somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিলন-মালার প্রেমকাহিনী

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিষণ্ণ মুখে বসে আছে মিলন। আজকের দিনটা তার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন, সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারতো। কিন্তু এসব কিছুই সে অনুভব করছে না। শুধু মন খারাপের ভারে নুয়ে পড়েছে তার মুখ, ঝুলে পড়েছে কাঁধ। উৎফুল্ল বাবা-মার পেছনে নিজেকে টেনে নিয়ে চলেছে ধীরে ধীরে।

আজ মিলনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন, আজ তার বিয়ে। কিন্তু মিলন সুখী হতে পারছে না। সে সবসময় স্বপ্ন দেখেছে তার জীবনসঙ্গিনী হবে এমন একজন যে কিনা হবে প্রেমময়ী, রূপবতী, গুণবতী, পাখির মত মিষ্টি গলায় গান গাইবে, কথা কইবে সুরে সুরে, রান্ধনে-সেলাইয়ে যার জুড়ি নাই। তার সেইসব দিবা-রাত্রির স্বপ্নে ছাই লেপে দিয়ে তার বাবা-মা কিনা বউ হিসেবে ঠিক করল খোন্দকার বাড়ির মালাকে! হায় এই আফসোসে মিলনের মন চাইছে গলায় মাফলারের ফাঁস দিয়ে মরে যেতে। কিন্তু সেটা করা সম্ভব না। কারণ খোন্দকার বাড়ি হল গ্রামের অন্যতম ধনী ঘরের একটা। বলা যায় মিলনদের তালুকদার বাড়ির সমান সমানই। মিলনের বাবা তালুকদার সাহেব শহরের ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়ে লালে লাল হয়ে আছেন, সেইখান থেকে একমাত্র খোন্দকার সাহেবই পারেন উদ্ধার করতে। আর সেই নীল-নকশার বলি আজ মিলন।

মিলন জানে না শহরের অন্য প্রান্তে আসন্ন বিয়ের প্রস্তুতি নিতে নিতে মালাও ঠিক একই কথাই ভাবছে। ছোটবেলা থেকে যে দাই ওর দেখাশোনা করে করে বুড়ি হয়েছেন, আফসোস করছে তারই কাছে।
-ও খালা, এ বিয়ে কি শুধুই সম্পত্তি রক্ষা করতে! মিলন ভালবাসবেতো আমাকে? হায় ভালবাসা না পেলে কী মূল্য এই জীবনের!

দরজায় দাঁড়ানো মালার মা তার এইসব পাকামো ন্যাকামো কথা-বার্তায় ক্রুব্ধ হন। না, ভালবাসার কথা বলতে নেই। বিয়েটা ভালবাসার ব্যাপার নয়। বিয়েটা হলো দায়িত্বপালনের ব্যাপার, বংশ রক্ষার ব্যাপার, সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষার ব্যাপার। মিলনের বাবার এত এত সম্পত্তিইতো পারে তাদেরকে দেউলিয়া হওয়া হতে রক্ষা করতে। তাই বিষণ্ণমুখে মালা চুপ হয়ে যায়। চোখের জল লুকিয়ে বেঁধে নেয় চুল।

হায় মিলন! হায় মালা!

বাহির বাড়িতে হই হই রব ওঠে 'বর আইছে! বর!' মালা সচকিত হয়। তাকে ঘিরে রাখা মেয়েরা ছুটে বের হয়ে যায় বরকে দেখতে। মালাও উঠে গিয়ে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখে বরের চেহারা। এত এত লোকের ভিড়েও মিলন ঠিক ঠিক মাথা তুলে তাকায় মালার জানালা বরাবর, চার চোখে চোখাচোখি হয়, বিষণ্ণ দৃষ্টি, বিষণ্ণ মুখ। মালা জেনে যায় মিলন সেই মানুষ, মিলনও পেয়ে যায় তার স্বপ্নের রাণীকে।

কাজীসাহেব আসেন, দুরুদুরু বুকে মালা অস্ফুটে কবুল বলে। কাঁপা কাঁপা হাতে সই করে খাতায়। এইবার বরের কবুল বলার পালা। কিন্তু কি যে হয়ে যায় মিলনের! দোতলার জানালায় মালার বিষণ্ণ মুখখানি মনে করেও সে কবুল বলার সাহস অর্জন করতে পারে না। বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে সকলের চোখ এড়িয়ে বিয়ের মঞ্চ থেকে ছুটে পালায়। তার পিছনে 'ধর, ধর' রব উঠলেও বিয়ের ভয়ে বাপের ভয়ে ঊর্ধশ্বাসে ছুটে পালানো মিলনকে ধরতে পারে না কেউ। ছুট ছুট ছুট...বিয়ে বাড়ি পার হয়ে, গ্রাম পার হয়ে, নদীর তীর ধরে অবশেষে মিলন গিয়ে পৌঁছে গ্রামের প্রান্তে শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে। দিনের আলোতেও যেখানে মানুষ আসতে ভয় পায়। কিন্তু মিলনের তখন সেই জায়গাটাই নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে হয়।

ওদিকে লন্ডভন্ড বিয়ে বাড়িতে বিষণ্ণমুখে বসে আছে মালা, কাঁদছে হাপুশ নয়নে। এ কি অপমান! এ কি অবহেলা! এই কষ্ট মালা সইবে কেমন করে! তালুকদার সাহেব তখনও তার বিবিকে নিয়ে বসে আছেন খোন্দকার বাড়ি। তাঁরা ক্ষমা চাইছেন, বলছেন সকালের মধ্যেই ফিরিয়ে আনবেন মিলনকে, এ বিয়ে হবেই। দোনমনো করছেন বটে খোন্দকার সাহেব, তবে কথা ফেলতেও পারছেন না। তিনিতো জানেন এ বিয়ে হওয়াটা খোন্দকার পরিবারের জন্যও কত জরুরী। এমন সময় সেখানে এসে হাজির হল গ্রামের উঠতি বড়লোক শমসের, বছর দশেক আগে মিডল ইস্টে যেয়ে বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছে। অনেকদিন মালার পাণিপ্রার্থী হয়ে ঘুরেছে, শুধু বয়সের কারণে তার বাবা-মা রাজি হননি। সে এসে শুরু করল হম্বিতম্বি, 'আগেইতো বলসিলাম খোনকার সাব, শুনেন নাই আমার কথা। ওই আকাইম্যা তালুকদারের পোলারে জামাই বানাইতে চাইসিলেন। গেলতো আম-ছালা দুইটাই? এখনও সময় আছে, ভাইবা দেখেন।' নিমরাজি খোন্দকার দম্পতি আর আতংকিত মালার দিকে তীব্রদৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বের হয়ে গেল শমসের।

ওদিকে জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, অন্ধকার নেমেছে চারদিকে। তখনও মিলনের মনে কোন ভয়-ডর নেই। সে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছে। 'এমন কি ব্যাপার ছিল কবুল বলাটা! কাজীর সাথে মাথা নাড়ায় নাড়ায় তিনবার বলতে হবে শুধু, "কবুল! কবুল! কবুল!" ব্যস কাহিনী খতম। তারপরে রাজার মত উঠে দাঁড়ায় সবাইরে সালাম দেওয়া। এইতো। এত বড় বুদ্ধু তুমি এই কাজটাই পারো না?' এইসব আপন মনে বলছে আর হেঁটে বেড়াচ্ছে মিলন। পকেট থেকে বের করে নিয়েছে হীরের আংটিটা। বাসররাতে বউয়ের হাতে পরাবে বলে বহু শখ করে কিনেছিল। পায়চারী করতে করতেই হঠাত স্থির হয়ে দাঁড়াল মিলন একটা শুকনো মরা গাছের সামনে। লম্বা করে শ্বাস টানল, তারপর গলা পরিস্কার করে নিয়ে বলল, 'কবুল! কবুল! কবুল!' এরপর খুশিমনে গাছের শুকনো ডালে পরিয়ে দিল হীরের আংটিটা।

আর তখনই...কিসে যে কি হয়ে গেল! শোঁ শোঁ করে বইতে শুরু করল হিমেল ঝড়ো বাতাস, গাছপালার ভিতর জেঁকে বসল অন্ধকার আর আংটি পরানো শুকনো ডালটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরল মিলনের হাত। সর্বশক্তিতেও টেনে ছাড়ানো যায় না, এতই শক্ত সে বাঁধন। তারপর...তারপর সে হাতের পিছু পিছু মাটির নিচ থেকে উঠে এলো আস্ত একটা দেহ, পরনে লাল টকটকে শাড়ি, মাথায় ওড়না, মুখে মলিন প্রসাধন। সেই কংকাল বউ মিলনের মুখের দিকে ব্যগ্রভাবে চেয়ে বলল, 'আমিও কবুল!'

মিলনেরতো তখন ভয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার যোগাড়। কিসে যে কি হয়ে গেল! কংকাল হাতটা মিলনকে ধরে আছে শক্ত করে, ছাড়িয়ে নেবার শক্তি মিলনের নেই। ওদিকে হীরের আংটিটাও পরানো রয়েছে আঙুলে, মালাকে দেবার জন্য বড় শখ করে মিলন যেটা কিনেছিল। ওই কংকাল বউটা যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল মিলনের দিকে সে আর থাকতে পারল না। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল।

যখন জ্ঞান ফিরল মিলন নিজেকে আবিস্কার করল এক ভরা মজলিশে। কত জাতের কত......হায় মিলন কি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে! এত এত মৃত মানুষরা, ভূতেরা বসে আছে তার আশে পাশে। কারো মাথা ডেবে আছে একদিকে, কারো চোখের জায়গায় বিশাল গর্ত, কারো বুকের ভেতরটা হা হয়ে আছে, দেখা যাচ্ছে অপর পাশ। তবে সেসবে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। তারা মহানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময়ে একজনের চোখ পড়ল মিলনের ওপরে। সে হই হই করে উঠল, 'ঘুম ভাঙছে, ঘুম ভাঙছে, নতুন জামাইর ঘুম ভাঙছে!'

কি সর্বনাশ! এই ভূতটাও দেখি মিলনকে জামাই বানিয়ে দিয়েছে। কার জামাই? সেই কংকাল পেত্নীর নাকি? ওদিকে সেই ভূতের চিল্লাপাল্লাতে বাকি ভূতেরাও নজর দিল মিলনের দিকে। লাজুক হেসে সেই পেত্নী মাথায় ঘোমটা টেনে মিলনের পাশে এসে বসেছে। মিলন এদিক ওদিক চেয়ে পালানোর পথ খুঁজছে, এমন সময় দশাসই ভূঁড়িওয়ালা এক ভূত মিলনের ঘাড়ে থাবা বসাল, 'ওহে ছোকড়া, তুমি লোক ভাল হে। আমাদের সুলতানারে বিয়া করছো।'
'এ্যাঁ সুলতানা! কে সুলতানা?' ভয়ে তোতলাতে শুরু করেছে মিলন।
হাহাহাহোহোহোহিহিহি হাসিতে ভেঙে পড়ল ভূত-পেত্নীর দল। 'সুলতানাকে চিনে না! হেহেহেহে সুলতানাকে চিনে না। কবুল বলে যারে বিয়ে করছে তারেই চিনে না। আহাহাহাহাহা' বলতে বলতেই হাতের প্লেট-গ্লাস, কংকালের হাড়-গোড় নিয়ে বাদ্য বাজানো শুরু হল আর সেই ভূঁড়িদার ভূতের হেড়ে গলার গান,

আরে শোনো শোনো শোনো হে
সুলতানার গল্প শোনো
সে যে ছিল রূপবতী, গুণবতী, কেশবতী
দশ গাঁয়ে মেলে না জুড়ি হেন
তার গুণে মুগ্ধ হয়ে কতজনে চিৎকাত
সুলতানার বাপের কাছে চাইল তার হাত
কিন্তু সুলতানার বাপের দেমাগ বেশি
টাকা চাই তার রাশি রাশি
ভগ্নহৃদয় যুবকরা সব হলো গেরাম ছাড়া

এমন সময় এলো সেই ভিনদেশী যুবা
সেই বীরপুরুষরে দেখে কন্যা হইল দিওয়ানা
বাপের ভয়ে দুইজনেতে ঠিক করলো ছাড়বে ঘর
দেখা হবে শ্মশানঘাটে মাঝরাতের পর
মায়ের বিয়ের লাল শাড়িটা গায়ে জড়ায় নিয়া
সুলতানা হাজির শ্যাওড়া বনে দুরুদুরু হিয়া
১ম প্রহর ২য় প্রহর কাইটা যায় যে নিশি
প্রাণপুরুষের নাই যে দেখা দিল বুঝি ফাঁকি

বোকা মেয়ে সুলতানা সাথে সোনার গয়না
প্রেমের চেয়ে বীরপুরুষের লোভের তাড়ন সয় না
গভীর রাতে শ্যাওড়া গাছের পিছে উঠল ছায়া
মানুষ, নাকি ভূত? সেই ভয়ে সুলতানা কাটায় জীবনের মায়া
আরে শোনো শোনো দুঃখী মেয়ে সুলতানার গল্প শোনো
সেই দিন থেকে শপথ তাহার করবে সে অপেক্ষা
আসবে সেই প্রাণপুরুষ করবে তাকে উদ্ধার
শান্তি সুখে করবে ঘর মরণেরও পার

আচ্ছা সুলতানা তাহলে তার পেত্নী বউ? আহা বেচারির গল্প শুনে নিজের দুঃখ ভুলে মিলনের সুলতানার জন্যই কষ্ট লাগছিল। কিন্তু তাহলেও...সে তো আর সুলতানার জন্য কবুল বলে নি, বলেছে মালার জন্য। তার স্বপ্নের রাণী। মিলন মন খারাপ করে উঠে যায় সেখান থেকে। ফাঁকা একটা জায়গায় বসে ভাবতে থাকে কি করে সে মাটির নিচের এই দুনিয়া থেকে বের হয়ে নিজের পৃথিবীতে ফিরে যাবে। এমন সময় হাড়-হাড্ডিতে খটমট শব্দ তুলে সুলতানা তার পাশে এসে বসে। তার হাতে একটা কাঠের বাক্স। চেহারায় লাজুক ভাব ফুটিয়ে তুলে সুলতানা বাক্সটা মিলনের দিকে এগিয়ে দেয়, স্বামীর জন্য ছোট্ট উপহার। মিলন ভাল করে দেখে তাকে, সুলতানা মেয়েটা দেখতে সুন্দরীই ছিল জীবিত থাকাকালে। এমন সময়ে নিশ্চয়ই লজ্জায় তার গাল লাল হতো, বুকে ঢিপঢিপ শব্দও হতো। কিন্তু আফসোস এখন আর তেমন কিছু হয় না। মিলন আড়ষ্ট হাতে বাক্সটা নেয়, ডালা খুলতেই কতগুলো হাড়-গোড় গড়িয়ে পড়ে। তারপর তারা একসাথে হয়ে একটা ছোট্ট কুকুরছানার কংকালে পরিণত হয়, কংকালছানাটা মিলনের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে লেজ নাড়তে থাকে। মিলন চিনতে পারে, রকেট! ওর পোষা কুকুর। কুকুর পোষা মায়ের নিষেধ ছিল, মিলন যখন হোস্টেলে ছিল মা রকেটকে বন্দী করে রাখে খেতে না দিয়ে। তারপর একসময় বেচারি মারা যায়। মিলন খুব দুঃখ পেয়েছিল। এখন সেই দুঃখ ভুলে যায়। সুলতানাকেও ভাল লাগতে শুরু করে। সে ফন্দী আঁটতে শুরু করে কি করে ভুলিয়ে ভালিয়ে মাটির উপরের দুনিয়ায় ফিরে যাওয়া যায়!
'সুলতানা আমার খুব ইচ্ছা আমাদের নতুন জীবনে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আসি।' শুনে সুলতানা লাফিয়ে ওঠে।
'নিশ্চয়ই। চল এখনি যাই।' মিলনকে নিশ্চুপ দেখে সুলতানা বুঝতে পারে এটা সম্ভব নয়। কারণ তাঁরা জীবিত, তাঁদের বাস অন্য জগতে। কিছুক্ষণ চিন্তার পর সুলতানার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
'চলো আমরা কবিরাজ দাদুর কাছে যাই। উনি নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।' মিলনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সুলতানা ওকে টানতে টানতে নিয়ে আসে একটা ভাঙ্গাচোরা পোড়ো বাড়িতে। চারদিকে কেমন ছমছমে পরিবেশ, থমথমে ভাব, কোথাও কেউ নেই। এমন সময় চারদিকে শো শো বাতাস ওঠে, উড়ে যায় এক ঝাক বাদুড়, পোড়ো বাড়ির দোতলায় খটমটিয়ে উঠে বসে থুত্থুড়ে এক বুড়ো।
'কে রে আমার বাড়িতে? কে রে? কে রে?' কাঁপা কাঁপা গলায় চেঁচিয়ে ওঠে বুড়ো।
'ও দাদু আমি সুলতানা।'
'অ সুলতানা! সঙ্গে কে রে?'
'দাদু তোমার নাতজামাই।' লাজুক হেসে জবাব দেয় সুলতানা। বুড়ো ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে আসে। নাকের ফুটোটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হঠাৎ আঁতকে ওঠে, 'ওরে সুলতানা, নাতজামাই যে বেঁচে আছে এখনও!'
'হ্যাঁ দাদু, সে ওই জগতের মানুষ। কিন্তু তিন কবুল বলে বিয়ে হইছে আমাদের। আমরা এখন উপরের জগতে যাইতে চাই, ওর বাবা-মার আশীর্বাদ নিয়ে আসতে। ব্যবস্থা করে দাও দাদু।'
বুড়ো ঠোঁটে হাত রেখে ভাবল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, 'ঠিক আছে। আমি একটা মন্ত্র পড়া শরবত বানায় দেই। এটা খাইলেই তোরা উপরতলায় চলে যাইতে পারবি। তবে মনে রাখিস, ভোর হবার আগেই কিন্তু ফিরতে হবে। নইলে আটকায় যাবি মহাশূণ্যে।'
ওরা রাজি হয়। এক চুমুকে পানীয়টা খেয়ে নিতেই ঝুপ করে এসে পড়ে শ্মশানঘাটের মাটিতে। চারদিকে ঝিরঝিরে হাওয়া, আকাশে এত বড় একটা চাঁদ, মোহনীয় পরিবেশ। সুলতানা খুশিতে ছুটতে থাকে, নাচতে থাকে। একি মহাবিপদ! মিলনের হাতে বেশি সময় নেই। যে করেই হোক মালাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। সে সুলতানাকে শান্ত করে বসায়, 'তুমি এইখানেই অপেক্ষা করো। আমি প্রথমে যাইয়া বাবা-মাকে ব্যাপারটা বুঝায়ে বলি। হঠাৎ করে তোমাকে নিয়ে হাজির হলে তারা ঘাবড়ায় যাইতে পারেন। তুমি এখানেই বসো। আমি যাবো আর আসবো।'
সুলতানা মাথা নেড়ে রাজি হয়। লক্ষ্মী মেয়ের মত বসে থাকে একটা গাছের গুড়িতে।

ওদিকে ছুটতে থাকে মিলন রুদ্ধশ্বাসে মালার বাড়ির দিকে। সদর দরজার সামনে এসে জোরসে ব্রেক করে। এখনও ওখানে দুই বাড়ির কর্তা-কর্ত্রীরা জরুরী মিটিং এ বসে আছেন। সে আবারও ঘুরে বাড়ির পিছনদিকে যায়। গাছ বেয়ে উঠে যায় মালার ঘরলাগোয়া দোতলার বারান্দায়। দেখে মালা কাঁদছে বিছানায় শুয়ে ফুলে ফুলে। মিলন ফিসফিস করে ডাকে, 'মালা!'
ঝটকা মেরে উঠে বসে মালা। 'তুমি! তুমি কোথায় পলায়ে গেছো? পুরা গ্রাম খুঁজেও কেউ তোমাকে পাইল না।'
'সে অনেক কথা মালা। আমি শুধু তোমাকে একটা কথাই বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালবাসি। আর তোমাকেই বিয়ে করবো।'
'আমি জানি মিলন। আমিও তোমাকে......' এটুকু বলেই শিউড়ে ওঠে মালা। মিলনের পিছনে জানালায় দাঁড়ানো কংকাল সুলতানার দেহ। দাঁতহীন মাড়ি খিঁচিয়ে সুলতানা বলে ওঠে, 'তবে রে পাষন্ড!' মিলনের হাত সর্বশক্তিতে আঁকড়ে ধরে সুলতানা বের হয়ে আসে ঘরে ছেড়ে। তারপর চিৎকার করে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি মালাও চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। বসার ঘর থেকে সেই শব্দে ছুটে আসে সবাই। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে, গায়ে বাতাস করে মালার জ্ঞান ফেরানো হয়। মালা সবাইকে খুলে বলে কি ঘটেছে। মিলনকে ধরে নিয়ে গেছে কংকালসার মৃত এক নারী। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করতে চায় না তার কথা। সবাই ধরে নেয় সারাদিনের পুরো ঘটনায় বিহবল, বিষণ্ণ মালা প্রলাপ বকছে। এমন ভাবনা তার মাথায় এসেছে কারণ কিছুক্ষণ আগেই মিলনকে খুঁজতে যাওয়া লোকজন খবর এনেছে এক রহস্যময়ী নারীর সাথে মিলনকে শ্মশানঘাটে দেখা গেছে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় মিলনের মত কাপুরুষ, চরিত্রহীনের সাথে মালার বিয়ে দেয়া সম্ভব না। এদিকে শমসের তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে সেই সন্ধ্যা থেকেই। তাই তাঁরা ঠিক করেন মালার বিয়ে হবে শমসেরের সাথেই। সে উঠতি বড়লোক, অল্প বয়সেই অনেক টাকা করেছে। মালাকে সুখে রাখতে পারবে সেই।

ওদিকে পাতালপুরীতে রণমূর্তি ধারণ করেছে সুলতানা। 'পাষন্ড, মিথ্যেবাদী! তুমি আমাকে বলছিলা বাবা-মার কাছে যাচ্ছো। আর তুমি কিনা গেছো সেই মেয়েটার কাছে। প্রতারণা করছো আমার সাথে। ধোঁকা দিছো।'
এবার মিলনও ফুঁসে উঠে, 'ধোঁকা দেই নাই আমি তোমাকে। তোমাকে বিয়েও করি নাই আমি। সবটাই একটা ভুল বোঝাবুঝি। আমি প্রথম থেকে মালাকেই ভালবাসি। ওর জন্যই কবুল বলে প্র্যাকটিস করতেছিলাম। কিন্তু তুমি কিছুতেই বুঝতে পারতেছো না সেইটা। ভাবছো তোমাকে বিয়ে করতে কবুল বলছি। হয় না এটা বোকা মেয়ে। আমি আর তুমিতো এক না। কেমন করে আমি বিয়ে করবো তোমাকে!'
এ কথা শুনে যেন একটা ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে যায় সুলতানা। তাইতো, তারাতো এক নয়। মিলনের দেহে প্রাণ আছে এখনও, আর সুলতানা মরে পচে কংকাল হয়ে গেছে সেই কবে! কি করে তারা বিয়ে করে পরস্পরকে? কি করে কাটাবে আজীবন একসাথে যখন সুলতানার জীবনই নেই!

নিজের জীর্ণ কাঠের ঘরে ফিরে আসে সুলতানা। সত্যিইতো, সেতো আর বেঁচে নেই। তার বুকের ভেতর একটা হৃদপিন্ড ধুকপুক করে যায় না, তার তুলতুলে গাল লজ্জায় রাঙা হয় না। যেমনটা মালার হয়। কিন্তু তারপরও সুলতানার কষ্ট হয়, বুক ভেঙে যায়, চোখ ফেটে অশ্রু বেরোয়। কোথা থেকে আসে এই বেদনা? সুলতানার বন্ধু পেটমোটা মাকড়সানী আর মাথার খুলিতে বাসা বাঁধা শুঁয়োটা ওকে কতভাবেই না বোঝাতে চেষ্টা করে! না, সুলতানা সবচেয়ে স্পেশাল, সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে সুন্দর। মালার সাধ্যই নাই ওর ধারে কাছে আসবার। আর সবচেয়ে বড় কথা মিলন সুলতানাকেই কবুল বলেছে, হীরের আংটি পরিয়েছে তার আঙ্গুলেই। মালা নামের জ্যান্ত যন্ত্রণাকেতো আর নয়। কিন্তু তাতেও সুলতানার কান্না থামে না, দুঃখ কমে না। যত যাই হোক, মালা যে বেঁচে আছে! তাদের দুজনের বুকেই আছে জলজ্যান্ত হৃদপিন্ড, তারা স্পন্দিত হয়। দুজনের ব্যথা-যন্ত্রণার অনুভূতি আছে, আছে আনন্দের অনুভব। শূণ্য বুকের খাঁচায় হু হু করা এক অসীম হাহাকার ছাড়া আর কিছুই যে সুলতানা বুঝতে পারে না। সুলতানার স্বপ্নের পুরুষ, যার জন্য জীবনের ওপারে তার অপেক্ষা, সে যে এসেও এলো না! এমনি সময়ে হন্তদন্ত হয়ে সেখানে হাজির হলেন সুলতানার কোবরেজ দাদু। তার হাতে সেই বিশাল আকারের বইটা। তিনি নিয়ে এসেছেন সুলতানার সমস্যার সমাধান!

ওদিকে খোন্দকার বাড়িতে ছেলের কর্মকান্ডের জন্য অপমানিত হয়ে নিজেদের রিকশায় ঝড়ের বেগে বাড়ি ফিরছিলেন তালুকদার সাহেব আর তাঁর পত্নী। এমন সময়ে পথের পাশের উঁইয়ের ঢিবিতে রিকশার চাকা বাড়ি খেয়ে উলোট পালোট খেল কয়েক দফায়। তালুকদার সাহেব আর তাঁর পত্নী রিকশা থেকে হুড়মুড়িয়ে পড়লেও রিকশাওয়ালা রহমত মিয়া রেহাই পেল না। রিকশায় প্যাঁচ খেয়ে ধুম ধাম বাড়ি খেল সামনের বড় গাব গাছে। আর সেইখানেই রহমত মিয়ার ভবলীলা সাঙ্গ। অপঘাতে মৃত্যু হয়ে রহমত মিয়া সোজা পৌঁছে গেল পাতালপুরীতে। আর এসেই দেখা হয়ে গেল মিলনের সাথে। রহমত মিয়াকে দেখে মিলনতো বেজায় খুশি। সাগ্রহে জানতে চাইল উপরতলার খবর। আর খবর শুনেই তার মাথায় যেন বজ্রাঘাত হলো। মালা শেষ পর্যন্ত লোভী শমসেরকে বিয়ে করতেই রাজি হয়ে গেল! সে বিশ্বাস রাখতে পারল না মিলনের উপর! এই তার প্রেম? এই তার ভালবাসা! হায় মিলন এখন কি করবে? কিভাবে উদ্ধার পাবে এই মৃত্যুপুরী থেকে। কিভাবে মালাকে বাঁচাবে লোভী, আধবুড়ো শমসেরের হাত থেকে।


পাতালপুরীতে হই হই রব পড়ে গেছে, ছেলে-বুড়ো-মোটা-চিকন, বুক ফাটা, পেট কাটা, কলজে ফুটো সমস্ত ভূত আর পেত্নীদের মধ্যে সাজ সাজ রব। এই প্রথম পাতালপুরীতে বিয়ে হতে যাচ্ছে। তাও আবার বিয়েটা তাদের সবার আদরের দুলালী সুলতানার, তারই স্বপ্নের রাজপুত্রের সাথে। বিয়েটাও হবে এক অভিনব উপায়ে। যেহেতু সুলতানার স্বপ্নের রাজপুত্র মিলন এখনও জীবিত, তাই বিয়েটা হবে উপরের দুনিয়ায়। মৃত সুলতানার সাথে জীবিত মিলনের অনন্তকাল সুখে-শান্তিতে বাস করার একটাই উপায় আছে, মিলনকেও দিতে হবে তার জীবন, মরতে হবে অপঘাতে। শমসেরের সাথে মালার বিয়ের খবরে দুঃখে, ক্ষোভে ভেঙে পড়া মিলন সুলতানার সাথেই কবুল পড়বার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বেচ্ছায়। আর এটাই ছিল সুলতানার কোবরেজ দাদুর দেয়া সমাধান। তারা সকলে আনন্দের সাথে প্রস্তুতি নিচ্ছে উঠে আসবার উপরের দুনিয়ায়।

উপরের দুনিয়াতেও তখন সাজ সাজ রব। মালা-শমসেরের বিয়ের প্রস্তুতি চলছে গ্রামের একাংশে। লোভী শমসের কাজী বলতে না বলতেই নিজের গরজে গড়গড় করে বলে দিল তিন কবুল। মালার বাবা-মা যখন চোখের পানি মুছতে মুছতে তাকে শমসেরের হাতে তুলে দিচ্ছেন, তখন অধৈর্য শমসের আর থাকতে না পেরে বলেই বসল, 'এইসব লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতা বাদ দেন দেখি। আপনাদের সম্পত্তির দলিলটা লিখে দেন মেয়ের নামে। নিজের মেয়ের সুখের জন্য এতটুকতো করাই লাগবে।'
খোন্দকার সাহেবতো তখন আকাশ থেকে পড়েছেন। সম্পত্তি লিখে দেবেন কেমন করে, সমস্ততো কবেই বন্ধক দেয়া আছে এখানে সেখানে। এখন মেয়ের জামাই তাঁদের উদ্ধার না করলে বিপদের সীমা-পরিসীমা থাকবে না। এই শুনে শমসেরের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। টাকা-পয়সা, সম্পত্তি যদি নাই পাবে তাহলে এই সুন্দরী বউ এর মুখ দেখে কি পেট ভরবে নাকি! মালা উপহাসের হাসি হাসে শমসেরের দিকে চেয়ে।
'সন্তুষ্ট হও নাইতো বিয়ে করে? আমিও হই নাই। যদিও দুইজনের অসন্তোষের কারণ ভিন্ন। এই যা...' এদিকে যখন এইসব নাটক চলছে, গ্রামের অন্য পাশের লোকজন আতংকে দিশাহারা হয়ে ছুটছে। শ্মশানের ঝোপঝাড় ভেঙে ছুটে আসছে সব অতৃপ্ত আত্মারা, ভূত আর পেত্নীরা। দলে দলে, ঝাকে ঝাকে। তাদের গন্তব্য গ্রামের মাঝামাঝি অশ্বত্থ গাছের তলের পীরবাবার মাজার, সেখানেই বিয়ে হবে মিলন-সুলতানার। পীরবাবার মাজার সাজানো হয়েছে নতুন করে, নতুন বিয়ের জন্য। সুলতানার বিয়ের শাড়িটাও ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে, মিলন পরেছে নতুন একটা পোশাক। কাজী হয়েছেন সুলতানার সেই কোবরেজ দাদু।

ভূতেদের তাড়া খেয়ে দিগবিদিক ছুটে পালিয়েছে গ্রামবাসীরা। মালাও ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হয়েছে অশ্বত্থগাছের তলে। বিয়ের পাত্র-পাত্রী দেখেতো তার চোখ ছানাবড়া। মিলন! অবশেষে সেই পেত্নীটাকেই বিয়ে করছে মিলন? ভুলে গেছে মালাকে! চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল এই অদ্ভুত বিয়ের অনুষ্ঠান।

কোবরেজ দাদু কাজী যখন বললেন, 'সুলতানাকে তুমি, মিলন তালুকদার, বউ হিসাবে মেনে নিতে রাজি? বল কবুল।'
মিলন তখন খুশিমনে একবারেই কবুল বলে দিল, তার মুখে আটকালো না, ভয় ভয় লাগলো না, জড়তা এলো না। আর সেইসাথে হাতে তুলে নিল বিষের শরবতের পেয়ালা। সুলতানা কবুল বলার সাথে সাথেই সে ওই শরবত পান করে নিবে, আর অপমৃত্যুর কারণে চিরকালের মত পাতালপুরীতে ঠাঁই হবে তার। মরণের অপারে মিলন আর সুলতানা বাস করবে সুখে-শান্তিতে। কোবরেজ দাদু সুলতানার দিকে ফিরলেন, 'সুলতানা এবার তোমার পালা। বল কবুল।' কিন্তু সুলতানা আর কবুল বলতে পারে না। তার শুধু মনে হয় এ ঠিক নয়, খুব বড় ভুল হচ্ছে, খুব বড় অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। মিলনের হাত থেকে বিষের গ্লাসটা নামিয়ে রাখে সুলতানা। গাছের আড়ালে দাঁড়ানো মালাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে, ভেজা গলায় বলে, 'নিজের ভালবাসা হারানোর দুঃখে এতদিন ধরে আমার আত্মা ঘুরে বেড়াইছে পাতালে পাতালে, দীর্ঘশ্বাস ফেলছি দিনের পর দিন, কাঁদতে কাঁদতে শুকাইছি চোখের পানি। আর এই আমিই কিনা আরেকজনের ভালবাসার মানুষ কেড়ে নিতে চাইছি? এ হয় না, এ বড় অন্যায়। তোমার মিলন তোমারই থাকল মালা। তোমরা সুখে-শান্তিতে বাস করো।'

এমন সময়ে সেখানে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো শমসের। 'কিইই এত বড় সাহস! আমার বিয়ে করা বউকে তুলে দেয় অন্যের হাতে!' এই বলে মালার হাত ধরে টান দিতেই চোখ পড়ল সুলতানার ওপরে। বিস্ফোরিত চোখে সুলতানা চেয়ে আছে তার দিকে, "তুমি!"
শমসেরও হতবাক, 'তুমি!' তারপর কুটিল হাসি দিয়ে বলে উঠল, 'আমি সারাজীবন জিইত্যাই গেলাম। তোমারেও ধোঁকা দিলাম, গয়না-গাটি নিয়া টাকা কামাইলাম, আবার আরেকজনরে বাগায় নিলাম। গেলাম এখন বউ নিয়া। আরে এইখানে দেখি এক গ্লাস শরবতও সাজায় রাখসে। এইটা এই মিলন হারুর খাওয়ার দরকার নাই। আমিই খায়া নিলাম।' এই বলে বিষের শরবতের গ্লাসটা হাতে তুলে নিল। সবাই চেয়ে আছে বিস্ফোরিত চোখে, কেউ কিছু বলছে না। ঢকঢক করে গ্লাসের বিষ ঢেলে দিল গলায়। তারপরে গলা চেপে আঁ আঁ করতে করতে সোজা পরপারে। সেদিকে চেয়ে স্মিত হাসে সুলতানা, 'সবাইকেই তার কর্মফল ভোগ করতে হয়।' তারপর মিলন-মালার দিকে চেয়ে বলে, 'ভাল থাকো তোমরা, সুখে-শান্তিতে জীবন পার করো।' এই বলে অনেক অনেক প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায় চাঁদের দেশে।

সেই থেকে মিলন-মালা সুখে-শান্তিতে বাস করছে সেই গ্রামে, ছেলে-পুলে, নাতি-নাতনী নিয়ে তাদের বিশাল সংসারে।

===============================

Corpse Bride । অনেকদিন পরে এই মুভিটা দেখে খুব আবেগে আপ্লুত হয়েছিলাম। এ্যানিমেশন এই মুভিটাতে একইসঙ্গে আছে প্রেম, বিরহ, সুখ-দুঃখ, নির্মল আনন্দ। মুভিটির ছায়া অবলম্বনে লেখা হলো গল্পটা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩০
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×