
সেখানে আমি ৩০০০ টাকাই লিখে দিয়েছি তুমি টো-ট্রাক ড্রাইভারকে সেখান থেকে ২০০ টাকা দিয়ে দাও তারপরও তোমার কাছে তিনশ অতিরিক্ত থাকবে।
এইবার মনসুর ভাই বেশ লজ্জিতই হলেন এইরকম নিপাট ভদ্রলোককে সন্দেহ করার কারনে।
পরের দুই দিন উইক এন্ড ছুটি থাকায় সোমবারে সকালে মনসুর ভাই চেক ভাংগাতে নিয়ে গেলেন ব্যাংকে।
ব্যাংকের কাচের ভেতরে বসা মহিলা চেকটা দেখে একবার মনসুর ভাইয়ের দিকে দেখে চেকটা নিয়ে গেলো ভেতরে। ভেতর থেকে এসে মহিলা মনসুর ভাইকে দুই মিনিট বসতে বললেন যাতে সে পরের কাস্টমারকে সার্ভ করতে পারে।
মনসুর ভাই দাড়ীয়ে বসে ব্যাংকের বিভিন্ন অফার ঘেটে ঘেটে দেখতে লাগলেন কিছুক্ষন পর পেছন থেকে এক পুলিশ এসে স্পষ্ট ভাবে বললো আর ইউ মিস্টার ম্যানসুর।
ইয়েস
পুলিশ বললো প্লিজ কাম উইথ মি।
ব্যাংক ম্যানেজারের রুমে যেয়ে পুলিশ জানতে চাইলো এই চেক সে কোথায় পেয়েছে ???
পুরো ঘটনা শুনে পুলিশ মনসুর ভাইকে জানালো উনি অন-লাইন স্ক্যামারের পাল্লায় পড়েছেন।
উনার আমও গেল ছালাও গেলো র মত গাড়ীও গেল সাথে গাড়ির ভাড়াও গেলো।


অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই-বোনেরা অস্ট্রেলিয়ার শান্ত শিষ্ট চেহার দেখে ভাববেন না যে এইখানে অপরাধ হয় না বা হইতে পারে না ভুল সময়ে ভুল যায়গায় পড়লে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আপনিও ডলা খাইতে পারেন।



৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×