somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয়তমা..।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেলের দিকে বাসা থেকে বের হচ্ছি। ঠিক বাসার সামনের গাছের নিচে দুটো মেয়ে বাডমিন্টন হাতে দাঁড়িয়ে। এদের মাঝে একটা মেয়ে কে চিনি, এই বিল্ডিং এ থাকে সম্ভবত কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমাকে দেখেই সে বলল ভাইয়া আমাদের ফেডারটা না গাছে পড়ে গেসে একটু পেড়ে দেননা প্লিইজ। প্রথমে তাঁর কাছ থেকে বাডমিন্টন নিয়ে গাছে লাড়া দেই ফেদার তো পড়ে না। শেষমেশ গাছ ধড়ে নাড়া দিতেই ফেডার পড়ে যায়। আমি হাটা শুরু করি, পেছন থেকে মেয়েটা বলে থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আমি রেস্পন্স না করে আগের গতিতেই হাটতে থাকি।

তাঁর ঠিক দুদিনপর। আমি বাসা থেকে নামছিলাম ফোনে কথা বলতে বলতে মেয়েটাও সিড়ি দিয়ে উঠছিলো। আমাকে দেখেই বলল ভাইয়া কেমন আছেন। আমি ব্যাস্ততার ভাব দেখিয়ে ফোন কানে নিয়ে বললাম হুম ভালো। নেমে যেতে যেতে আবার মেয়েটা পেছন থেকে ডাক দিলো ভাইয়া বলে আমি পেছনে তাকাতেই বলল আচ্ছা ভাইয়া আপনি তো এই বিল্ডিং এই থাকেন তাইনা। আমি বললাম হ্যা তো ?? সে বলল না কিছু না এমনি আচ্ছা আপনার নামটা বলবেন ?? আমি এবার ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বললাম হৃদয়। সে হেসে হেসে বলল ও আমি তো জানি। আমি এইবার বিরক্তির ভাব নিয়ে ভ্রু কুচকিয়ে বললাম ও তো জিজ্ঞাস করলা কেনো ? কথাটা বলেই নিচে নেমে গেলাম।

সেদিন ই সন্ধার দিকে বাসায় উঠছি সে সময় আবার সে। আমি দ্রুত উঠছি সিড়ি দিয়ে। কিন্তু আবারো সেই মেয়ে ডাক দিলো। নাহ বিগত বারের মত এবার আর ব্যাস্ততা দেখালাম না। আমি বললাম,
-কিছু বলবা ?
-কেমন আছেন আপনি?
-হুম ভালো।
-আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না কেমন আছি?
-দেখে মনে হচ্ছে ভালো আছো তাই জিজ্ঞেস করবো না।
-আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেসা করি? আপনি আমাকে দেখলেই কি শুধু এড়িয়ে চলেন কেনো?

আমি একটু অবাক হলাম তাঁর কথা শুনে। কিছু মানুষ প্রশ্ন করবে বলে অনুমুতি নেয় কিন্তু মজার ব্যাপার এদের ভেতর অধিকাংশ মানুষ অনুমুতি পাবার আগেই প্রশ্ন করে ফেলে। আমি মেয়েটিকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম আসলে তোমাকে দেখে না একটু কাজের ভেতর থাকি তো তাই। মেয়েটি একটু আহ্লাদ করে বলল তাইই নাআআ!! হুম দেখি তো আপনাকে সারাদিন টং এ আড্ডা দেয়া তো খুব কাজের তাই না? এবার আসলেই মেয়েটির প্রতি রাগ লাগলো আমার। একটু ধমকের সুরে বললাম তোমার কি তাতে বললতো? বাসায় যাচ্ছিলে না যাও বাসায় যাও। মেয়েটি এবার মন খারাপের মত মৃদু স্বরে বলল আপনি আমাকে আসলেই এড়িয়ে চলেন নাহলে কোন মেয়েকে এভাবে কেও রাগ দেখিয়ে বলে? আচ্ছা বলবো না আর কিছু বলবা?? মেয়েটি হাসি দিয়ে আচ্ছা আরেকটা কথা এটাই শেষ কিন্তু কথা দেন আমাকে বলতেই হবে। এই মেয়ের কথা শুনে আমি তো কনফিউসড। পাগল নাকি?? তাকে বললাম আচ্ছা বল। মেয়েটি বলল আচ্ছা সারাদিন ফোনে আপনি কার সাথে কথা বলেন?? আপনার গার্লফ্রেন্ড?? আচ্ছা আপনার গার্ল ফ্রেন্ড আছে?? আমাকে কিন্তু বলতেই হবে আপনি কথা দিয়েছেন। এবার তো আমি একদম মহাবিপদে পড়লাম কি বলবো তাকে? শেষমেষ কথা তাড়াতাড়ি কাটানোর জন্যে বললাম হ্যা আছে। কথাটা বলেই আরো এক মহাবিপদ ডেকে আনলাম সে বলল ও তাই আচ্ছা বলেন তাঁর নাম কি বলেন না?? তুমি না বলসো একটা কথাই বলবে তো কয়টা কথা আস্ক করতেসো?? সে আবার আগের মত মন খারাপ করে বলে আপনি আসলেই আমাকে এভোয়েড করেন না হলে ঠিক ই বলতেন। মেয়েরা হয়ত ছেলে মানুষ কে কথা দিয়ে কুপোকাত করার মন্ত্র জন্মের আগে থেকেই শিখে আসে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে এখন একটা মেয়ের নাম বলতে হবে কিন্তু কোন মেয়ের নাম ই মাথায় আসছে না কেনো জানি। সামনে মেয়ে থাকলে হয়তো মাথায় থাকা মেয়েদের নাম ও মানুষ ভুলে যায়। ভেবে কুল না পেয়ে বললাম তাঁর নাম "সন্ধ্যা" তো এখন আমি যাই কেমন কাজ আছে একটু। কথাটা বলে আর একমুহুর্তের জন্যেও দাড়ালাম না।

তারপর কয়েকদিন মেয়েটার সাথে আর দেখা হয়নি। বাসায় যাবার সময় বাসা থেকে নামার সময় অল্প খেয়াল করেছিলাম সে আশে পাশে আছে কিনা। সেদিন ই হঠাত মেয়েটাকে দেখলাম। বাসার সামনেই বান্ধুবীর সাথে কথা বলছে। আমি ধীরে ধীরে বাসার দিকে এগোতে থাকি। মেয়েটা আমাকে দেখেই হাসি দিলো। হাসিটা টা একদমি অদ্ভুত। কিছু হাসি মানুষ কিছু নির্দিষ্ট মানুষকেই দেয়। মনে হচ্ছিলো হাসিটা সে আমার জন্যেই বরাদ্ধ রেখেছে। কিন্তু মেয়টা আজকে আমাকে আর ডাকলোও না। আমি যেতে যেতে ভাবি ধুর আমি হঠাত ই কেনো মেয়েটা কে অল্প করে খুজলাম আর হঠাত ই কেনো তার হাসি দেখে এমন লাগলো ধুর কি সব উল্টাপাল্টা ভাবতেসি।

সেদিন আর মেয়েটা আমাকে ডাক দেয় নি। কিন্তু তাঁর পরের দিন বিকেলের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে একটু সামনের দিকে যেতেই মেয়েটাকে দেখি আর সে আমাকে ডাক দিলো বললো আচ্ছা আপনি কি ব্যাস্ত?? কথা বলি একটু?? আমি বললাম নাহ কি বলবা বলো। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আচ্ছা আপনি কি সন্ধার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন?
-তা দিয়ে তোমার কি?? তোমার কোন সমস্যা??
-আচ্ছা সন্ধ্যা কি কারো নাম হয় নাকি? কেমন যেনো ধুরর !!
-আমার মেজাজটা আবার গরম হয়ে গেলো আমি বললাম আচ্ছা নাম না হলে কি মানুষ এমনি নাম রাখসে?? আর তোমার নামটা কি যেনো??
-রোজ।
-হ্যা রোজ। তো রোজ কারো নাম হয় নাকি?? কি একটা ফুলের নাম আর তোমাকে কে দেখতে ফুলের মত লাগে নাকি?? নামতো ঠিক ই রোজ রাখসে তো?? কথাগুলো বলেই আমি হাটা শুরু করি সে আবার আমাকে ডাক দেয়, তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি তাঁর গাল মনে হয় ফুলে গেছে আর চোখে জল কাজলটা একটু এলোমেলো। একটু ভারী অভিমানি গলায় আমাকে বললো, আপনি কি মনে করেছেন আমি জানি না? আমি জানি আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই। আর মোবাইলে সারাদিন কি একটা ছাতামাথা ক্লাশ অব ক্ল্যান খেলেন সেটা নিয়েই ফোনে কথা বলেন। আর কি একটা ফালতু নাম বলেন সন্ধ্যা হুহ এই নামে তো কাউকে আপনি চিনেন কিনা সন্দেহ। যদি এই নামের কেও থাকতো তাহলে আপনি সেদিন নাম বলার সময় এতো ভাবতেন না। আরো ভারী গলায় সে বললো, আর হ্যা আমার নাম রোজ না আমার নাম ইশানা। আমি আপনার ঐ সন্ধার থেকেও সুন্দর কি না বলবেন। আর আপনার নাম তো হৃদয় তাই তো। আমি আপনাকে আজ থেকে তুমি করে বলব, আর আপনি আমাকে প্রিয়তমা বলবেন। খুব তো ফেসবুকে লেখেন আপনার প্রিয়তমা বলে কাউকে ডাকার ইচ্ছা হ্যা আমাকেই ডাকবেন আর কাউকে না। আজকের পর থেকে আমি ছাড়া অন্যকোন মেয়ের নাম তো দূরের কথা কোন মেয়ের দিকেও তাকাবেন না। যদি দেখসি তো হাতদুটো ধরে চশমা খুলে ফেলে দিবো এরপর চাইলেও তো আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতেই পারবেন না। যা বলেছি মনে রাখবেন...।

কথাগুলো বলেই মেয়েটি চলে যেতে লাগলো। আমি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে, মেয়েটা আঙ্গুল দিয়ে চোখদুটো মুছে পেছনে ফেরে সেই রিজার্ভ হাসিটা দিলো যেটার স্বত্তাধিকার শুধুই আমার। কারণ মেয়েটি তো আমার করে দিয়ে গেছে। মেয়েটার কাজল এলোমেলো করার অপরাধে এতোবড় শাস্তি দিলো মেয়েটা। কিন্তু কেনো যেনো এই অপরাধের শাস্তিটা পেতে একটুও খারাপ লাগছেনা। এরকম শাস্তি হয়ত প্রত্যেক ছেলে চায়। কি অদ্ভুতভাবে মেয়েটা শাস্তি দিলো সাথে আমার কিছু অধিকার ও কেড়ে নিয়ে গেলো। মেয়েরা হয়ত অধিকার কেড়ে নেয়ার ব্যাপারটা জন্মের আগেই শিখে আসে। সাথে প্রিয়মানুষটার জন্যে রিজার্ভ করা হাসিটাও।

মেয়েটাকে এখন হঠাত ডাকতে ইচ্ছে করছে। চোখে চোখ রেখে বলতে ইচ্ছা করছে, "হ্যা প্রিয়তমা, আমি শুধুই তোমার"...।


প্রিয়তমা ।। হৃদয় ।।


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×